কথাসাহিত্যিক মাসুমুল আলমের আরব্যরজনীর ঘোড়া গল্পগ্রন্থটি পাঠ করেছি। পাঠ করে আমার যা মনে হয়েছে সেই কথাগুলিই বলার চেষ্টা করব। একটি বই পড়ে লেখককে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। গল্পের বইটি প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিনটি অধ্যায় দিয়ে ভাগ করা হয়েছে। আমরা যেমন দেখে থাকি প্রতিটি গল্পের শিরোনাম থাকে এই বইতে তেমন নয়। প্রতিটি গল্পই অধ্যায় দিয়ে শুরু করা হয়েছে এবং শেষে প্রতিবেদকের সংক্ষিপ্ত বয়ানে শেষ করা হয়েছে।
প্রথম গল্পটির নারী চরিত্রে আছেন কিশোয়ার। তার বক্তব্যেই গল্পটি এগিয়ে নিয়েছেন লেখক। গল্পের নারী বক্তা হিসাবে যৌনতা বিষয়টিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেছেন তিনি বিভিন্নভাবে। যদিও শুনতে কটু শোনায় পড়তে গেলে একটু হলেও কান ও মস্তিষ্কে বাজে। মানুষের জীবনে শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা সবকিছু নয়। মানবিক অনেক চাহিদার মত জৈবিক চাহিদাও একটা বিষয়। কৈশোরে জৈবিক চাহিদাকে মূখ্য করে অনেক সাহিত্য পড়া হয়। যা এখন আর তেমন একটা টানে না।
কিশোয়ার তার মেয়ের সঙ্গে রিক্সায় ভ্রমণ করতে গিয়ে রাস্তায় যা দেখেছে কৌতূহলী হয়ে মেয়ে মায়ের কাছে ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে চায়। পিরিয়ড নিয়ে আমাদের সমাজে যে ট্যাবু আছে কেউ মুখে বলবেনা বা কোন পুরুষ মানুষের সামনে কোন নারীই গল্পের ছলেও বলবে না। সেই ঘেরাটোপ থেকে লেখক পাঠককে বের করে আনতে চেষ্টা করেছেন। আমার বেশি পড়াশুনা না থাকলেও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবননান্দ দাশ, বিভূতীভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, ইমদাদুল হক মিলন, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ূন আজাদ, রসময় গুপ্ত বাংলাভাষার সাহিত্যিকদের রচিত বই পাঠ করার সৌভাগ্য হয়েছে। যদিও ভিনদেশী লেখকদের বঙ্গানুবাদ সাহিত্যও কম-বেশি পাঠ করেছি। তার মধ্যে আলোচিত উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, সামুয়েল রিচার্ডসন, জোনাথ সুইফট, উলিয়াম থ্যাকেরি, চার্লস ডিকেন্স, এ্যালেক্সানডার পুসকিন, এ্যালেক্সানডার সোল্রজেনিটসীন, ইভান টুরজেনেভ, এ্যানটন চেকোভ, দস্তয়ভস্কি, ম্যাক্সিম গোর্কি, তলস্তয় ইত্যাদি লেখকদের বই মোটামুটিভাবে পড়া হয়েছে। এখানে আমার পাঠের সঙ্গে লেখকের আরব্যরজনীর ঘোড়া কতটুকু যায় সেটিই বলতে চেয়েছি। একটি গদ্য লিখতে গিয়ে তার গল্পগ্রন্থটি পাঠ করতে হয়েছে। এটি পাঠ না করলে আমার জানাই হতো না এমন বইও লেখা হয়!
আমি অনেক কষ্টে তিনটি অধ্যায়ের তিন গল্পই পড়তে পেরেছি। আরব্যরজনীর ঘোড়া নামটি শুনে সম্পাদকের কাছে আমি লেখকের অন্য সকল বই থেকে পছন্দ করে নিয়েছিলাম। কিন্তু আমার আশা তখনই ভঙ্গ হয় বইটি পড়তে শুরু করে। আর যাই হোক সাহস করে লেখকের অন্য বইগুলি পড়ার উৎসাহ হারিয়েছি। আমার পছন্দও হয়ত ব্যর্থ হতে পারে তার অন্য বইগুলি হয়ত এই গ্রন্থটির থেকে ভালো হতে পারে। এখানে শুধুমাত্র আমার ভালোলাগা ও মন্দ লাগাই বলছি। বইটি পড়ার পরের অনুভূতিটিই ব্যক্ত করছি মাত্র। সম্পূর্ণ বইটি পড়তে পাঠককে অনুরোধ করব না কি বারন করবো সেটাই ভাবার বিষয়। আমি অন্তত জোর করে পাঠককে কিছু বলতে যাবো না যাতে করে পাঠকের পাঠ রুচির পরিবর্তন হয়। একজন লেখকের পূর্ণ স্বাধীনতা আছে তার মত প্রকাশের।
তবে বইটি পড়ে আমার ইতিবাচক মনোভাব হয়নি। লেখক বইটির শুরুতে সত্য বলার চেষ্টা করেছেন আমিও এই গদ্যটি লেখার জন্য সেই সত্যই বলার চেষ্টা করেছি মাত্র। এখানে সম্পাদক এবং লেখক কি মনে করবে সেটি আমার বিবেচ্য বিষয় নয়। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত কোন সম্পর্ক নেই। জীবনে যৌনতাই যেন মুখ্য বিষয়বস্তু, সেটাই লেখক প্রকাশ করতে চেয়েছেন। প্রথম অধ্যায়ের প্রথম পাতা থেকেই যার শুরু হয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে কিছুটা কম প্রকাশ করেছেন তিনি। তৃতীয় অধ্যায়ে আরো কম। লিখতে লিখতে লেখক নিজেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেছেন।
চুরাশি পৃষ্ঠার বইটি পড়ে আমি দুইপাতা লিখছি, সেটিও একজনের ভালোবাসার খাতিরেই। লেখকের গল্পের ধারাভাষ্য আমি দিতে বসিনি। পাঠকরা সেই ভার নিবে নিজ দায়িত্বে। হয়ত তাদের কাছে ভালো লাগতেও পারে আমার কাছে ভালো লাগেনি। এমন কি মনে কোন প্রকার দাগ কাটতেও পারেনি শুধুমাত্র ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কৈশোরের স্মৃতিগুলিকে মনে করিয়ে দেয়া ছাড়া। আমি নিজেও কোন সাধু পুরুষ নই। আমার নেই কোন কালোত্তীর্ণ সৃষ্টি। এমনকি আমার কোন গল্প কোথাও প্রকাশিত হয়নি। তবু এই গদ্যে শুধুমাত্র পাঠক হিসাবে মূল্যায়ন করার চেষ্টা আমার।
তার অন্য গ্রন্থগুলি নিয়ে অন্যান্য পাঠকেরা কী বক্তব্য পেশ করেন, তা জানার জন্য, তাদের লেখা পাঠ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা কররো। হয়ত তাদের মাধ্যমে লেখকের অন্য বইগুলির যথার্থ মূল্যায়ন হবে। আশা করতে ভয় পাচ্ছি কারণ একবার আশা করে হতাশ হয়েছি। তাই অন্য লেখকদের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা পাঠ করবো, তাদের মতামত জনার প্রতি আগ্রহ থাকবে। তারা কীভাবে লেখককে পাঠ করছেন এবং কী বলছেন।
হা হা হা হা
উত্তরমুছুন