পাতাদের মেলানকোলি
সকালবেলার পেন্সিল স্কেচ
বেদনা আমার রূপসী মা।—
ঐ দ্যাখো ঐ চিল! কত ওসিডির উপর দিয়ে উড়ে গেল ওঁ।—
আর্তি আমার রূপসী মা।—
নৌকার মতো নির্জন৷ এবং বাহক।—
শেয়ালের ডাকে হারমোনাইজিং? হারামজাদা!—
মেঘের শরীরে জমে আছে আজ জলজযন্ত্রণা…
আকাশও আপদ— আকাশে বিপদ— এই তো নিকটে ঘূর্ণিঝড়! আর
ঐ দ্যাখো ঐ উড়ছে চিলের দুরন্ত বাচ্চা!
দুঃখ আমার সঙ্গ-কাঙ্গাল মা।—
এই সাতসকালে; আমাকে আবার
প্রসব করেছে সে…
ঘোড়া ঘাবড়ে যাবে
শন্ শন্-শন্ প্রত্যুষ দম্
আসমান আর সবুজের দিল্—
দ্রুম্-দ্রুম্ ঐ আঁতকা আওয়াজ!
মেয়ে না ছেলে?— ধ্রুব-অজ্ঞাতে
এটুকুই জানা: হাসছে তাহার
কলিজা-কাঁপানোর
একটা শালিক— এবং কামিনী—
মার্গে মার্গে পাথর কুড়িয়ে, ঘরে ফিরলেই
ঘোড়া ঘাবড়ে যাবে!
বালিশের পাশে, ওটা কার মেধা-মাথা?
মেয়ে না ছেলে?— ধ্রুব-অজ্ঞাতে
এটুকুই জানা: বিছানায় পাশে
আরও কেউ আছে—
বুকের ভেতরে যেভাবে আসলে
একটা
পাহাড়
থাকতেই
পারে—
ফ্যান্টাসি অথবা ঘুমিয়ে থাকতে চাই
আমার নতুন মা, তোমাকে চিনতে খানিক সময় লাগছে আমার। মার্জনা ক'রো সেটুকু। তবে অতটা অচেনাও তো তুমি নও। আমি তো জানি, সুদূর হতে অতি নগণ্য স্পন্দন-জ্ঞানে, তুমি আনচান আজ আমার নিকটে— যেভাবে দুর্দান্ত কোনো দুর্ঘটনা দেখে, মনুষ্য-কৌতূহল ঘেরাও করেন স্পট।—
আমার নতুন মা, তোমার আঁচলে বাঁধা থাকব বলে আমি গোপন করছি সকল চাবির গোছা। শিশির একাকী শুয়ে থাকে ঘাসে তেমন মাঠই তো তুমি। অনিশ্চিত এই মনের দরজা দিয়ে কী অদ্ভুত-আচমকা ঢুকে পড়লে, হায়! আমি কি তাতে মুগ্ধ হইনি বলো? ভড়কে যায়নি কোনো অঙ্কের মুখস্থ কনসেপ্ট?—
আমার নতুন মা, আমি আদতে শিশুর ক্যামোফ্লাজ— চঞ্চল এক জ্বরের বাহানা। ভাঙাচোরা তবু কামার্ত অন্তর। যাপন বলতে কিছুই বুঝি না এখন। শুধু বুঝি ফুঁ-এর অভাবে মৃত্যু হবে কাল। নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে ভাঙতে, এই যে তোমাকে মায়া করছি; এই তো স্বপ্ন! ক্ষণস্থায়ী— এবং বিশ্রাম।
নদী-ভাঙনের মতো অধমের ঘুম খতমের আগেই;
হে ভাগ্যমাতা, দয়িত খোয়াব-দেবী—
আমাকে তোমার নগ্ন শরীর দেখতে দিবা না?
বিবাহ বিচ্ছেদ
কিছু কিছু চোখের সাথে দেখা হলে কথা হয়ে যায়। নতজানু মেঘ; পাতারা চায় পানি। অবকাশের সমস্ত অমায়িক ওদের দিয়ে দেওয়া হোক; এই মুহূর্তে। প্রেমিক তাই চায়। এদিকে প্রেমিকা এক বেপরোয়া ব্যাঙের সঙ্গে প্রণয়জনিত লাফ দিয়ে চলে গেছেন মুখস্থ-অভ্যাসের বাইরে। আজাদ অম্বরে।—
কিছু কিছু যাপনের সাথে ঘষা লাগলে প্রেম হয়ে যায়। নতজানু মেঘ;
এইবার শুরু হলো বৃষ্টি৷ আকাশ-ভাঙা-ক্রন্দন।
এমনই সন্ধ্যাবেলায় চলো করি বিবাহ-বিচ্ছেদ। দু'জন দু'পথে হেঁটে হেঁটে
খুঁজি প্রেমের নির্জন।
বিরহও জানে, এতে প্রেমেরই মঙ্গল—
থ্রিলার, ট্রমা ও জঙ্গল-মেলোডি
মায়ার হরিণ
বিকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি
দরজা পেরিয়ে;
ধাপে ধাপে সন্ধ্যা হওয়ার ক্রম—
যেপলিন মোড় থেকে ডানে,
সড়ক যেদিকে অ্যামাজন-দেহ
ছিদ্র ক'রে ক'রে নক্র-ভর্তি
জলাশয়ের দিকে যায়; সেই পথে
টলতে টলতে হেঁটে গেল এক
মায়ার হরিণ।—
ঘোর-ঘোর তার ভ্রমণে চোখ গেঁথে
হাতকে ইশারা করি শরাব যেখানে
তরল আকারে আকাশ— বিপ্লবী
জেলঘুঘু।—
অচিরে বৃষ্টি ঝরালো নিজ সূচনা;
মানুষের আগে ভিজে গেল বেশ
কয়েকটি ছাতা। পাখিরা সব
নীড়ে ফিরে গেলে মনে হয়—
ফেরার কোনো ফিরে আসা নেই আর
প্রস্থান কেবলই এক ঘ্রাণ-রেখে-যাওয়ার অভ্যাস।
এমনই এই সন্ধ্যালোকে—
মানুষের মতো ঘাস আর সাপের মতো রাস্তা; আর
জানি বৃষ্টি কখনো ইতি লেখে না
খোলা-চিঠির শেষে— এ যেন তার আদিম ইশারা;
চূড়ান্ত শপথ।
এ-মতে আমি হাঁটছি— হাঁটছি আমি— টলতে টলতে—
অনন্ত সবুজের এই কালোর পোষাক—
সাপের রাস্তা— পাখির আকাশ— ঘাসের গন্ধ—
ছিদ্র ক'রে ক'রে;
একটা মায়ার হরিণ।
বর্ষাকালের ব্যাঙেরা
বর্ষাকালের ব্যাঙেরা আমার নাম ধ'রে ধ'রে ডাকে।
আমি দৌড়ে গেলে তাদের কাছে, তারা চিনতে পারে না আমাকে; আমি স্বভাবে লাফ জানি না ব'লে। বর্ষাকালের ব্যাঙেরা আমার নাম ধ'রে ধ'রে ডাকে। আমি ওদের গা-ঘেঁষে দাঁড়ালে ওরা লাফিয়ে সরে যায় দূরে; আমি লাফ দেই না প্রকৃত-পুরুষ ব'লে। যদিও আমার আদি-পুরুষের অনেকেই দারুণ লাফ দিতেন। তবে তারা সকলেই নানান কটূক্তির মাটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন, এ-কথাও আমি জানি।
তাই বর্ষাকালের ব্যাঙেরা আমাকে ডাকলে আমি মাথা নত করি না। আমি দৌড় দিয়ে যাই তাদের কাছে, তাদের লাফ দেখে মাথায় বদচিন্তা জাগলেও আমি প্রশ্রয় দেই না মোটেও।
লাফানোর মতো যেকোনো চিন্তা আমাকে লজ্জায় ডুবিয়ে মারে, ভগবান!
কিলার-ক্রক
অল্প অল্প আলো। বাতাসে কাগজিলেবুর প্রবল ডমিনেন্স। এ আমার নিছক কল্পনা। মস্তিস্কের অধঃপতন। এখানে সাপের মতো ফণা তুলে আছে তরুণ সায়লেন্স। অল্প অল্প কাঁপছে কুচকুচে কালো কুমির-পানি। সবুজ শ্যাওলা ছুঁয়ে, তুমিই প্রাপ্য আমার, এরকম ভাবনার বিরতিতে, জ্বলজ্বল-জোড়া-চোখ আমাকে করছে
ব্যর্থ ও উন্মাদ।
এই জঘন্য গুহা থেকে আমাকে বের করো, ক্রিয়া। পায়ের বয়স বাড়ছে।
গুহার ঐ মাথায় ওটা কেমন জলপ্রপাত? স্বপ্নের মতো লাগে।
'লেট দেয়ার বি লাইট', 'লেট দেয়ার বি লাইট'…
সোজা আমাকে লক্ষ্য করে এগিয়ে আসছে জান্তব চোয়াল।
ধীরে ধীরে। অবশ হয়েছে দেহের অবশিষ্ট। বাতাসে কাগজিলেবুর প্রবল ডমিনেন্স।মৃত্যু নাকি সুন্দর? কে বলে? মৃত্য বড়জোর স্বাভাবিক।
দূরে ওটা কি? আলো? না কুমির?
'লেট দেয়ার বি লাইট'— 'লেট। দেয়ার। বি। লাই—
বেড়ালের লাশ
বেড়ালের লাশ নিয়ে শুয়ে আছি দাম্পত্যে। দু-একটা বছর ধ'রে এক ভয়ঙ্কর চাঁদ; আমার মগজে হয়ে আছে প্রায়ান্ধকারের পিতৃপ্রতিম। গোল-মুখ তার; অহেতুক, একেবারে।—
বেড়ালের মুখ আর বেড়ালের লাশের মুখের পার্থক্যে আমি এক আচমকা উল্কাপাত। দুর্ঘটনায় বহুবচন।
এইসব আর নিতে পারি না। ভয় হয়। ভয়ের সাথে আমার দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ। কখনো ভয়কে আমি পুষি; কখনো ভয় পোষে আমাকে। তারই যৌথগ্রীবা, গিলে ফেলছে আমাকে ভাতের গ্যাদগ্যাদা দলার মতোন; এখন, যখন আর তখন। তাই
বেড়ালের লাশ নিয়ে হেলান দিয়েছি দাম্পত্যে।
বছর-দুয়েক হলো, তবে পিঠ তো আগেই হয়েছে ব্যথাকাতর।
আর কতো আরও নব-সম্ভাবনা? নতুন লাশের গন্ধ লাগে নাকে?
এমন সুযোগ-সৃষ্টিকর্তা কে? তাকে ডাকো তাকে ডাক্ শালা
আজ আয়না মাতাল আমার…
তাকে চিনি তাই ভয় হয়, হয় অধিক-ক্রোধের প্রকাশ;
তারই অপরাধবোধে ফুরিয়ে আছে
মম বেড়ালের শ্বাস….
মন্তব্য