কবি, কথাসাহিত্যিক, লিটলম্যাগ সম্পাদকের মুখোমুখি হবার বিশেষ বিভাগ ‘দশকথা’। দশটি প্রশ্ন বনাম দশটি উত্তর। আপাতভাবে সংক্ষিপ্ত এই সাক্ষাৎকার সিরিজ আশা করি পাঠকের ভালো লাগবে। আজ এই বিভাগে বিন্দুর মুখোমুখি হলেন কবি হাসনাত শোয়েব।
১। আপনার প্রথম লেখা কবে এবং কীভাবে?
হাসনাত শোয়েব: ছোটবেলায় ছড়া-টড়া লেখার চেষ্টা করেছিলাম। মানে পাঠ্যবইয়ে যেমন থাকে তেমন। এরপর পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। ইচ্ছা ছিল মূলত মিউজিক করার। পরে ব্যর্থ হয়ে লিখতে আসা। সেটা ২০১১ সালের ঘটনা।
২। কবিতা আপনার কাছে কী?
হাসনাত শোয়েব: এসি মিলানের কিংবদন্তি কোচ আরিগো সাচ্চি অনুশীলনে বল ছাড়াই খেলোয়াড়দের ফুটবল খেলাতেন। আমার কাছে কবিতা হচ্ছে সেই অদৃশ্য বলটা। মানে না থেকেও প্রবলভাবে থাকা। না বলেও অনেক কিছু বলে যাওয়া। অব্যক্ত একটা অনুভূতি মূলত।
৩। কবিতা মানুষকে কী দিতে পারে?
হাসনাত শোয়েব: এটা আসলে ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে যে, কবিতা থেকে সে কি চায়? কেউ হয়তো অনুপ্রেরণা খোঁজে, আবার কেউ স্লোগান কিংবা কেউ গিমিক বা টুইস্টও চাইতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, একটু নিরবতা, প্রচন্ড ভিড়েও খানিকটা নির্জনতা। এটুকুই যথেষ্ট।
৪। আপনার কবিতা লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। ভাবনা থেকে সৃজন পর্যায়ে নিয়ে যেতে কী করেন?
হাসনাত শোয়েব: আমার ইচ্ছে হলে লিখতে বসি। আগে থেকে কোন পরিকল্পনা করে বসি না। কেবল ভেতর থেকে লেখার তাড়না বোধ করল লিখি। যা মনে আসে লিখি। খুব একটা এডিট করি না। স্বতঃস্ফূর্ততা ধরে রাখার চেষ্টা করি। তবে লেখা নিয়ে কোন চাপ বোধ করি না। সিনেমা দেখা, গান শোনা, পড়া এবং খেলা দেখার মতো করেই আমি লেখালেখিকে আমি দেখি।
৫। আপনার লেখার অনুপ্রেরণা কে বা কারা?
হাসনাত শোয়েব: আমি যা পড়ি, শুনি, দেখি এবং সারাদিন যা যা করি সবকিছুই আমার লেখালেখির অনুপ্রেরণা। কোন আলাদা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী আমার লেখার অনুপ্রেরণা না।
৬। আপনার উত্থান সময়ের গল্প বলুন। সে সময়ের বন্ধু, শত্রু, নিন্দুক, সমালোচক— এসব কীভাবে সামলেছিলেন?
হাসনাত শোয়েব: লেখালেখিতে উত্থান বলে কিছু আছে কিনা আমি নিশ্চিত না। আর বন্ধু, শত্রু নিন্দুক বা সমালোচককে সামলানোর চেষ্টাও কখনো করি নাই। প্রথমত, লেখালেখির জগতে কাউকে আমি সে অর্থে বন্ধু বা শত্রু জ্ঞান করি না। আর নিন্দা বা সমালোচনা যে কেউ করতে পারে। সেটা নিয়ে আমার বলারই বা কি থাকতে পারে। কোনো কিছুতে প্রভাবিত হয়ে আমি আমার লেখালেখির সঙ্গে আপোষ করি নাই কখনো। ভালো হোক কিংবা মন্দ আমি যেটা লিখতে চেয়েছি সেটাই সবসময় লিখেছি।
৭। সাহিত্য দিয়ে কেউ দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে চায়, কেউ স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে চায়, কেউ সন্ত্রাস–মৌলবাদ ঠেকাতে চায়, আরো নানাকিছু করতে চায়। আপনি কী করতে চান?
হাসনাত শোয়েব: এসব কিছুই করতে চাই না। আমি চাই একটু নিরবতা তৈরি করতে। আর কিছু না।
৮। যে জীবন আপনি এত বছর যাপন করলেন, তা আপনাকে আলটিমেটলি কী শিক্ষা দিলো?
হাসনাত শোয়েব: জীবন তেমন মূল্যবান কিছু না যে তাকে আগলে আগলে রাখতে হবে। অন্যের আনন্দে বিঘ্ন না ঘটিয়ে নিজে ল আনন্দে থাকাটাই জরুরি।
৯। করোনা তথা মহামারী আপনার লেখালিখিতে কোনো প্রভাব রেখেছে কি?
হাসনাত শোয়েব: প্রভাব নিশ্চয় ফেলেছে, কেমন প্রভাব ফেলেছে সেটা হয়তো সামনের দিনের লেখালেখিতে দেখা যাবে।
১০। পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?
হাসনাত শোয়েব: না, কিছু বলার নাই।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
হাসনাত শোয়েবের জন্ম ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে বাঙলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতকোত্তর।
প্রকাশিত বই: সূর্যাস্তগামী মাছ (কবিতা) ব্রায়ান অ্যাডামস ও মারমেইড বিষ্যুদবার (কবিতা) শেফালি কি জানে (না কবিতা, না গল্প, না উপন্যাস) ক্ল্যাপস ক্ল্যাপস (কবিতা) দ্য রেইনি সিজন (কবিতা) প্রিয় দাঁত ব্যথা (কবিতা) বিষাদের মা কান্তারা (উপন্যাস) সন্তান প্রসবকালীন গান (কবিতা)
সম্পাদনা: ডাকঘর ও ডাক
‘অন্যের আনন্দে বিঘ্ন না ঘটিয়ে নিজে ল আনন্দে থাকাটাই জরুরি।’
উত্তরমুছুনএই বাক্যটিই তো আধুনিকতার মূল সূত্র৷ দারুণ