গল্প পাঠের যে প্রথাগত অভিজ্ঞতা তা নিয়ে মাসুমুল আলমের গল্প পড়া শুরু করলে প্রথমেই একটু ধাক্কা লেগে যায়। তার গল্পের নির্মিতি, বিষয় নির্বাচন ও ভাষার ব্যবহার- সবক্ষেত্রেই একটা ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। তার যেকোন গল্পের টেক্সট থেকে একাধিক অর্থ বের করে নেয়া যায়। কেননা তিনি গল্পে একটা বিষয়ে বলতে গিয়ে অনেক কিছু নিয়ে আসেন। ফলে, আরম্ভ, ঘটনার সর্বোচ্চে আরোহন অতঃপর পরিণতি- এ সমীকরণে হাঁটলে তার গল্প থেকে কোন রস উদ্ধার করা যাবেনা। এর জন্য দরকার পড়বে গভীর অভিনিবেশ।
মাসুমুল আলমের পরিচয়- তাঁর লেখালেখি ছোটকাগজ কেন্দ্রিক। এ বইয়ের সবগুলো গল্পই বিভিন্ন ছোটকাগজে প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়ের অবতারনা এ কারণে করা হলো যে ছোটকাগজের মৌল চেতনার সাথে তার গল্প বয়ানের সাযুজ্য রয়েছে।
এবার গল্পগ্রন্থের অন্দর মহলে যাত্রা শুরু হোক...
মোহনীয় রূপের অধিকারী এক নারী ‘রিমি’কে নিয়ে শিল্প ঘনিষ্ঠ লোকজনের মধ্যে তৈরি হওয়া নানান মনোযাতনা, তাকে কাছে পাওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছা, তার দেশ ছাড়ার পর তাদের জীবনের আপাত ‘ধীরগামী’প্রবণতা, সে দেশে আসার পর আবার তাদের মধ্যে তৈরি হওয়া উন্মাদনা- এসব নিয়ে ‘স্বৈরিণীর জন্য প্রতীক্ষা’গল্পের আয়োজন। তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ালো কে এই রিমি, যাকে নিয়ে এতো উত্তেজনা? সামরিক শাসনের প্রতিবাদে যখন ‘দেশজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রামের প্রস্তুতি’চলছে তখন এই রিমিকে নিয়ে উন্মাদনা এই ইঙ্গিতই দেয় যে সে এর চেয়েও প্রভাব বিস্তারকারী কেউ। এই রিমিই শিল্পীবৃন্দকে আবার হতাশ করে যখন এক সামরিক অফিসারকে বিয়ে করে। সামরিক শাসনের পতন আসন্ন হলে এরাই আবার আশা করে সে আবার তাদের কাছে ফিরে আসবে। গল্পের ভেতরের কাহিনী আসলে সামরিক শাসনামলে গড়ে উঠেছে যা এক নারীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
মাসুমুল আলম তার গল্পে যৌনতা, প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা, মানসিক টানাপোড়েন, ক্ষুধা, সমাজতন্ত্র, অবরুদ্ধতা, জীবনের অসরলতা, বন্ধুদের নেমক হারামী প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এসেছেন। এছাড়া লেখালেখির অন্তর্জগতের বিভিন্ন কথা, মানুষের অধোগতি ইত্যাদিও তার গল্পে বিভিন্ন গল্পে এসেছে।
এবার ‘বিশেষায়নের প্রতিবেদন’ গল্পে আসা যাক। এখানে গল্পের কথক নিজেই একটি চরিত্র। পাঠচক্রে সুকুমারদা’র সাথে পরিচয় অতঃপর তার স্ত্রী নীলুফার বানুর মনোজগতের সাথে সান্নিধ্য- যে নীলুফার বানু সুকুমারদাকে আরো পরিবার-ঘনিষ্ঠ হিসেবে আশা করে। কথক জানাচ্ছে- ‘সুকুমারদা-কে দেখি আর তার নিজের ব্যক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে ঝুঁকি তৈরি করেন তিনি নিজেই।’সুকুমারদা কথককে নিজের কাজের দিকে আকৃষ্ট করতে চান কিন্তু তার আকর্ষণ বরং নীলুফার বানুর প্রতি বেশি। সম্ভাবনাময় হিসেবে তাকে মনে করলেও সে আর এসব কাজে উৎসাহ পায়না। ফলে এক পর্যায়ে সে সুকুমারদা-কে এড়িয়ে চলা শুরু করে। শেষে কথক সব ছেড়ে ‘গতানুগতিক’পরিবারেই ফিরে আসে। এর ফলে অবশ্য তার একধরনের পরাজয় ঘটেছে বলা যায়।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে মাসুমুল আলমের গল্প-উপস্থাপনায় ভিন্নতা রয়েছে। মনোলগের আকারে গল্প বলার একটি কায়দা তিনি রপ্ত করেছেন যার নমুনা এ বইয়ের বিভিন্ন গল্পে দেখা যায়। তার গল্পের চরিত্ররা নিজেদের সাথে কথা বলে, পরিপার্শ্বকে বিশ্লেষণ করে। গল্প বলতে গিয়ে তিনি এক দার্শনিক গভীরতার দিকে ডুব দেন। লেখকের বুদ্ধিমত্তা এবং চিন্তার গভীরতার ছাপ পড়ে তার নির্মিত চরিত্রগুলোর উপরও।
‘ক্রাইসিস’ গল্পটি যৌনতা, পারিবারিক টানাপোড়েন- এসব বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে। নুরুল্লার চাকরি হয়না বলে সে ভাবীর কাছে কাম্য নয় কোনও ভাবেই। যদিও টিউশনির পুরো টাকাই সে ভাইয়ের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু এটা যথেষ্ট হয়না। এদিকে আবার ভাবীর বোনের সাথে তার সম্পর্কটা এমন যে দুজন পরস্পরের কাছে কাঙ্খিত হলেও ভাবীর বোন অন্তত চুমু খেতেও রাজী হয়না। এপ্রসঙ্গে যৌনতার কথাও এসে যায়। নুরুল্লার মনোজগতে যৌনতা বিষয়ে বিবিধ চিন্তা কাজ করে। ফলে হস্তমৈথুন এবং স্বপ্নদোষ নিয়ে তাকে ভাবতে দেখা যায়। ‘পরথম হইল প্যাট হের বাদে চ্যাট’এদুটো মৌল প্রবণতা মানুষকে সবসময়েই তাড়িয়ে বেড়ায়। এগুলো ভিন্ন হলেও একবারে অবিভাজ্য নয়। এগল্পে এব্যাপারটির দিকে আবারও মনোযোগ আকৃষ্ট হয়।
নামপুরুষ ও অন্যান্য (২০১১) (২০টি গল্পের সংকলন) প্রচ্ছদ: মোজাই জীবন সফরী দাম: ২০০ টাকা প্রকাশক: উলুখড় |
লেখক, পাঠক, লেখার জগতের নানান আচার-অনাচার, এ জগতে টিকে থাকার বিবিধ কৌশল প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা- এসব রয়েছে ‘উল্লেখযোগ্য বোরিং বিষয়’গল্পে। একরৈখিক কোন গল্প নেই বা বলতে গেলে কোন গল্পই নেই এখানে- এ এক কৌশলও বটে। লেখকের অবজারভেশন, তার অনুভূতি, সব মিলেমিশে একাকার হয়েছে। এগল্পে এসেছে মিডিয়ার কথা। মিডিয়ার নানা ধরনের নোংরামি, এ বিষয়ে লেখকদের অবস্থান নিয়ে রয়েছে সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ, ‘...কমলকুমার, অমিয়ভূষণ, ইলিয়াস, অভিজিৎ, হাসান এরা কি মিডিয়ার দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছেন নাকি তারাই মিডিয়াকে ব্যবহার করছেন সর্বাধিক পাঠক প্রাপ্তির আশায়।’সবমিলিয়ে সমগ্র সাহিত্য জগতের প্রতি লেখক একটি সমালোচনামূলক দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন এ গল্পে।
উপমহাদেশের রাজনীতি বারবার কলুষিত হয়েছে সাম্প্রদায়িকতা দ্বারা। সাধারণ জনগণই এর ভুক্তভোগী হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ভারতে বাবরি মসজিদ ভাঙা যেমন সাম্প্রদায়িক প্রতিহিংসা দ্বারা তাড়িত তেমনি এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আঘাতও অনুরূপ মনোবৃত্তির পরিচায়ক। এ নিয়েই রচিত হয়েছে ‘ভৈঁরো’গল্পটি। লেখক প্রসঙ্গ ক্রমে সময়ের পেছনেও গেছেন- ১৯৪৬ সালে, যে সময়ে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। এসময়ের দাঙ্গায় যেমন এ অঞ্চলের হিন্দুরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার প্রতিক্রিয়ায় যে বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হয় এর ফলেও অনেকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়-
একদিন সে সবিস্ময়ে লক্ষ করে যে, শ্রেণিকক্ষে নাম ডাকার সময় জয়দেব নাথ, বুলুরানি সরকার, কৃষ্ণচন্দ্র আইচ, দীপকচন্দ্র বলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো সাড়া নেই; নেই ক্যানো? পুনরাবৃত্তি এভাবেই ঘটে।
খুব ছোট একটি গল্প ‘সমবেত হত্যাকাণ্ড’। তবে আকারে ছোট হলেও এর ব্যঞ্জনা গভীর। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাপনে দেখি যে যার কাছ থেকে অনেকে বিপদের সময়ে উপকার পায় নিজেদের সুদিনে আবার তাকেই ভুলে যায়। তার সাথে দূরতম সম্পর্ক রচিত হয় বা আদৌ কোন সম্পর্কই থাকেনা। পরে যদি কেউ অনুতপ্ত হয় বা নিজেদের জীবনে ব্যর্থ হয়ে আবার পুরনো উপকারকারীর কাছে তাহলে তাকে আর তাকে না-ও পাওয়া যেতে পারে। এগল্পে এমনই এক বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের স্বভাবজাত অকৃতজ্ঞতাবোধ যেকোনও চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। গল্পের শেষ দিকে এসে দেখা যায় যারা আবার উপকারকারীর কাছে যায়, তারা তাকে পায়না, পায় তার সত্ত্বাকে-যে তাদের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত। এপর্যায়ে এসে তারা খুবই ভয়ংকর হয়ে উঠে। অবশেষে তারা ‘একটি প্রাণের মৃত্যু’ঘটায়। এভাবে তারা যে আসলে নিজেদের ব্যর্থতাকে, নিজেদের অপকর্মকে ঘৃণ্যভাবে প্রকাশ করেছে তা তাদের স্বীকারোক্তিতে ধরা পড়ে-‘বলাবাহুল্য অশ্লীলভাবে আমরা যা পেতে চেয়েছিলাম তা আমাদের অধিকারে আসেনি শেষপর্যন্ত।’
‘এপ্রিলের এক সন্ধ্যা’গল্পে আছে অভাবের গল্প, আছে মানসিক টানাপোড়েনের গল্প। ‘এই যে তীব্র তাপদহ চলছে’- এবাক্যেই পুরো গল্পের বক্তব্য ধরা হয়ে গেছে। অভাবের জন্য গল্প কথকের বাবাকে টিউশনি করতে হয়। ‘জামগাছ’বিক্রি করে ন্যায্য মূল্যের দোকানে দাঁড়াতে হয় চাল কেনার জন্য। এ বাবাকেই কথক খুন করতে চায়, তার মা মারা যাবার পর ‘আব্বা’র দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য। তবে শুধু একারণেই নয়, তার বাবা যেদিন মাকে ‘শয়তানমাগী’বলে গাল দিয়েছিলেন সেদিনই তাকে খুন করতে চায়। অথচ সৎ মায়ের সাথে তার ভালোই সম্পর্ক। কথক নিজের সাথে সব কথা বলে যায়। নিজেই বিশ্লেষণ করে সে বাস্তবতার মাঝে বাস করে সে বাস্তবতাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের জীবনে যে ভয়াবহ দুর্যোগ নিয়ে আসে তার উল্লেখ রয়েছে এগল্পে। ‘‘২০০৭ এ ‘সিডর’এসে লণ্ডভণ্ড করে দেয়ার পর নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আরো কয়েক দফা বাড়ে।”
‘সমাপতন‘ গল্পটি ‘ভাদাইম্যা নাম ধারণকারী একজনের গল্প। উল্লেখ্য এ নাম সে শাশুড়ির কাছ থেকে লাভ করে। মাজারের মুরগি-খাসি সরানোর দায়ে খাদেমগিরি চলে গেলে সে ঢাকায় এসে ‘বুটপালিশওয়ালা’হয়ে যায়। একাজ করতে গিয়েই এক সন্তানের জননী এক মহিলার সাথে তার পরিচয় হয় পরবর্তী সময়ে যাকে সে বিয়ে করে। তার শাশুড়ি তাকে ‘ভাদাইম্যা’হিসেবে অভিহিত করে। কারণ সে মূলত চালচুলোহীন। যে যেরকম পুরুষের কাছে মায়েরা মেয়েকে বিয়ে দিতে চায় সে আদৌ সেরকম নয়। সকল বিপত্তি কাটিয়ে অবশেষে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্ত্রীর সহায়তায় একটি ‘ভাতের হোটেল’খুলে এতে ম্যানেজারগিরি শুরু করলেও এখানেও শেষ পর্যন্ত টিকেনা। অতঃপর সে সব ছেড়ে দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়। বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরায় তার ক্রমাগত পতন হয়। তার মতোই ছেলেরও পতন হয়। বাবারই উত্তরাধীকার সে বহন করে। সে বলে-“ রক্তের ধারাবাহিকতায় আমি আমার অদ্বিতীয় ‘ভাদাইম্যা’পিতারই আরেক সংস্করণ। একটা ভ্যাগাবন্ড। নাকি আমি আমারই মতো? তবে, মিল আছে নিশ্চয়ই :দু’জনেই জাত ভাদাইম্যা।”
কারাগারের দেয়াল মানুষকে আটকে রাখতে চায়। সবখানেই একটি অদৃশ্য কারাগার রয়েছে যেন। মানুষ কোন না কোন ভাবে এ কারাগারে আটকে যায়। ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড’গল্পে এরকম কারাগারের কথাই বলা হয়েছে। গল্প কথকের বাবা কারাগারে বন্দি। গল্পে ওয়ানতানামোবে’র কুখ্যাত কারাগারে অকথ্য নির্যাতন এবং এব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনোভাবের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। মানুষ যে অদৃশ্য কারাগারে রয়েছে সেখানেও কি কম নির্যাতন চলে? নানান উদ্বেগ, উৎকন্ঠা সারাক্ষণ ঘিরে রাখে আমাদেরকে। জীবনের যন্ত্রণা চতুর্দিকে বিরাজ করে। এ থেকে যেন মুক্তি নেই। একটা ছেলেকে অকারণে মেরে ফেলা হয়, চাচা নিজের ভাতিজাকে ব্যবহার করে যৌন স্বাদ পেতে চায়- কি নির্মম বাস্তবতা এগুলো। তাহলে স্বস্তিতে দম ফেলার সুযোগ কই?
এ গ্রন্থের নামগল্প এবং সবচেয়ে বড়গল্প ‘নামপুরুষ’। লেখক একটানা কথা বলে যেতে থাকেন। কিন্তু এখান থেকে সুনির্দিষ্ট কোন গল্প বের হয়না। বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে চলে যান অবলীলায়। এ গল্প পাঠ করার মানে এক ‘অনুভবপুঞ্জ’র ভেতর দিয়ে যাত্রা। লেখক এক জাদুকরি ভাষায় পাঠককে নিয়ে চলেন বিবিধ অভিজ্ঞতা উপলব্ধি করাতে করাতে। প্রেম, রাজনীতি, আত্মহত্যা, জিন-পরি, বিপ্লব, ইতিহাস- এগুলো ঘুরেফিরে আসে। একক কোন চরিত্রের কোন ভূমিকা এ গল্পে নেই। এ গল্পের আসলে কোন শুরুও নেই, কোন শেষও নেই। এ গল্প পড়ার মাধ্যমে এক ব্যতিক্রমধর্মী গল্পপাঠের অভিজ্ঞতা হয়।
মাসুমুল আলমের গল্পগুলোকে কোন সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ করা যায়না। তার গল্পপাঠ মানে বিচিত্র অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে পরিভ্রমণ। তিনি গল্প বর্ণনার একটি নিজস্ব কৌশল নির্ধারণ করে নিয়েছেন। যেকোনও লেখকের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য দিক। প্রথার বাইরে এসে গল্প বলার এ প্রয়াস পাঠকের সমীহ লাভ করবে এটা আশা করাই যায়।
মন্তব্য