লিখেছেন: সাম্য রাইয়ান
হিসেবহীন ছোটছোট অভিযোগ আমার প্রতি
এইসব ছোটছোট ভাইরাস
কী-ই বা ক্ষতি করতে পারে আমার?
আমিতো প্রেম আর মৃত্যুর অধিক
জীবনহীনতা করি যাপন।
এই আমরা। আমরা যারা এখানে কাজ-কারবার বাদ দিয়ে জীবনচর্চায় ব্যস্ত আছি, তারা আসলে কী করবো তা একমাত্র আমরাই জানি; মহাবিশ্বে এ কথা আর কেউ জানে না। আমরা যারা ভবিষ্যত বিক্রির টাকা দিয়ে স্বাধীন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় মত্ত, মিডলক্লাস তাদের গালি দেয় মনখুলে। কখনও পাগল বলে প্রচার করে। আমরা যে আসলে কী করবো তা কেবল আমরাই জানি অথবা জানিনা।
এইখানে নিয়মিত ঠিকঠিক
রোদ আসে ঝড় আসে
মেঘ আসে খরা আসে
বান আসে ঋণ আসে
—কিছু কি অহেতু হয় জীবের নিকটে বলো
—রাত্রি একটা অনাহুত বেদনার নাম
—মনের ভিতরে আছে প্রকৃত শরীর
—মেঘলা ধ্বংসস্তুপের ভাঁজে চাপা পড়েছে সবুজাভ টিয়া
—শ্যামল ডানার দিকে বিষাদের রঙ ঢালো
পথভুলো ট্রেনই কেবল চলে যায় প্রয়োজনহীন গন্তব্যে। আমরা ট্রেনের অপেক্ষায় রাত পার ক’রে ফিরে আসি ঘরে। প্রত্যেক রাতে কোনও না কোনও রেঁস্তোরায় আড্ডা শেষে বেশ পবিত্র-পবিত্র ভাব নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। আর তখন আমার পকেটভর্তি আলোচনা, মিলুর বাজারের ব্যাগভর্তি কবিতা। খুব বেশি জ্ঞানী না হলেও কেউ কেউ জানেন, মৃত্যুর আগে প্রগতিশীল উন্মাদ বলে পরিচিত - নির্বোধের কাছে।
অনবরত শব্দ গাঁথি স্বপ্নবাজ তাঁতিদের মতো। পুরো গাঁথা শেষ হলে এগুলো ছেড়ে দিই; পুকুরে ছড়িয়ে পড়ে ঘনবুনটের জাল।
প্রচুর শব্দের অপচয়
অনর্গল বাক্যব্যায়, হয়েছে
হুলস্থুল সব এলোমেলো;
আক্রমণাত্মক শব্দ
বেরিয়েছে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের ফলা বেয়ে
আর যতো যানজট তৈরি হয়েছে
মগজময়; মৃত্যুমুখী-
ধূসর সমস্ত মদের বোতল ভেঙে হৃদয়ে চালিয়ে দিতে ইচ্ছে হয়। একদম ঠেলে - ধাক্কা দিয়ে পুরোটা আত্মস্থ করাতে ইচ্ছে হয়। আহা মানবতা! তুমি মদের বোতলে থিতু অথবা কাঁচের সেই টুঙটাঙ শব্দে। সেই শব্দ অথবা গন্ধের ভিতর দিয়ে আমরা নির্মাণ করি আরেকটা জগৎ। মনে করি সেটা আমাদের।
কতোদিন কতো দীর্ঘদিন ইচ্ছেমতো হেঁটেছি প্যারিসরোড ধরে; উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটি করাকে গর্হিত মনে করে এরকম কিছু মানুষের সাক্ষাত পাবার দণ্ড আমার হয়েছিলো। আর শাস্তিস্বরূপ হেমলকের পরিবর্তে দেয়া হয়েছিলো অজস্র অবান্তর প্রশ্ন। তাই নিরূপায় আমি একবার শুধু বন্ধুর মুখের দিকে চেয়ে অকপট ঝেড়েছি শব্দ - মিথ্যার ভাঁগাড় থেকে। বৃষ্টির বাহনে সৌখিন পরিব্রাজক হয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হলো, বুঝিবা বৃক্ষেরও আছে ঘুমপাড়ানী গান। ঘুমের আগে তা শিশুবৃক্ষরা শোনে। শুনতে শুনতে খায়, ঘুমায়! ওরাই রচনা করেছে আদিম সংগীত; পাখিদের মতো। হয়তো পকেট হাতরে পাওয়া যাবে বাঁশী বাজানোর স্মৃতি। মায়ের কবরে দাঁড়িয়ে ওরাও গাইতে পারে বেদনাসংগীত। শেষে ভাবলাম, এই সন্ধ্যাকালের একটা নাম দিতে হবে। নামহীন সন্ধ্যাকালকে কেন অপার মনে হয়? অথচ একজন আমাদের সুস্থতা বোঝাতে এসে এই দৃশ্যত উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটিকে গর্হিত বলে চলে গেলেন!
এতদিন পড়া হয় নাই! আজ পড়লাম, পড়া হলো, শেষ হলো না!
উত্তরমুছুন