যখন ছিলাম শুন্যে ভাসমান তুমি ছিলে কোথায় হায় রেযখন ছিলাম ঘাসে ঘাসবীজ তুমি ছিলে কোথায় হায় রেআগুন নেভার পর বুনো ঘাস উড়ছে বাতাসেআঁধারে যে-সব ফল পেকে উঠত তারাও ঝাপটাত ডানাগোহাড় জ্বলত রোদে... শ্বেত মেষরেখা... শ্বেত শকুনের ডানা...আগুন নেভার পর বৃশ্চিক নাচছে পাথরেযখন পাহাড়ে এসে সেনাদল ছাউনি ফেলেছিলো তুমি ছিলে কোথায় প্রবাসেযখন ছিলাম হাঁসে হাঁসডিম তুমি ছিলে কোথায় প্রবাসেআগুন নেভার পর বুনো হাস নেমেছে ঝর্ণায়বহুদিন এ পাহাড়ে বৃষ্টি নেই, হিম নেই, মাটিতে ফাটলভস্মপাথর থেকে আমরা লাফিয়ে পড়ি পোড়া গর্তে, জলের ফাটলেআগুন নেভার পর ভুল হয় ব্যক্তিমানুষের আর ব্যক্তিপাখির আর ব্যক্তিশ্বাপদেরযখন ছিলাম পেটে জায়মান, ভ্রুণরুপী, অসত্য ছিল নাখন্ডবিশ্বাস ছিল, কাদা ছিল, ছিল বনে পায়ে হাঁটা পথআগুন নেভার পর উড়ে আসি দগ্ধ জলায় আর ছাইকাঠে, পথের ফাটলে।(প্রকৃতি। ‘লোচনদাস কারিগর’ কাব্যগ্রন্থ থেকে)
উৎপলকুমার বসুর কবিতা নিয়ে প্রবন্ধ আলোচনা
কবি উৎপল কুমার বসু কবিতার যে জগৎ গড়ে গেছেন বাংলা কবিতার পাঠককে সেই জগতে ভ্রমণ করতে হবে আগামী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত। কারণ উৎপল কুমার বসু তার নিজের গড়া জগৎ এবং তার বাইরে বেরিয়ে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ঘূর্ণাবর্তে ভ্রমণ করেছেন কয়েক সহস্র শতাব্দীব্যাপী। আমরা যদি কবির (উৎপলকুমার বসু) স্থির চোখে চোখ রেখে তার অন্তর্গত অস্থিরতার দূরদর্শনে ফিরে যাই তবে দেখবো প্রাণ ও প্রকৃতির পরস্পরের সাথে একাকার হয়ে পথ চলার অবিকল্প এক চিত্রনাট্যের মঞ্চায়ন। এই নাটক দেখতে গিয়ে আমাদের মনে পড়ে যাবে এমিবার কথা। এককোষি প্রাণের বহুকোষী প্রাণ হয়ে ওঠার গল্পও মনে পড়ে যাবে। মনে পড়ে যাবে উড়ুক্কু মাছের উড়ে যাওয়ার কথাও। আচ্ছা উড়ুক্কু মাছ বুঝি উড়তে উড়তে একদিন বৃক্ষের ডালে বসেছিল! উড়ুক্কু মাছের সাথে মানুষও কি উড়েছিল কোনো একদিন, এক বৃক্ষ হতে আরেক বৃক্ষে, এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ে। স্বপ্নে-দুঃস্বপ্নে আমাদের এত যে ভ্রমণ, পাখি হয়ে, ফুল হয়ে, পরী হয়ে, গ্রহ-নক্ষত্র হয়ে, পাহাড়-পর্বত হয়ে, আলো-অন্ধকার হয়ে, উড়ুক্কু মাছ আর এমিবা হয়ে, মাটি ও পাথর হয়ে আমরা আরো কী সব হয়ে যাই। আমাদের এতো কিছু হয়ে যাওয়ার অথবা নাই হয়ে যাওয়ার নিরব সতীর্থ যে প্রকৃতি তাকে কী করে এড়িয়ে যাবেন বাংলা ভাষার শক্তিশালী কবি উৎপলকুমার বসু!
মন্তব্য