গোরখোদকের স্মৃতি
পৃথিবীর মানচিত্র এঁকেছে যেদিন—যেদিন উঠেছে সীমানা প্রাচীর—
তোমার প্রতি অলক্ষ্যে সেদিন আমার জেগেছিল তীব্র ঘৃণা!
ঘৃণা আমার প্রতিবেশী নগর প্রধানের প্রতি
যে তুমি হরণ করেছো—
মানুষ হিসেবে আমাকে করেছ পশু
তীক্ষ্ণ ধারালো দাঁতমুখ খিঁচিয়ে কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়
শিখিয়ে দিলে—আমাকে দিয়েছ ঈশ্বর—বেঁধেছো শিকল
অথচ সমগ্র ছিল আমার শিল্পের মৌসুম, বাঁধন ছেঁড়া—
শব্দের ভেতর বেজে উঠতো ধনুকের ছিলা
এই নজরবন্দী জীবনে আমাকে দিয়েছো ঠেলে আগুনের মুখে
তুমি বানালে রাষ্ট্র, চিন্তার চিতা—রাষ্ট্রপক্ষ ,পুলিশ, আর্মি, সীমান্ত প্রহরী
আমি আজো পাহাড়ে-প্রান্তরে ক্ষুধামগ্ন শৈশবের কথা ভাবি
ভাবি আমার একান্ত ভুলগুলি—কী করে চুরি হয়ে গেলো !
তুমি তো বুক ফেঁড়েছো সুদূরে—ভিসুভিয়াসের ছাইয়ের নিচে অথবা
উত্তর আমেরিকার পথে পথে—তামাটে মানুষের হাইড আউটে—পাহাড়ে-প্রান্তরে
আফ্রিকা মহাসাগরের কূলে কূলে মানুষ করেছ কেনা-বেচা
তুমিই-তো করেছ বর্ণ ও শ্রমের জটিল বাস্তুসংস্থান
ভেঙেছো আমার মিথের কুঁড়েঘর—গড়েছ দেয়াল—পথে পথে পিরামিড
তোমার লোভের চোখ ফুঁড়ে গ্যাছে মৃতলোক...
অথবা চেঙ্গিসের তলোয়ারের আঘাতে কত মাথা ধর থেকে করেছো আলাদা
সিধু কিঙবা কানু’র চিৎকারে আজো বেজে ওঠে শংখ...
তুমি তো কলম্বাস, তুমিই মার্কো পোলো—জুডাস ও সালাহউদ্দীন—
তুমি এই যুগের ট্রাম্প-শায়খ-যোগী
যুগে যুগে মানুষের বুকে এঁকে দিয়েছো দাসত্বের শৃংখল!
আমাকে শেখালে তুমি জটিল অর্থনীতি
অথচ আমি জেনেছি—পৃথিবীতে নেই কোন
বিশুদ্ধ শব্দ ব্যবস্থাপনা যেখানে তুমি লুকাতে পারো—উদ্বৃত্ত মূল্য
শ্রেণী শোষণের সুক্ষ্ম নজরদারি ভেদ করে ভেঙে দিতে পারে পৃথিবীর মানচিত্র
পৃথিবীর ঘরে-ঘরে, নগরে-নগরে, রাষ্ট্রের সিঁথানে-পিছানে গোড়খোদকের স্মৃতি
ঠাণ্ডা নগরদণ্ডের ভেতর তোমার আগ্রাসী মুখ স্মৃতি হয়ে ওঠে মানুষের মুখে মুখে
তোমার মখমল-মসলিন, হীরে-জহরতে প্রতি পরতে পরতে লেখা হয় উষ্ণ রক্তের ধারা
তুমি তো উইচ হান্ট—শিশুর খোলা চোখে মৃত্যুর ঘুম!
তুমি-ই সওদাগর, পূজারী, সৈনিকের কুচকাওয়াজ ও মৃদু কসরত
একুশ শতকের পাইরেটস—সিনায় টান টান আগুনের দিনে তুমি স্বৈরাচারী
এবং আমি প্রতিপলে দ্যাখেছি বিপ্লবের আগুনে পোড়া কাস্তে-হাতুড়ি
দেখেছি মৃত বিপ্লবীর খোলা চোখে কত আগুন!
মন্তব্য