নিশ্চুপ ধরলার বহমান জল গড়িয়ে অক্ষরের ভাঁজে জমা হচ্ছে গল্পের চর। সেখানে বানিয়েছেন কবি স্মৃতি বিস্তৃত কবিতার ঘর। কুড়িগ্রামের অলিগলি পেরিয়ে কবির দুরন্ত বেড়ে ওঠা শৈশব, কৈশোর। কুড়িগ্রামে ধরলা নদী থেকে শহীদ মিনার এর মধ্যবর্তী রিভার ভিউ ইস্কুল কবিকে আপেক্ষিক কাশবনের গল্প শোনায়, শোনায় জনতার সমাগম মিশ্রিত চাঁদের কালো রঙের কলতান।
“ধরলার বুকে জেগে ওঠা চরের কাশবনে
তোমাতে দ্যাখা কালো চাঁদ
এখন কালো রঙের
কৈশোর মাখা স্বপ্নরা পাখা পেয়ে ফিরে যায়
ধরলা থেকে রিভার ভিউ ইস্কুল
তারপর শহীদ মিনার”
“অমীমাংসিত ফুলের দেবতা”র কবি মাহফুজুর রহমান লিংকন।
“কবি, সেলিব্রিটি হবার আগে আসুন এক কাপ চা খাই।”
চা সিগ্রেট কোনোটাও ছুঁই না, চড়তে পারি না কোনো গাছ। কীভাবে আসাম যাবো কাটাবো বারোমাস। উক্ত গ্রন্থে কবির কবিতাগুলো ঠিক এরকমই। কখনো ভেজায় বৃষ্টিতে, কখনো বাবার কাঁধে ছেলে বসে আছে, কখনো নিয়ে যাচ্ছেন ফার্মাসিউটিক্যাল ল্যাবে, ভোগাচ্ছেন শ্বাসকষ্টে। এতোসব ইমেজের জার্নি বিষয়টা আনন্দের। আবার কখনো বৃষ্টিস্নাত কদমের শাখে খুঁজেছেন শ্যামবালিকা।
“আচানক বৃষ্টি, সম্ভবনা ছিলো না
আবহাওয়া বার্তাতেও নাই
মস্তিষ্কের কোনোও এক অংশে ছিল বার্তা”
কবি আবার মৃন্ময়ীকেও খুঁজে বেড়িয়েছেন এপার ওপার। কিন্তু কবি কি এখানেই সীমাবদ্ধ? এখানে কবি বলেন,
“কবিমাত্রই প্রেমে থাকে না।
থাকেন -
ধ্যানে
জ্ঞানে
স্বপ্নে
সৃষ্টিকর্তা রূপে”
অথচ কবি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তিনি কবিতা শেখেননি, কবিতা জানেন না। কবিতার কোনো সংঙ্গাও মানেন না। বাঁধা পড়েননি কোনো নিয়মের। যার ছাপ রয়েছে এই গ্রন্থের বাক্য গাঁথুনিতে।
“কবিতালোকে স্নানের নিয়মাবলি শিখি নাই
জানি শুধু আমার অংশগত তুমি”
কবি, এই গ্রন্থের প্রথমেই পবিত্র হতে বলেছেন। পবিত্র আত্মা ছাড়া এই বোধের প্রসারিত ডানায় ভর দেয়া দুরূহ। ধ্যানে, জ্ঞানে মুক্ত প্রাণে যেনো গেয়েছেন ঘুমহীন নিদ্রার গান।
“মধ্যরাতে, লুকিয়ে রাখা পরমানন্দের
একটি শ্বাস হাতছানি দেয়,
‘তুই বাবা হোলে আমি ছেলে হতাম’।”
আব্বার মৃত্যুশোকে আচ্ছাদিত বুকের সবুজ বনাঞ্চল কখনো ভিজেছে সেই বনের পত্র পল্লব। যার বিশ্লেষণ করা হয়নি ফুলের আগমন। আব্বার কাঁধের ভূগোল পেরিয়ে কবি মানুষ নয়, শুদ্ধ মানুষ হতে চেয়েছেন। চেয়েছেন সবুজ কচি আমপাতার মতোন।
“শরীর থেকে কেমন যেন মানুষের গন্ধ আসে
বিষ্ময়ে নিজেকে দেখি - বৃষ্টি ধোয়া
কচি আমপাতা সবুজের মতোই।”
বিষ্ময়ে নিজেকে দেখা > নার্সিসাস। আত্মোপলব্ধি একজন কবির আবশ্যকীয় কিনা জানা নেই। তবে লালন বলেছেন, “আত্ম তত্ত্ব যে জেনেছে সেই তো সুফল পেয়েছে।” সুফল পেয়ে থাকুক বা না থাকুক। তা অমীমাংসিত গণিতের গ্রাফিতি। কিন্তু পেয়েছেন সাবলীল ভালোবাসা।
“পৃথিবীর সর্বাধুনিক প্রযুক্তিকে হারিয়ে দিতে, পৃথিবীর ছোট্ট হাতিয়ার ভালোবাসা!
অমীমাংসিত বচন!
নাহ, মীমাংসিত!
ক্যানোনা, ভালো আছো জেনে, ভালো থাকি। ভালোবাসো না জেনেই, ভালোবাসি।”
মাহফুজুর রহমান লিংকনের কবিতা: প্রকৃতিপ্রেম ও ভাবব্যঞ্জনার মিলিতরূপ
শামীম সৈকত
শামীম সৈকত
মন্তব্য