কবিতাঙ্ক-১
জীবন এখানে নিরুক্ত নিরাকার-
প্রতিদিনকার দৃষ্টিনদে এলাচের বন ভাসে
উড়ন্ত মানুষের মন হাসে আর হাসে
কথা কয় শবরী বালিকা উচ্চ রস-কষে।
বসন্তের চাঁদ, ফাঁদ পেতে রাখে-
কুঞ্জলরথে কাঁচুলি পরিহিত সে আসে
প্রণয়কলায় তনুমন দিন কাটে বাতাসে
কালমন্ত্র প্রজাপ্রতি হয়ে পুড়ে যায় আকাশে।
জীবনের পথে শবরীর কাটে না রাত
শুধু ফালি ফালি করে কাটা পরে চাঁদ।
বিলম্বপুর
ঘুম চোখে বিছানায় শুয়েই মনে হলো আজ তো ইস্টার সানডে। এই দিনে মেরীর পুত্র যিশুখ্রিষ্ট মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান করেছিলেন। অগত্যা ঘুমিয়ে না থেকে আমারও পুনরুত্থান করা দরকার, এই ভেবে উঠে গেলাম। মেরী আর যিশু এই শব্দ দুটো মাথায় আসতেই আমার অঞ্জনদা'র মেরি আনের কথা মনে পড়ে যায়। অঞ্জনদা'র মেরিআনের ঘরে যিশু ঝুলে থেকে চোখের জল ফেলে আর শর্টহ্যান্ড নিতে নিতে মেরির নখ ক্ষয়ে যায়।
স্কুল ফাইনাল দেবার তিন ক্লাস আগেই অঞ্জদা'র মেরিআনের সাথে আমার পরিচয়। ব্যাস ভালো লেগে গেলো। ভালো লাগবার আরও একটা কারন অবশ্য আছে সেই সময়ে মেরিআনের মতোই এক মোটা মেম এর সাথে পরিচয়ে আমারও ইয়ে হয়ে গিয়েছিলো। সেই ইয়েটা অবশ্য প্রেমও নয়, আবার ভালোবাসাও নয়। অনেকটা ইন্টু-পিন্টুর মতো।
আমার মোটা মেম কিন্তু রাজকন্যা ছিলো না, আবার ঘুটেকুড়ানিও নয়। তার ঘোড়া ছিলো না কিন্তু বাইসাইকেল ছিলো আমরা সেই সাইকেলে চড়ে বিলম্বপুরের সকল রাস্তায় বিলম্ব করে ফিরতাম। জামরুল গাছের পাতায় পাতায় আমাদের চোখ খেলা করতো। সাদা-গোলাপী জামরুল নিয়ে আমাদের দৌড়ঝাঁপ হতো। আমরা পথের ধারের কাঁচবালিতে হাঁটু গেড়ে বসতাম। কাঁচের মতো বালি দিয়ে সুর্যের সাথে খেলতাম। আমাদের সাইকেল দৌড় গিয়ে থামতো ধূসর পাহাড়ের এপাড়ে। আমরা ওপাড়ে কোনদিন যেতে পারি নি। বয়েসের ঘর আরেকটু বেড়ে গেলে আমরা যাবো ভেবে ভাবনা তুলে রেখেছিলাম। সন্ধ্যে নামার আগেই আকাশ রঙের মাটি পকেট ভরে নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। মনে হতো আকাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছি।
আমাদের সাইকেল রেস হতো। জংধরা সাইকেলের রেস। আমার কোন সাইকেল ছিলো না। মোটা মেম তার সাইকেলটা বিনা শর্তে ধার দিতো তার কোন কারণ অবশ্য নেই। হয়তো সে মনে করতো আমি একটা জামরুল যতখানি সাদা উপরে ততোখানি ভিতরেও।
এরপর অনেক দিন চলে যাবার আগেই আমিই বিলম্বপুর থেকে অনতিবিলম্বে হারিয়ে গেলাম। সেই পুরোনো স্কুলে আমার আর স্কুল ফাইনাল দেয়া হলো না। মোটা মেম এর সাইকেলে চড়ে ধূসর পাহাড়ের ওপাড়েও যাওয়া হলো না।
মন্তব্য