আমরা
আমরা এখন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতন। ক্রমশ অভিমানের পাহাড় নিয়া দূরে সরে গেছি। সেই নির্ভেজাল আত্মীয়তা, সেই নিরবিচ্ছিন্ন আত্মীয়তা এখন দূর থেকে হয়া গেছে খেলাঘরের মতন। খেলাঘর ভেঙে দিয়ে আমরা বানাইছি নিজস্ব ডেরা। সেখানে প্রবেশের আগে অনুমতি আবশ্যক। আমরা অভিনয় করতেছি প্রত্যেকে, দেখাইতেছি কতটা আপন। অথচ সুর নাই, সেই সোনালী রঙের অদৃশ্য বাঁধন নাই। ভালো থাকুক আমাদের সেই সকালগুলা, দুপুর গড়ায়া আমরা যে যার বিকালের দিকে হাঁটতেছি। হাতগুলা তো আর হাতের কাছে থাকতেছে না।
ধরেন, একটা মাছ
ধরেন, একটা মাছ; কাটা বেছে রেফ্রিজারেটরে ঢুকাইলাম। তারপর মশলার প্যাকেট থেকে কনডম আলাদা করে নুডুলসের পাশে রাখলাম। কলিংবেল না থাকায় দরোজায় এসে গোলির কুত্তা হিসি করে চলে গেলো। আর আমিও প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে সেই কুত্তার প্রেমিকাকে সিনেমা হলে গিয়ে কট দিলাম। কুত্তারে ফোন দিলে সে এসে দেখলো, তার প্রেমিকা হাসিহাসি মুখে বুলডগের সাথে গল্প ও নানাবিধ খেলায় মত্ত। ঘটনা দেখে দেবদাস মদ খেয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়লো। চড়ার আগে দেখলো ঘোড়ার জিনিসটা বেশ উত্তেজিত। দেবদাস মদ খেয়ে পারুর কাছে যাবে নাকি চন্দ্রমুখীর কাছে যাবে, এমন ক্লাইমেক্সে একটি মেলোড্রামাটিক আইটেম গান বেজে উঠলো। ''আমার রডে বসিয়ে বেল বাজাবো''... গানের সুরে ও প্রেমে পারু অজ্ঞান এবং চন্দ্রমুখী অচেতন হলে দেবদাস মনের দুঃখে মদ খাওয়া ছেড়ে দিলো। সে হলুদ একটা পাঞ্জাবী পরে ঢাকার রাস্তায় কেরেশমাতি দেখাতে লাগলো। র্যাব যখন তাকে ক্রশ ফায়ার করলো, সেসময় বুলডগ করুণ সুরে গান ধরলো। ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে। এবং এই গানের পরই ঘটনাস্থল থেকে ফারুকী বুলডগকে নিয়ে গেল কুত্তাবিদ্যার রিহার্সেল দেখাতে। তখন আমি পিস টিভি অন রেখে কাঁটাবাছা মাছগুলা বাঘিনীকে দেখাচ্ছি। আর মশলার প্যাকেটে কোকেন ভরে এলাকার গডফাদারকে নিমন্ত্রণ জানাচ্ছি। ঠিক এরকম একটা মুহূর্তে পুলিশ রেইড করলো আমার বাড়িতে এবং মাথায় করে আমার টেলিভিশন নিয়ে গেল। গডফাদার এসে যখন দেখলো টিভি নাই রুমে তখন তিনি আমাকে একটা পিস্তল দিয়ে বলল, যে বাসায় দেখবা 'কিরণমালা' সে বাসায়ই ঢুইকা প্রথমে বিছানা দখল করবা। আগুন ধরাবা। কেউ তেড়িবেড়ি করলে সোজা র্যাবের কাছে ফোন দিবা। আমি তার কথায় মুগ্ধ হয়ে বললাম, জ্বি ওস্তাদ। ওস্তাদ সম্বোধনে তিনি নাখোশ হলেন এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের সব দায়দায়িত্ব আমারে দিয়া লোকাল বাসের টিকেট কালেক্টর হইয়া গেলেন।
এখন তোমরা
এখন তোমরা সবাই ঘোলা হয়া গেছ, ব্লার লয়ে গান বাজে। ঠিকানা জানো না। তবু ঘোড়ার ডিমের শিল্প কর। অপবাদ নিয়া কূপমন্ডুক বর্ষা চোষে। আরে দেমাগ করো ভালো, কিন্তু তোমার হাতে আর হাতের তালুতে তো আমি কোনো মেঠো-পথ দেখি না।
পয়সার ঐপাশে
মরে যেতে পারলে ভালোই হত। ইয়ে জিন্দেগী, এই মহাজীবন আর পর্দার আড়ালে রাখা প্রিয়তমা শান্তি। লালনের এই কানার হাটবাজারে, উঁচা নিচা শ্লেষের সংসারে, যেখানে সবাই হাঁটতেছি মহাকালে; তবু তো এইখানে মানুষের মনে ঘৃণা, যেন সাপের মতন থাকে শীতঘুমে। বড় ক্লান্তিকর এই দ্বন্দযুদ্ধ। প্রত্যেকে নিজেরে করে বিজ্ঞাপন। নিজেরে পেহচান দেয় মহান একজন। অথচ কুটিল বেফিকরে অন্ধকার আছে, আছে স্বীকারোক্তি। তবু মুখোশে আড়াল রাখি। মিথ্যা বলার আগে আঙুলে ক্রশ করতে হয়, সেকথা আমরা ভুলে গেছি ছেলেবেলাতেই। এই যে মানুষের এত চাওয়া, এত আকাশচুম্বি নাকউঁচা দাম্ভিকতা, অন্যের স্বপ্নে নিজেরে সর্বশক্তিমান করে তোলার আশা...দিনশেষে কোথায় চলে যায়? বরং আপনি যদি নিজের স্বপ্নে নিজেরে না দেখেন তবে আর কীসের দম্ভ আপনার? আপনারা কি সকলেই মানুষ? আর আমি কৃমি? মরে যেতে পারলে বড় ভালো হতো। পয়সার ঐপাশে শান্তির ঘুম।
এস্থেটিক ঠোঁট
'শিশু' শব্দটার সাথে জড়ায়া আছে নিষ্ঠুর সততা। শব্দটা শুনতে আমার ভালো লাগে সুখ লাগে। কিন্তু যখনই শুনি কেউ একজন জন্ম দিতে যাইতেছে একটা শিশু, আমার বেদনা বোধ হয়। ঘেন্না পায়। 'শিশু' হইতেছে নির্ভেজাল নির্লজ্জ সৎ উদ্দেশ্যের আরেক নাম। শিশু তো পাপ-অপাপ, ন্যায়-অন্যায়, ঘৃণা-অঘৃণা বোঝে না। সে তো পৃথিবীতে আসে শুধু মরণের মতন সৎ হয়ে থাকতে। কিন্তু আমরা তার মাঝে অশ্লীলতা অসততা অপবিত্রতা অমানবিকতা অজ্ঞানতা অপারগতা ইঞ্জেক্ট করি ধীরেধীরে। খুব ধীরেধীরে স্তন্য পান করে সে প্রথম উঠে দাঁড়ায়। তারপর ক্রমশ শিশুর রক্তে বিষ ঢুকায়ে দেই, সুনিপুণ-সুচারুভাবে তাকে লম্পট করে তুলি। যেমনটা আমরা নিজেরাও হইছি। মেঘে মেঘে বেলা বাড়লে শিশুটা দুই পায়ে ভর দিয়া হিংসা করতে শেখে। তারপর হাত বাড়ায়ে মুঠা করতে করতে শিখা নেয় হিংস্রতা। আমার কাছে সবচেয়ে সুন্দর লাগে অভ্রুণ অবস্থাকে। যখনই শুনি একটা শিশু আসতেছে দুনিয়াতে, আমি চোখের সামনে দেখি অভ্রুণ থেকে একটা ভ্রুণ ফুটতেছে; ক্রমশ বদমাসের মতন পবিত্র মাংসল হইতেছে; অপূর্ণতার মতন পূর্ণতা পাইতেছে। তারপর? তারপর মানুষের মতন অপবিত্র; অধার্মিকের মতন লম্পট; ধার্মিকের মতন অমানবিক হয়া উঠতেছে একটা গোলাপের এস্থেটিক ঠোঁট।
একটা সকাল
(অনারেবল প্রাইম মিনিস্টারের প্রতি)
তাহাজ্জুদের নামাজ পইড়া যখন তুমি কোরান তিলাওয়াত কর, তখনও তো ভোরের আলো ফুটে নাই দুনিয়ায়; তখন কেবল আজানের সুরে গাছগুলা আড়মোড়া ভাঙতেছে আর ফুলগুলা মিষ্টি সুবাস ছড়ায়া হাসতেছে ডালে ডালে।
তারপর তো অনেকগুলা ঘড়ির এলার্মে বাজনা বাজা শেষে, আমাদের ঘরে একটা সকাল আসে। আমরা তো বিছানায় বইসাই খবরের কাগজে তোমার কথা পড়ি। খবর পাই তিস্তা-চুক্তি হবে, পদ্মার বুকের উপরে ব্রিজের কাজ প্রায় শেষ হয়া গেছে। খবর পাই মাদরাসাগুলাতে মওলানাগুলা বাচ্চাদেরকে খুবলে খাইতেছে। পঞ্চগড় থিকা নাকি কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা যাইতেছে। খবর পাই হেফাজতিগুলা তোমারে ব্লাইন্ড করতে চায়। তোমার নাকি টেকাটুকা সব বিদেশেই চইলা গেছে।
তাহাজ্জুদের নামাজ পইড়া যখন তুমি কোরান তিলাওয়াত কর, তখন সেই অন্ধকারেই নূরের ছায়ায় কারা যেন আমবাগানে করুণ সুরে কবর খুদতেছে।
এইবারের সেমিস্টার ফাইনালটা দিয়াই
আমার ঘরে শীতের সকালটা তো একটু দেরি কইরাই আসে
ঢাকা শহরের এই ঘুপচি ঘরে তো
সকাল আর বিকালে তেমন তফাৎ নাই।
ঘুম ভাঙলে আরো একটু মরার মতন কইরা পইড়া থাকি।
মানে অত প্যারা নাই, টাইমটা চেক করি দুই/তিন বার
ইয়াদ করার চেষ্টা করি আজকে ভার্সিটির কোনো ক্লাস/এক্সাম আছে কিনা
তারপর উইঠা আয়েশ কইরা সিগারেট ধরায়া
ফেসবুকে নিউজফিডগুলা চেক দিতে দিতেই
চাপ আসার জন্য ওয়েট করি, চাপ পাইলে ওয়াশরুমে ঢুকি।
মেস মেম্বাররা অবশ্য মাঝে মাঝে তাগাদা দিয়া
ওয়াশরুমের শান্তি ভঙ্গ করে থাকে।
তো এইভাবেই একঘেয়ে সকালগুলা শুকায়া দুপুরে পৌঁছায়া যায়।
কাজের বুয়া আইসা ভাতডাল রান্ধাবাড়া করে,
রসূনের পিঁয়াজের পাঁচ ফোঁড়নের গন্ধে গন্ধে আমি প্ল্যান করি
এইবারের সেমিস্টার ফাইনালটা দিয়াই চইলা যাবো মেরিন ড্রাইভে
তা না হইলে রাতুলদা'র লগে পাংথুমাই গিয়া ইন্ডিয়ান বিয়ার খাবো
অবশ্য সাজেকে যাইয়া মেঘগুলারেও ছুঁইয়া আসা দরকার
আর কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়াতেও তো যাওয়া হয় নাই এখনো
সুন্দরবনে টেন্টিং করার স্বপ্নডা কি স্বপ্নই থাইকা যাবে নাকি
দিনাজপুরে কান্তজী'র মন্দির চিটাগাঙে চন্দ্রনাথ...
এগুলা ভাবতে ভাবতেই ফ্রাস্ট্রেশন খায়া একটা সিগারেট ধরাই।
কাজের বুয়া আইসা বলে, মামা রান্ধাবাড়া হয়া গেছে--খায়া লন।
আমি পাত্তা দেই না, নিবিষ্ট মনে ধোঁয়ার রিং বানাই আর ভাবি
জীবনডা কি আমার এই ঘুপচি ঘরেই আটকায়া রবে?
ভাল্লাগছে বরাবরের মতো৷ অসীম এগিয়ে যান
উত্তরমুছুনধন্যবাদ। আপনার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা রইলো।
মুছুন