.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

প্রবন্ধ: কুড়িগ্রাম কবিতায় কুড়িগ্রাম

প্রবন্ধ: কুড়িগ্রাম কবিতায় কুড়িগ্রাম
লিখেছেন: সুশান্ত বর্মণ


কোন একটি স্থান বা জায়গা স্মৃতিবাহিত হয়ে কবিতায় লিখিত হয়েছে এমন উদাহরণ সব ভাষাতেই রয়েছে। অন্যান্য ভাষায় প্রিয় স্থান, জন্মভূমি, জনবসতি, ভূমি, পাহাড়, জলাশয়, নদীর কথা কবিতা বা কথাসাহিত্যে কিছু হলেও আছে। কিন্তু বাংলাভাষী কবির প্রিয় এলাকা, বেড়ে ওঠা গ্রাম বা শহরের উল্লেখ-বিবরণ তার নিজের রচনায়, বিশেষত বিষয় হিসেবে কবিতায় উপস্থিতি খুবই কম। এমন অবস্থায় বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী, উত্তর-পূর্বের জনপদ, ব্রহ্মপুত্রের প্রবেশভূমি, ষোলটি নদীমালার স্নেহাশীষধন্য, অর্থনৈতিক, দার্শনিক, মানসিকভাবে সর্বোচ্চ দৈন্যপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলা ও শহর নিয়ে একাধিক কবির ভাববিলাস আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। মাটিবর্তী কবিগণের সঘন আবেগ দেখে আমরা অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র কুড়িগ্রামের রহস্যময় প্রবল সৌষ্ঠবের প্রতি সচেতন হই।

কুড়িগ্রাম এলাকা নদীশাসিত, দারিদ্র্যপীড়িত, বঞ্চনা ও দীর্ঘশ্বাসের অসীম দুঃখের রাত্রিবাহিত। চারপাশে শুধু হতাশা ও হাহাকারের এক অনন্ত কান্নাবিধুর ক্লিশে দৃশ্যপট। এক অপার, অবর্ণনীয়, সৌন্দর্য মঞ্জুরিত নদীসজ্জিত চরাচর তার জনগোষ্ঠীর প্রবল ক্ষুধাতাড়িত কান্না দ্বারা কণ্টকিত। কুড়িগ্রামের প্রান্তিক অবস্থান, একাধিক নদীর উচ্ছ্বল তরঙ্গ, শিক্ষার নিম্নহার, নিরন্ন বেকার মানুষের ফ্যাকাসে অবয়ব; এইসব সামাজিক, অর্থনৈতিক, দার্শনিক, আন্তর্জাতিক নৈরাজ্যের অন্তরালে আর এক অদৃশ্য ফল্গুধারা বহমান। আর সেজন্য বোধহয় মৃণ্ময় কুড়িগ্রামের প্রতিকৃতি চিন্ময় হয়ে ওঠে কবি-সাহিত্যিকগণের অতিন্দ্রীয় ভাবচেতনায়।

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের একাধিক রচনায় কুড়িগ্রামকে পাওয়া যায়। জলেশ্বরী নামের আড়ালে তিনি আসলে নিজের স্মৃতির কোমল তন্ত্রীগুলোকে একটু একটু করে স্পর্শ করেন। বাস্তব কুড়িগ্রামের মর্মরূপ সেই প্রচ্ছায়াগুলোতে বড়ই স্পষ্ট। কিন্তু, কুড়িগ্রামের প্রচলিত মুখাবয়বের অপরপ্রান্তে যে আর এক স্বপ্নছেঁড়া কুড়িগ্রামের অবস্থান, তার সন্ধান পাই কুড়িগ্রাম নিয়ে লিখিত একাধিক কবিতায়। এইসব কবিতার সংস্পর্শে কুড়িগ্রামের এক অন্য চিত্র দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এক ভিন্ন অনুভূতির প্রবল শিহরণ আমাদের বিহ্বল করে তোলে। কুড়িগ্রাম স্থানটি সম্পর্কে এক অনাস্বাদিত রূপকল্পের দেখা পাই। কবিগণের দ্ব্যর্থহীন উপস্থিতি কুড়িগ্রামের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সম্পর্কে এক অনির্বচনীয় শিল্পবোধের সন্ধান দেয়।


প্রাণের শহর : জুলকারনাইন স্বপন


জুলকারনাইন স্বপন লিখিত "প্রাণের শহর" কবিতায় কুড়িগ্রাম এসেছে এক স্বাভাবিক সৌন্দর্য নিয়ে। সরল শব্দে জীবনের সহজ অনুভূতি কবিতারূপে হয়ে উঠেছে অসাধারণ শিল্পপ্রবণ। এক আন্তরিক হৃদয়াবেগে ব্যগ্রস্বরে বলে ওঠেন-

    ভালোবাসি, বড় ভালোবাসি
    ধরলা নদী পাড়ের
    ছোট্ট কুড়িগ্রাম শহর।


স্মৃতিমেদুর রোমন্থনে তিনি মন্ত্রের মত উচ্চারণ করে যান, তার শৈশব, কৈশোর আর যৌবনের দিনগুলির কথা। দিনগুলো শহরের পথের প্রান্তে কেমন কেমন করে কীভাবে প্রলম্বিত হয়েছিল তা ভেবে কবি কাতর হয়ে ওঠেন। এক অপার্থিব অধিকারবোধ তাকে গ্রাস করে। নিজের মানসলোকে কুড়িগ্রামকে তিনি এত বেশি ভালবাসতে থাকেন যে, এর ভাগ আর কাউকে দিতে চান না। অপার লোভে সৌন্দর্যময় কুড়িগ্রামকে শুধুমাত্র নিজের করে পেতে চান। একার অধিকারে কুড়িগ্রাম শহরকে দখল করতে, আলিঙ্গন করতে চান। নিজের একান্ত প্রত্যাশা প্রকাশ করেন এভাবে-

    এই শহরের আকাশ-বাতাস
    মনে হয় একান্ত আপনার
    শুধুই যেন আমার। (১)


কবির শৈশব কৈশোর যৌবনে কুড়িগ্রাম শহর আরও বেশি দারিদ্র্যতাড়িত ছিল, অর্থনৈতিক প্রবাহ কুড়িগ্রাম পর্যন্ত না পৌছানোর কারণে মানুষের সমাগম কম হত। কোলাহলহীন, নীরব প্রান্তিক শহর কবির জীবনকে এক প্রবল আকর্ষণে জড়িয়ে থাকে। কুড়িগ্রামের নৈঃশব্দ, একাকীত্ব তার নিজের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি যেন। তাই তার ভালবাসা সজীব, বাস্তব।

নদীবহুল জনপদ হওয়ায় এখানে নদীভাঙ্গা মানুষের হাহাকার চিরকালীন। প্রত্যেকটি বর্ষাকাল এখানকার সাধারণ মানুষের কাছে ভয়াল রূপ ধরে আসে। কবি কুড়িগ্রামের মৃত্তিকাবর্তী লেখক, তাই  একজন যথার্থ মানবপ্রেমী কবির মত তিনি ভালবাসেন কষ্টপীড়িত অভাবী মানুষকে। তার এই ভালবাসায় কোন অস্পষ্ট ভণিতা নেই।

    আর ভালোবাসি এই শহরের
    অভাবী মানুষগুলোর হৃদয়ের বিশালতা!



কবিহৃদয়ের সহানুভূতি দিয়ে তিনি বুঝে ফেলেন অভাবী মানুষদের মননপরিধি। কুড়িগ্রামের ভৌগলিক জনপদ ষোলটি নদীর মায়ায় যেমন পরিপুষ্ট তেমনি ক্রোধের শাসনে বিপর্যস্ত। নদীভাঙা মানুষদের আর্তনাদ যেন কোনকালে শেষ হবার নয়। অভাব এই ভূখণ্ডের মানুষের অদৃষ্টের অমোচনীয় লিখন। কুড়িগ্রামবাসী হিসেবে কবি এই মানুষদের সাথে নিত্যদিন যাপন করেন। ঘুম থেকে উঠেই অভাবী মানুষদের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের কথা কবি ভোলেন না। কুড়িগ্রামের অবয়বের এক অনিবার্য অনুষঙ্গ এই অভাবী মানুষ। তারা ভাগ্যকে মেনে নেয়, কিন্তু এর জন্য কাউকে দায়ী করে না। বরং হৃদয়ভরা এক অসাধারণ সৌন্দর্য নিয়ে উপস্থিত হয় কবির মনোজগতে।



তীব্র কুড়িগ্রাম : সাম্য রাইয়ান


‘তীব্র কুড়িগ্রাম’ নামে কবিতা লিখেছেন সাম্য রাইয়ান। অন্তমিল সজ্জিত আট লাইনের কবিতাটি সুখপাঠ্য। সহজিয়া ভঙ্গিতে সহজ শব্দে সহজ বাক্যে কুড়িগ্রাম সম্পর্কে সহজ কথাটা অনায়াসে সহজে বলে যান। এক সুরেলা সনম্র শৈলীতে তিনি কুড়িগ্রাম প্রসঙ্গে নিজের মনোবাসনা ব্যাখ্যা করেন। যেন পূর্বস্মৃতির এক মহাকালীন যাত্রা তাকে কুড়িগ্রামের পরিণতির সাথে অনিবার্য করে তুলেছে। যেন ফলাফল তথা প্রত্যাদেশ জেনে কবিতার আড়ালে কুড়িগ্রামকে উপস্থাপন করছেন। কুড়িগ্রামের যে মহিমা তার চোখে পরেছে, তা আর কেউ দেখে নি। কুড়িগ্রামের যাবতীয় মালিন্য ছাপিয়ে তার দৃষ্টি কুড়িগ্রামের অগণন সম্পদকে দেখতে পেয়েছে। এই ভবিতব্য হল অনিবার্য, তাই তিনি ঘোষণা করেন-

    অনিচ্ছায় প্রেম বাড়ে - পুরনো আবেগ।


প্রতিটি দিগন্তে একটি করে নদীর উপস্থিতি নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের স্বভাব নদীর মত। ষোলটি নদীর মায়ামমতা ও ক্রোধ এই এলাকার মানুষের দৈবশাসিত জীবন পরিচালিত করে। এই জনপদের প্রত্যেক আবেগপ্রবণ মানুষ নদীর প্রেমে পরে। বাড়ির পাশে বয়ে চলা জলধারার প্রবহমানতা প্রত্যেককে ধ্যানমগ্ন করে। কুড়িগ্রাম জেলাবাসী প্রত্যেকে এই নদীকেন্দ্রিক কাতরতার সাথে পরিচিত। শুধুমাত্র কুড়িগ্রামে জন্মগ্রহণ করা মানুষেরাই যে এই অঞ্চলের প্রতি আবেগ অনুভব করেন তা নয়। অন্য এলাকার মানুষ কুড়িগ্রামের সংস্পর্শে এসে এক ভিন্নমাত্রার আকর্ষণ অনুভব করেন। কবিকথিত নদীমুখী মায়ারূপ অনেকটা এরকম-

    সোনাভরী-ফুলকুমর সুসজ্জিত মায়া


কুড়িগ্রাম কুৎসিত নয়। তার সৌন্দর্য অন্তরালবর্তী, মায়াময়; তার আবেগ অবারিত, অসীম। কবি মনে করেন-

    অগণন সম্পদশালী - আরও উচ্চ দাম


কুড়িগ্রাম মূল্যহীন নয়। যেমন মনে করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি অমূল্য সম্পদে ঐশ্বর্যময়। কবির চোখে এই জনপদের চিত্ররূপময়তা আসলে অন্যরকম, স্নেহকাতর, জীবনঘনিষ্ঠ। এক ব্যাকুল স্নেহময়তা দিয়ে কবি অনুভব করেন কুড়িগ্রামকে; কুড়িগ্রামের তন্নিষ্ট জীবনাচারকে। এক সহজ পরিশীলিত স্বরে উচ্চারণ করেন-

    বেহিসেবী ঘুমন্ত মেয়ে  - তীব্র কুড়িগ্রাম


কুড়িগ্রাম সম্পর্কে কবির শেষ শব্দদুটিই মূলত আসল পরিচয়জ্ঞাপক। নদীলগ্ন ভূখণ্ড এবং এর জনপদ আবাসিক অনাবাসিক প্রত্যেক মানুষকে আসলে এক তীব্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করায়। একে এড়িয়ে যাওয়া কঠিন। দরিদ্রতা, হতাশা, বঞ্চনা এবং ব্যর্থতার পাশাপাশি সৌন্দর্যে, মমত্ববোধে, স্নেহমায়ামমতায় এতটাই প্রবল যে তার তীব্রতা উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এই প্রকট পরিচিতির কারণে কুড়িগ্রাম ভূখণ্ডটি সকলের মগজের এক কোণে এক স্থায়ী আবাস তৈরি করে নেয়।

কয়েকটি বাক্যের সীমারেখায় কবি ছন্দময়, এক সুখানুভূতির বিবরণে পাঠককে আপ্লুত করেন। কোন বিকট বিবরণ না দিয়ে শুধু কুড়িগ্রাম নামক কল্পচিত্রের ব্যাপকতা বর্ণনা করেন। জনজীবনে অপার্থিব ঐশ্বর্যের অনিবার্যতা এভাবেই মূর্ত হয়ে ওঠে।



কুড়িগ্রাম : মাসুদ খান


সমকালীন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি মাসুদ খান। তার রচনার পাঠ পাঠককে এক কল্পনাতীত নান্দনিক জগতে নিয়ে যায়। এক অন্যমাত্রায়, অন্য অভিমুখে পাঠককে বিচলিত করে। শব্দের অভিনব ও নিপুণ ব্যবহার এবং আধুনিক মনন-শৈলী সৃষ্টিতে তিনি একজন সফল শিল্পী। তার কবিতাগুলোর শরীরে এক অনাবিল মোহমুগ্ধতা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে। শুধু পদ্য নয়, গদ্য রচনাতেও তিনি কাব্যিক রচনাশৈলীর নিপুণ কারিগর। তার রচনায় শব্দের মনোজ্ঞ বন্ধন ও ধ্বনিব্যঞ্জনার শৈলী অনন্য, একক বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। তার রচনার মত মাধুর্যময় পংক্তি বাংলা সাহিত্যে দুর্লভ। মাসুদ খান কোন এক অবসরে কুড়িগ্রামকে স্মরণ করেন। এক শক্তিমান শব্দশিল্পী মুখোমুখি হন তীব্র কুড়িগ্রামের। অতিলৌকিক আস্বাদন পরিণত হয় এক অনিবার্য ব্যাকুলতায়। মোহবদ্ধ শৃঙ্খল কবিকে আশরীর আলিঙ্গন করে।

‘কুড়িগ্রাম’ কবিতায় প্রাসঙ্গিক শব্দাবলী বর্ণনায় কবি প্রগলভ হয়ে ওঠেন। দীর্ঘ ঊনত্রিশখানা লাইনে কুড়িগ্রাম সম্পর্কে কবি তার মনোভাবনা অনবরত অবিরলভাবে প্রকাশ করে যেতে থাকেন। আবেগের প্রাবল্য বাঁধাহীন বিপুল উচ্ছাসে প্রবাহিত হতে থাকে। কবি নিরলসভাবে বলে যেতে থাকেন তার ভাবনাবহুল উচ্চারণগুলো। কিছু কিছু অনুভূতি যেন অনিবার্য। এক মরমী আর্তনাদ কুড়িগ্রামকে উপলক্ষ্য করে কবিকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে। কবি আর্তনাদের মত করে হতাশা প্রকাশ করেন-

    কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।
    আহা, এ-মরজীবন!
    কোনোদিন যাওয়া হবে কি কুড়িগ্রাম?


কুড়িগ্রাম যেন এক অনিবার্য উপস্থিতি, এক বাস্তব উপলব্ধি, কবিকে আত্মসমালোচনায় প্রলুব্ধ করে। কারণ তিনি কখনও কুড়িগ্রামে যান নি। কিন্তু লোকমুখে, কোন বিশিষ্ট ঘটনায় কুড়িগ্রাম নামক কল্পজগতটি তার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে। সেই অস্পষ্ট অজানা কুড়িগ্রাম তাকে চিন্তাবিদ্ধ করে। কুড়িগ্রাম সংশ্লিষ্ট উপলব্ধি তাকে আরও বেশি অসহায় করে তোলে। কুড়িগ্রামের জন্য অকপট কাতরতা কবিতার প্রথম লাইনে সরাসরি স্বীকার করেন-

    কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।


কিন্তু তিনি কুড়িগ্রামকে চেনেন। তার অন্তচক্ষুর পর্দায় সচেতন চোখে দেখার মত স্পষ্ট করে তীব্র কুড়িগ্রাম দৃশ্যমান হয়েছে। তবে প্রাত্যাহিক জীবনযাত্রায় কুড়িগ্রাম যেভাবে উপস্থিত হয়, সেই চিত্রমালার আড়ালে রয়েছে অন্য দৃশ্যপট।

কুড়িগ্রামের প্রচলিত ভাবমূর্তি নিয়ে কবি চিন্তিত নন। কুড়িগ্রামে জন্ম নেয়া বা বসবাসকারীর অভিজ্ঞতা তার আত্মস্থ নয়। কোন একটি স্থান মানুষের মননে দুইভাবে থাকতে পারে। শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে। শরীর যেখানে অবস্থান করে তার বিশেষণ বা বিশেষ্য নিরূপিত হয় মানসিকভাবে গ্রহণের প্রেক্ষিতে। তাই জন্মকেন্দ্রিক চিন্তার বিপরীতে শরীরের অবস্থান প্রবাস বা বিদেশ বিভূঁই। সেই স্থান বা সেই ভূমির অনুধাবন মানসিক অবস্থানের প্রেক্ষিতে বৈচিত্র্যময় হতে পারে। যেমনটা দেখি মাসুদ খান রচিত 'কুড়িগ্রাম' নামের কবিতায়।

কুড়িগ্রাম যেন একক একটি সত্ত্বা, যেন শব্দটির একটি অনিবার্য উপস্থিতি আছে। যা ধীরে ধীরে পরিপার্শ্বকে কলকাকলীতে ভরিয়ে তোলে। কুড়িগ্রাম শব্দটির প্রভাবে এক পরিব্যপ্ত মুখরতা মাসুদ খানকে ঘিরে ধরে। তিনি দেখিয়ে দেন শব্দের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক অতিলৌকিক কুড়িগ্রামকে। যে কুড়িগ্রাম রাত গভীর হলে অন্য বায়বীয় জগতের সঙ্গী হয়। যাত্রা করে দূর শূন্যলোকে।

    রাত গভীর হলে আমাদের এই প্রচলিত ভূপৃষ্ঠ থেকে
    ঘুমন্ত কুড়িগ্রাম ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যায়।
    অগ্রাহ্য করে সকল মাধ্যাকর্ষণ।


এক স্বপ্নময় বোধগ্রস্থতার মধ্যে কবি হেঁটে চলেন। এক অতিলৌকিক কল্পচিত্র কবির ভাবনাজগতকে আবৃত করে। যে কুড়িগ্রামের দেখা বাস্তবে কখনও পান নি। সেই কুড়িগ্রাম গভীর রাত্রে মাধ্যাকর্ষণের বাঁধন ছিড়ে নভোরাজ্যে ভ্রাম্যমাণ হয়ে কবির মানসলোকে এক বিশেষ বিহারে বের হয়।

    দক্ষিণ আকাশে ওই যে একনিষ্ঠ তারাটি,
    একসময় কুড়িগ্রাম তার পাশে গিয়ে চিহ্নিত করে তার অবস্থান।


শিল্পের এই অপার্থিব দায় এক অনিবার্য বোধের তীব্র প্রতিচিত্র হয়ে কবিমননকে আন্দোলিত করে। ফলে সেই অপার্থিব কুড়িগ্রামকে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে ওঠে অবশ্যম্ভাবী। সেজন্য কুড়িগ্রামের প্রধান সৌন্দর্য তথা প্রধান পরিচিতি প্রকাশিত না হয়ে পারে না। নদীময় কুড়িগ্রাম তার নদীচিত্র নিয়ে আপন পরিচয় স্পষ্ট করে।-

    দুলতে দুলতে আসে ওই স্বচ্ছ ইস্পাত-পাতের নদীজলে।
    কুড়িগ্রাম, আহা কুড়িগ্রাম।


কুড়িগ্রাম যেন এক ভাববস্তু। কোন নদীতীর নয়, ভূখণ্ড নয়, জনপদ নয়, জেলাশহর, কংক্রিটখচিত বা শান্ত নদী বিন্যস্ত জান্তব বা অতিপ্রাকৃতিক সত্ত্বা নয়। তার কোন ঐহিক বস্তুগত উপস্থিতি নেই। সীমান্ত চিহ্নিত জনপদ নয়; কবির চেতনায় কুড়িগ্রাম এক ভাববস্তুগত দ্যোতনা নিয়ে চিন্ময় হয়ে থাকে। মাসুদ খানের চোখে কুড়িগ্রাম শব্দটির যে অবয়ব, তা বস্তুচিত্র নয় বরং মননচিত্র হিসেবে বাঙ্ময় হয়ে আছে।



আমার কুড়িগ্রাম : রাশেদুন্নবী সবুজ


রাশেদুন্নবী সবুজ লিখেছেন "আমার কুড়িগ্রাম" নামক এক রূপময় কবিতা। এখানে কবির চোখে কুড়িগ্রামের অন্তর্গত গাঠনিক বৈশিষ্ট্য ধরা দেয় সৌন্দর্যের রূপে। কারণ কুড়িগ্রাম শুধুমাত্র একটি কল্পনামাখা ভূখণ্ডমাত্র নয়। এই ভূখণ্ডের প্রতিটি দিগন্তে দৃশ্যমান হয় একটি করে নদী। শোনা যায় চুয়াল্লিশটি নদী ছিল কুড়িগ্রামের বুক জুড়ে। পূর্ব ও পশ্চিমের বড় দুই নদীর উদরে বিলীন হয়ে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত হয়েছে একাধিক নদী। সরকারি তালিকায় অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে ষোলটি নদীর। যদিও এ নিয়ে ঢের বিতর্ক রয়েছে। তবু এই সংখ্যাটিকে স্বীকার করলেও কুড়িগ্রামের প্রাকৃতিক অবয়ব এবং জনজীবনের নদীমগ্ন ভাবালুতার কোন কমতি ঘটে না। আর ঠিক এই বিষয়টি কুড়িগ্রামের ভূমিজ সন্তান হিসেবে কবি রাশেদুন্নবী সবুজ অনুভব করেন মর্মে মর্মে, চেতনার আকারে প্রকারে। এক সহজ প্রবণতায় কুড়িগ্রামের সৌন্দর্য বর্ণনা করেন নান্দনিক শব্দচয়নে। তিনি লেখেন-

    জলের জমিন জুড়ে
    সূঁচের ফোঁড়ে বাঁধানো
    একতারা
    দৃশ্যমান হয়,
    ফুটে ওঠে কুড়িগ্রাম
    সবুজ সুরের ঠিকানায়।


নদীকেন্দ্রিক জীবন কুড়িগ্রামবাসীর। বৎসরান্তে উপচে পড়া নদী বয়ে নিয়ে আসে হাহাকার ও আর্তনাদ। বর্ষার বেগে ফুলে ওঠা নদী বন্যার আকারে ছড়িয়ে পড়ে গ্রামান্তরে, উঠোনে, গৃহকোণে। এই বন্যার প্রবল প্লাবন সাধারণত পলিমাটি বহন করে নিয়ে এসে কৃষকের দুচোখে স্বপ্নভরা উর্বরতার বীজ বুনে দেয়। কিন্তু এর বিপরীত কাণ্ডও ঘটে কখনও কখনও। তখন পলি নয়, উজান থেকে বয়ে আনে বালুর পাহাড়। সযত্নে বোনা ফসল ঢেকে যায় নিষ্প্রাণ বালুর গভীর স্তরে। বালুময় চরাচরের আড়ালে কৃষকের স্বপ্নের সমাধি ঘটে কয়েক যুগের জন্য। বিষয়টি সহৃদয় কবির রচনায় উপস্থিত হয়েছে এভাবে-

    আহা জলের আশায়
    নিদারুণ বালুর স্রোতে বয়ে চলে
    কাতর হৃদয়!


আর এই বন্যার আর একটি নিদারুণ রূপ নদীর ক্রোধোন্মত্ততা। কী এক অজানা কারণে নদী হয়ে ওঠে ক্রোধান্বিত। ভেঙে ফেলে তীরবর্তী সমৃদ্ধ গ্রাম, বন্দর। কৃষাণীর সযতনে তৈরি করা সংসার, মায়ার প্রলেপে নিকোনো উঠোন বিলীন হয়ে যায় নদীর করাল গ্রাসে। কোন অপার্থিব আশ্বাস আশার আলো জ্বালাতে পারে না। পাহাড়ী খরস্রোতা নদীর আবেগ যেন ভর করে বর্ষাকালে ফুলে ফেপে ওঠা গর্ভবতী নদীগুলোকে। বিষয়টি কবির রচনায় প্রাণবন্ত হয়েছে এভাবে-

    ছলছলে
    নদী ভরে ওঠে কান্নায়
    ভাঙনে বিলীন সুখ।


বর্ষা, বন্যা, নদীভাঙন এই নিয়ে কুড়িগ্রাম। এ যেন সাংবাৎসরিক জীবনযাপন। বর্ষা শেষে আসে শরৎকাল। নতুন জীবনের বার্তা নিয়ে। ভেঙে পড়া গ্রামের শরীর ঘেঁষে নদীর অপর পাড়ে রচিত হয় নতুন গ্রাম। একপাশে যখন জমে বালুর পাহাড়, অপর পাড়ে তখন উর্বরতার প্রলেপ জমে পলিমাটির পেলব পরশে। স্বপ্ন ফোটে নতুন জীবনের। মানুষ আশায় বুক বাঁধে। নদীময় জীবন যাপনের এ যেন এক অনিবার্য ভবিতব্য। কুড়িগ্রামবাসী প্রতিটি মানুষের এই জীবনধারা পেয়েছে ঐতিহাসিক রূপ। বংশপরম্পরায় তবুও নদীর মায়া ছাড়ে না; ত্যাগ করে না নদীর সংস্রব। কবির ভাষায়-

    উত্তরে সবুজ পাতার মাঝে
    কুঁড়ি ফুটে তবু প্রকাশিত নাম
    সে আমার কুড়িগ্রাম।



কুড়িগ্রাম: উপল বড়ুয়া


কুড়িগ্রাম নিয়ে চট্টগ্রামবাসী কবি উপল বড়ুয়া এক অনন্যমাত্রার আগ্রহ বোধ করেন। কুড়িগ্রামের প্রতি অন্য কবিগণের স্তুতি তার জানা। সেই প্রশংসিত শব্দমালা তার চৈতন্যে জন্ম দিয়েছে এক বর্ণিল কৌতুহলের। সেজন্য শরতে নয়, বসন্তে নয়, বর্ষাকালেও নয়, কোন এক কম্পমান 'তীব্র শীতে' তিনি কুড়িগ্রামের সান্নিধ্য পেতে চান।

এক তীব্র শীতে একবার কুড়িগ্রাম যেতে ইচ্ছে করে


পাহাড়ঘেরা চরাচরে বসে কবি কুড়িগ্রামের মায়াময় প্রাণ ও নদীলগ্ন প্রকৃতির স্বপ্ন দেখেন। কুয়াশাঘেরা চরাঞ্চল তার মননে এক অপার ছায়াবাস্তবতার জন্ম দেয়। এমন মোহপ্রভাবে নিজের বসতিকে মনে হয় বন্দীদশা। কুড়িগ্রামের অবস্থান তার কাছে যেন অনতিক্রম্য সুদূরে। একবার, অন্তত একবার যদি কুড়িগ্রামের মুখোমুখি হওয়া যেত, তাহলে কবির আকুলতা যেন শান্ত হত। কিন্তু জীবনের স্বাভাবিক পরিচলন তো কুড়িগ্রামের নাগাল পায় না। এক একান্ত প্রত্যাশা নিয়ে কবিতায় সশব্দ উচ্চারণ করেন-

...বাজী ধরেছি একদিন পালিয়ে যাবো
তীব্র প্রেমের দেশ- কুড়িগ্রাম।


কুড়িগ্রামের অবয়ব তার কাছে স্বপ্নময়। সেজন্য রোমান্টিক মোহঘেরা কুড়িগ্রাম তার চেতনায় যেন 'তীব্র প্রেমের দেশ'। এমন প্রেমময় নদীভেজা প্রান্তর যে সহজগম্য নয়, তাই হয়ত নিজের অন্তর্মহল থেকে না পালালে কুড়িগ্রামের নদীজলে অবগাহন সম্পন্ন হবে না। কুড়িগ্রাম নিয়ে কবি সাম্য রাইয়ানের আবেগ তাকেও স্পর্শ করে। সেই অধিকারে তিনি যেন কবি সাম্য রাইয়ান এবং কুড়িগ্রামকে একই হৃদয়ের অভিন্ন রূপ মনে করেন। অবলীলায় বলে বসেন-

কুড়িগ্রামের কথা এলে কবি সাম্য রাইয়ানকে মনে  
পড়ে।


মাসুদ খান রচিত 'কুড়িগ্রাম' কবিতা তার অপঠিত নয়। সেখানে কুড়িগ্রামে কখনও আসতে না পারার জন্য কবির যে অতৃপ্তি, যে বিরহবোধ, তা উপল বড়ুয়ার চেতনাকে উৎসুক করে। মাসুদ খানের আক্ষেপ তাকে আন্দোলিত করে। কারণ তাঁর চোখে কুড়িগ্রাম হল 'তীব্র প্রেমের দেশ'; সে দেশে সাম্য রাইয়ান থাকে এবং মাসুদ খান যে দেশে আসতে না পেরে অনুতাপে দগ্ধ হন। সেই কুড়িগ্রামে তাকে তো আসতেই হবে, তা সে বাজী ধরে হোক বা অন্যদের সতর্ক চক্ষু এড়িয়ে পালিয়ে যেভাবে হোক না কেন।

সাম্য রাইয়ান কুড়িগ্রামের বহুমুখী ব্যঞ্জনাকে মাত্র দুটি শব্দে বিশেষায়িত করেছেন। তিনি 'তীব্র কুড়িগ্রাম' শব্দবন্ধ দিয়ে যে অপার মাত্রাবোধকে উপস্থাপন করেছেন, তার প্রতিধ্বনি কবি উপল বড়ুয়ার অচেনা নয়। তার অবচেতন সজ্ঞায় এমন এক ভাবব্যঞ্জনার সৃষ্টি হয়েছে যে, কুড়িগ্রাম জনপদটি পরিণত হয়েছে এক জীবন্ত স্বপ্নবিগ্রহে। আর তাই কুড়িগ্রামের কোমল শীত তার কাছে প্রতিভাত হয় 'তীব্র শীত' হিসেবে; কুড়িগ্রামের মানুষের সহজ সাবলীল মমত্ববোধকে মনে হয় 'তীব্র প্রেম'। এভাবে তিনি কখনও কুড়িগ্রামে না এসেও, কুড়িগ্রামের কোন মানুষের সাথে না মিশেও আন্তরিকভাবে অনুভব করেন কুড়িগ্রামের কল্পসৌষ্ঠব অথবা বলা যায় নির্মাণ করেন হৃদয়ের গভীর আবেগ জড়ানো এক স্বপ্নীল প্রতিমার। তার নিজ ভাষ্যে একথা অনস্বীকার্য যে -

...মাসুদ খানের মতো আমিও কখনো
যাই নাই কুড়িগ্রাম।


বেশ দ্বিধাহীন স্বরে অকপটে নিজের অক্ষমতা স্বীকার করেন। কুড়িগ্রামের মুখোমুখি না হওয়াটা যেন জীবনের প্রাপ্তির খাতায় দাগ কাটা শূন্য ফলাফল মাত্র। এটা ঠিক নয়, বাঞ্ছিত নয়, উল্লেখযোগ্যও নয়। নিজের এই অপ্রাপ্তি যে মূলতঃ অসম্পূর্ণতা তা স্বীকারেও তার সন্তাপ নেই; বরং নিজের স্বপ্নভ্রমণের স্বার্থকতা অবলীলায় প্রকাশ্যে আনেন। কুড়িগ্রামকে যেভাবে কবিগণের লেখায় পেয়েছেন, তা যেন এক তীব্র আকর্ষণকে ঘনীভূত করে তোলে। কারণ-

দূর থেকে কেবল রেডিও'র নব
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শুনেছি সে দেশের যাবতীয় সুনাম।


কুড়িগ্রাম ঘিরে এই যে আবেগপ্রবণতা তার সমজাতীয় চিত্র বাংলা সাহিত্যে প্রচল নয়। বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে বাংলাভাষী মানুষ যে ভূখণ্ডে বাস করে তার বেশ কয়েকটি জনপদ সহস্রাধিক বৎসর বয়সের। হাজার বৎসর আগেও বগুড়ার মহাস্থানগড়, কুমিল্লার ময়নামতি, বিহারের নালন্দা প্রভৃতির অস্থিত্ব ছিল। প্রত্যেক জায়গায় উচ্চ শিক্ষিত শিল্পবোধসম্পন্ন মানুষ বাস করত। ঢাকা, কলকাতা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রংপুর, দার্জিলিং প্রভৃতি শহর কয়েকশত বৎসরের পুরনো। শতাধিক বৎসরের এই লোকালয়গুলো একাধিক কবির পদস্পর্শে ধন্য হয়েছে। কিন্তু কুড়িগ্রামের মত কবি-সত্ত্বার সর্বাংশ দখল করতে পেরেছে এমন জনপদ বা গ্রাম বা শহরের সংখ্যা খুবই নগণ্য। কেন এরকম তা সমাজবিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হতে পারে। কিন্তু দরিদ্র নামাঙ্কিত কুড়িগ্রাম সৌন্দর্য সম্পদে, হৃদয়াবেগের ঐশ্বর্যে, কবিসত্ত্বার কল্পনাবৈচিত্র্যে তুচ্ছ নয়।

কুড়িগ্রামের আহ্বান এক অমোঘ আকর্ষণে কবিগণের মানসজগতকে আবেষ্টন করে। অলৌকিক শিল্পব্যঞ্জনার আবর্তন কবিতায় আরোপিত মনে হয় না। কুড়িগ্রাম নামীয় কবিতাগুলি 'কুড়িগ্রাম' নামক এক অপরূপ অবয়ব নিয়ে শিল্পজগতে নিজের উপস্থিতি জানান দেয় তীব্র সম্পদে, স্বশক্তিতে এবং মর্মগৌরবে।


# (১)  “মনে হয় একান্ত আপনার” এই বাক্যটিতে 'আপনার' শব্দটির অর্থ 'নিজের'।
 কয়েক যুগ আগেও 'আপনার' শব্দটি  নিজ', নিজস্ব', ‘নিজের' অর্থে প্রযুক্ত হত। তার একটি বিখ্যাত উদাহরণ এই কবিতায় আছে। "আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে, আসে নাই কেহ অবনী পরে"; এখানে 'আপনার' অর্থ 'নিজ', ‘নিজস্ব', ‘নিজেকে', ‘নিজের'।

মন্তব্য

নাম

অনুবাদ,32,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,303,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,14,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,14,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,152,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: প্রবন্ধ: কুড়িগ্রাম কবিতায় কুড়িগ্রাম
প্রবন্ধ: কুড়িগ্রাম কবিতায় কুড়িগ্রাম
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEia13L5itVFLJDOyf9cCiTDN-CfUvQ339_CjV5gH1sIxEtU6vEh9PIvSCw1VZESGOVcJjJNFC_Ziuyokk1efnHj7zP2VYtZmU1gTIbd31mEf_C2R4DI4nDQpALhy86AbqXlMpQneImWIyM/w640-h320/%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4-%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25A3-%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A7-%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%2581%25E0%25A7%259C%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEia13L5itVFLJDOyf9cCiTDN-CfUvQ339_CjV5gH1sIxEtU6vEh9PIvSCw1VZESGOVcJjJNFC_Ziuyokk1efnHj7zP2VYtZmU1gTIbd31mEf_C2R4DI4nDQpALhy86AbqXlMpQneImWIyM/s72-w640-c-h320/%25E0%25A6%25B8%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A4-%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25B0%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25A3-%25E0%25A6%25AA%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25A7-%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%2581%25E0%25A7%259C%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2597%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BE.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2020/08/blog-post_91.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2020/08/blog-post_91.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy