‘লেখার সময় নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না’
— বং জুন হো
বং জুন হো (জন্ম ১৯৬৯, দক্ষিণ কোরিয়া) বর্তমান কালের একজন মায়েস্ত্রো পরিচালক। তার পরিচালিত প্যারাসাইট একই সাথে পাম দর (২০১৯) এবং সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে অস্কার (২০২০) জিতে নেয়। তাঁর পরিচালিত বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্র- মেমোরিজ অব মার্ডার, দ্যা হোস্ট, মাদার, ¯স্নোপিয়ারসার, ওকজা ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন দ্যা আটলান্টিকের হয়ে ডেভিড সিমস প্যারাসাইটের পরিচালক বং জুন হো’র সাক্ষাৎকারটি নেন যা ১৫ অক্টোবর ২০১৯ প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারটির সামান্য সংক্ষেপিত অনুবাদ করেছেন জোনায়েদ রশিদ।
ডেভিড সিমসঃ যদ্দুর জানি প্যারাসাইট মঞ্চনাটক হিসেবেই লেখা হয়েছিল।এই আইডিয়ার উৎপত্তি কীভাবে?
বং জুন হোঃ আমার একজন খুব কাছের বন্ধু মঞ্চ অভিনেতা, তিনি আমাকে মঞ্চ নাটক নির্দেশনা দেয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন। সাধারণত আমার সিনেমাগুলোতে প্রচুর লোকেশন থাকে, যেমন-ওকজা শুরু হয় কোরিয়ার গহীন পার্বত্য অঞ্চলে আর শেষ হয় ম্যানহাটনে।কিন্তুমঞ্চে ব্যাপারটা ভিন্ন, এখানে স্পেস খুবই সীমাবদ্ধ। ফলে, মাত্র দু’ কক্ষের কামরার মধ্যে কি গল্প বলা যায় ভাবছিলাম? ওই সময় ¯ স্নোপিয়ারসার এর পোস্ট প্রোডাকশনে ব্যস্ত ছিলাম। ধনী- গরীব বৈষম্য বিষয়ক ভাবনার মধ্যেই একরকম মগ্ন ছিলাম (¯স্নোপিয়ারসারের থিমও বৈষম্য)। ধনী গরীব ভেদে বাসস্থান বিষয়ক ভাবনার উৎপত্তি ওই সময়।
এছাড়া অনুপ্রবেশ বিষয়টা আমাকে সবসময় তাড়িত করে। কলেজে পড়াশুনাকালীন একটি ধনী পরিবারে টিউশন করাতাম। টিউশন ব্যপারটা আমার মনে হত সম্পূর্ণ অপরিচিত কারো ব্যক্তিগত ভুবনে অনাহুত উকি দেয়ার মত। তখন নানা অদ্ভুতুড়ে ভাবনা মাথায় ভর করতো।মনে মনে ভাবতাম একে একে আমার সব বন্ধুকে যদি কোন না কোন উছিলায় এদের ঘরে নিয়ে আসা গেলে বেশ হত!
ডেভিড সিমসঃ রূপকধর্মী সাই-ফাই, ফ্যান্টাসি ছবি করেছেন এতদিন যাবৎ। রূপকধর্মীতা অক্ষুন্ন রেখেই এবার কি আপনি সচেতনভাবেই কঠিনতর জরা বেছে নিয়েছেন?
বং জুন হোঃ সাই-ফাই ছবিতে কিছু কথা সরাসরি বলার সুযোগ পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, ¯স্নোপিয়ার সার-এ ইঞ্জিন কক্ষে এড হ্যারিসের দীর্ঘ মনোলোগ। প্যারাসাইট -এ যেমন ল্যান্ডস্কেপ স্টোন (উপহার হিসেবে প্রাপ্ত, যেটা ছবির প্লটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ)। এই ছবিতেও প্রতীকের ব্যবহার আছে কিন্তু আমি জোর দিতে চেয়েছি জাগতিক বাস্তবতার উপর, আমাদের প্রতিবেশীর গল্পের উপর।
ডেভিড সিমসঃ কিন্তু, প্যারাসাইটে ‘ভূতের বাড়ি’র গল্পের উপকরণও আছে!
বং জুন হোঃ ভূতের গল্পের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে বৈকি। চাইলে যে কোন জরায় ফেলা যায়। এই ছবিতে বাস্তব মানুষদেরকেও ভূতের মতই ট্রিট করা হয়। সামাজিক বক্তব্য এবং জরা’র বৈশিষ্ট্য উপস্থিত। আমি মনে করি চলচ্চিত্রে এই দুটিকে আলাদা করা মুশকিল।
ডেভিড সিমসঃ দুই পরিবারের বাসস্থানই এই গল্পের অনেকটুকু বলে দেয়। দেখিয়ে দেয় তারা কতটা ভিন্নভাবে বেঁচে আছে। এটা কীভাবে আপনি নির্মাণ করলেন?
বং জুন হোঃ চরিত্রগুলো একে অপরের উপর আড়িপাতা এবং গুপ্তচরবৃত্তিতে নিয়োজিত। চরিত্র নির্মাণ, চলচ্চিত্রের পূর্ণাঙ্গ কাঠামো চিত্রনাট্য লেখার সময়ই সম্পন্ন হয়েছিল। আমার দায়িত্ব ছিল প্রোডাকশন ডিজাইনারের থেকে কাজটা বুঝে নেয়া। তিনি কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন কারণ আমি যা চাইছিলাম ঘরের (ধনী পরিবার) স্থাপত্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কিন্তু গল্পের প্রয়োজনে এই বিষয়ে আমি ছাড় দিতে নারাজ ছিলাম। তার (প্রোডাকশন ডিজাইনার) জন্য বিষয়টা ছিল একটা সুযোগ ঘরের সারফেস ও টেক্সচার এর উপর অধিক মনোযোগ দেয়ার জন্য, যাতে মনে হয় বাড়িটি একজন পরিশীলিত মননের ধনী যুবকের মালিকানাধীন- যেটা তাদের রুচিবোধ প্রকাশের একটা মাধ্যমও বটে।
অন্যঘরটির (গরীব পরিবার) জন্য কাঠামোটা তুলনামূলক সহজ ছিল। ধনী পরিবারটি যদি কোন বিচ্ছিন্ন দূর্গের মত হয় তো দরিদ্র পরিবারটিতে কোন প্রাইভেসি থাকতে পারে না,কারণ ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান যেন প্রাইভেসির পার্থক্যে মাপা যায়।পথচারী এবং রাস্তায় চলাচল করা গাড়ি থেকে যেন দরিদ্র পরিবারটির অর্ধ-বেসমেন্ট বাড়ির ভিতরে উঁকি দেয়া যায়। একটি দৃশ্য আছে যেখানে পুরো পাড়া প্লাবিত হয়, এইজন্য পানির ট্যাঙ্কিতে পুরো পাড়াটি আমাদের তৈরী করতে হয়েছিল।
ডেভিড সিমসঃ সেমি-বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্ট, ছবিতে যেমন দেখা যায় সিউলে কি খুব কমন?
বং জুন হোঃ খুবই কমন, বিশেষত শহরতলীতে সহজেই চোখেপড়ে। অবশ্য প্যারাসাইটে সেমি বেসমেন্ট-যা নির্দেশ করে অর্ধেকটা মাটির নিচে আর অর্ধেক উপরে-কেন্দ্রীয় চরিত্রের মানসিক অবস্থারও নির্দেশক। তারা বিশ্বাস করতে চায় ওরা মাটির উপর-ই আছে যদিও যেকোন মূহুর্তে তলিয়ে যাওয়ার ভীতি তীব্রভাবে কাজ করে। এটা সেই নারকীয় অবস্থান যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার ফল।
ডেভিড সিমসঃ আমেরিকায় সম্পদ বৈষম্য বিষয়ক আলাপ আলোচনা বেশ জোরে শোরে শোনা যাচ্ছে। কোরিয়ার ক্ষেত্রেও কি বিষয়টা তেমনই। ধনী দরিদ্রের মেরুকরণ বিষয়ক ভীতি কি কোরিয়ায়ও আছে?
বং জুন হোঃ অ্যাডাম ম্যাককির নির্মিত ব্ল্যাক কমেডি দ্য বিগশর্ট দেখতে দেখতে নানাকিছু ভাবছিলাম। বিবেচনায় রাখা যায় শিল্পশহর ডেট্রয়টের পটভূমিতে আমার বন্ধু টিল্ডা সুইনটন অভিনীত জিম জার্মুশ নির্মিত অনলি লাভারস লেফট অ্যালাইভস ছবিটির কথাও। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থার কিছু নাটকীয় প্রজেকশন এই সব ছবিতেআছে। ধনী গরীবের মধ্যকার মেরুকরণ কেবল কোরিয়া নয় দুনিয়ার যেকোন স্থানের জন্যই প্রযোজ্য। কোরিয়ার অনেক উন্নয়ন হয়েছে, এখন এটিকে ধনী দেশই বলা যায়। কিন্তু দেশ যতই উন্নত হচ্ছে বৈষম্য ততই বাড়ছে।
ডেভিড সিমসঃ অর্ধেকটা যাওয়ার পরই ছবিটা একটা বড় ধরণের বাঁক নেয়। আপনার সমস্ত পরিকল্পনা কি বড় কোন টুইস্ট ঘিরে আবর্তিত?
বং জুন হোঃ এই গল্প নিয়ে যখন ভাবছিলাম ছবির দ্বিতীয় অংশটা আমার কোনভাবেই মাথায় আসছিল না। হঠাৎ-ই এলো এবং আমি ঝড়ের গতিতে তা লিখে ফেললাম। যখন লিখছিলাম সেইসময়কার কথা ভাবলে অদ্ভুত লাগে।আমি আসলেই জানিনা এই আইডিয়া কিভাবে এলো, লেখাটা কিভাবে শেষ করেছি। প্রকৃতপক্ষে লেখার সময় নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না- জাস্ট ঘটনা ঘটে যায়।
ডেভিড সিমসঃ চলচ্চিত্রটির কিছু কিছু ইমেজ আমাকে সত্যিকার অর্থেই হতবাক করেছে। যেমন সিঁড়ি থেকে ব্যক্তিটি যখন উঁকি দেয়- ভীতিকর তার দৃষ্টি,আমরাও তাকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে আবিষ্কার করি।
বং জুন হোঃ মূল স্ক্রীপ্টে বিষয়টা এরকম ছিল না। মূল স্ক্রীপ্টে ছিল বাচ্চাটা যখন কেক খাচ্ছে- লোকটির প্রতিচ্ছবি জানলায় পড়বে। কিন্তু সেট ডিজাইন করতে গিয়ে দেখা গেল বাড়িটি যথেষ্ট বড়, এত দূরত্বে প্রতিচ্ছবি তৈরী করতে গেলে বিষয়টা খাপছাড়া দেখাবে। ফলে মূল পরিকল্পনা বাদ দিতে হল। একদিন ওই অভিনেতা ফটো শ্যুট করার জন্য আমার অফিসে এলো। ফটোসেশন করা হলে, লক্ষ্য করলাম তার চোখের দৃষ্টি খুবই তীক্ষ্ণ। সিদ্ধান্ত নিলাম এই দৃষ্টি কাজে লাগাতে হবে। ওই দৃশ্যে কোন স্পেশাল ইফেক্টের কাজ ছিল না- আমরা কেবল তার চোখটা দেখিয়েছি, সেই দৃষ্টি- যেন সাবমেরিন থেকে দূরবীন দিয়ে দেখছে।
ডেভিড সিমসঃ ছবিতে কিছু কিছু বিষয় আছে যা একেক জনের কাছে একেক অর্থ হতে পারে। উপহারস্বরূপ পাওয়া ‘ল্যান্ডস্ক্যাপ স্টোন’ নামের পাথরের ভাস্কর্য যেটা নানা রকম ইঙ্গিতময়তা বহন করে - এর কথাই ধরা যাক।
বং জুন হোঃ সত্যি বলতে কি- আজকাল কেউ এই ধরণের কিছু উপহার দেয় না। আমার মায়েরা বা প্রকৃতই বয়সী প্রজন্মে এইধরণের উপহারের চল ছিল- কিন্তু তরুণ প্রজন্ম এই ধরণের উপহার বিনিময় করছে সেটা বাস্তবসম্মত নয়, কোরিয়ার প্রেক্ষাপটে সেটা খানিকটা অবিশ্বাস্য। কিন্তু যে জিনিসের চল এখন নেই তা যদি বিশ্বাসযোগ্যভাবে দেখিয়ে দর্শককে তুষ্ট করতে পারি সেটা আমার কাছে আনন্দদায়ক।অবশ্য সিনেমাতে সেটা কিছুটা বিশ্বাসযোগ্য করা হয় যখন মা বলেন- ‘বরং কিছু খাদ্য আনলেই ভালো হতো’ এবং তার উত্তরে সন্তান বলে- ‘বাহ! এটা তো বেশ রূপকধর্মী’।অর্থাৎ খোদ চরিত্রগুলোই ভাবছে বিষয়টা অদ্ভুত!সিনেমায় পাথরখন্ডটির মধ্যে অনন্য এই বৈশিষ্ট্য আরোপ করা হয়েছে।এটি নিয়ে ছেলেটি এক ধরণের ঘোরের মধ্যে থাকে। পুরো ছবি জুড়েই সে তার ধনী বন্ধু মিনকে অনুকরণ করার চেষ্টা চালিয়ে যায় যে তাকে পাথরখন্ডটির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। যদিও মিন তাকে পাথরখণ্ডটি দিয়ে গায়েব হয়ে যায় কিন্তু ছবির বাকি অংশে এই পাথরখণ্ড মিনের উপস্থিতি জিইয়ে রাখে।
ডেভিড সিমসঃ কোরিয়ার বাইরের দর্শকগণ এই ধরণের কোন ইঙ্গিত কি আদৌ পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম ?
বং জুন হোঃ কান, টরেন্টো, নিউইয়র্ক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে নানা দেশি দর্শকদের সাথে ছবিটি দেখার সুযোগ হয়েছে। আমি লক্ষ্য করেছি দর্শক সারা বিশ্বেই প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া দেখায়- একই রকম দৃশ্যে হাসে কিংবা উত্তেজিত হয়। অবশ্য কিছু কিছু সূক্ষ্ম ইঙ্গিত আছে যা হয়ত সব দর্শক বুঝতে পারবে না। যেমন এই ছবিতে একটি থাইওয়ানিজ কেকের দোকান দেখানো হয়- কেউ যদি থাইওয়ানিজ অথবা কোরিয়ান হয় তিনি সহজেই ব্যাপারটা বুঝবেন। একসময় কোরিয়ায় চাকরি হারানো অনেক মানুষ ধার দেনা করে এই ধরণের ফ্যাঞ্চে ইজি কেকের দোকান করেছিলেন, এটা রীতিমত ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছিল যদিও এই ব্যবসাটা দ্রুতই মার খেয়ে গেছে। এই ঘটনায় অনেকেই নিঃস্ব হয়েছিল, এর ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছিল সমাজে - যেটা হয়ত পাশ্চাত্য দর্শকের কাছে বোধগম্য হবে না।
ডেভিড সিমসঃ সং ক্যাং হো (কিম পরিবারের কর্তা) প্রায়শই আপনার ছবিতে বিদূষকের ভূমিকা পালন করে, এমন একজন যার জন্য দর্শকরা সহানুভূতিপরায়ন। এই ছবির জন্য তিনি কি প্রথম থেকেই আপনার চিন্তায় ছিল?
বং জুন হোঃ এমন নয় যে উনাকে আমি সবসময় মাথায় রেখেই লিখি, যদিও উনার সাথে কাজ করা খুবই স্বাচ্ছন্দ্যের। এই ছবিটি গড়পড়তা প্রতিবেশীর গল্প দিয়েই শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ঘটনা চরম দিকে মোড় নেয়, এই চরিত্রের ব্যাপ্তিও বিশাল- তো আমার মনে হয়েছে এই বৈচিত্র্যময় চরিত্র রূপায়ন সং ক্যাং হো-এর পক্ষেই সম্ভব। বিশেষত অন্তিম সময়ে, তার মুখে কোন সংলাপ নেই- পুরো পরিস্থিতি দর্শককে বোঝাতে হচ্ছে চোখের সূক্ষ্ম কাঁপুনি আর পেশির সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে। অভিনেতা হিসেবে সং-এর সেই শক্তি আছে।
ডেভিড সিমসঃ এটার আগে আপনি বেশ কিছু ইংরেজিভাষী প্রোডাকশনে কাজ করেছেন। আমার মনে হয় স্নোপিয়ারসার অনেক পরিপূর্ণ কাজ যদিও শৈল্পিক ¯স্বাধীনতা হয়ত ওকজা-তেই বেশি ভোগ করেছেন। কোরিয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে ফিরে আসার কারণ কি?
বং জুন হোঃ স্নোপিয়ারসার প্রকৃতপক্ষে একটি কোরিয়ান ছবি যেখানে চরিত্রগুলো ইংরেজিতে কথা বলে কেননা এটিও সিজে এন্টারটেইন্টমেন্ট প্রযোজিত (প্যারাসাইটও তাই)।প্যারাসাইটের ক্ষেত্রেও কোরিয়ায় ফিরে কাজ করার জন্যই গল্পটা লিখেছি তা নয়। বরং সবকিছু স্থির হয়ে গেলে আমি স্বস্থিবোধ করেছিলাম- মাতৃভাষায় কোরিয়ান অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়ে আরামসে কাজটা করতে পারব ভেবে। ছবির বাজেটও অনেক কম,ওকজার এক-পঞ্চমাংশের মত।আমার মনে হয়েছিল একটা মাইক্রোস্কোপ দিয়েই বোধহয় ছবিটার শ্যুট করে ফেলতে পারি এবং সূক্ষ্ম বিষয়গুলোতে ফোকাস করতে পারি।
ডেভিড সিমসঃ আপনি কি আবার ওকজার মত বড় বাজেটের ছবি করতে চান নাকি প্যারাসাইট এর মত বাজেটে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
বং জুন হোঃ আমি প্যারাসাইটের স্কেল এবং বাজেট পছন্দ করি। এই কারণেই আমার পরবর্তী দুটি প্রজেক্ট- একটি কোরিয়ান ভাষায় অপরটি ইংরেজি ভাষায়-প্যারাসাইটের মত অপেক্ষাকৃত কম বাজেটের।
ডেভিড সিমসঃ আবারও কি নেটফ্লিক্স এর সাথে কাজ করার কথা ভাবছেন?
বং জুন হোঃ ওকজা-তে চলচ্চিত্রটি থিয়েটারে মুক্তি দেয়া বিষয়ক কিছু সমস্যা ছিল, কিন্তু চলচ্চিত্রটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে আমি তাদের চমৎকার সমর্থন পেয়েছি। আলফেনসো কুরানের রোমা কিংবা মার্টিন স্করসিসের আইরিশম্যানের নির্মাণও এই কারণেই সম্ভব হয়েছে। টরেন্টোতে নোয়া বাম্বুচের সাথে আমার দেখা হয়েছিল, তিনি বলেছেন তার ম্যারেজ স্টোরি নির্মণের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। আমার মনে হয় আজকের দিনের সকল নির্মাতাই নেটফ্লিক্সের সাথে কাজ করতে আগ্রহী, নেটফ্লিক্সও ইদানিং অনেক নমনীয়, চার সপ্তাহের জন্য হলে মুক্তির সুযোগও দিতে যাচ্ছে।
ডেভিড সিমসঃ আপনি পরবর্তীতে কি ধরণের গল্প বলতে যাচ্ছেন?
বং জুন হোঃ কোরিয়ান ভাষার ছবিটি শ্যুট হবে সিউলে।ছবিটি শহরে ঘটে যাওয়া একটা ভয়াবহ ঘটনার উপর ভিত্তি করে, আমি জানি না এটাকে হরর, একশন নাকি থ্রিলারধর্মী বলব। ইংরেজি ভাষী ছবিটিও একটি সত্য ঘটনার উপর, একটি সংবাদ প্রতিবেদনকে উপজিব্য করে- যা ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। আমি গল্পটা খুজে বেড়াচ্ছি, এখনো জানি না এটি শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াবে।
মন্তব্য