.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

দালির পিঁপড়ে উৎপলের রা-রা-রা ডিমোক্রেসি │ শিশির আজম

দালির পিঁপড়ে উৎপলের রা-রা-রা ডিমোক্রেসি │ শিশির আজম
দালির সারা জীবনের শিল্পকর্মে যতগুলি আইকনোগ্রাফিক মোটিফ আমরা দেখি তার মধ্যে পিঁপড়ে অন্যতম। এছাড়া দালির চিত্রে কুকুর, বিড়াল, পাখি, হাতি এমনকি পঙ্গপাল, গন্ডার বা মাছিও বারবার দেখি। এরা দালির স্বপ্নের প্রতিনিধি। এই স্বপ্ন দালি কোথায় পান বা এই স্বপ্ন কীভাবে দালিকে আক্রমন করে? দালির ঘড়ি কেন গলে গলে পড়ে, দেয়ালে ঝুলে থাকে বা গাছের ডালে ঘড়ির সংবেদনশীল দেহকাঠামো দেখে কেন আমরা অবাক হইনে? অবাক হইনে কারণ দালির এই স্বপ্ন বাস্তবের দৈনন্দিন প্রতিচ্ছবি।

১৯২৯ সালে পরাবাস্তববাদীদের দলে যোগ দেবার সময়ই দালি আঁকেন Ants। এছাড়া দালির অসংখ্য ছবিতে পিঁপড়ের ব্যবহার রয়েছে। পিঁপড়ে কি ক্ষয়ের প্রতীক? এই পিঁপড়ে কি আমাদের সংবদ্ধ বোধকে আক্রমন করে না? সালভাদর দালি যেমন স্বপ্ন দেখেন তার এক হাত ঢেকে রেখেছে পিঁপড়ের দল তেমনই বন্ধু লুই বুনুয়েলও স্বপ্ন দেখেন কেটে ফেলা অর্ধেকটা চাঁদের। ফলে ১৯২৯ সালেই তৈরি হয়ে যায় পরাবাস্তববাদী সিনেমা ‘আন চিয়ান আন্দালো’।

দালির পিঁপড়েরা পরবর্তীকালে সব শিল্পমাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়েছে। সব শিল্পীই কমবেশি আক্রান্ত হয়েছেন। জীবন একরৈখিকভাবে চলে না। শিল্প কেন চলবে? দালি বহুরৈখিক পথ খুঁজেছেন। খুঁজেছেন উৎপলকুমার বসুও।

উৎপলের বিজলীবালা বা নয়নতারা আন্তিগোনে কি আমাদের অপরিচিত? কিন্তু এভাবে আমাদের চোখে পড়েনি কেন আগে? সময় বা রাজনীতি কি আমাদের চোখ বেঁধে রেখেছিল? না কি আমরা অভিজ্ঞতার দাস? ‘মৃত্যুর পর শুধু মৃত্যুভয় বিছানায় শুয়ে থাকে একা’- এই ভয়ই কি আমাদের ধাতুবিভ্রমের দিকে যেতে অবিরাম বাঁধা দিতে থাকে? কিন্তু জীবনকে খুচরা পয়সার মতো নাচিয়ে দেখবার লোভ কার না হয়! উৎপল জড়িয়ে পড়েন কখনো সই লুডো খেলায়, কখনো ডিমোক্রেসির দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ইন্ডিফারেন্ট কালচারে। ‘রা-রা-রা ডিমোক্রেসি’ থেকে তুলে দিচ্ছি:

মাতালদের সঙ্গে ধুলোর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া অপরাহ্ণে বেশ্যাপাড়ার দিকে আমাকে ক্রমশ তন্দ্রাচ্ছন্ন করে তোলে এবং মাছির কথা ভুলিনি- সেজন্য দু’মুহূর্ত মিষ্টান্ন-ভান্ডার দাঁড়াতে হল- বেলার জন্য কচুরি এবং অপরাহ্ণেই আমি ব্রণসমেত বেলাকে পেতে চাই বাথরুমের ভিতরে

বয়স্ক মানুষেরা প্রায়ই দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন: দিনকাল কত খারাপ! তাদের কাছে এই যুগটা অবক্ষয়ের যুগ। তাহলে এটা আমাদের ভাবতে হবে, পরিবর্তিত সময় ও অবস্থার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারাটাও এ-সবকিছুর সঙ্গে তার বিরূপতার জন্য দায়ী কি না। অনিবার্য আনুশাসনজাত প্রান্তিক জীবনে তার দরকার হয় আশ্রয়ের। অজান্তেই সে নিজেকে একটা খোঁপের ভিতর বন্দি করে যা তার জন্য নিরাপদ মনে হয়। একে কি আমরা অবক্ষয় বলবো?

‘অবক্ষয়’ নিয়ে যখন আমরা কথা বলছি তখন এটা মাথা চাড়া না দিয়ে পারে না যে এটা কোন্ অবক্ষয়। এটা কি সম্রাট অশোকের, না ঋত্বিক ঘটকের? আবার ভারতীয় উপমহাদেশে যা অবক্ষয় প্যারিসে তা নাও হতে পারে। অর্থাৎ আমরা যা অবক্ষয় মনে করি, পোশাকে ও প্রকৃতিতে তা যে অনেক বৈচিত্রের হতে পারে, এমন কি বিরোধাত্মক। এটা আমাদের মাথায় না রাখলে ভুল পথে চালিত হতে পারি। একসময় বোদলেয়ারের রিপ্রেজেন্টেশানকেই মনে করা হতো মানব জাতির সামনে কী সর্বনাশ অপেক্ষা করছে তার জ্বলজ্যান্ত আয়না। পৃথিবী তখন ছিল ‘ক্লেদজ কুসুম’। এখন এর প্রকৃতি নিশ্চই অতটা সরলরৈখিক নেই। রোদাঁ যখন ‘বালজাক’ সৃষ্টিতে নিমগ্ন ছিলেন, এখন আমরা জানি কীরকম ভীতিকর সামঞ্জস্যহীন পৃথিবী তার উপর ভর করেছিল। যেটা হয়, রোদাঁর ‘বালজাক’কে প্যারিস গ্রহণ করতে আদৌ প্রস্তুত ছিল না। এখন আমরা জানি, কোনটা বিচ্যূতি- বালজাক না প্যারিস। নাকি অনিশ্চয়তার ভীতিই, যা দীর্ঘদিনের আনড় মূল্যবোধ থেকে জাত, আত্মচেতনাকে দাবিয়ে রাখে?

Ants-by-Salvador-Dali

এটা বিচ্যূতির যুগ। কোনটা? কখন মানুষ সন্তুষ্ট ছিল তার সময়কে নিয়ে? আমরা বড় জোর বিশ্লেষণ করতে পারি ‘সেই সময়টা’ কেমন ছিল, ‘অন্য সময়ের’ চেয়ে কোথায় সে আলাদা। তার ব্যাথাদীর্ণ সত্বাটাকে চিহ্নিত করবার প্রচেষ্টা হয়তো বা আমরা নিতে পারি।

ঐ ছেলেটা বাবু ঐ হারামজাদা দু’টাকা চায় ব্যাটাছেলে খেটে খা না আমরা মেয়েমানুষ বালবাচ্চা আছে কোথায় পাবো দু’টাকা সেদিন দিইছি তাই ব’লে হপ্তায় হপ্তায় তোদের কী হারামজাদা মদ খাস বদমাইসি করিস আর আমাদের কাছে জুলুম আজ এক টাকা কাল দু’টাকা এই সেদিন দিলম বাবু বিশ্বেস করুন বলে টাকা না দিলে চাল ফেলে দেবে পেটাবো তা মার না দেখি হারামি ঘরে মা-বোন নাই বাজারে এসে তোর রোয়াব ঐ চাদর-গায়ে ছেলেটা কাল এসছিল বললুম পয়সা কোথায় পাবে বল্ সবাই রেশন ধরে আজকাল বিক্রি নাই কখনো-সখনো কেউ আসে ইদিকে বলে চাল আছে গোবিন্দভোগ আছে কত কিজি বউনির সময় তার মধ্যে ঐ শালা মুখ গলিয়ে বলে দুটো টাকা দে রে মাগী নইলে এখঅনে বসতে পাবিনি জমিটা কি তোর রে হারামি লেকবাজার কি তোর বাপের তুই ব্যাটাছেলে খেটে খা না পুলিশের কাছে প্রতিকার নাই ধরে যে যায় ঘুষ খায় আর ছেড়ে দেয় ক’বার হাজত ঘুরে এলি বল্ না বাবুকে এই শালা এই মড়াখেকো আর ক’দিন মস্তানি করবি সাগরেদ হইচিস চোরের সাগরেদ ন্যায্য কথা  বলি এত লোগ খেটে খায় আর তুই তোর মরণ হয় না দু’কেজি আট আনা লাভ তোর ঘরে মা-বোন নেই রে বলিস্ পেটাবি চাল ফেরে দিবি তোর মরণ হয় না রে বাঁদর।

এই হলো উৎপলকুমারের ‘সই লুডো খেলা’। খেলাটা তিনি খেলছেন নিজেরই সঙ্গে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থার ভিতরে কারখানা নামক জেলখানার অন্তরালে।

সরলরৈখিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষত যা অসামঞ্জস্যতাকে বিশ্লেষণ করতে যাই তাহলে বিভ্রান্তিতে আটকে যাবার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এ তো আমরা জানি, রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে জনগণের আগ্রহ ও চেতনাগত দুর্বলতার মধ্যে ব্যাবধান নিরসনে, গান্ধী ও রবীন্দ্রনাথের চিন্তায় মৌলিক পার্থক্য ছিল। গান্ধীর হিন্দুত্ব তার মনুষ্যত্ববোধকে পুষ্ট করেছে। আর রবীন্দ্রনাথের মানবতাবাদ পরিণত হয়েছে বিশ্বমানবের ধর্মে। তাদের চিহ্নিত অবক্ষয়ের প্রতীকগুলোর প্রকৃতি কোন সময় এক ছিল না।

সেই ব্যাঙ আর বালকদের গল্পটাতো আমরা জানিই। শান্ত পুকুরে মনের আনন্দে খেলা করছিল ব্যাঙেরা। পুকুরের পাশ দিয়ে যাওয়া কয়েকটি বালক এটা দেখলো। তারা মজা করার জন্য পুকুরে ঢিল ছুড়তে লাগলো, ঢিলগুলো কোন ব্যাঙের মাথায় গিয়ে লাগলো, কোন ব্যাঙের পায়ে গিয়ে লাগলো, কোন ব্যাঙের পেটে গিয়ে লাগলো। ব্যাঙেরা মারা যেতে লাগলো। এখানে অবক্ষয়ের বিচার করবার জন্য যদি আমরা সঠিক রাস্তাটা চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের সিদ্ধান্তও নিশ্চিৎ ভুল হবে। নৈতিকতা ও অবক্ষয়কে আমরা গুলিয়ে ফেলতে পারি। যেমন দেখা যায় এই গল্পটিতে: বালকদের জন্য যা খেলা ব্যাঙেদের জন্য তা মৃত্যু।

এটা ঠিক, ক্ষমতাসংগঠনের চরিত্র নির্ণয় করা যা ব্যাপকতর এক কাজ। আর বিভিন্ন জায়গা থেকে ভিন্ন ভিন্ন চোখ দিয়ে দেখার কারণে এর একটা কাঠামো দাঁড় করানো অনেকটা অসম্ভব বলা যায়। কিন্তু কাজটা তো থেমে নেই। পাশ্চাত্য কীভাবে প্রাচ্যকে দেখছে, আর সেই দেখাটা প্রাচ্যে চারিয়ে দিয়েছে, বিভিন্ন কৌশলে, এটা ব্যাখ্যা করেছেন এডোয়ার্ড সাইদ। অমর্ত্য সেন পাশ্চাত্যের এই দেখাটা বিশ্লেষণ করেছেন। তারপর নিজের কৌমনিরপেক্ষ শক্তি অন্বেষণ করেছেন। কেন? সেন বুঝেছেন আধিপত্যবাদকে নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ওপর চাপিয়ে দিতে হলে তাদের ভেতরের প্লুরালিস্টিক রাইজোম্যাটিক মনোভূমিতে ফাটল ধরানো দরকার। যা করেছে ঔপনিবেশিক শক্তি। একাজে তারা বন্দুক, ধর্মগ্রন্থ, বিজ্ঞান- সব ব্যবহার করেছে। শাসিত জনগোষ্ঠীর ভেতর আত্মচ্যূতি যত বিস্তার লাভ করে শাসকের ক্ষমতাকাঠামো তত শক্তিশালী হয়।

স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলো থেকে ঔপনিবেশিক প্রভুরা শারীরিকভাবে বিদায় হলেও, তারা যে সত্যি সত্যি বিদায় হয়নি, এ তো আর চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার দরকার নেই। বরং তারা আরও জাঁকিয়ে বসেছে। যদিও তাদের দেখা যায় না। এদিকে নিম্নবর্গের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে রনজিৎ গুহ, হোমি ভাবা, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রমূখ দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে নিচুতলার স্বরকে চেপে রাখা হয়, আর উচুতলার স্বরকে নিচুতলার স্বর বলে চালিয়ে দেওয়া হয়। ‘প্রান্ত’ কোন্ ভাষায় কথা বলবে, কী পরবে, কী চিন্তা করবে, এমন কি যথার্থ সঙ্গমপ্রক্রিয়া- সব নির্ধারণ করে দেয় ‘কেন্দ্র’।

এই ‘কেন্দ্রে’র চরিত্র কিন্তু ক্ষমতাকেন্দ্রিক। তবে তা চিহ্নিত করতে পারা সহজসাধ্য নয়। কেন্দ্রকে বোঝার সুবিপুল প্রক্রিয়ায় যদি সমন্বিতভাবে নিয়োজিত হতে না পারি তাহলে আত্মচ্যূতির উৎস নির্ধারণ এবং তার ফলাফল সম্পর্কে যথার্থ ধারণা পেতে আমরা ব্যর্থ হবো। ক্ষমতা কীভাবে পুঁজির উল্লম্ফন ও অবাধ প্রবাহ নিশ্চিৎ করতে নিচু তলায় ঋজুরৈখিক ক্যানন চারিয়ে দেয় তা আমরা দেখি সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি শংকেতে।’ হয়তো সমসময় এটা দেখা যায় না। যেমন দালির ঘুমিয়ে থাকা নারী, ঘোড়া, সিংহ বা পিঁপড়েদের আমরা সবসময় দেখতে পাইনে।

কাক কাকের মাংস খায় না। এটা নৈতিকতা। কিন্তু আমরা দেখি, একক ক্ষমতাসংগঠন নিম্নবর্গের ওপর ক্ষমতার অব্যাহত পুনরাবৃত্তিই চালায়। কাককে দিয়ে কাকের মাংস খাওয়াতে পারাই পুঁজির স্বাভাবিকতা, প্রান্তিক জীবনে অবক্ষয়কে জিইয়ে রাখা। সত্যজিৎ এই ক্ষমতা ও অবক্ষয়ের সম্পর্কটাই সহজভাবে আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন।

১৯৪৩ সালে জয়নুল আবেদীন যে দুর্ভিক্ষের চিত্রমালা আঁকলেন, (অমর্ত্য সেনের মতে, যে দুর্ভিক্ষ শাসক শ্রেণির নিজের সৃষ্ট। তাদের অপরিসীম উন্নাসিকতা আর লোভ এর জন্য দায়ী। সে-সময় বাংলায় প্রয়োজনের চেয়ে বেশী খাদ্য সংরক্ষিত ছিল। আর যুদ্ধরত বিভিন্ন ফ্রন্টে সৈন্যদের জন্য প্রয়োজনীয় চালের সিংহভাগই গিয়েছে বাংলা থেকে। সর্বপরি লক্ষ লক্ষ লোক না খেয়ে মারা যাবার পরও দিল্লী এ ব্যাপারে জানবার বা ব্যবস্থা নেবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখায়নি।) সেটা কি কেবলই শিল্পের কারুকার্য? গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক যে ‘আদারিং’কে চিহ্নিত করেছেন, যা মূলত ক্ষমতাকেন্দ্রিক দার্ড্যকে বিশ্লেষণ করে, সেই আদারিং-এর ভীতিকর চিত্রবিন্যাস কি জয়নুল দেখেননি?

আর ২০০১ এর ৯/১১-এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার যখন জ্বলছিল তখন কাদের দিকে বা কীসের দিকে আঙুল উঠেছিল? ঐ আদারিং-এর দিকে। তাহলে কি নিচের দিকে এতদিন যে অবহেলা, ঘৃণা বা দুর্ভোগ জমা হয়েছে, এটা তারই বিষ্ফোরণ? আরও অনেক ভাবেই হয়তো আমরা দেখাতে পারবো সমগ্রের দিকে মনোনিবেশ না করে অংশকে দেখা কত ত্রুটিপূর্ণ হতে পারে।

কট্টর ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল হামাস ফিলিস্তিনিদের ধর্মের খোয়াড়ে বন্দী করে রাখতে চায়। আমরা এর নিন্দা করি। কিন্তু হামাসকে শায়েস্তা করতে সাম্রাজ্যবাদের ছত্রছায়ায় ‘সভ্য’ ইসরাইল যে ফিলিস্তিনে নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে, এটা কী দিয়ে যুক্তিসিদ্ধ প্রমাণ করা যাবে? এটা যুদ্ধ? এটা নৈতিকতার বিচ্যূতি? না কি ক্ষমতা কাঠামোকে টিকিয়ে রাখতে বোবা অধস্তনের ওপর (নিম্নবিত্ত কি কথা বলতে পারে- স্পিভাক) প্রযুক্তিবিদ্যার অনুশীলন?

তাহলে স্বীকার করতে হবে, উৎপল বা দালি-বুনুয়েলের হাইপাররিয়াল ন্যারেটিভকে বিশ্লেষণ করতে প্রচলিত (কেন্দ্রের চারিয়ে দেওয়া) জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামোটাকে প্রতারণাপূর্ণ বলাটা অন্যায্য হবে না। তাহলে? উৎপলের মুখে শুনি :

মূক তুমি তাকিয়ে রয়েছে ঠান্ডা ভাতের থালার দিকে
কী দেখছ তুমি জানো আর জানে আধ-হাতা ডাল
নুনের সঙ্গে ভিজে মাখামাখি, চালে হলুদ কাঁকর
ধঅনের পোড়াটে খোসা, তুমি জানো, যথার্থই জানো,
এদের ভিতর কোন্ সাংবিধানিক দূতীপনা খেলে যাচ্ছে-

তবে দালির পিঁপড়ে বা উৎপলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিমোক্রেসি প্রোপাগান্ডা সব শিল্পপিপাসু যে সমানভাবে হজম করতে পেরেছেন তা তো না। তারপরও দালি জীবিত অবস্থায় প্রচুর সম্মান ও টাকাপয়সা লাভ করেছেন। আর উৎপলকে জীবনানন্দের ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে। উৎপল সম্ভবত পৃথিবীর সবচে কম জনপ্রিয় অন্যতম প্রভাবশালী কবি। তবে অবস্থা বদলেছে। সময় যত যাচ্ছে উৎপল তত বেশি জনপ্রিয় হচ্ছেন। তাহলে উৎপলের কাপাশসিন্দুকের গোপন রহস্য কি আমরা কিছুটা পেতে শুরু করেছি?

সুখ-দুঃখের সাথীকে উৎপল শোনান- ‘কেবল তুমিই দুর্ঘটনাগ্রস্ত হও। ছোটখাট ভাঙচুর তোমাকে নিয়েই।’ কিন্তু রাষ্ট্র তো উৎপলের সুখ-দুঃখের সাথী হয় না। দালির টেবিলের চুঁয়ে পড়া ঘড়িও আমাদের বরাদ্ধকৃত সময়কে নিয়ে বিদ্রুপ করে। করপোরেটের অহমিকা আর বিষাক্ত রক্তই তো মানুষ বয়ে বেড়ায়। আবার মানুষ তা থেকে নিষ্কৃতিও চায়। তাই দালির সুরিয়ালিজম চোরা স্রোতের মতো মিশে যায় উৎপলের ভাষ্যে। পাঠক পড়ুন উৎপলকুমার বসুর ‘রা-রা-রা ডিমেক্রেসি’র ক’টি লাইন,

আমার ভিতরে তখন বাঁশির নিরাপত্তবোধ জেগে উঠেছে এবং প্রত্যেককে জড়িয়ে ধরে সুরেন মানুষের মন-মনন-বাস্তবতা কিন্তু অনেক আগেই ভেঙেচুরে আছে। দালি বা উৎপল তো নিমিত্ত মাত্র। তাদের হাতে আটফর্মের ভাঙচুর হবারই কথা। না হলে অন্য কেউ করতো। এখন আপনি প্রস্তুত তো? রাশি রাশি ক্ষুধার্ত পিঁপড়ের মেটাফিজিক্যাল টেকচার আর জীবন বাকি রাখা সই লুডো খেলায় আপনি সাহস করে নামবেন তো? আর উৎপল যেভাবে আপনাকে ‘রা-রা-রা ডিমোক্রসির ভূবনটা ঘুরিয়ে দেখিয়ে আনলেন, যেটা আপনারই যাপিত গ্রহ, সেটা কেমন লাগলো?


মন্তব্য

BLOGGER: 1
  1. খুবই চমৎকার একটি লেখা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এক নাগাড়ে পড়ে ফেললাম...ধন্যবাদ শিশির আজম

    উত্তরমুছুন
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,31,আত্মজীবনী,25,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,298,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,17,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,11,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,13,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,150,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: দালির পিঁপড়ে উৎপলের রা-রা-রা ডিমোক্রেসি │ শিশির আজম
দালির পিঁপড়ে উৎপলের রা-রা-রা ডিমোক্রেসি │ শিশির আজম
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgtmFZzyffb0p5gglIVWUqU9MLX87mNb5dRu5hJoPnblV6Q8RJ5d3NbRrszsbT4Rm9vQWwTtPV8h8n3v6Ch4I97o3szFQ8scqUNahGnFzmN-jkYLLPipGOEF_wvGyDRgh0_PMnaWoCVN8k/w640-h320/%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25AE.PNG
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgtmFZzyffb0p5gglIVWUqU9MLX87mNb5dRu5hJoPnblV6Q8RJ5d3NbRrszsbT4Rm9vQWwTtPV8h8n3v6Ch4I97o3szFQ8scqUNahGnFzmN-jkYLLPipGOEF_wvGyDRgh0_PMnaWoCVN8k/s72-w640-c-h320/%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B6%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25AE.PNG
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2020/08/blog-post_70.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2020/08/blog-post_70.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy