মৌসুমী রহমানের আলোকচিত্র অবলম্বনে |
সেই চিঠি আর কাউকে লেখা হয়ে ওঠে না… ইদানীং লিখতে বসলে হাত কাঁপে… তারচে বরং ভালো ল্যাপটপে লেখা… কিন্তু সেটা রঙিন হয়ে ওঠে না… হাতের লেখার গন্ধ খুঁজে পাই না…
মনের মধ্যে একটা কবিতা মাঝে-মাঝেই উঁকি দেয়-
“যে দ্যাখায় দূরত্ব বাড়ে
সে দ্যাখা না-ই বা হলো আর!”
এপারে আকাশ আছে, সে আকাশে মেঘ আছে, রোদ হাসে, ছেড়ে যাবার জোগাড়-যন্ত বহুবার করেও, ছেড়ে যাওয়া হয়ে ওঠেনি...
পুড়ে যাওয়া দাগটা কি মুছে গ্যাছে! নিশ্চই... নিশ্চই... এই যে এতো আয়োজন ভুলিয়ে দেবার; সেখানে মুছে ফেলাটাই উত্তম নয় কি!
অন্ধকার হলেই হায়েনা হয়ে উঠি... ভিতরে-ভিতরে ক্ষয়ে যাওয়া মানুষটাকে চিনতে পারি না বলে খুব কষ্ট হয়... আর কত এমন অন্ধকার সইতে হবে? এমন ভাবনা আমাকে ব্যথিত করে না, তারচে ব্যথিত হই এই ভেবে, কেন দূরত্ব বেড়ে যাবার ভয়ে আমি আজও তোমাকে ছুঁয়ে জানতে পারলাম না- পুড়ে যাওয়া দাগটা মুছে গ্যাছে কী না৷
ক্যামন আছো বলোতো... জীবনবৃত্তের ঠিক মধ্যখানে নেশাতুর বৃষ্টি দিয়ে আমার বৃষ্টি তুমি নিজ অধিকারে নিয়ে নিলে, সকলেই জেনে গ্যাছে, আমি বৃষ্টি যাপনের অধিকারহীন! বয়স বাড়ার সাথে ভালো থাকার সীমানা কমে যায়— এ কথা সদ্য বুঝেছি! ভালো আছি! হয়ত হ্যাঁ! অথবা না! খাচ্ছি-দাচ্ছি, ঘুরছি-ফিরছি, এই তো...
ধরলার আকাশে শাদা কাশবন! নৌকার মাস্তুল খুলে মাঝিরা চলে যাচ্ছে... চলে যাচ্ছে... একা বসতে ভয় পেয়ো না... আসছি... লেনদেন অনেক বাকি... ক্যাম্পাসে লিখিত প্রতিটি দিনের শিহরণে... জেগে থাকো... একসাথে এতো কান্না পেলে, চোখের জলে বান হবে, বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়াবার মত সহায় আমার নেই, আমি অতি ক্ষুদ্র৷ নাহ! অতি দরিদ্র? নাহ! আমি আসলে কী? নিজেকে জানবার প্রবল প্রত্যাশায় সহস্রাধিক মানুষের মাঝেও নিজেকে একা ভাবতে শিখে গ্যাছি...
ঘুমহীন রাতগুলোতে হারিকেনের আলোয় হাসনাহেনা আর সাপের শরীর কালো রঙ পায়৷ রিভারভিউ মোড়ের জ্যোৎস্নালো আর পাঁচ পয়সায় কেনা আমার চকলেট মোড়ানো স্মৃতি ম্লান হয়ে গ্যাছে, কাঁদতে পারিনি! ঘরের পাশে দূরন্ত আহ্লাদি জ্যোৎস্না হৃৎপিণ্ডকে নিয়ে কাঁদামাটি খেলে, যা মন চেয়েছে তাই গড়েছে... দুঃখ হারিয়ে ফেলার প্রত্যাশায় অমীমাংসিত স্বপ্নগুলো ব্যাগ ভর্তি করে পথ চলছি অবিরাম!
জানি, এসেছিলে চলে যেতেই! চলে যেতে যেতে কিছুটা পথ ফেলেই গেলে, যে পথে বৃষ্টি নেই, জ্যোৎস্নালোকে নেই স্নান উৎসব, আছে হরেক রকম পণ্যের বিজ্ঞাপনে ভরা বাংলা-হিন্দি-উর্দূ চ্যানেলের আজাহারি। কেমন আছো, জানতে চেয়েছিলাম বলেই, ৩২ চ্যালেন ঘুরে দেখে এলাম বিধবা বেসাতির সাথে পথের আহাজারি! এমন মন খারাপের ক্ষণে আমার টিভির এন্টেনা হতে ইচ্ছে করে... তুমি যাতে ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে ঝকঝকে চলমান চিত্র দেখতে পারো!
জানতে, চলে যাবে! তাই বুঝি সর্বাঙ্গে মেখেছিলে হেমলক সুধা! এও জানতে আমি চিরকাল আকণ্ঠ পিপাসার্ত, পান করবোই তোমাকে... চুমুকে চুমুকে পান করেছি... বিষাক্ত করেছি দেহ! শরীরবিদ্যায় পারদর্শী ছিলাম না বলেই হয়ত সেক্ষণে অমিত্রাক্ষরে লেখা হয়ে ওঠেনি শরীরী প্রেমের কবিতার পংক্তি! তাতে কী? ‘মায়া নিবাস’ বাসিনী তুমি তো মায়ার মমতায়-বিষে বেঁধেছিলে আমায় এই বা কম কী!
রঙধনু কাগজ খুঁজে তোমার খয়েরি চাঁদের আলোয় আমার চিঠি কি কোনোদিনও লেখা হয়ে উঠবে না; চারিদিকে অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসছে, প্রেমসূত্রের ছন্দ ধারায় বাঘবন্দি খেলা অবিরাম৷ আসছে দিন, চলে যাচ্ছে রাত! বিশ্বাস রাখতেই পারো, অভিমানী নই! ইচ্ছা-অনিচ্ছার সংকীর্ণতাকে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেছি তোমার সাথে সখ্যতা গড়েই... চিঠি লিখবার শক্তিহীনতায় ভাবনা হয় না... শুধু জানতে ইচ্ছে হয়, ক্যামনে রেখেছো খয়েরি চাঁদের আলো ঢেকে... কেউ কোনদিন জানতেও পারবে না ‘বিন্দুর অসীমতার সুত্র’ তোমার কাছেই শেখা। বানানরীতি ঋদ্ধ হয়েছি তোমার অভিধানে!
ঠাণ্ডা সমস্যায় সিগারেট ছেড়েছি বহুকাল... আসছে ভোরে নিকোটিনের গন্ধ ভাসছে তবুও... রিকশার চলমান টুং-টাং শব্দে মাতাল রাতগুলো আর কাঁদে না, ভোরেরা... জানি না! ভোরের দেহাবশেষ পাহাড়ের যোনীতে মিশে গ্যাছে... ভাঙ্গা লাটিমের মত ঘুরছে স্বপ্নগুলো... টিকটিকির সঙ্গম দেখতে-দেখতে জেগে থাকি, শ্যাওলা ধরা ঠোঁটে কাঁটাবাহার ফুল ফুটতেই পারে; শান্ত থাকো, নিশ্চুপ থাকো...
শৈশবের ভোরে মা’র আরশির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম, ভাবতাম আর একটু বড় হলেই নিজেকে দ্যাখা যাবে অনায়াসে... নিজেকে আর আরশিতে দ্যাখা হয়ে উঠছে না! বয়সের দায়ে, নিকোটিনের ভারে, তোমাতে গচ্ছিত ঋণে ন্যুব্জ হয়ে যাচ্ছি ইদানীং। শেষ কবে কথা হয়েছিলো? শেষ দ্যাখা কবে? এতো সস্তা আবেগ আমাকে ভাবায় না, ছুঁয়ে যেতে যেতে মস্তিস্কের নিউরন থেকে অস্তিত্বের সবটুকু জুড়ে আমাকে ভাসিয়ে রেখেছ। তবুও, গচ্ছিত ঋণের দায় বয়ে বেড়াতে হয়!
ঘুমহীন এমন রাতে অলস চায়ের কাপেও প্রেম ভাসে, কোনো মানে হয়? আমাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর অমীমাংসিত! যেতে-যেতেই ফিরে আসো! এই তুমি! ফিরে আসতে আসতেই চলে যাও! এই তুমি! উত্তরমুখী সময়ের সাথে ভোর, অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দভারে নুইয়ে যাওয়া সময়, ভালো নেই বেশ তো! ভালো আসলে থাকতে নেই... এসো উৎসবে মাতি... এই অন্ধকারে... ঘুমহীন রাত্তিরে…
ঘুমহীন রাত্রির উৎসব
মাহফুজুর রহমান লিংকন
মাহফুজুর রহমান লিংকন
বেশ ভাল লাগল ভাই। কেমন তরতর করে বাক্যের সাথে সাথে এগিয়ে গেলাম। কেমন যেন কোথায় গিয়ে থেমে গেলাম। আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য শুভেচ্ছা https://1.bp.blogspot.com/-QTTVUVjLe4U/Xy6D5lCgE_I/AAAAAAAADiE/nsq8VUSU_eAb1RxQ11aTotmTW8erHEVygCLcBGAsYHQ/s1600/dance1.gif
উত্তরমুছুন