ভাষান্তর: সাখাওয়াত টিপু
একদিন না একদিন
মোদের দেশের
বেরাজনীতির বুদ্ধিজীবীরা
দেশের সরল আমজনতার
সামনে নানা জিজ্ঞাসার মুখে
খাঁড়াতেই হবে।
জানতে চাইবে তারা
যখন জাতি মরতে বসেছিল
আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল
একা একা
তখন বেরাজনীতির বুদ্ধিজীবীরা
পালন করছিলেন কি কর্তব্য ।
তাদের জামাজুমা নিয়ে কেউ
জানতে চাইবে না।
তাদের ভোজন বিলাস নিয়ে
জনতা আগ্রহ দেখাবে না কোনো।
জানতে চাইবে না কেউ
অচল ধারণাতত্ত্ব নিয়ে তাদের
সচল যুদ্ধের পরিণতি কি?
প্রশ্ন তুলবে না কেউ
বিত্তবেসাতি হাতিয়ে নেওয়ার
বিদ্যাবুদ্ধি নিয়ে
কোরান বাইবেল ত্রিপিটক তালমুদ
গ্রিক মিথোলজি কিংবা রামায়ণ মহাভারত নিয়ে
তাদের প্রজ্ঞার বিষয়ে
জনতার প্রশ্ন থাকবে না কোনো।
বেরাজনীতির বুদ্ধিজীবীদের কেউ
কাপুরুষের মতোন নিহত হলে
বাকিদের আত্মগ্লানি ফুঁসে উঠল কিনা
প্রশ্ন আসবে না তখন
জনতার দিক থেকে কোনো!
শাক দিয়ে মাছ ঢেকে
প্রতিসত্য আর অবাস্তব যুক্তিবোধ নিয়ে
কোনো প্রশ্ন ছুঁড়বে না কেউ।
একদিন না একদিন
সহজ সরল আমজনতা
সমবেত হবে।
বেরাজনীতির বুদ্ধিজীবীদের লেখা
কেতাবে কিংবা কবিতায়
যেসব জনতার কথা নাই
প্রতিদিন তারাই কিন্তু
যোগান দিয়েছিলেন দুধ রুটি ডিম
মাংস আর মাছের।
যারা তাদের জামাজুমা
সেলাই করে দিয়েছেন
যারা তাদের ড্রাইভার
সুখের জন্য যারা শ্রম দিয়ে যান
একদিন তারাই সমবেত সুরে
জানতে চাইবেন—
গরিব যখন মার খাচ্ছিল
যখন তাদের জীবনের
সুখপাখিগুলো
জ্বলে জ্বলে খাক হচ্ছিল
তখন আপনাদের
বেরাজনীতির বুদ্ধিজীবীদের
কর্তব্য ছিল কি
আর করেছেন কি!
মোদের প্রিয় স্বদেশের
বেরাজনীতির বুদ্ধিজীবীরা
জানি, আপনাদের কাছে এসব প্রশ্নের
জবাব নাই কোনো।
নিরবতার ভয়াবহ এক ঈগল
আপনাদের গৌরবকে
ছিঁড়ে খুঁড়ে খাবে
তখন আপনাদের
আপন বেদনাগুলো
আপনাদেরি খুঁজতে নামবে।
লজ্জায় নত হবেন আপনারা
আর শরমে হবেন বোবা!
অনুবাদকের নোট
কবি ওতো রেনে কাস্তেইয়ো জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৫ এপ্রিল, গুয়াতেমালায়। মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান কাস্তেইয়ো ছাত্রাবস্থায় বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫৪ সালে গুয়েতেমালায় এক সামরিক অভ্যূত্থানের পর তিনি এল সালভেদরে নির্বাসিত হন। এল সালভাদরে এসে তিনি সাক্ষাৎ করেন বিপ্লবী কবি রোকে দালতনের সাথে। দুজনে মিলে সৃষ্টি করেছিলেন নতুন আদর্শিক সাহিত্য বলয়। ষাটের দশকে সেই লেখক বলয় লাতিন আমেরিকায় দারুণ প্রভাব বিস্তার করেছিল। ষাটের দশকে প্রকাশিত হয় ‘Tecún Umán’ আর ‘Vámonos patria a caminar’ নামে দুটো প্রকাশনা। কবিতায় তার আহবান ছিল সামাজিক সাম্যের। উল্লেখ করার বিষয়, নির্বাসিত জীবন থেকে এসময় দেশে ফেরেন তিনি। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী বাহিনিতে সামিল হন। কিছুদিন কাজ করছিলেন বিপ্লবীদের সঙ্গে। ১৯৬৭ সালে তাকে রাজনীতিবিদ নোরা পাজের সঙ্গে আটক করে স্বৈরাচারী সরকার। জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্মম নির্যাতন করা হয় তাদের। এবং শেষ নাগাদ আগুনে পুড়িয়ে জীবন্ত হত্যা করা হয় কাস্তেইয়োকে। সেদিন ছিল ২৩ মার্চ ১৯৬৭ সাল। মৃত্যুকালে কাস্তেইয়োর বয়স হয়েছিল মাত্র ৩২ বছর।
মন্তব্য