লিখেছেন: শাহ মাইদুল ইসলাম
অনেক অভিজ্ঞতা হল। ভেবেছিলাম ‘পুরী সিরিজ’ নিয়ে কিছু ভাবব। ভাবিনি!? বিশ্বাস করুন যখন থেকে ভাবছিলাম ’পুরী সিরিজ’ পড়বো, তখন থেকেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল যে ’পুরী সিরিজ নিয়ে ভাবব। ‘কবিতা ভাবনা’, ‘কবিতা চিন্তা’ ইত্যাদি শিরোনামে অনেক লেখা পড়ি প্রায়শই। কবিতা নিয়ে কবি যে সব চিন্তা-ভাবনা ভেবে থাকেন তাই এইসব লেখায় লিখে থাকেন। কিন্তু হে কবি, হে পাঠক আমরা সকলে সকলেই জানি, কবির কবিতাচিন্তা কি ভয়ানক জিনিস! মূহুর্তমাত্র যার থেকে নিস্কৃতি মেলে না, তাকে আর কতটুকুই বা ‘কবিতা ভাবনা’, ‘কবিতা চিন্তা’ ইত্যাদি শিরোনামার আঁচলে ধরা যায়। আমার তো মনে হয়, এই লিখাগুলোর পর কবির হা-পিত্যেশ আরো বরং বেড়েই যায়। কেননা র্নিঘাত তার তখনো মনে হচ্ছেই, হায়, কবিতা’কে বলা হলো না, থেকে গেল-থেকে গেল সব সব। ‘ছিল আঠার/উনিশ মাইল টিকিট অথচ বেড়ালাম অনেক অনেক অভিজ্ঞতা হল’ উৎসর্গ কবিতা ধরে খানিক এগুতেই আমারও যারপরনাই মনে হতে লাগল ‘অনেক অভিজ্ঞতা হল’। হল!? কিচ্ছুটি না। এখন যে এই লিখছি, এর উদ্দেশ্য কিন্তু এই ‘অনেক হল’ আর ’কিচ্ছু নয়’-এর হাত থেকে পরিত্রানের একটি অপচেষ্টা। উৎপল কুমার বসু আমার সহায় হোন যেন!
“বসন্তে এনেছি আমি হাবা যুবকের হাসি।” আমি লোবনাথ ভট্টাচার্য্যরে অনুবাদে বখাটে কিশোর কবি ’র্যাঁবো’- কে পড়েছিলাম এভাবে “আর বসন্ত এনে দিল আমার নির্বোধের বিভৎস এক হাসি।” তো উৎপল কুমারের এখানটায় এসে আমার ’র্যাঁবো’কে ঝপাৎ করে মনে পড়ে গেল। এই ফরাসী চির কিশোর কবিকে মনে আনার সমূহ বিপদ আছে। নিশ্চয় মানেন, আমরা এখন কবিতা চিন্তার ভেতর আছি। আরো নিশ্চয় মানেন, কবিতা চিন্তায় থাকলে এমনতরো প্রিয় কবিরা কি তান্ডবইনা জুড়ে দেন ভেতরে ভেতরে। তো উৎপল-র্যাঁবো তান্ডবে পড়ে আমি এখন নিতান্ত হাবুডুবু খাচ্ছি। পাঠক আমার সহায় হোন যেন!
প্রিয় কবি? নিশ্চয় জানি এবং মানি যে কোন কবির কবিতা পাঠের পূর্বে উক্ত কবি আমার কাছে হোন বেচারা কবি। ¯্রফে কবিতা পাঠ শেষে মাইরালা কবিতার সুবাদে সেই বেচারাই হয়ে উঠেন রীতিমতো ত্রানকর্তা। সুতরাং হে উৎপল, আমাকে রক্ষা করুন। উৎপল কখন কীভাবে কেন আমার প্রিয় হয়ে উঠলেন? খুব ফিরিস্তি দেবো না, আর লজ্জার কথা ফিরিস্তি দেবার মতো অতো আমার নাইও। হয়নি। উৎপল বিষয়ক প্রিয় প্রসঙ্গে আমার ভরসা (যে ভরসা আমারে ভরিয়ে দিয়েছে), কেবলমাত্র কেবলমাত্রই ‘ছিল আঠার/উনিশ মাইল টিকিট অথচ বেড়ালাম অনেক অনেক অভিজ্ঞতা হল’-এইটুক। ‘পুরী সিরিজ’ কয়েকবার পড়েছি, পড়েছি আরো অনেকগুলো কবিতা। কিন্তু এই লেখা লিখতে থাকার সময়ে আমার আর কিছু নিয়ে লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না, সামর্থও নাই। থাক আর না থাক আমি কিন্তু কুন্ঠিত নই। আমি পেয়ে গেছি এক লাইন।
কবি সাম্য রাইয়ান উৎপল কুমার বসু স্মরণে ‘বিন্দু’র বর্তমান সংখ্যাটি করবেন এমন পরিকল্পনার খবর গোপনে আমি অবধি চলে আসলে আমার ইচ্ছেতাড়া ছিল তাঁর কোন একটি কবিতার বই বা ন্যুনপক্ষে একটি কবিতা নিয়ে কিছু বলার। কিন্তু প্রথমত এবং একমাত্র বলে মনে হয় যে কারণটিকে তার জন্যই কিছু করে ওঠা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। কবিতা আলোচনা বলে যে আলোচনা-সমালোচনা লেখা হয় সাধারণত, তার প্রতি আমার আগ্রহ প্রায় শূন্যের কোঠায়। যে কারণে আমি কবিতা আলোচনা থেকে আলোচনা বিষয়টিকে উপভোগ করতে পারি। আর না পারার দরুন এখন আলোচনাও করে উঠতে পারি না। আমি কবিতা পড়াকে এমন একটা কর্ম বলে বিশ্বাস করি, যার উপরে আর কর্ম নাই। কবিতা পড়ার সময় যে অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করে, তার তুলনা এমনকি আমার তুমুল প্রেমিকাতেও পাই না। ধরা যাক আমি এখন উৎপলকুমার বসু’র ‘উৎসর্গ’ পড়ছি-
হস্তচালিত প্রাণ তাঁত সেই আধোজাগ্রত মেশিনলুম আমাদের হুর রে‘বসন্তে এনেছি আমি হাবা যুবকের হাসি’ছিল ভালবাসাছিল অনিশ্চিত রেলডাক ছিল তর্জন ছিল আঠার/উনিশ মাইল টিকিট অথচ বেড়ালাম অনেক অনেক অভিজ্ঞতা হল
এই কয়টি লাইন পড়ার ফলে আমার যে অভিজ্ঞতা হলো, আমি জানি, বুকে হাত দিয়ে জানি এমন অভিজ্ঞতা আর দ্বিতীয় কিছুতেই হয় না, অথবা আঠার/উনিশ মাইল টিকিট হাতে অনেক বেড়ানোর পর তো অভিজ্ঞতার মায়েরে বাপ। বেড়াইলে অভিজ্ঞতাকে হইতেই হয়, না হয়ে তার রেহাই নাই। এখন বুকজুড়ে হু হু বাজছে, আমার আঠার/উনিশ মাইল টিকিট চাই, চাই-ই। তখন থাকবে ভালবাসা, বসন্তে আনবো হাবা যুবকের হাসি এবং হস্তচালিত প্রাণ তাঁত সেই আধোজাগ্রত মেশিনলুম আমাদের হুর রে। প্রিয় উৎপল কুমার বসু আমি কোন আলোচনাই চাইনে, চাই আঠার/উনিশ মাইল টিকিট। আঠার/উনিশ মাইল টিকিট। আঠার/উনিশ মাইল টিকিট।
মন্তব্য