কিছু-কিছু মানুষের প্রতি অতি মাত্রায় ভালোবাসা বোধ কাজ করে, এই মানুষগুলোকে নিয়ে লিখতে বসলে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। নিজের কাছে বার-বার মনে হয়, যদি অতি মাত্রার ভালোবাসা বোধের কারণে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠি…কিংবা আমার অজ্ঞতার কারণে ব্যাক্তিশিল্প বিশ্লেষণে কোন ঘাটতি থেকে যায়। শুভ্র সরখেল আমার সেই ভালোবাসার মানুষদের দলে…তবে কথা আছে, এই ভালোবাসার সেতু তৈরি করেছে শুভ্র’র শিল্পচর্চা , জীবন বোধ সর্বোপরি কবিতার প্রতি নির্মোহ ভালোবাসা বোধ।
কেবলই স্মৃতিতে ভাসি...
আমি তখন গাজীপুর এ বদলি হবার সুবাদে ঢাকা থেকে ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করি। গাজীপুর (জয়দেবপুর) ষ্টেশনের পাশেই শুভ্র’র কর্মস্থল। মাঝে-মাঝে কথা হয় কিন্তু দ্যাখা হবে-হচ্ছে করেও হয়ে ওঠে না... একদিন দ্যাখা হয়েই গেল...কাজের ফাঁকে-ফাঁকে নানান কথাবার্তা হলো, আড্ডা হলো। আমরা বিয়ার না পেয়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতোই বিয়ারের ঘ্রানে স্বাদে ভরা অন্যরকম সাধারণ পানীয় খেয়ে নিলাম। অন্য রকম শুভ্রকে আবিষ্কার করলাম সেদিন! এই শুভ্রর শিল্প ভাবনা আমাদের চেয়ে ভিন্নতর না হলেও শিল্প প্রকাশের যে ভিন্নতা জানলাম তাতে মনে হলো- শুভ্র’রা বেঁচে থাকলে আমরা যারা শিল্পের মানদণ্ড বিচারের দায় নিয়ে, খারিজ-বাতিলের খেলা খেলি তারা ক্ষান্ত হতে বাধ্য!
এই খারিজ বাতিলের খেলা আর এক অদ্ভুত খেলা, শিল্পের মানদণ্ড বিচারের দায় নিয়ে বসে আছে আমাদের সমাজে এক জাতের ‘দাদাবাবু’ সম্প্রদায়! এই দাদাবাবুরা(!) সকল শিল্প প্রকাশের মাধ্যমকে, নিজেরা একটা ফর্মেটে বেঁধে রেখেছেন, এই ফর্মেট বা প্যার্টানের বাহিরে গেলেই আপনার সকল শিল্প বাতিল।
শুভ্র’রা বদলে দেবার যে স্বপ্ন বুনে যায় অহর্নিশ সে স্বপ্নের আভায় ভরে যাবে আমাদের নোংরাভাবে হলি খেলার আপাদমস্তক ভদ্র লোকের বেশে থাকা মানুষগুলোর মস্তিস্ক!
আবার, ঘোর সন্ধ্যায় মুগদা হাসপাতালের খোলা মাঠে শুভ্র’র সাথে যখন মেতে উঠেছি আড্ডায় তখন জানতে পেরেছি ওর কবিতা প্রেমের সাথে কবিতার মানুষগুলোর প্রতি ভালোবাসার পরিধি... কোন দিনও বলা হয়নি, আজ লিখতে বসে কেন যেন বারবার বলতে ইচ্ছা করছে- “বেঁচে থাকার যুদ্ধে অযোগ্য এই যোদ্ধারা তোমাদের জন্য তৈরি করে যাচ্ছে শিল্পময় বিশ্ব!”
কবিতার শুভ্র...
০১.
কবিতা আমার কাছে কবির দর্শন যতটা মনে হয়, তার চেয়ে বেশি মনে হয় জীবনের দর্পন! আমি কবিতায় ডুবে গিয়ে কেবলি ভাব দর্শনে ভিজে যাইনা বরং কবিতা দর্পনে নিজেকে দ্যাখার যে আনন্দ যেটা পেতে মরিয়া হয়ে উঠি, এতেই আমার স্বস্তি!
পড়ুন, কি সহজ ভাষায় সরলতার সাথে কবি বলেন
রহমান চাচা প্রায়ই বলতোমৃত্যু খুব আপন তার কাছে।রেল লাইনের অংক সে বুঝত না—বাগধারার শব্দ সে জানতো না—জমির মামলা, জুম্মার নামাজ, সন্ধ্যায় উলুধ্বনি, পুলিশের গন্ধ, ককটেলের রঙ ইত্যাদিকিংবাআরও অনেক ইত্যাদি—সে কিছুই চিনতো না ভালো করে(কবিতার নামঃ প্রলাপ)
এমন দর্পনে নিজেকে ভাসিয়ে দেবার যে আনন্দ সেটা অন্য কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই! জীবনের অর্থ না বোঝা অতি সাধারণ এক মানুষ মৃত্যুকে ভাববেন এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কবিতার ভাষায় সহজিয়া প্রানের যে কথা সে কথা গাথুনিতে বেঁধে রাখা অতি সহজ সাধ্য নয়। ভাষার জটিলতায় অনেকেই ভীত হয়ে ওঠে আবার ভাষায় মাধুর্য্যতায় অরি তুচ্ছ কথাও গেঁথে যায় কানে সাথে প্রাণে। এখানেই কবির মোড়লপনা! কবি সেই মাধুর্য্য ভরা ভাষার স্রষ্টা ! কবি শুভ্র সরখেল সেই সহজিয়া প্রাণের কথায় গড়ে তুলেছেন কবিতার মহাজগত। আমরা কি তাকে ফেলে দেব নাকি খুঁজে নেব এ দায় আমাদের। কবির কাজ সৃষ্টিতে মগ্ন থাকা , শুভ্রর মগ্নতা আমাকে ছুয়ে যায়।
০২.
কবিতা মানেই জটিল অংক কষায় খেলা নয়।এখানে আবেগের যতটা মিশ্রণ সাথে যাপিত জীবনের সমস্ত অভিজ্ঞতার ফসল! অন্যদিকে আমার কেবলি মনে হয় , বেদনাময় স্মৃতি, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, শঙ্কা, দুর্ভাবনা গ্রস্থ জীবনের যে পলায়নপরতা কিংবা নিজেকে ভুলিয়ে রাখায় যে প্রয়োজনীয়তা, সেটার সবচেয়ে ভাল মাধ্যম কবিতায় ভেসে যাওয়া বা ডুবে থাকা। মায়ের মতন স্নেহ দিয়ে কবিতা ছাড়া আর কে আছে সংসারে কবিকে আগলে রাখার! তাই হয়তবা কবি সত্য আওড়ে যান কবিতায়…
আমার একটা মৃত্যু দরকারদূরন্ত মৃত্যু।বাহকের সারথি হওয়ার জন্য আল্লাহ্র কাছে দোয়া চাইতে হয়হায় আমার কৃষ্ণ!তুমি আমার প্রেম যদি একবার দেখতে—হয়তো আবার প্রেম করার জন্য বকুল ফুলের গাছ হয়ে যেতে।বকুল ফুলের মৃত্যু দরকার—দূরন্ত মৃত্যু।(কবিতার নামঃ আমার একটা মৃত্যু দরকার)
অন্যদিকে, উপমা বর্জিত কবিতা কিংবা বলা যেতে পারে সরল রৈখিক ভাষায় কবিতা সাজানোর যে প্রচেষ্টা সেটা দেখা যায় শুভ্র সরখেলের কবিতায়।কবি যখন বলেন- “বকুল ফুলের মৃত্যু দরকার - দূরন্ত মৃত্যু”। খুব সহজে পাঠকের মননে গেঁথে যায় সে বাক্যের ইতি বৃত্তান্ত... এখানে শব্দের খোঁজে, বাক্যের গঠন তন্ত্রের সুত্রের খোঁজে পাঠককে মরিয়া হয়ে উঠতে হয়না। পাঠক এখানে নিজেই তার বিস্তৃত মনের জানালা খুলে বুঝে উঠতে সক্ষম বলেই আমার মত। আবার যখন, “কলার পাতায় সত্য উপনিষদ” কবিতায় কবি বলেন-
আমার তো ওই বালের ব্যালেন্স টুকোই নেই!
এখানে এসে পাঠকের মনে হতেই পারে, কবিতায় শব্দের ব্যবহারে কবির অসচেতনতা ভেসে উঠছে... নাহ! আমি বলি কি, ভাবুন এভাবে, মুখের ভাষা যে কবিতা হয়ে উঠতে পারে তার প্রমান পেয়ে যাই আলোচ্য কবিতাংশে! মানুষের মুখের ভাষা কিংবা সংবাদপত্রের ভাষা কবিতা নয়। এগুলো কবিতা হলে কবিতাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার প্রয়োজন বোধ জন্মাত না। বরং বলা যায়, কবিতার কিছু লাইন মুখের ভাষার মতোই লাগে। কিছু-কিছু কবিতার লাইন মানুষের মুখের ভাষার সাথে, চেতনার ভাষার সাথে, বোধের সাথে, অভিজ্ঞতার সাথে, প্রত্যাশার সাথে এতোই মিলে যায় যে, কবিতার ওই লাইনটি প্রবাদে পরিণত হয়৷ তাহলে মুখের ভাষার সাথে কবিতার ভাষার দূরত্ব কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো? কিংবা ধরুন, রিকসাওয়ালার কন্ঠে যখন কবি বলেন, ‘পেডেল মাইরা কি চান্দে যাওন যায়!’ তখনও দার্শনিকতার স্পর্শে সচেতন হয়ে ওঠে মন। সীমাবদ্ধতা ও প্রত্যাশার বিপরীতার্থকতাও ভেসে ওঠে। কিন্তু কথাটি তো নিছক মুখের ভাষা-ই। কিংবা বুদ্ধদেব বসু যখন বলেন, ‘সোনালী আপেল, তুমি কেমন আছ?’ অথবা শক্তি চট্টোপাধ্যায় যখন বলেন, ‘যেতে পারি- কিন্তু কেন যাবো?’ তখন? তাহলে দেখা যাচ্ছে মুখের ভাষাও তার প্রচলিত অর্থকে ছাপিয়ে বিশেষ অর্থ বহন করতে পারে। তেমনি কবিতার ভাষাও মানুষের মুখের ভাষা হয়ে যেতে পারে। কবিতার বিশেষত্বও এখানেই। একটি শব্দকে সাধারণভাবে উপস্থাপন করলে সে সাধারণ অর্থই প্রকাশ করবে বা আভিধানিক অর্থই প্রকাশ করবে। কবিতায় ব্যবহৃত শব্দ যদি আভিধানিক অর্থকে অতিক্রম না করতে পারে তাহলে বলতে হবে কবি তার ভাবকে শব্দের নদীর মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারেনি। আবার সাধারণ মুখের ভাষাকেও সাধারণ অর্থ থেকে উপরে তুলে তাকে বিশেষ অর্থে অর্থায়িত করা যায়। তখন মুখের ভাষাও হয়ে ওঠে কবিতা।
০৩.
কবি শুভ্র সরখেলের কবিতার ধরণ, সাথে তার কবিতাকে নিয়ে অপকটে কথা বলার ধরণ প্রায় একি ধাচে বাঁধা। কবিতা নামক প্রেয়সীকে সে যেমন অন্যধাঁচে সাজিয়ে তোলে তেমনি কবিতার প্রতি তার প্রবল ভালোবাসা বোধ বোঝা যায় “বিন্দু’তে” প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে। “কবিতা আপনার কাছে কি?” এমন প্রশ্নের উত্তরে শুভ্র বলেন-
কবিতা আমার কাছে ফালতু একটা ব্যাপার, যাকে আমি যেকোনো সময়, যেকোনভাবে, যেকোন পরিস্থিতিতে ভালবাসতে পারি।
শব্দের আড়ালে যে ভাবার্থ আমাদের অনুসন্ধানী করে তোলে অর্থাৎ গোটা বাক্য থেকে একটি-দুটি শব্দের অর্থ বা ভাবার্থ উহ্য করে আমরা যদি ভাবতে থাকি তাহলে কবিতার প্রতি কবির প্রবল ভালোবাসা বোধ আমাদেরকে জাগিয়ে তোলে।খুব তুচ্ছ করেও যে ভালোবাসা যায় সেটা কবি শুভ্র সরখেলের কাছে শিখতে আমার লজ্জা হয় না বরং আমি খুঁজে পাই আমার আর এক সত্ত্বাকে।
কবির কবিতারভাষা ভিন্ন বলে গণ্য হয় তখনি, যখন কবি তার পূর্বসূরিদের কবিতারভাষা থেকে নিজেকে ভিন্নভাবে প্রকাশের শক্তি অর্জন করেন। কবিতা সৃজনে কবির তৃতীয় চোখের (অনুভবের চোখ) প্রখরতা যেমন স্বীকৃত তেমনি কবি মনের চেতন বা অবচেতন শক্তিসমূহ এক উজ্জ্বল মুহূর্তে তাদের দুজনের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে কবিতাকার লাভ করে দৃশ্যের সৃষ্টি করে। একারনের হয়ত বাংলা কবিতা প্রকৃতিসম্ভূত হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। শুভ্র সরখেলও দৃশ্যের সৌন্দর্য মন্থন করে কবিতার ভাঁজে-ভাঁজে নিসর্গপ্রেমের কথা তার কবিতায় ফুটিতে তুলেছেন... “সত্য প্রেম” কবিতায় কবি দৃশ্যের বর্ণনা করেন এভাবে,
জলের উপর তোমার মুখের ছায়াকলাগাছের পাতায় দেখেছি অনেক আগেই—তোমার মুখ কলা গাছের পাতায় দেখা যায় অনেক অদ্ভুত।
জীবনের এই বেলায় এসে আমার ব্যক্তিগত মত এই যে, কবিতা কারবারীদের অধিকাংশই একসাথে মিলেমিশে ‘একটি কবিতা’ লেখার চেষ্টা করে চলেছেন, তখন কাউকে স্বতন্ত্র কবি হিসেবে চিহ্নিত করার কাজটি কঠিন হয়ে ওঠে। খোলাভাবে বললে, বাংলা কবিতায় ত্রিশদশকের কবিদের আধুনিকতা, পৃথক কবিতাভাষা থেকে শুরু করে ইউরোপীয় কবিতার প্রভাব ও প্রকরণ এখনো বাংলা কবিতাকে ঘিরে রেখেছে, সেখানে মাত্র কয়েকজন তরুন নিজ পথে হাঁটছেন। কবিতার প্রয়োজনে ভাষা শৈলিকে যেমন নিজের মত করে দেখছেন, তেমনি উপমা বর্জন করে ভাষার শিল্পীত ব্যবহার করছেন। শুভ্র সরখেল সেই তরুণদের একজন।
ভালো থাকুক শুভ্র সরখেল নামের নতুন নক্ষত্র!
প্রাবন্ধিকের কাছে প্রশ্ন, আশা করি উত্তর দেবেন। আপনি লিখেছেন "এই খারিজ বাতিলের খেলা আর এক অদ্ভুত খেলা, শিল্পের মানদণ্ড বিচারের দায় নিয়ে বসে আছে আমাদের সমাজে এক জাতের ‘দাদাবাবু’ সম্প্রদায়! এই দাদাবাবুরা(!) সকল শিল্প প্রকাশের মাধ্যমকে, নিজেরা একটা ফর্মেটে বেঁধে রেখেছেন, এই ফর্মেট বা প্যার্টানের বাহিরে গেলেই আপনার সকল শিল্প বাতিল। " এখানে দাদাবাবু কে? কোন দাদাবাবু কোন ফর্মেট বা প্যাটার্ন তৈরি করেছেন, দাদাবাবুর নাম লেখার সাহস না থাকলেও সেই ফর্মেটের নাম লিখুন। আমরা জানতে চাই।
উত্তরমুছুনএইসব দাদাদের বিষয়ে আমরা যারা লেখা-লেখি করি সকলেই কম বেশি ওয়াকিবহাল! তবুও কথা যেহেতু তুলেছেন তাই কিছু না বললেই নয়…
মুছুনপ্রথম আলো সিণ্ডিকেট সহ মিডিয়ার রাবনেরা যে প্রাচীর তৈরি করেছে তাতে কে কবি-কে কবি নয়, কে গল্পাকার আর কে গল্পাকার নয় সেটা নির্ধারিত করে দেয় তারা! তেমনি ছোট কাগজ/লিটল ম্যাগাজিন (বেশির ভাগ) থেকে শুরু করে দৈনিক কাগজের সাহিত্য সম্পাদকেরাও নির্ধারন করে কার লেখা প্রকাশ হবে কার লেখা প্রকাশ হবেনা। ব্যাপারটা এমন দাঁড়ায়, কোনটা কবিতা -গল্প-ফিচার হয়ে উঠেছে এটার নির্ধারক তারাই, এবং সেগুলোই প্রকাশ যোগ্য, বাকি গুলো কিছুই হয় নাই। অপরদিকে যে ফরমেট বা প্যার্টানের কথা আমি বলেছি, ঐ পত্রিকার সম্পাদকেরাই জানে তার বেঁধে দেয়া ফরমেট বা প্যার্টান। এরা বাতিল করার ক্ষমতা রাখে! অস্বীকার করতে পারবেন, সাজ্জাদ শরিফ -ব্রাত্য-ইমতিয়াজ গংদের… অস্বীকার করতে পারবেন, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, যারা নিজেরা একেকটা সীমানা তৈরি করে রেখেছে…। ওপার বাংলার কথা বাদই দিলাম… কারন, ওপার বাংলার যেকোন কেউ মুইতা দিলে এপার বাংলার অনেক রথী-মহারথী(!)-ডান-বামীদের শরীরে আতর ছিটানোর গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে…ভালো থাকবেন, প্রিয় ভাই (পাঠক)।
এইটা কী লিখলেন ভাই? মজনু ভাই যে প্রশ্ন করছে, এটা কী তার উত্তর হইল? আপনি তো বিষেদাগার করলেন। মন্তব্যে যে যাদের নাম উল্লেখ করলেন, তারা কি বাংলা সাহিত্যের এজেন্ট? তাদের কথায় কী আসে যায়, সেটা আপনার মাথায় কুটকুট করবে কেন? এই যে বিন্দু পত্রিকা এদেরও তো নিজস্ব মতামত আছে। এরা কী সবার লেখা প্রকাশ করে? না করে না। তাহলে বিন্দু সম্পাদক সাম্যদা কি আরেক দাদা। তাহলে তো তার পত্রিকায় লেখা প্রকাশ করে আপনি আরেক দাদাতে পরিণত হইলেন। সাজ্জাদ শরিফ -ব্রাত্য-ইমতিয়াজ-সাম্যগং এরা কি বাংলা সাহিত্যের দিকবাল যে তাদের চিন্তা দ্বারা আপনি প্রভাবিত হইবেন? আপনার কথা ক্লিয়ার হইল না ভাই। আপনি বোধহয় আবেগের ড্রেনে ভাইসা যাইতাছেন, যুক্তি দিয়া চিন্তা করনের চেষ্টা করেন।
মুছুনএইখানে বিষেদাগার কই পাইলেন ভাই; নাম জানতে চেয়েছেন, নাম জানালাম। ফরমেট জানতে চেয়েছেন- ফরমেট সম্পর্কে জানালাম! এইটা ক্যামনে বিষেদাগার হইলো, আর কুটকুটানির কথা বলেন, ওটা আমার নাই বললেই চলে, যার ফলে কবিতা ছাড়া অন্য কিছু নিয়া ভাবনার সময় পাই না। পরের কথা- বিন্দুতে সাম্য সম্পাদক হইলেও একা কোন লেখা সিলেকশন করে না। বিন্দুতে লেখা প্রকাশের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমার দীর্ঘ একটা লেখা আছে, পরতে পারেন।শেষ কথা, আবেগের ড্রেনে ভাসব কেন ভাইজান। ড্রেনে ভাসলে ময়লা ছাকনির জ্বালে আটকা পইড়া যাব না, আবেগের ড্রেনে ভাসে তারাই যারা নিজেদের দিকবাল ভাবে... আমার মন্তব্যটা পড়েছেন সময় নিয়া মন্তব্য করেছেন, এর জন্য সেলাম!
মুছুনপ্রথম আলো সিণ্ডিকেট সহ মিডিয়ার রাবনেরা- এইটা কি বিষেদাগার না? ফরমেট মানে সাহিত্যের তাত্ত্বিক রূপ। আপনি তো কোন ফরমেটের নাম বলেন নাই। সাজ্জাদ শরিফ -ব্রাত্য-ইমতিয়াজ-সাম্যগং - এরা কি কোন নতুন সাহিত্যতত্ত্ব মাইনা চলে বা কোনটারে একমাত্র সত্যি বইলা প্রচার করে? এরা তো সবার লেখা প্রকাশ করে না, তাইলে তাদের চেতনায় কি কোন তত্ত্বরে একমাত্র সঠিক বইলা মনে করে? আপনি কোন তত্ত্বরে সঠিক বইলা মনে করেন ?
মুছুনমান্নাফ ভাই, অত্যন্ত সম্মানের সাথে আপনার বার-বার বলা একটা বাক্য আমি প্রত্যখান করছি, সেটা হলো- সাম্য রে আপনি ইচ্ছা কইরা টাইনা নিয়া আইসা ত্যানা প্যাচাইতাছেন! কাজেই আপনারে কিছু বলার নাই।
মুছুনশুভ্র সরখেল নামটির সাথে পরিচিত হই বিন্দুর মাধ্যমে৷ অনেক কবিতা পড়েছি তার৷ সব অবশ্য বিন্দুতেই৷ আজ তার কবিতার বিশ্লেষণ পড়লাম৷ বেশ লাগলো৷ আরো বড় প্রবন্ধ হলে আরও ভাল লাগতো৷ আরও বৃহৎ পরিসরে এই সময়কার লেখা নিয়ে বিশ্লেষণ বিন্দুর কাছে আশা করি৷ লাভ ইউ
উত্তরমুছুনলিংকন সাহেব, আমি হয়ত নিজেরে ঠিক কইরা বুঝাইতে পারিনাই। তাই আপনি সরাসরি আমার কথার উত্তর দিতাছেন না। ইতিমধ্যে একজন আমার প্রশ্নের সম্পূরক প্রশ্ন করছে, কিন্তু সেটা্ও আপনি বুঝপার পারেন নাই।
উত্তরমুছুনআমি ক্লিয়ার কইরা আবার কই -
১। আপনি কি মনে করেন শিল্পের কোন মানদণ্ড আছে? থাকলে আপনার কবিতার মানদণ্ড কোনটা। সাহিত্যতত্ত্ব থাইকা উত্তর দিবেন।
২। যে গংদের কথা কইছেন, তারা কি কোন শিল্প উদ্ভাবন বা প্রস্তাব করছে? বা প্রচলিত কোন শিল্পতত্ত্বেএর বিপরীতে নতুন তত্ত্ব চর্চা করতেছে?
৩। শুভ্র’র কবিতার লাইনে লাইনে উপমা আছে , যেমন -”বকুল ফুলের মৃত্যু দরকার—”, “পেডেল মাইরা কি চান্দে যাওন যায়!”
আর আপনি কইলেন তার কবিতায় উপমা নাই। এইকথা কইলেন ক্যান?
৪। আপনি কইছেন - ”কয়েকজন তরুন নিজ পথে হাঁটছেন”
আপনার ভাষায় একজন তো শুভ্র সরখেল, আর কারা আছে?
৫। উপমা বর্জন করাই কি নিজ পথে হাটা? উপমা বর্জন করলে কি কবিতা হয়?
ধন্যবাদ, পয়েন্ট অনুযায়ী উত্তর দিবেন আশা করি।
মজনু সাহেব! আপনার আগের প্রশ্নের সাথে এই প্রশ্নগুলার আদৌ কোন মিল পাইতাছি না!
মুছুনএইটা আমার বড় ব্যর্থতা! আসেন, পয়েন্ট অনুযায়ী আলোচনা করি-
১। মাসুমুল আলম সংখ্যায় আমি কইছিলাম - শিল্প’কে ধরাবাঁধা কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা
আমার কাছে যুক্তিসঙ্গ মনে হয় না। আমি আবারো বলি- শিল্পের কোন ধরাবাঁধা মানদণ্ড আমি
বিশ্বাস করি না! আমার নিজের পাণ্ডিত্য দিয়া আমি যতটুকু বুঝবার পারি, আমার কাছে ঐ
শিল্পের মানদণ্ড অতটুকুই।
২। আমি যাদের কথা উল্লেখ করেছি, এদের শিল্প উদ্ভাবন বা শিল্পতত্ত্বের চর্চা সম্পর্কে আমিও
জানবার চাই এইটাই সত্য কথা। কারণ এরা নিজেদের বাহিরে কাউরেই মাইনা নিতে শিখে নাই।
কোন তত্ত্বের বলে/ শক্তিতে ইনারা অন্যদের বাতিল কইয়া দেয় সেইটাই জানতে আমারো বহুত মনে
চায়।
৩। তিন নাম্বার আর পাঁচ নাম্বার পয়েন্টের উত্তর এক সাথে দেই,
(তার আগে একটা কথা- পেডেল মাইরা কি চান্দে যাওন যায়; এইটা শুভ্র সরখেলের কবিতাংশ না। )
আমি উপমা বর্জনকেই কবিতা কই নাই। কইছি- উপমা বর্জিত কবিতা কিংবা বলা যেতে পারে
সরল রৈখিক ভাষায় কবিতা সাজানোর যে প্রচেষ্টা! আমি বুঝাইবার চাইছি যে, শুভ্রর কবিতা উপমার
ভারে ভারাক্রান্ত নয়।
কবিতা সাজানোর ক্ষেত্রে একেকজন একেক ভাবে চলে, আপনার প্রেয়সীরে আপনি ক্যামনে
সাজাইবেন এইটা আপনার ব্যক্তিগত নির্মান শৈলী। তয় পাবলিকে ক্যমনে দ্যাখব সেইটা
পাবলিকের ব্যাপার। যেমন আমি সব খানেই বলি- আমি যা লিখছি, যদি এইটারে কবিতা বইলা
না মানেন তাইলেও আমার কিছু যায় আসে না । ক্যাননা, আমি কবিতা যাপন করি, আমি কবি
না, তবে হতে চাই! আমারে নিয়া কথা বলতে চাই নাই, তবে আইসা পরছে – ক্ষেমা করবেন। আসি
শুভ্র সরখেলের কবিতার কথায়- উপমা যদি কবিতার শরীররে ভারী কইরা ফেলে তাইলে আমার কাছে বড়ই ক্লান্ত লাগে, এই কারণে যারা উপমার শব্দগুলান সরল ভাষায়/ মুখের ভাষায় দিয়া কবিতার শরীর গরায় হেরা আমার কাছে হিরো। এইটা আমার ব্যক্তিগত দুর্বলতা। আমি আগেই কইছি- আমার
ব্যক্তিগত পাণ্ডিত্য দিয়া আমি বিচার করি। কাজেই শুভ্রর লাহান যেনারা লেখে আমি এই কবিগুলার
মহা ভক্ত! আসা করি বুঝবার পাইছেন।
৪। শুধু শুভ্র সরখেল নয়, আমি অনেক তরুণরে পছন্দ করি- এদের সংখ্যা এতো বেশি যে নাম কইতে
গেলে , আমার সমস্যা হইব , যেমন ধরেন- কারো নাম বাদ গেলো পরে মনে পড়লো তাইলে আমার
নিজেরে খুব ছোট মনে হইব। কাজেই, আসেন একদিন দুইভাইয়ে বইসা চা খাইতে-খাইতে আলাপ
করি। নিজেরে হাল্কা মনে হইব।