কবি, কথাসাহিত্যিক, লিটলম্যাগ সম্পাদকের মুখোমুখি হবার বিশেষ বিভাগ ‘দশকথা’। দশটি প্রশ্ন বনাম দশটি উত্তর। আপাতভাবে সংক্ষিপ্ত এই সাক্ষাৎকার সিরিজ আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে। আজ এই বিভাগে বিন্দুর মুখোমুখি হলেন কবি ইমরুল হাসান।
১। আপনার প্রথম লেখা কবে এবং কীভাবে?
ইমরুল হাসান: কোনটারে যে ‘লেখা’ বলি! এমনিতে, স্কুলের লেখা-পড়ার বাইরে ফার্স্ট লেখা বলতে তো লাভ-লেটারই লেখছি, প্রেমে পড়ার পরে; ফুল-আঁকা রাইটিং প্যাডে পেন্সিল ও বলপয়েন্ট কলম দিয়া। তারপরে এক সময় হারায়া ফেলছি।
২। কবিতা আপনার কাছে কী?
ইমরুল হাসান: তেমন কিছুই না… লিখি আর কি! লেখতে লেখতে অভ্যাস হয়া গেছে হয়তো। তো, এই অভ্যাস থিকা বাইর হওয়ার জন্যও কবিতা-ই লিখি।
বাঁইচা থাকার জন্যে বা বাঁইচা থাকতে থাকতে অনেকেই অনেক কিছু করে; তো, কবিতাও এইরকম একটা ওয়ে অফ লাইফ।
৩। কবিতা মানুষকে কী দিতে পারে?
ইমরুল হাসান: খুব বাস্তব বা ট্রানজেনশনাল কিছু দিতে পারে না, বেশিরভাগ সময়; তবে সামাজিকভাবে ‘কবি’ হইতে পারলে সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা মেবি পাওয়া যায় মাঝ-বয়সে বা শেষ বয়সে; বন্ধু-বান্ধবদের খয়রাতিও তো পাইছি একটা সময়, এই পরিচয়ে; মানে, কবিতা কবি’রে কিছু জিনিস যে দিতে পারে না - এই কথা সত্যি কথা না আসলে; যেমন দেখেন, আমি এখন ইন্টারভিউ দিতে পারতেছি এর বাইরে, রিডার হিসাবে মানুশরে এসকেপিস্ট কইরা তুলতে পারে হয়তো, অজুহাত বা উছিলাও দিতে পারে… মানে, ফিক্সড না হইলেও কিছু ইউটিলিটি তো আছে, সবসময়ই থাকে। কবিতা এতোটা ‘সমাজ বহির্ভূত’ কোন ঘটনা না আর কি, যেইরকম বলাবলির রেওয়াজ আছে...
৪। আপনার কবিতা লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি৷ ভাবনা থেকে সৃজন পর্যায়ে নিয়ে যেতে কী করেন?
ইমরুল হাসান: একটা কনশাস প্রসেস ফলো করা তো টাফ। অনেক সময় একটা ইমেজ, একটা শব্দ, একটা সুর বা একটা চিন্তা থিকা শুরু হয়। দ্যান, ধীরে ধীরে অরা-ই তাদের নিজেদের পথ'টা খুঁইজা নিতে থাকে; আমি তাদের প্রতি সৎ থাকার চেষ্টা করি, কেয়ার করার চেষ্টা করি… মানে, ব্যাপারটা পুরাপুরি এইরকম না যে, আমি কবিতা'টা লিখতেছি, বরং কবিতাগুলা আমারে লেখে; আমি সবসময় এক্টিভ কোন ঘটনা না।... তো, লেখার পরে মাঝে মাঝে এডিট করি, সেইখানে একটা 'কবিতা' ধারণার একটা এফেক্ট থাকে, কিন্তু সেইটাও ফিক্সড কোন প্রসেস না। এইসব শুইনা মনে হইতে পারে, কবিতা খুব স্পন্টিনিউয়াস ঘটনা, কিন্তু তা না; বরং কবিতার প্রসেস'টা বেশিরভাগ সময়ই একজন কবি'র কাছে তার সোশ্যাল, ইন্টেলেকচুয়াল, মোরাল, স্পিরিচুয়াল অন্যসব জানাজানি’র পরেও কিছুটা 'আন-নোন' থাকে মনেহয়। এমন না যে ব্যাখ্যা করতে পারলে বা বুইঝা ফেললে জিনিসটা আর কাজ করবে না, বরং কবিতার প্রসেস'টা একজন কবি'র কাছে মুখ্য না; কবিতাটা খুব অর্থডক্স ওয়ে'তে হইলো নাকি খুব ইউনিক ওয়ে'তে অ্যাপিয়ারড হইলো, তেমন কিছু যায় আসে না… কবিতা হইলেই হইলো৷ আমি আসলে জানি না, কেমনে কবিতা হয়। বরং বলা যায়, আমি ওয়েট করি, আমি অপেক্ষা করতে থাকি কবিতার জন্য, সবসময়; কোন সময় এইটা আসে আমার কাছে, কোন সময় আসে না… কবি হিসাবে আমার আসলে তেমন কিছু করার নাই, এই এক অপেক্ষা করা ছাড়া।
৫। আপনার লেখার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
ইমরুল হাসান: না, তেমন কেউ নাই; তেমন কোনকিছুও নাই মনেহয়; 'অনুপ্রেরণা' যদি বলেন, এইটা এমন একটা কিছু যারে আবিষ্কার কইরা নিতে হয়। আমি যে কারো মতো হইতে চাই নাই বা হইতে পারি নাই - এইটা কোন গর্বের বা ইগোর ব্যাপার না আর কি! ব্যাপার'টা জাস্ট হয় নাই। সামনে কোন আইকন বা 'অনুপ্রেরণা' থাকলে হয়তো ভালোই হইতো।
৬। আপনার উত্থান সময়ের গল্প বলুন৷ সে সময়ের বন্ধু, শত্রু, নিন্দুক, সমালোচক— এসব কীভাবে সামলেছিলেন?
ইমরুল হাসান: আমার 'উত্থান' আসলে হয় নাই এখনো। কখনো হবে - এই আশাও আমার নাই। তো, এইটা বলার পরেও বাকি অংশ নিয়া কথা তো বলা-ই যায়। আমার কবি-বন্ধু ছিলেন দুইজন - আমিনুল বারী শুভ্র আর শাহাদাত হোসেন রবিন, উনাদের দুইজনেই কবিতা লেখেন না আর। আমার শত্রুদের আমি চিনি না তেমন; পুরান বন্ধুরা বা এডমায়ার’রাই তো একটা টাইম পরে 'শত্রু' হয়া উঠেন বেশিরভাগ সময়; পারসোনাল রিলেশন খারাপ হয়া যাওয়ার পরে এইরকম কেউ কেউ মেবি আমার কবিতারও বদনাম করেন যে; আমি খালি 'মানুশ' হিসাবে খ্রাপ - তা না, 'কবি' হিসাবেও খ্রাপ, এইরকম। তবে উনাদের শত্রুতাও আমার কবিতারে যে বাঁচায়া রাখতে পারবে না - এইটা ভাইবা একটু খারাপই লাগে। নিন্দুকদের আমি পছন্দ করি না, তেলাপোকার মতো লাগে, ইগনোর করি, মনে রাখি না। আমার কবিতার ভালো সমালোচনা করছেন বা সুন্দর কইরা পড়ছেন জাহেদ আহমেদ, ইব্রাকর ঝিল্লী ও যুবা রহমান; উনারা যেমনে আমার কবিতা পড়ছেন, খারাপ-ভালো বলছেন, সেইটা কানেক্ট করতে পারছি আমি, অনেকটাই।
৭। সাহিত্য দিয়ে কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়, কেউ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে চায়, কেউ সন্ত্রাস–মৌলবাদ ঠেকাতে চায়, আরো নানাকিছু করতে চায়৷ আপনি কী করতে চান?
ইমরুল হাসান: আমি সবসময় কবিতা-ই লিখতে চাই। মানে, কবিতা কি করলো বা করতে পারলো - সেইটা নিয়া আমার তো কিছু করার নাই! আমি হয় কবিতা লেখতে পারি বা পারি না - এর বাইরে আর তেমন কিছু নাই।
৮। যে জীবন আপনি এত বছর যাপন করলেন, তা আপনাকে আলটিমেটলি কী শিক্ষা দিলো?
ইমরুল হাসান: 'শিক্ষা'র জায়গা থিকা অইভাবে দেখতে পারি নাই; বা জীবন এখনো অইভাবে আমারে কিছু শিখাইতে পারে নাই, একই তো ‘ভুল’ করি বারবার… তো, এই কথা’তে মনে হইলো, যদি ‘শিক্ষা’ বলতে কিছু থাকে আমার, সেইটা হইতেছে - ভুল করতে পারতে হবে, বস!
৯। করোনা তথা মহামারী আপনার লেখালিখিতে কোনো প্রভাব রেখেছে কি?
ইমরুল হাসান: নিজের লেখাপত্র নিজেরেই গুছায়া যাইতে হবে - এইরকম একটা ফিলিংস হইছে। কিন্তু লেখাতে কোন এফেক্ট রাখছে বইলা মনে হয় না।
১০। পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
ইমরুল হাসান: নাহ্… বলার কিছু নাই।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: ইমরুল হাসান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে সেপ্টেম্বর বাঙলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায়।
প্রকাশিত কবিতার বই: ঋতুচিহ্নগুলি (১৯৯৮), কালিকাপ্রসাদে গেলে আমি যা যা দেখতে পাবো (২০০৫), অশ্বত্থ বটের কাছে এসে (২০১০), তোমার কথাগুলি আমি অনুবাদ করে দিতে চাই (২০১১) রাঙামাটি (২০১৩) স্বপ্নের ভিতর (২০১৪), বসন্ত ১৪১৯ (২০১৫), টেস্ট এনভায়রনমেন্ট (২০১৬), মিথ্যাবাদী রাখাল (২০১৭), লাস্ট ক্যাকটাস (২০১৮)
ফিকশনের বই: পুরি'র গল্প ও ২০৪৬ (২০১৯)
অনুবাদ: রুমি'র কাহিনি (২০১৮), হারুকি মুরাকামির ইন্টারভিউ (২০১৯), চার্লস বুকোউস্কির কবিতা (২০২০), ফরিদউদ্দিন আত্তারের মানতিকুত তোয়ারের কয়েকটা কাহিনি (২০২০)
ভাল লাগলো
উত্তরমুছুনভাই সবই ঠিক ছিল কিন্তু এইডা খারাপ লাইগিল "নিন্দুকদের আমি পছন্দ করি না, তেলাপোকার মতো লাগে, ইগনোর করি, মনে রাখি না।" কারণ কবি নজরুল বলছেন 'নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চাইতে ভাল।' নিন্দুক না থাকলে নিজের দোষ ত্রুটি ক্যামনে বুঝপার পাইবেন?
উত্তরমুছুন