সতর্কতা
বৃষ্টির বিকল্প
একটি আসমানি ঝুলবারান্দা
পা-দোলানোর উদার স্পেস, বিকাল
এবং রাস্তাভর্তি বিষাদভর্তৃকা।
মেঘের নীল অভিসার দেখে
শহরের কুমেরুস্বভাব জেনে নিন,
চশমা পরুন যথার্থ টিলা ও রঙিন--
'ঋ' এর ক্রমিক আঘাতে যেন চোখ বেঁচে থাকে।
১
ইতর থেকে নিরাপদ দূরত্বে ঢোঁড়াসাপ ও বিশেষ্যের দেশে- উড্ডয়নক্ষম বৈষ্ণবের মত চলিষ্ণু ছিলাম যখন, একরকম মৃদু তাপমাত্রার আলোর নিচে জটিল মেঘ আমাদের তাড়া করল শহর ও সংকীর্ণতা থেকে দূরে, সমস্ত সবুজ ভোর। ব্রিজের নিচে থমকানো পানিতে কেউ একজন দেখছে মনের প্রবহমান অসুখ কেমন গতিজড়তায় পরাস্ত হলো -- এমন দৃশ্য বুনোফলের মত সামান্য পাখিদের সাথে ভাগ করে নিতে হবে। বাকিটা যৌগিক অধ্যাবসায়, জেনচর্চার গুলিস্তান রেপলিকা কোন। থ্রটল আর ইঞ্জিনের দৈহিকতায় লীন হয়ে বসে থাকি, ঘন্টাপ্রতি সত্তর কিলোমিটার ধ্যানগ্রস্ত ম্যানগ্রোভ হয়ে৷
এইসমস্ত কালিদাসী বর্ষা অবলা মাটির শরীর স্পর্শ করলে যে গন্ধ হয়, উল্লেখ্য- গোরস্তান একই সৌরভে ম'ম' করে আনন্দময়ীর আগমনে, তা'ই বৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথ ও হারমোনিয়াম। রুকুদের তিনতলায় লাল শুক্রবার, সারাদুপুর থৈথৈ ঋষভের ঝিল। 'বৃষ্টি' শব্দের অভিধান ভিজে ত্যানা, পলিথিন ও পরিসংখ্যান হয়ে গেলে পরে এভাবেই মনের ভাব প্রকাশ করতে হবে বারান্দায় বসে বসে আমাদের- যখন ঘরে বিস্কুটের মত বিষণ্ণতা তৈরি হবে চিরাচরিত, বাইরে বিরক্তি। হুইস্কি রঙের বিকালে সাদা তুলার ফুল নির্ভার ভাসতে ভাসতে আমাদের মাথায় এসে পড়বে- নিকেতন কিংবা ইস্কাপনে।
২
সিল্যুয়েট থেকে
ভেজা রাস্তায় কত লোক-
সারাদিন বৃষ্টির পরে
মেট্রোর অসুখ লাল হয়ে
জুতায় লেগে থাকছে।
এই জুতাপরা পা কি বাসার রাস্তা চিনবে?
মদের নোঙর ফেলে হাতের ঝাউবন
চুল শুকালে ঐ নগ্ন পিঠ হবে ফরাসি সূর্যের সৈকত।
আমি সিঁড়ি খুঁজে আর মরবো না
এমন নীরব শুশ্রূষার কালে।
বোতামে ভুল করে ছাদে উঠে যাবো
আশ্রিত হয়ে সবচেয়ে প্যাঁচানো সন্ধ্যায়,
কাঁপুনি ওঠা ভয়্যারের চোখ নিয়ে
যাবো জানালায়;
দূরবীন যথেষ্ট দার্শনিক হয়ে উঠলে
নীরবতার মাতৃমণ্ডলে প্রায়ইদেখা যায়
বালক ঈর্ষার সিক্ত, উদ্বিগ্ন শরীর।
এমন বৃষ্টির রাতে রাস্তার আলোতে একবার চেনা গেল তাকে, সিগারেট চিহ্নিত। রেইনকোটের কলার তুলে খুব দ্রুত বাসার দিকে হেঁটে যাচ্ছে। মনে হয় একটি সাদাকালো ঘাম বিবর্জিত সিনেমা শুরু হতে পারে এই দৃশ্য থেকে, একে আপাতত রাতের অন্যান্য রহস্যের কাতারে তুলে রেখে দিই আমরা। নির্জনতার এই দৃশ্যটি থেকে গোয়েন্দা গল্পের মত ভেজা তামাকের ঘ্রাণ আসছে।
ক্যাম্পের বাতাস জাগ্রত, সারি সারি রেডমিটের আড়ালে ফুটছে উর্দুর তুবড়িফুল৷ এই ভাষার শরীরজোড়া শায়েরির গহনা তাই যথাসাধ্য কান বন্ধ করে রাখি। এমন রাতে একান্ত আপন মামারাও নিশ্চয়ই সব বোতল গোপন করে নির্ভার দাখিল হয়ে গ্যাছে যে-যার ব্যক্তিগত মৃদঙ্গে। পারভারট কালভার্টে গান বন্ধ করে দ্যায় চাঁদ, ওস্তাদের সহচর। বড় মসজিদের গম্বুজে রূপার নহর দেখে মিলেনিয়াল মন ব্যাকুল ছিল খুব। ছিল ল্যান্ডলাইন ও দীর্ঘ দীর্ঘ অপেক্ষার মিহিন ক্যাসেট।
কাদা ও পিচের রাস্তায় নেমে আসা এইসব রাসায়নিক আলোর বিপরীতে সে মিথিকাল ঝুলবারান্দায় এলোকেশে দাঁড়িয়ে যখন একবার কোন-একদিন বৃষ্টি পড়ছে তথ্য-নিরাপত্তার ময়লা চাদরে -- এমন ভাবনা ওকে পাগল করে রাখবে সারারাত।
.\\\\\\\\\.
পলকা বৃষ্টির গান
এই শহরে সদ্য মোতায়েন
সতী নন্দনের আসমানি দেয়ালে
আমি থাকবো না, আমার লাশ
ঝুলে থাকবে বেদনার্ত,
বৃষ্টি নিয়ে কথা বলার কালে
চোখের জানলা ভেঙে যাবে
আর সে মুখ লুকাবে করুণ বেচারা
মেঘ চমকালে মন উতলা হলে
আর কী করার আছে
খুব দ্রুত রাস্তা পার হওয়া ছাড়া?
৩
আলেয়ার জন্য
যায় যদি এই দিন
দুপুর লাফ দেয় সন্ধ্যায়
দোনলা বিরহের বন্দুক থেকে
টেক্সটের ধোঁয়া ওড়ে।
নিখুঁত হেডশট, খুলি থেকে মন
গলে রোদে পড়ে থাকবে
ঘাম হবে ভৈরবী কুকুরের নাকে।
সে-ও পরে মেঘ হলে, ঘুরে ঘুরে
শিকারীর বাগানে হাসনাহেনার ঝড়,
কেউ বলবে না- এই বৃষ্টিতে রাগের গন্ধ নাই।
প্রত্যেক বিদায়ের চিহ্ন ভিজা রাস্তায়
মেখে আছো লাল হয়ে, রেডিওতে জমজমাট
খুনের খবর ছিল বেথোফেন বিরতি-তে।
* * *
বাংলামোটরে বৃষ্টি নাই, অথচ বিজয় সরণি ঢুকতেই সর্বহারা করে দিলো ব্রাশফায়ারে। প্রতিকূল হাওয়ার সাথে সূক্ষ্ম চার্জ এসে চোখে বিঁধছে। ধীরে ধীরে রেইনড্রপের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে, থ্রটলে আর হাত বসবে না। মাটির মত না হলেও ভিজা সিমেন্টের গন্ধ বেশ স্বাদু। গায়ের সাথে কাপড় লেপ্টায় যাচ্ছে শ্যাওলার মত। ইচ্ছা হয় লাশ বর্গা দিয়ে কেবল আত্মাটা সঙ্গে করে বের হয়ে যাই। রাস্তাগুলা গ্রৈষ্মিক যোনির মত ভিজে আছে হলুদ আলোর মধ্যে। চাকা পিছলানোর ভয় আছে, চোখ মেদুর হয়ে আসে আবার। ভুরুর উপরে চিনচিনা ব্যথা শুরু হচ্ছে, আর একটা চতুর্পদী অক্টোপাস, দ্রুতই লাজুক স্পর্শ নিয়ে মাথা জড়ায়ে ধরবে এরা। মেঘ চমকানো আলোতে খুব সাবধানে পরিচিত সব বাঁক পার হই। যতটুকু দেখা যায়, বাকিটা স্মৃতি ভরসা। পিচের উপর দানাদার লাল রং দেখে অনুমান করা যায় স্পিডব্রেকার কাছে। এইরকম লাল কোন পুষ্পে হয়না। মেট্রোর চূর্ণফুল, যূথবদ্ধ অসুখের মত পড়ে থাকে। চাকায় পরাগ লেগে থাকলো যেহেতু, এইভাবে বাসায় ফেরা যাবেনা আর। আমার প্রিয় জুতাটা ভিজে ভারী হয়ে গেছে। জুতার ভিতর ঢুকে পড়ার পরে বৃষ্টির পানি জ্যান্ত কিছুর মত নড়াচড়া করে। বাদামি সরীসৃপের মত ঢিমেতালে শ্বাস নেয়।
বাহ্!
উত্তরমুছুন“মেঘের নীল অভিসার দেখে
শহরের কুমেরুস্বভাব জেনে নিন,
চশমা পরুন যথার্থ টিলা ও রঙিন--
'ঋ' এর ক্রমিক আঘাতে যেন চোখ বেঁচে থাকে।”
কী চমৎকার অভিব্যক্তি৷ খুব ভালো লাগলো কবি