ক.
করোনাকালের এই দুঃসময়েও ‘বিন্দু’ (অনলাইন) প্রকাশনা অব্যাহত রেখে চলেছে। সারাবছর নিয়মিতভাবে লেখা প্রকাশিত হওয়া ছাড়াও ২০২০ এ চারটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। স্মৃতি আর অভিজ্ঞতা রেখে ২০২০ চলে গেল৷ নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই বিন্দুর লেখক, পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি।
ব্যক্তিকেন্দ্রীক বিশেষ সংখ্যা প্রকাশের যে উদ্যোগ আমরা নিয়েছি তার প্রথম আয়োজন ছিলো কবি উৎপলকুমার বসুকে নিবেদিত। সংখ্যাটি (অগাস্ট ২০২০) সমাদৃত হওয়ায় আমরা প্রাণিত বোধ করছি। অচিরেই এই সংখ্যার প্রবন্ধ-নিবন্ধগুচ্ছ নিয়ে বর্ধিত কলেবরে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হবে বলে আশা করছি।
খ.
বর্তমান সংখ্যাটি ব্যক্তিকেন্দ্রীক বিশেষ আয়োজনের দ্বিতীয় ধাপ। এবার আমরা নির্বাচন করলাম মাসুমুল আলমকে৷ মাসুমুল আলমের লেখালেখির শুরু ’৯০-এর দশকে। তাঁর গল্প, অনুবাদ তখন লিটলম্যাগ প্রতিশিল্পে প্রকাশিত হতো। পরে, ক্রমশ শিরদাঁড়া, গাণ্ডীব, জঙশন, দ্রষ্টব্য, অনিন্দ্য, দুয়েন্দে, সূর্যঘড়ি লিটলম্যাগের সাথে যুক্ততা তৈরি হয়।
২০টি গল্প নিয়ে প্রথম বই ‘নামপুরুষ ও অন্যান্য’ প্রকাশিত হয় ২০১১ এ৷ কথাসাহিত্যিক প্রয়াত কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর তাঁর 'গল্পের গল্প' বইটির 'নয় দশকের গল্পকারঃ একটি প্রাথমিক সমীক্ষা' প্রবন্ধে মাসুমুল আলমের এ বইটি সম্বন্ধে বলেছেন, “নিজেকে আড়ালের ভেতর দাপট বহাল রাখার বিষয়, নিজেকে দেখার রূপ ছড়ান তিনি।” মূলত এই অবলোকন সৃজিত হয়েছে বাস্তবের আকার ও পরাবাস্তব অথবা তীর্যক বাস্তবের নিরাকারের দ্বন্দ্বে ও বিভ্রমে, নিরন্তর চর্চা এবং মনননির্ভর ধ্যানে।
মাসুমুল আলম একজন নিমগ্ন কথাসাহিত্যক। একইসঙ্গে তিনি গোষ্ঠীগত আবার পরক্ষণে আলাদা, এবং একা। নিজের মতো একলা চলার পথ রয়েছে তাঁর। তবু, অতোটা উচ্চকিত নন তিনি।
গ.
লেখালেখি অনেক রকমের হয়। এক একজন লেখকের ভিত্তিতে বলা হয় কথাটা। সেখানে গত ২৬ বছর ধরে একজন মাসুমুল আলমের লেখালেখি অনেক রকম হয়ে উঠতে দেখা যায়। শুধুমাত্র লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া নয়, দেখার নানা সম্ভাবনা জারি থাকা হলো একজন লেখকের চলিষ্ণুতা। ইন- বিটুইন- দ্য লাইনস অতীত আর সমসাময়িক বিষয়ের ট্যুইস্ট তাঁর ন্যারেশনকে ঘনবুনট মাল্টিডাইমেনশনাল করেছে। স্বতঃস্ফূর্ত চকিত বয়ানের ক্যাসুয়ালিটির ভেতর সচেতন পাঠে রয়েছে এক আন্ডারটোন — টেক্সটের মধ্যে লুকানো হাতের তাশ আবিষ্কার করেন অনুসন্ধানী পাঠক। হ্যাঁ, মনস্ক পাঠক।
তাই, বিন্দুর ‘মাসুমুল আলম সংখ্যা’।
আয়োজনের শুরু থেকে আমরা নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। সানন্দে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। প্রতি পদে বুঝতে পেরেছি মাসুমুল আলম এদেশে কতোখানি আণ্ডাররেডেট সাহিত্যিক। আর বারবার মনে হয়েছে, বিন্দু ঠিক কাজটি করছে।
এ সংখ্যায় আমরা জানা, অল্প জানা, অজানা অনেকের কাছেই লেখা চেয়েছিলাম; যেহেতু বিন্দুর এরকম বিশেষ সংখ্যাগুলো উন্মুক্ত থাকে, যে কেউ লেখা পাঠাতে পারেন। অল্প কয়েকটি বিব্রতকর পরিস্থিতি ছাড়া অধিকাংশ লেখকই আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লেখা পাঠিয়েছেন। আমরা কৃতজ্ঞ।
মাসুমুল আলম এ সংখ্যায় পাঠকের এক প্রশ্নের উত্তরে তার বন্ধু হিসেবে সাগর নীল খান ও নাভিল মানদারের নাম উল্লেখ করেছেন। বন্ধুত্বের খবর এবার আমরাও পেলাম সংখ্যার আয়োজন করার সময়। প্রকাশের ঘোষণা শোনার পর তাঁরা যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন তা এদেশের সাহিত্যপাড়ায় কল্পনার অতীত। আরেকজন, কবি তানজিন তামান্না অকৃত্রিম সহযোগিতা করেছেন। এই তিনজনের সহযোগিতা ব্যতীত এ আয়োজন সুসম্পন্ন হতো না। বরাবরের মতোই এ সংখ্যার প্রচ্ছদরূপ শৈল্পিক করে তুললেন কবি ও চিত্রশিল্পী রাজীব দত্ত। আন্তরিক ধন্যবাদ আপনাদের।
এ সংখ্যায় যাঁরা লেখা দিয়েছেন আপনাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। আপনারাই বিন্দুর প্রাণ।
ঘ.
আজ এমন দিনে সংখ্যাটি পাঠকের সামনে উপস্থিত হচ্ছে, যেদিন মাসুমুল আলমের জন্মদিন। এই সুযোগে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো যাকঃ শুভ জন্মদিন!
পাঠক, এ আয়োজন আপনার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে।
সাম্য রাইয়ান
সম্পাদক বিন্দু
মন্তব্য