.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

গদ্যের গায়ে রঙ | মোস্তাফিজ কারিগর

গদ্যের গায়ে রঙ | মোস্তাফিজ কারিগর

কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ-যশোর, গায়ে গায়ে লেগে থাকা শহর এসব; তবুও যশোর থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের ছোটকাগজের এক ধ্রুবতারা−‘প্রতিশিল্প’,  ঢাকা হয়েই কুষ্টিয়াতে আমাদের হাতে এসে পৌঁছাতো ২০০৩/৪এর দিনগুলোতে, তখন আমি নেহায়তই কৈশোর অতিক্রমী;  স্কুল মাড়িয়ে কলেজের বারান্দায় পা। ছবি আঁকাতে আগ্রহী ছিলাম বলে প্রতিশিল্পের মলাটগুলো ভারি ভালোলাগতো, নিজের ভেতরে ওমন সব মলাট আঁকার ইচ্ছেরা বড় হতে থাকে তখন থেকেই। আর তখন থেকেই প্রতিশিল্পের লেখক তালিকায় থাকা অন্যান্য অনেক নামের সাথে মাসুমুল আলমের নামটাও মুখস্ত হয়ে গিয়েছিলো। বয়স ও পঠনের স্বল্পতায় তখন তার লেখা আত্মস্থ করতেপারিনি। সময়োচিত সেইসব দৈন্যতায় মাসুমুল আলমের লেখা খুব বেশি মনে জাগিয়েও রাখতে পারিনি। 

তারপর কবে কবে সত্যি সত্যিই একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হওয়ার পর কবি-লেখক-প্রকাশকরা আমাকে ভালোবেসে, স্নেহ করে বেশ কিছু বইয়ের মলাট আঁকার সুযোগ করে দিতে থাকেন। নেশা ও পেশা একাকার হয়ে ক্রমশই প্রচ্ছদকার রূপে আমার অভিষেক হতে থাকলো। ঢাকার কাঁটাবন মোড়ে কনকর্ড এম্পোরিয়ামে আমার স্টুডিও হলো ২০১২ তে। কিছুকাল পরেই আমার স্টুডিওর পাশে এসে ঠেক হলো প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান‘উলুখড়’−এর।‘উলুখড়ে’র বইগুলোর প্রতি খুব আগ্রহ হতো। তাকিয়ে দেখবার আনন্দ ছিলো সেইসব বই, বিষেশত বইগুলোর মলাটের জন্য। বাংলাদেশের অন্য সব প্রকাশনাগুলোর থেকে খুব ভিন্ন মেজাজের সেই সব মলাট। অন্যসব প্রকাশনাগুলোর বইয়ের মলাট থেকে খুব আলাদাভাবে সেই সব প্রচ্ছদ আমাকে খুব টানতো। প্রকৃত চিত্রকর্ম প্রাধান্য পেতো সেই সব মলাটে। শিল্পীর স্বাধীনতার গন্ধ থাকতো। বাজারচলতি মলাট থেকে আলাদা। খুব আগ্রত হতো, তেমন সব মলাট আঁকার। কিন্তু কেমন যেনো টের পেতাম− উঁচু মাপের শিল্পী না হলে, ‘উলুখড়ে’র মলাট আঁকার সুযোগ হবেনা। নিজেকে নানাভাবে ঘষতে-মাজতে থাকি। এরইমধ্যে ‘উলুখড়ে’র  স্বত্তাধিকারী দীপ (সাগর নীল খান) দা’র  সাথে আলাপ জমতে থাকে। একটা দুটো মলাট আঁকার সুযোগ দিতে থাকলেন আমাকে। ধারাবাহিকতায় মাসুমুল আলমের‘আরব্যরজনীর ঘোড়া’বইটার মলাট আঁকার সুযোগ পাই। মলাট আঁকার প্রয়োজনে যৎসামান্য মাসুমল আলমের পাণ্ডুলিপি পড়েছিলাম। তার গদ্যের সাথে নতুন করে আবার একটা সম্পর্ক তৈরী হলো। এক দুই করে তার বেশ ক’টি বইয়ের মলাট আঁকার সুযোগ হলো গত কয়েক বছরে। বিশেষত তার অনুবাদে ঘাসান কানাফানির ‘ মেন ইন দ্য সান’বইটার মলাট আঁকতে পারা আমার জন্যে শ্লাঘার ছিলো। অসম্ভব ভালো উপন্যাস, মাসুমুল আলমের অনুবাদে, মলাট আঁকার সুবাদে আমার পড়ার সুযোগ হয়েছে। অনুবাদ হলেও গদ্যকার মাসুমুল আলমকে এখানে সম্পূর্ণতই পেয়েছি আমি।

ক্রমান্বয়ে− মাসুমুল আলমের আরব্যরজনীর ঘোড়া, মৌন ধারাপাত, মেন ইন দ্য সান, দর্শনীর বিনিময়ে, কথাপরিধি: ২২ পয়েন্ট বোল্ড ও অন্যান্য−  এইসব বইয়ের মলাট আঁকতে পেরেছি বলে আনন্দ লাগে। আনন্দ লাগে এইজন্য যে, জীবিকার কানাগলিতে হাঁটতে হাঁটতে আমাকে যেইসব বইয়ের মলাট আঁকতে হয়, সেখান থেকে বেরিয়ে সমকালীন বাংলা গদ্যসাহিত্য যাদের হাতে সুষমা পাচ্ছে, তাদের অন্যতম মাসুমুল আলমের এইসব বইয়ের মলাটে আমার আঁকা ছবি অবিচ্ছেদ্য জড়িয়ে রইলো। মলাট আঁকার সুবাদে সুযোগ হয়েছে তার এইসব বই আমার সংগ্রহে রাখা ও পড়ার। অবশ্য আমার আঁকা মলাটের বইগুলো বাদেও অন্য দুটো একটা বই আমি সংগ্রহ করেছিলাম। শিল্পী মোজাই জীবন সফরীর আঁকা মলাটে‘নামপুরুষ ও অন্যান্য’ছোটগল্পের বই আমার পড়া।

সেই কৈশোরোত্তীর্ণ বয়সের পঠনে মাসুমুল আলমের লেখার ঝাঁঝ সয়ে নেয়ার ক্ষমতা আমার সত্যিই ছিলনা। তবে গত আঠারো বছরে তার গদ্যের সাথে কম বেশি যোগাযোগ থাকায় এখন অনেকটাই বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে মনে করি। আরো কিছু আন্তঃসম্পর্ক তৈরী হয়েছে তার গদ্যের সাথে, যখন ক্রমশ আমার পাঠের তালিকায় জ্যঁ জেনে, বারোজ, বুকাওস্কি; বিশেষত হাংরি আন্দোলনের শক্তিমান গদ্যকার সুভাষ ঘোষের লেখা ঢুকে পড়ার পর। কাট-আপ পদ্ধতির গদ্য নির্মাণের ধারাবাহিকতা মাসুমুল আলমের লেখায় সচল। 

গদ্যশিল্পী হিসেবে মাসুমুল অত্যন্ত সমাজ সচেতনই শুধু নন, সমকালীন সমাজ বিশ্লেষক রূপেই তার সমস্ত লেখায় অভিঘাত রেখে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক চিন্তার জায়গাতেও সঠিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন বলেই মনে হয়েছে আমার। মধ্যবিত্যের ঘা-পচড়া ও নাগরিক রঙমাখানো জীবেনর আড়ালে ঘটে যেতে থাকা সত্যিকার ক্ষয় ও ক্ষরণ মননের চূড়ায় দাঁড়িয়ে উনি অতি সূক্ষ্মভাবে দেখতে পান। মাসুমুল দেখান− রাজনৈতিক বাস্তবতায় চিন্তা-উন্মূল তরুণ সমাজ এক স্বৈরিণীর জন্যে অপেক্ষা করে। কিছুকাল আগেও এই স্বৈরিণীর সাথে তাদের নিত্য বন্ধুতা ছিলো। তারপর সমাজ বাস্তবতা স্বৈরিণীকে দূরে সরিয়ে নিলো। তরুণরা আরো চিন্তা-উন্মূল হলো। আবার একদিন ফিরে এলো তরুণদের কাছে নারীরূপা সেই স্বৈরিণী− ঐ হলো মননের নদী। আবার স্রোতের আনন্দে ভাসার খোঁজ পেলো তারা, তখনই স্বৈরশাসনের অস্থিরতা ঢুকে যাচ্ছে ‘স্বৈরিণীর জন্যে প্রতীক্ষা’ গল্পের ভেতরে। −অত্যন্ত রূপক গল্প। মাসুমুল আলম তীর্যক স্যাটায়ারের সহযোগিতাও নেন তার গদ্যে।

বাংলা গদ্যের চলতি পথের সওয়ার মাসুমুল আলম নন। তার গদ্য পড়তে গেলে আমার মনে হয়− তাকে বুঝবার জন্যে পাঠককে একটু প্রস্তুতি নিয়েই এগুতে হবে। এমন একজন লেখকের বইয়ের মলাট আঁকতে পারা আমার জন্যে সত্যিই সম্মানের। উত্তরোত্তর তার নতুন সৃষ্টির সাথে সামান্য আঁকিয়ে হিসেবে সম্পৃক্ত থাকার বাসনা মন থেকে মুছে ফেলতে পারিনা। তার গদ্যের গায়ে আমার রঙ জড়িয়ে থাকতে চাইবে সবসময়।

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,32,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,319,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,15,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,56,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,15,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,152,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,37,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: গদ্যের গায়ে রঙ | মোস্তাফিজ কারিগর
গদ্যের গায়ে রঙ | মোস্তাফিজ কারিগর
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh2rkKnoW-rxTIa5wzmS6nZxKC6FrQ6y_WgZvE5ywx5DuuOPNxa7FptsZrUTLgR0E0CgIBDMI53cy8igHkWss37flmz6c0TveYi5MPvlpG2jN4aOmvmhAzGPmDY5F-m_jDC9T4guexyblM/w320-h160/%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%258B%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AB%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%259C+%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2597%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B2-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25AE.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh2rkKnoW-rxTIa5wzmS6nZxKC6FrQ6y_WgZvE5ywx5DuuOPNxa7FptsZrUTLgR0E0CgIBDMI53cy8igHkWss37flmz6c0TveYi5MPvlpG2jN4aOmvmhAzGPmDY5F-m_jDC9T4guexyblM/s72-w320-c-h160/%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%258B%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AB%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%259C+%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2597%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B2-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25AE.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2021/01/Mostafiz-Karigar.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2021/01/Mostafiz-Karigar.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy