বলছিলাম শীলার কথা। শীলা আমার সাথে পড়লেও আমার চেয়ে সে বেশ লম্বা ছিলো। হয়তো বয়সেও কিছুটা এগিয়েই ছিলো। তার মুখশ্রী মনে নেই তবে চেহারায় একটা তেজিভাব ছিলো মনে পড়ে। এদিকে আমার ছোটবোন লীনা, আমি স্কুলে যাওয়ার কারণে ঘরে একা হয়ে পড়াতে, সে’ও স্কুলে যাবার জন্যে খুউব কাঁদতো। তাই সেবার তাকে বাল্যশিক্ষায় ভর্তি করে দেওয়া হলো ৩ মাসের মতো বয়স বাড়িয়ে দেখিয়ে। এখনও তার সনদপত্রের জন্মতারিখ তাই প্রকৃত তারিখের প্রায় তিনমাস আগেই দেখানোআছে। সেসময় জিদ করে ভর্তি হলেও, এখন মাঝে মাঝে সহাস্য রোষে ঠাট্টাচ্ছলে সে আব্বাকে বলে, তিনমাস আগে অবসরে যেতে হবে, তাই সে তিনমাসের বেতন আব্বার কাছ থেকেই দিতে হবে। অবশ্য বিগত বেশ কিছুদিন আমার বাবা-মা আর সেসবেকর্ণপাত করার মতো শারীরিক মানসিক অবস্থায় নেই।
লীনার ভর্তির কিছুদিন পরে সকালের এসেম্বলি’র সময় নাকি শীলা লীনাকে পেছনে সরিয়ে দেয়, বা ধাক্কা দেয় বা এমন কিছু করে যা আমার বোনটিকে বেশ মনোবেদনায় আকীর্ণ করে। বড় ভাইকে অভিযোগ পেশ করলে, বড় ভাইয়েরও ছোটবোনের অপমানের প্রতিবাদে এগিয়ে যেতে হয়। শীলাকে ক্লাসে ঢুকার সময় আমি প্রশ্ন করি, কেন সে আমার বোনের সাথে এমন আচরণ করেছে। সে উল্টা বলে, করেছি তো কী হয়েছে, তুমি কী করতে পারবে? তখন আমি স্বভাবের বিড়াল যথা মিনমিন করে বলেছিলাম হেডস্যারকে বলে দেবো। এতে সে আমার দিকে হাত তুলে থাপ্পড় মারতে তেড়ে আসে! নাকি মেরেই দিয়েছিলো?! তবে হাল্কা তর্কাতর্কি যে হয়, তা ভুলিনি। আর আমি দ্বন্দ্বে পরাজিত হয়ে এক সময় অসহায়ের মতো পালাতে বাধ্য হই, সহপাঠিনীর হাতে মার খাওয়ার মতো অপমানজনক ঘটনা থেকে বাঁচতে। কারণ, আমার সাধ্য ছিলো না, তার সাথে মারপিটে বিজয়ী হবার। ভাইবোনের মধ্যে আমাদের ঝগড়াঝাটি-মারপিট হতেই পারে; কিন্তু বাইরে গিয়ে—তা’ও ইশকুলে, মারপিট করার মতো সাহস আমি সেদিন কেন, কোনোদিন পাইনি। কিন্তু উদ্ধত-ফণা শীলার সেই হাত এখনও যেন আমাকে তাড়া করে ফেরে গোপন অবচেতনে। বারবার ফিরে আসে সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্য, যেন দূর্গেশনাশিনী খড়গ হস্তে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মহিষাসুরকে। কিন্তু এতো উল্টাপুরাণ। এখানে তো দস্যিপনা করেছে সে। আমি তো প্রতিবাদ করেছি। তখন কি জানতাম যে, শক্তিমানের কাজের প্রতিবাদ করতে নেই? আজ অবশ্য বেশ জানি যে, প্রতিবাদী হলে দুনিয়াদারি করা চলে না। সমঝে, মেনে এবং মানিয়ে চলতে হয় জগৎময়। অন্যথা আঘাত সহ্যকরার মতো শক্তি অর্জন করা চাই।
আমাদের একজন সহপাঠীর নাম ছিল ফরহাদ। কেন যেন সে আমাকে একবার বেশ দাবড়ানি দিয়েছিলো কোনো এক অতিসামান্য কারণে। তবু বহুবার মনে মনে তাকে খুঁজেছি। তার ভেতরে একটা স্পিরিট ছিলো, যা আমার কোনোদিন হয়নি। কামাল আমার সহপাঠী হলেও সে আমার একেবারে নিকটতম প্রতিবেশী আশৈশব বন্ধু। কামাল, মইনুল এরা পরবর্তীতে আমার সথে হাই ইশকুলেও পড়েছিলো। কামাল স্পোর্টসে খুব দক্ষ। সব পুরষ্কার সে নিয়ে নিতো। আমি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার দিন খুব মনোযোগী দর্শক হওয়া ছাড়া আর কোনো ভূমিকাতেই অংশ গ্রহণের যোগ্যতা রাখতাম না। অবশ্য ভাল ছাত্রের একটা স্ট্যাম্পছিলো বলে কোনো মতে ইজ্জত রক্ষা হতো। এই স্পোর্টসের দিনটিকে আমি বেশি ভালোবাসতাম, কারণ তার পরেরদিন অবশ্যই ছুটি থাকতো; তবে সারাদিন বিনা কাজে অপরের কসরত দেখে সময় কাটানো যে কতো বিরক্তিকর সে কথা বুঝতে আমার একটুও বেগ পেতে হয়নি।
যখন চতুর্থ শ্রেণীতে উঠলাম, তখন একদিন আব্বা বললেন যে আরেকটা স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। পরে দেখলাম কামালও পরীক্ষা দেবে। তারপর জানতে পেলাম আমাদের স্কুলের অনেকে সেই পরীক্ষায় অংশ নেবে। আব্বা আমাকে মন দিয়ে পড়তে বললেন, নিজে বসে থেকে অংক আর ট্রান্সলেশন করালেন। একদিন সকালে আব্বা নিয়ে গেলেন পাহাড়ের ওপরে কতোগুলো টীনের ছাউনি ঘরের একটা স্কুলে। আমি পরীক্ষার হলে বসলাম। আম্মা শিখিয়ে দিয়েছেন “মনে মনে ১১ বার রাব্বি জিদনিএলমান পড়বি।” কতোবার যে পড়েছি মনে নেই, তবে প্রশ্ন দেখে বুঝলাম এই প্রশ্নের সব উত্তরই আমার জানা। তবে একসাথে বাংলা ইংরেজী ও অংক পরীক্ষা—এর আগে এমন তো দেখিনি। তা-ও আবার তিনটি আলাদা খাতায় লিখতে হবে। আমি যেহেতু সবই পারি, প্রথমে মনের সাধ মিটিয়ে বাংলা প্রশ্নের উত্তর লিখলাম। তারপর শুরু করলাম ইংরেজি। ইংরেজীও মোটামুটিলেখা শেষ করে এনেছি, এমন সময় ছুটির ঘন্টা বেজে উঠলো। অথচ আমার অংক খাতা পুরোটাই ফাঁকা — খাঁ খাঁ করছে। একটি অংকও করার সময় পাইনি। আমার যখন খাতা নিতে চাইলো, আমি বললাম, আমি তো অংক করিনি, আমার লেখা শেষ করতে দেন, আমি তো পারি। কিন্তু স্কুলের শিক্ষকগুলো সব রূপকথার দৈত্যের মতো ছিলো। আমার কথায় কর্ণপাত করেনি কেউ। আমার এই মহা ভেজাল লাগানোর ঘটনাটা আব্বা আম্মাকে বলার সাহস আমার আর হয়নি। আব্বা তো এমনিতেই বদমেজাজী। আমাদের ঘরে নারকেল পাতার শলাকা দিয়ে তৈরি একটি ঝাড়ু ছিলো সকালে বিছানা পরিষ্কার করতে বিছানা ঝাড়ার জন্যে। তবে প্রায় প্রভাতেই আব্বা আমার পিঠ পরিচ্ছন্ন করার কাজে ব্যবহার করতেন। সকালে ৬টার আগে উঠিয়ে দিতেন। দেরী হলেই ঝাড়ুর বাতাস পিঠে লম্বা লম্বা শলাকার লাল চিহ্ন রেখে যেত। দ্রুত জেগে মুখ ধুয়ে “আমপারা” নিয়ে আব্বার সামনে হাজির হতে হতো। আরবী শিক্ষার হাতেখড়ি এবং কুরআন পাঠের ওস্তাদ আমার এই গুরুগম্ভীর আব্বা হুজুরই ছিলেন। সেই “আলিফ বে তে ছে’রা , কানত ধরি ছেছেরা” ছড়াটি পেছনে বললেও, আব্বার সামনে বলতে পারিনি কোনোদিন— বরং কান ধরে যে মাঝে সাঁঝে ছেঁচড়ানোর পাঁয়তারা করেননি, এমনটি হলফ করে বলতে পারবো না। আরবী পড়া শেষ করে জামা পড়তে পড়তে আম্মা ডাক দিতেন সকালের নাস্তা খাবার জন্যে। আব্বা ছিলেন অনেকটা বিভীষিকার মতো। দুপুরে তিনি ঘুমানোর সময় আমার খুব বিস্কুটের ক্ষুধা লাগতো। আর সে বিস্কুট পাড়তে হতো রান্নাঘরের অনেক উঁচু তাকে রাখা কোনো বাক্স বা টীন থেকে। ঢাকনা খুলতে অনেক সময় পড়ে ঝনঝনাৎ শব্দ হলে ভয়ঙ্কর বিপদ নেমে আসতো। প্রায়শঃ আম্মা এসে বাঁচাতেন।
কিন্তু এবারে যে গণ্ডগোল পাকিয়ে এসেছি, পরীক্ষার খাতায়, তার বিপদ যে কতো ভয়াবহ সেটা আঁচ করে ব্যাপারটা চেপে গেলাম। পরে যেদিন ফল প্রকাশ হয়েছে সেদিন দুপুরের কথা ভাবলে এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। আব্বাকে নিয়ে বড় সমস্যা ছিলো সারা চট্টগ্রাম যেন তাঁর ছাত্রে ভরে আছে। নিউ মার্কেটের দোকানে গেলে যেমন ছাত্র মিলে যায়, স্কুলের মাস্টারদের মধ্যেও তাঁর অনেক ছাত্র জুটে যেত। ভর্তি পরীক্ষার ফল যেখানে টাঙানো হলো, সেখানে আমার নাম নেই দেখেই আব্বা সরাসরি ঢুকে পড়েছিলেন প্রধান শিক্ষকের ঘরে। আব্বা কিছুতেই মানতে পারছিলেন না, ক্লাসের ১ম স্থান পেয়ে কেউ ভর্তি পরীক্ষায় ফেইল করতে পারে। পরে যখন অংক খাতার শাদা পৃষ্ঠাগুলো ওনার দিকে চেয়ে খিলখিল করে হাসছিলো, তিনি যে কেমন অপ্রস্তুত ও অপদস্থ বোধ করেছিলেন তা ভেবে ইদানীং আব্বার জন্যে খুব মায়া হয়। ঘরে ঢুকেই তেড়ে এসেছিলেন আমাকে পাকড়াও করে পেটানোর জন্যে। কানের উপর হাতের কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিলো। ভাগ্যিস সেদিন আমার জ্যেঠা (আমরা ডাকতাম জেআব্বু) এসেছিলেন। তিনি আব্বাকে নিবৃত্ত করেন এবং আমি পালিয়ে বাঁচি। পরে দেখি আমাদের ক্লাসের কামাল, মোশারফ, মইনুলসহ অনেকেই চলে গেল নতুন স্কুলে। আমি যখন পরের দিন মুখ নীচু করে ক্লাসে গেলাম, মনে হচ্ছিলো সবাই আমাকে পরিহাস করছে। কেবল খুশি হয়েছিলেন হেড স্যার। বললেন, “ভাল ছাত্ররা চলে গেলে বৃত্তি পরীক্ষায় আমাদের রেজাল্ট ভাল হবে না। তুমি যে আমাদের সাথে আছো, আমি খুব খুশি।” সেই দিন থেকে এই হেডস্যারকে আমার পিতারও অধিক কোনো পরম আশ্রয় মনে হয়েছিলো। তিনি ছিলেনও তাই।
মূল সমস্যা হলো, আমি দ্রুত লিখতে পারতাম না। এখনও পারি না। তাই কখনোই আমি পুরো প্রশ্নের সব উত্তর লিখে শেষ করতে পারতাম না পরীক্ষার হলে। ব্যাপারটা আমার এমন বাতিকগ্রস্ততায় পরিণত হয়ে গিয়েছিলো যে, এরপর থেকে পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি ফিরলেই আব্বার প্রশ্ন ছিলো “আজ কতো নম্বর বাদ গেছে?” পরে পরে আমারও অভ্যাস দাঁড়িয়ে গিয়েছিলো যে, ঘরে ঢুকতেই আব্বার ঊদ্দেশ্যে ঘোষণা দিতাম “আজ ১০ নম্বর বাদ গেছে।” কোনোদিন বলতাম “আজ ২ নম্বর বাদ গেছে।” আব্বার হম্বিতম্বি একসময় হতাশ আক্ষেপের বেদনার্ত চিৎকারে পরিণত হতো। বলতেন, “তুই জীবনেও কোনোদিন ফুল (full) আনসার করতে পারবি না।” পেছনে দাঁড়িয়ে শুধু আম্মা বলতেন “এভাবে বোলো না, বরং দোয়া করো যেন সে ফুল আনসার করে আসতে পারে। দেখবে, সে একদিন ফুল আনসার করতে পারবে।” তবে এসএসসি পরীক্ষার আগে পর্যন্ত আমি ফুল আনসার করার রেকর্ড অর্জন করতে পারিনি কোনোদিন। আমি শুধু ভাবতাম। “সময়টা ১০ মিনিট বাড়িয়ে দিলেই তো হয়। অন্যদের মতো অগোছালো বা কোনোরকম একটা উত্তর লিখলে তো আমার চলে না।” কে শোনে শিশুদের কথা! আজ প্রায় ২৫ বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করছি, আমিও পারিনি কোনো ছাত্রের জন্যে ৫মিনিট বেশি সময় দিতে। শালার সিস্টেম আমাদের মানবিক চিন্তাকেও গিলে খেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, আমি তখন মাত্র ৪বছর বয়স অতিক্রম করেছি। আমি যুদ্ধ কি তা’ ঠিক করে বুঝে উঠতে পারিনি। তবে, মনে পড়ে, যুদ্ধ মানে মায়ের কোলে কোলে পলায়ন। সারাক্ষণ ভয় ও ত্রাসের মধ্যে নিরন্তর ছুটে চলা। আমার মনে পড়ে, কোনো এক অন্ধকার ঘরে গাদাগাদি করে শুয়ে বসে থাকা মানুষের ভীড়ের ভেতরে মা মুখে তুলে দিচ্ছে একনলা লবণ মেশানো মোটা চালের ভাত। সেই সামান্য স্মৃতির ফাঁকেও কেমন জ্বলজ্বলে তারার মতো একটি নাম শুনেছিলাম। মনে পড়ে সকলেই উদ্বিগ্নথাকতো আর বঙ্গবন্ধুর কথা বলতো। আমি তখন তো জানতাম না কি এই বঙ্গবন্ধু, কে এই বঙ্গবন্ধু। আমি শুধু দেখেছি, আমার উঠোনে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা, আমার উচ্চস্বরে ক্রন্দনও নিষিদ্ধ ঘোষিত। আর শুনেছি, সৈন্যরা হামলা করেছে ও ঘরে সে ঘরে। আবার কখনও বা, মুক্তি বলে কিছু মানুষের কথা বলতে শুনেছি। মুক্তির কথা বলতেই কেমন চোখ গুলো জ্বলজ্বল করে উঠতো সবার। বাবার কোলে পিঠে করে মায়ের বুকের ভেতর করে পালাতে পালাতে শুনি একদিন আর পালাতে হবে না। এবার সবার ঘরে ফেরার পালা। আর সেই ফেরার আনন্দে সবার হৃদয় যখন আনন্দে উদ্বেল, তখন দেখি কারও কারও মুখে এক ধরনের উৎসুক প্রতীক্ষা — সন্তানের স্বামীর বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষা। কারও মুখে বিষাদের কালিমা। কেউ কেউ আর কোনোদিন ফিরবে না। আমাদের আশেপাশে কেউ কেউ হয়তো বলছিলো, বঙ্গবন্ধুর কী হবে? একটা আশঙ্কা একটা আশার ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল সময়। চারিদিকে বিজয়ের গান। আমার রক্ত চনমন করা সেইসব গান খুব ভাল লাগতো। আমার উঠোনে খেলাধুলার দিন ফিরে এসেছে। ফিরে পেয়েছি বারান্দায় রোদ পোহানোর দিন। কিন্তু বাবা আর তাঁর বন্ধুদের চোখে মুখে উৎকন্ঠার অন্ত নেই। আলোচনার বিষয় একটাই, কবে ফিরে আসবেন প্রিয় নেতা ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।’
একদিন সেই প্রতীক্ষারও শেষ হয়। বাঙালি ফিরে পেল তার প্রিয় নেতাকে, জাতির পিতাকে। সারাপৃথিবী তাঁর কথা শুনতে উন্মুখ। আমিও বায়না করি বাবার কাছে, আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখব, তার কথা শুনব। মনে পড়ে, সেই সব বায়না আবদারের সময়গুলো পেরিয়ে যাবার অনেক অনেক পরে একদিন বাবা বললেন, আজ দুপুরে খেয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা শুনতে যাবো। মনে আছে সে উত্তেজনা এখনো রক্ত চনমন করে তোলে। আমরা যখন পলোগ্রাউন্ডের কাছে সি আর বি’র পাহাড়ে গিয়ে পৌঁছালাম, তখন চারপাশে লোকে লোকারণ্য। সেই ভীড়ের ভেতরেই আমরা যতদূর পারি এগিয়ে গেলাম। একসময় বাবার হাত ধরে পাহাড়ের গায়ে বসে পড়লাম। মাইকে সেই বজ্রকন্ঠ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কথা স্পষ্ট নয়। আর আমার সেই আকুল আবেদন, বঙ্গবন্ধুকে দেখবো — তা’ও আর হলো না। কিছুক্ষণ শুনার পরে বাবা বললেন, দেখা তো যাচ্ছেই না, ভাল করে শুনতেও পারছি না। তার চেয়ে ঘরে ফিরে রেডিও শুনলে ভাল হবে। আমি বললাম, ওখানে কি প্রথম থেকে শোনা যাবে? বাবা আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্যে ‘হ্যাঁ’ বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে গেলেন। সেই বজ্রকন্ঠ রেডিওতে শুনে সেই শৈশবেও রক্ত চনমন করে উঠেছিল। পরে পঁচাত্তরে একদিন আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানালেন পরদিন সকালে রাস্তার দুইপাশে সারিবেঁধে দাঁড়াতে হবে। জানতে পেলাম, জাতির পিতা চট্টগ্রাম আসবেন। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে হবে। সে এক আনন্দের দিন গিয়েছিল। জাতির পিতাকে সরাসরি দেখতে পাবো, হাতে থাকা ছোট্ট পতাকা নেড়ে শুভেচ্ছা জানাবো এমন আনন্দে উদ্বেল হয়ে সকাল সকাল প্রস্তুত হয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলাম। সারি বেঁধে একে-অপরের কাঁধে হাত রেখে বিদ্যালয় প্রাঙ্গন থেকে দিদার মার্কেটের সামনে সিরাজউদ্দোলা রোডে এসে পাশাপাশি সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষায় রইলাম। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো যখন ব্যথায় টনটন করছে তখন আমাদের সামনে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর গাড়ি বহর ধীরে ধীরে পার হয়ে চলে গেল। এক ঝলকের একটু দেখা, সৌম্যকান্তি বিশাল মানুষটির জন্যে বুকের মধ্যে এক ধরনের অদ্ভুত ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় চাপা কান্না যেন বেজে উঠেছিল সেদিনের শিশুমনে।হায়! তখন কি জানতাম তার কয়েকদিন পরেই এই মহান মানুষটিকে কয়েকটি সামান্য সিপাহি এইভাবে সপরিবারে হত্যা করে দেবে? পচাত্তরের সেই কালো রাতের কথা অতো পরিষ্কার বুঝতে পারিনি, শুধু বাবা-মায়ের ফিসফিস আলাপ থেকে বুঝতে পারলাম কোথায় যেন একটা তাল কেটে গেল, সুর হারিয়ে গেল। আমাদের দেশটি এক বিপন্ন অন্ধকারের দিকে ধাবিত হলো। কিন্তু আমরা তো জানি, সেই বজ্রকন্ঠ আমাদের নিয়ত উদ্বেলিত করে আর এই ঘোষণায় বার বার উজ্জীবিত করে “দাবাইয়া রাখতে পারবানা”।
যাই হোক চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার শেষদিকে নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ সকালে হঠাৎ আব্বা আমার হাতে তুলে দিলেন দুটো গল্পেরবই। পরে জেনেছিলাম, আম্মার পীড়াপীড়িতেই এই উপহার জুটেছে আমার কপালে। সেইদিন প্রথম জেনেছি, জন্মদিন একটা উদযাপনের ব্যাপার এবং বই হলো শ্রেষ্ঠ উপহার। সেই দুটি বই কতোবার যে পড়েছি তার ইয়ত্তা নেই। বই দুটির নাম — জসীমউদদীনের লেখা ‘বাঙালীর হাসির গল্প (১ম খণ্ড)’ এবং মোহাম্মদ নাসির আলীর লেখা ‘লেবু মামার সপ্তকাণ্ড’। এখনও বাঙালীর হাসির গল্পের সেই ছোট ছোট হাস্যরসাত্মক গল্পগুলো আমাকে খুব নাড়া দেয়। লেবু মামার অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড আমাকেএতো আলোড়িত করেছিলো যে, আমি বড় হয়েও সেই বইটি অনেকবার পড়েছি। মনে মনে আফসোস করতাম, এমন একটি লেবুমামা সত্যি সত্যি কেন আমার হলো না— এই কথা ভেবে। সবচেয়ে বড় উপলব্ধি হলো, আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার কীসের ক্ষুধা। আমি দৈনিক পত্রিকায় সাপ্তাহিক শিশু সাহিত্যের পাতায় গল্প পড়তে চেষ্টা করতে থাকি। কিছু ছড়া পড়ারও অভ্যাস তৈরি হয়। ভেবেছিলাম বইগুলো পড়া শেষ হয়েছে বললে, আবার বই পাওয়া যাবে। কিন্তু আমার আব্বা অতোটা রসিক মানুষ নন। কোরআন শরীফ এবং দৈনিক পত্রিকা ছাড়া উনি আর যা পড়তেন তা হলো একাউন্টিং ও ইনকাম ট্যাক্স। পরে পরে জেনেছিলাম, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে আব্বা একটি ইনকাম ট্যাক্স বিষয়ে পুস্তক রচনা করেছিলেন ইংরেজি ভাষায়, যা সিটি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের কমার্সের ছাত্ররা পড়তেন। কিন্তু স্বাধীনতার পরে বাংলা ভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা চালু হওয়ায় বইটির বাজার পড়ে যায়। আব্বা ইংরেজীতে অত্যন্ত দক্ষ হলেও বাংলায় তাঁর বেশ দুর্বলতা ছিলো সম্ভবত। তাই বইটি আর বাংলা করা হয়ে ওঠেনি। যাবলছিলাম, আব্বার যেহেতু গল্পের বই বা কারিকুলাম বহির্ভূত বই পাঠের অভ্যাস নেই, আমিও সেই দুটো বই পাঠ ও পুনর্পাঠে বছর পার করে দিয়েছি। পরের বছর আমি নিজেই দাবী করলাম, জন্মদিনে আমাকে আবার বই দিতে হবে। তারপর থেকে জন্মদিনে বইউপহার পাওয়াটাই নিয়মে পরিণত হয়ে যায়। অবশ্য পঞ্চম শ্রেণীতে ওঠার সময় আমি দ্বিতীয় হয়ে যাই। এটা কি অমনোযোগের ফল? নাকি মৃত্যুঞ্জয়ের মেধার কাছে আমার পরাজয়? নাকি আমার সেই কিছু নম্বর ছেড়ে আসার খেসারত?
আমাদের ৫ম শ্রেণীর শেষে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবার জন্যে একটি নির্বাচনী পরীক্ষা তথা টেস্ট পরীক্ষা হয়। টেস্ট পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখা গেলো মৃত্যুঞ্জয় আসছে না । যে মৃত্যুঞ্জয় কিনা প্রায় সময়ই প্রথম না হলে দ্বিতীয় হতো, সে কিনা টেস্ট পরীক্ষায় অনুপস্থিত! এটা কিছুতেই বিশ্বাস করা যায় না। অবিশ্বাস্য এই ঘটনার পেছনের কারণ জানা গেল ক’দিনের মধ্যেই। মৃত্যুঞ্জয় এক কঠিন রোগে আক্রান্ত। যা কিনা সাধারণত বয়স্কদের হয়। রোগটির নাম ডায়বেটিস। এই নামটির সাথে আমি পূর্ব পরিচিত। আমার আম্মার ছোটচাচা মানে আমাদের ছোট নানা প্রায় হাসপাতালে ভর্তি হতেন তাঁর ডায়াবেটিস রোগের জন্যে। ইনসুলিননামে একটা ইনজেকশন নিতেন। মৃত্যুঞ্জয়ের জন্যে খুব মন খারাপ হলো। সব সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী আজ রোগাক্রান্ত জেনে আমারমধ্যে কোনো রকম ভালো লাগা কাজ করেনি। বরং মনে হলো কী যেন একটা ফাঁকা হয়ে গেলো— কী যেন এক ফাঁকি আমাদের সে দিয়ে গেলো। তারপর বহুদিন মৃত্যুঞ্জয়কে আর দেখিনি। তার বাবা খাস্তগীর ডাক্তার নামে পরিচিত। সবার বাড়ি ঘুরে ঘুরে ইনজেকশন দিতেন। বড় হয়ে জেনেছি—উনি আসলে কমপাউন্ডার, মানে ডাক্তারদের কাজে সহায়তাকারী। একবার আরও বড় হয়ে খাস্তগীর কাকাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মৃত্যুঞ্জয়ের কথা। বড় বিষণ্ণ হয়ে মাথাটা তাঁর সামনে ঝুঁকে পড়েছিলো। পরে পরে আমি যখন মেডিকেলে পড়ি, তখন দেখতে পাই মৃত্যুঞ্জয়কে তার বাবার ফার্মেসিতে। আমি আলাপ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কোথায় যেন সুর কেটে গেছে, তাল হারিয়ে গেছে——মৃত্যুঞ্জয় শেষপর্যন্ত দেরিতে হলেও এসএসসি পাশ করেছিলো। কিন্তু একদিন জানতে পাই, মৃত্যুঞ্জয় মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করেছে। তাকে আর কোনোদিন দেখার সম্ভাবনা নেই। তবু বহুবার তার বাবার ফার্মেসির সামনে দিয়ে হেঁটে যাবার সময় মনে হতো ওই তো মৃত্যুঞ্জয় বসে আছ, কখনোবা মনে হয়েছে, আমাকে যেন সে ডাক দিলো। আমি আম্মাকে প্রশ্ন করেছিলাম, মৃত্যুঞ্জয় কেন মারা যাবে? আম্মা বললেন, নাম রাখলেই তো আর মৃত্যুকে জয় করা যায় না! তখন মনেমনে এটাও বুঝলাম, জিললুর রহমান নাম হলেও ‘দয়াময়ের ছায়া’ আমি হয়তো নই। কিন্তু ততোদিনে কিছু পড়ালেখার সুবাদে জেনেছি, কেবল যুধিষ্ঠিরই হেঁটে স্বর্গারোহন করে মৃত্যুকে জয় করেছেন। তার জন্যে তো ‘যুদ্ধে স্থির’ থেকে “অশ্বত্থামা হত” বললেও মনে মনে “ইতি গজ” পাঠ করা চাই। আরেক পাঠে জেনেছিলাম, ঈসা নবীকে ক্রুশে ঝুলানোর সময় স্রষ্ঠা তাঁকে উপরে তুলে নেন; এবং তিনি ভবিষ্যতে পুনঃ প্রেরিত হবেন। যদিও বাইবেল এ তত্ত্ব সমর্থন করে না। অবশ্য করলে তো বিরোধ থাকতো না। যাইহোক, মৃত্যুঞ্জয়কে বাদ দিয়েই আমরা এগিয়ে যাই বৃত্তি পরীক্ষার দিকে।
আরেকজন শিক্ষকের কথা এখন মনে পড়লো, তিনি কাজী স্যার। বেঁটে খাট মানুষ, চেহারাটা কেমন যেন ডিমের মতো। পড়াতেন ভালোই, কেবল পড়া না পারলে বেশ ক্ষেপে যেতেন। আমাকে একবার বাসায় পড়ানোর জন্যে এই কাজী স্যারকে ঘরে আনা হয়েছিলো। আমাকে সবসময় আম্মা পড়াতেন। পঞ্চম শ্রেণীর শেষ দিকে আম্মা আব্বাকে বলেন, একজন প্রাইভেট মাস্টার রাখতে——সামনে বৃত্তি পরীক্ষা, সে কারণেই। আমাকে আর লীনাকে পড়ানো শুরু করলেন স্যার। কোনো কিছু এদিক ওদিক করলেইস্যারের একটি গালি দেবার বাতিক ছিল—কথায় কথায় বলে উঠতেন—“লাথি খাবি”। এরকম একদিন উনি যখন আমাদের বকছিলেন, আম্মা শুনতে পান এবং পরদিন থেকে আমরা কাজী স্যারের হাত থেকে মুক্তি লাভ করি।
পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া কালে আরেকটি ঘটনা এখনও চোখে ভাসে। সেটি হলো, আমরা ক্লাস করছিলাম, সম্ভবত অংক ক্লাস। তখনও তেমন বেলা হয়নি। হঠাৎ মাঠের ওপাশে মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিন মাইকে আজান দিতে লাগলেন। স্যার ঘড়ি দেখেবললেন — এখনও তো জোহরের সময় হয়নি! তখন স্যার আমাকে বললেন, মসজিদে গিয়ে মুয়াজ্জিনকে থামাতে। আমি স্যারের কথা মতো ভোঁ দৌড় দিলাম মসজিদের দিকে। এখন দেখলে যে মাঠটিকে হাতের তালুর মতো এতোটুকুন মনে হয়, সেদিন সেই মাঠ যেন দীর্ঘ প্রসারিত হয়ে রবি ঠাকুরের তেপান্তরের মাঠে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো। কিছুতেই যেন মসজিদের কাছে পৌঁছতেই পারছিলাম না। ওদিকে জানালা দিয়ে হেড স্যার আমাকে মসজিদের দিকে যেতে দেখে উৎকন্ঠিত হয়ে জোরে চিৎকার করে করে আমার নাম ধরে ডাকলেন ক্লাসে ফিরে যাবার জন্যে। আমি অবশ্য মুয়াজ্জিনকে থামিয়ে তারপর ফিরলাম। দেখি হেডস্যার চিন্তিত মুখে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানালাম, মুয়াজ্জিন সাহেব ঘড়ির কাঁটার ১১টা’কে ১টা বেজেছে মনে করে ভুল করেছিলেন। স্যার মৃদু স্বরে বললেন, এরকম আর কখনও যাবে না। আমি স্যারের মুখের ওপর বলতে পারিনি যে আমাকে তো ক্লাস থেকে অংক স্যার পাঠিয়েছেন।
বৃত্তি পরীক্ষার হল ছিল মুসলিম হাই স্কুলে। এখন ঠিক মনে নেই, তবে সম্ভবত বাংলা, অংক এবং ইংরেজি পরীক্ষা পর পর তিনদিনে ছিলো। স্কুল থেকে খুব বেশি ছাত্রছাত্রী বৃত্তি পরীক্ষা দেবার সুযোগ পায়নি। আমি পেয়েছিলাম। সব ডিটেইলস মনে না এলেও একটি মজার কথা মনে পড়ছে, শেষ পরীক্ষার দিন কোনো এক কারণে আমাকে নেবার জন্যে আব্বা না পৌঁছানোয় হেডস্যার এবং তাঁর মেয়েটির সাথে স্যারের কোলে বসে রিকশায় চড়ে আমাদের ইশকুল পর্যন্ত এসেছিলাম। তারপর তো চেনারাস্তা। হেঁটে ঘরে পৌঁছে যাই। সেবার আমি ভেবেছিলাম বৃত্তি পরীক্ষা দিলে আর বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হবে না। কিন্তু না, আমাকে আবার বসতে হয়েছিলো বার্ষিক পরীক্ষার হলেও। অবশ্য মৃত্যুঞ্জয়হীন এ পরীক্ষায় প্রথম হওয়াতে তেমন কোনো চ্যালেঞ্জ অনুভব করিনি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ এভাবেই একদিন ফুরিয়ে গেলে আমাকে উচ্চতর বিদ্যালয়ের সন্ধানে আবারও নামতে হয় ভর্তিপরীক্ষার যুদ্ধে। এবার আব্বা বারবার একটি কথাই মনে করিয়ে দিয়েছিলেন——অংক আগে করতে হবে, তারপর ইংরেজি এবংসবশেষে বাংলা লিখতে। যতদূর মনে পড়ে আমি কলেজিয়েট স্কুল, মুসলিম হাইস্কুল এবং চট্টগ্রাম জুনিয়র হাইস্কুলে ভর্তি পরীক্ষাদিয়েছিলাম।
টিকেও গিয়েছি সবগুলোতেই। আমি আব্বাকে বললাম, আমি কলেজিয়েট স্কুলে পড়তে চাই। গম্ভীর গলায় শুধু এটুকু বললেন, “ঘরের দুয়ারে স্কুল থাকতে অতো দূরে কলেজিয়েটে পড়ার কোনো দরকার নেই”। এভাবে সেসময়ে সেরা স্কুলে পড়ার সাধ এখানেইচোখের জলে ডুবে গেলো। পরেরদিন আমাকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে হাজির হলেন জুনিয়র হাইস্কুলের অফিস কক্ষে। এটা সেই স্কুলযেখানে আমি চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হতে ব্যর্থ হয়েছিলাম অদ্ভুত বোকামির জন্যে। এখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে এসে পড়ার সুযোগ পেলাম।কিন্তু শুনলাম, অষ্টম শ্রেণীর পরে নাকি আবার নতুন স্কুলের সন্ধানে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে! কারণ, এটা জুনিয়র হাইস্কুল—অষ্টম শ্রেণীর পরে আর ক্লাস নেই। পরে অবশ্য হাইস্কুলে উন্নীত হওয়ায় ঝামেলামুক্ত হয়েছিলাম—মানে ইশকুল খোঁজার পালা শেষ।
প্রাথমিক রচনাকাল : ১১ আগস্ট ২০২০; পূর্বাহ্ণ ১২:৩৯
১ম পরিমার্জন : ১৪ আগস্ট ২০২০; রাত ১০:২৭
২য় পরিমার্জন : ২৫ আগস্ট ২০২০; সকাল ০৯:১২
https://images.pexels.com/photos/4226765/pexels-photo-4226765.jpeg
উত্তরমুছুন