আমার অনেক বাড়ি ফেরা আছে
আমার অনেক বাড়ি ফেরা আছে
ভীষণ তাড়িত হচ্ছে ভেতরের উন্মুক্ত গহ্বর
একথাল ভাত পেতে রেখেছে গহীন বাসনার আচ্ছাদনে
আমার বাড়ি ফেরার তাড়া নিয়ত
তড়পাচ্ছে আমাকে
এত এত পথিক এখানে, রাজপথ নিরুপায়
বাড়িতে আমার রাজ্যের বাস, একান্ত সহায়
ঘরের একোণ - ওকোণ থেকে গার্হ্যস্থের গন্ধ শুধুই মুগ্ধতা বিলায়।
একথাল ভাতের চেয়ে ওজনে বড় নয় অন্যকোন জমকালো
মিডড্রিমের আয়োজন
স্বপ্ন এখানে গৃহস্থ আমার
যদিও বর্গাচাষে জুটাতে অক্ষম সাং বাৎসরিক ফসল।
একদিন
একদিন উজ্জ্বল ভবিষ্যত হতো আমার আমাদের
একদিন অত্যন্ত নিরিবিলি কেটে যেতো সময়
এত অভিসন্ধি, এত দুরভিসন্ধি পেরিয়ে রোজ তিক্তজীবন ছলাৎছলাৎ কাঁদতো না।
একদিন অনুক্ষণ হাসতো মা, হাসতো বাবা
একদিন স্ত্রীও ঠিক করে দিতো শার্টের কলার
একদিন এলোমেলো হয়ে গেলেও ঠিক হয়ে যেতো তৎক্ষণাৎ।
নিত্যদিন অপমান - ঘাত, বুকের কোমল জখম
এমনি করে বেহুদা সইতে হতো না।
ভাইয়ের পরে আরও ভাই, বোনের পরে আরও বোন
যূথবদ্ধ হয়ে থাকতো চিরটাকাল
আত্মীয়ের পরে আরও আত্মীয়, অনাত্মীয়ও হয়ে যেত গর্বিত আপনজন।
অথচ আজ সব ফিকে, ধীরে ধীরে সম্পর্ক সব যাচ্ছে চুকে
রাতের আকাশের শোকতারা দেখে দেখে
জীবন কি এমনিই যাবে কেটে?
পাথর
পাথর একাই এক চোখ
অন্ধ তমোহর চোখ
তাকে ভালবেসে ব্যর্থতা নেই
প্রেমিকার চেয়ে সার্থক অন্ধ তার চোখ।
পাথর একক কোন দেহ নয়
পুরোটাই তার চোখের প্রচ্ছন্ন অংশ।
অথচ তুমি দেহকে ধারণ করো
দেখভাল করো দিব্যচোখে
তুমি তাই পাথরের চেয়েও অন্ধত্বে প্রচ্ছন্ন।
এক ফোটা বৃষ্টির কণা
এক ফোটা বৃষ্টির কণা থেকেও চেয়েছি উৎপন্ন হতে অনন্য খাদ্যশস্য
চেয়েছি সারাৎসার তাড়িয়ে দিতে উদ্ভট আনন্দের হেতু
আর চেয়েছি বাতাসের সেই আকাঙ্ক্ষিত আলোড়ন
যেন সদ্য দাঁড়াতে শিখা চারাগাছ রাখতে পারে মাথা উত্তোলিত
চেয়েছি খরার নিম্নগামী সহিষ্ণু রোদ
যেন সূর্যরস্মি শোষণ করে উন্নত উদ্ভিদের বিস্তার ছড়াতে পারে
চাইনি এমন সামান্যও ডানার ঝলক
শুধু বৃক্ষের নীচে ক্ষাণিক ক্লান্তি ঝারবো ভেবে তার সার্বিক বিকাশ চেয়েছি।
ওজন বা ভার কমছে না সামান্যও
নিশ্চয়ই সে যেকোনো অন্ধকার নয়
যেকোনো ভারবাহী প্রাণী নয়
সে ছিলো এবং আছে আজও আমাদের মতো একজন মানুষ।
সে শৈশবে, কৈশোরে ছিলো বড় রকমের স্বপ্নবাজ একজন
হতে পারে যৌবনে একজন যুবতী, হতে পারে একজন যুবক।
কিন্তু সে ভার বইছে প্রচণ্ড রকমের।
যদি বলি ফুলের বাগানেই কাজ করে সে-
তবে ফুলের ভারেই নুয়ে পড়ছে প্রত্যহ।
সমবেত ফুলেরও যেহেতু ওজন ও বিস্তার
দু-ই রয়েছে।
যদি বলি মাটি খনন করছে সে যুবক
তবে মাটিরঙা অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে সে
যেহেতু মাটির গভীরে অন্ধকার এবং প্রতি পললের ঢের ওজন বর্তমান।
অথচ সে ছিলো বাঁধনহারা
সে ছিলো সূর্যকাড়া
আজ তার পিঠে প্রভূত ওজন
আজ তার মননে ক্ষরণের দহণ।
সে জানে পরাজিত হবে না জীবন
সে জানে পরাজিত হবে না সময়
উলটো ফিরে যাবে অসময়
উলটো ফিরে যাবে অকাল দহন
বুমেরাং হয়ে যাবে অফেরৎযোগ্য অস্ত্রের মত
অথচ তার আর স্থিরতা নেই
অথচ তার আর গভীর প্রজ্জ্বলন নেই
স্নায়ুর অকাল ভাংচুরে ভেঙেই যাচ্ছে তার ভুবন
অথচ সামান্যও ওজন বা ভার কমছে না।
মন্তব্য