বোহেমিয়ানের মৃত্যু
বোহেমিয়ান মরে গেলে পৃথিবীর কি ক্ষতি
বোহেমিয়ান খুন হলে মানুষের কি এসে যায় !
তোমাদের জমির মালিকানার পথে বাঁধা দূর হলো
যে এসব চায়নি তার জায়গা জমির নিচেই হওয়া উচিৎ ।
মৃত মানুষ এক মিথ সাথে তাদের ভালোত্বও
তাদের দ্রুত কবরে চাপা দিতে হবে
যেন মৃত্যুর পরেও তারা খারাপ না হয়ে যেতে পারে;
তার শীতল গ্রীবা যেন তোমাদের ষড়যন্ত্র টের না পায়
মৃতের কাছে ভালো সাজতে তার দেহে ছেটাও পবিত্র তীর্থের জল ।
হৃদয়কে বিলুপ্ত ঘোষণা করো
বিরাট বিরাট ডাইনোসরের মত
পৃথিবীতে একসময় বিরাট বিরাট হৃদয় ছিলো
বজ্রপাত চিত্রিত আকাশে মৃদু বৃষ্টিতে
যারা দেবতাদের আগুনে আত্মার মত নাচতো;
নির্জন পাহাড়ী হ্রদে তাদের প্রতিবিম্ব দেখে উল্লসিত হতো
মধ্য বসন্তে যেমন এখনও ফুলেরা
পাখির সাথে তাদের হৃদয় বদল করে !
এত তীব্র ভাবে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতো
দূর বনের মানুষখেকো শ্বাপদেরা চোখে নেভাতো রক্তিম বজ্র !
সেই সময় আলো অন্ধকারের সহোদরা ছিলো
যারা কখনো পাহাড় ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া করতো না ,
কখনো তারা নিজেদের রক্তও দেখেনি
যেমনটা দেখে এখন তোমরা ড্রাকুলা হয়ে উঠেছো !
যেসব হৃদয়ের ডাকে সবুজ হতো অরন্য
এখন বোহেমিয়ান বলে যাদের চেনো
এরা সেইসব প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়
যারা হেঁটে বেড়ায় ফসিলের মত
তোমাদের ড্রাকুলা গিজগিজে ভীড়ে ।
মানুষের ভেতর আর মহাজগতের কিছুই নেই
নক্ষত্রের আলো এসে পড়ে না এমন অন্ধকার বস্তু মানুষ;
এক টুকরো জমির মত কবরের অন্ধকারে এমন নির্বাসিত তারা
যেখানে তারা একে অপরের মাংস খেয়ে বাঁচে;
প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ের দোষে এতটুকুই ভালোবাসে অবশিষ্ট আছে যে
তারা জীবিত নয় বরং জীবিতকে মেরে মৃতের মাংস খায় ;
স্মৃতি ভুলিয়ে দেবার জন্য তো আগুন আছে !
এই সব মানুষ নিয়ে যত গালভরা বড় বড় কথা আছে
তার কোনোকিছুই আমি বিশ্বাস করিনা
এই অবিশ্বাসের জন্যই টের পাই সেই প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়কে
মানুষ বর্বর ছিলো না যেমনটা বলে সভ্যতার ধান্দাভরা লাইব্রেরী
মানুষ ধীরে ধীরে বর্বর হচ্ছে যার শেষ হবে নিজের মাংস খাওয়াতে ;
যে মাংসের বাজারে কসাইয়ের অবশিষ্ট চোখের মনির ভেতর
কান্নার জল খুঁজে বেড়ায় বোহেমিয়ান ।
তাকে দ্রুত খুন করো মানুষের সব লজ্জা, কান্না লুকিয়ে ফেলতে
যদিও মৃতদেহ দেখার মত কোনো মানুষ আর বেঁচে থাকবে না
মানুষ তার ক্ষুধার সামর্থ্যের চেয়েও ক্ষুধার্ত এখন
এবং তারা জানে না কেন তারা এত ক্ষুধার্ত !
যা তাদের পাকস্থলীর সামর্থ্যের চেয়েও অনেক অনেক বেশী ;
সেই ক্ষুধা নিজেকে খাওয়ার ক্ষুধা
যা মেটানোর জন্য তাদের চোখ পড়েছে
তাদের সহোদর বোহেমিয়ানের দিকে
এই জন্য তারা কঠোর পরিশ্রমী হয়ে উঠেছে
এতটা ব্যস্ত যেন সে যে নিজের
মাংসের দিকে;রক্তের দিকে ধাবিত ড্রাকুলা
তা বুঝে ওঠার সময় না পায়।
বলো মা , আমাকে চিনতে পারছো ?
আমি কি তোমার ক্ষুধার গ্রাস কোনো শিশু
যা তোমার ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় অনন্তবেলা !
বলো বোন, তুমি কি আমার কবরের জমি
আর শেষমেশ নীল নঁকশা করছো
যেন সেখানেও আমার জায়গা না হয় ?
বলো ভাই , তুমি কি আমার পিঠের ছুরি
যা তোমাকে আমিই বানিয়ে দিয়েছিলাম শ্বাপদের অজুহাতে !
বলো আমার সন্তান, আমি কি শুধু তোমার জমির দলিল ?
সেই সব প্রাগোইতিহাসিক হৃদয়কে
এখনও স্মৃতিতে আনতে পারি বলে
আমি সেই বোহেমিয়ান যাকে তোমরা সবাই মিলে
মাটির নিচে ধামাচাপা দিতে চাও ?
আমি জানি আমাকে মারার পর তোমরা
এরপর নিজেরাই নিজেদের দিকে পরবর্তী শিকারের ভেবে তাকাবে
এভাবেই নিঃশেষ হবে সেই সব হৃদয়ের শেষ স্মৃতি ;
বলো মানুষ, তোমাদের কতটা চাওয়া
তা না জানায় তোমাদের রাক্ষুসে ক্ষুধার কারণ ?
এই যে বিরাট বিরাট শহর আর শৌধ
সেই সব প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ের ফসিল
এই সব ফসিলের নিচেই চাপা পড়ে তোমরা মরবে
যাকে বলে সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ
এ কোনো খুন হওয়া বোহেমিয়ানের লাশের অভিশাপ নয়
তোমাদেরই অভিশাপ যা আমাকে দিতে গিয়ে
ভুলে নিজেদের দিয়ে ফেলেছো !
তোমাদের এসব স্থাবর সম্পত্তির লোভের দামী পাথর আমি চাইনি
যা ঘষে ঘষে তোমরা পোড়াও তোমাদের
কিন্তু জন্ম নেবার জন্য তো আমাকে
কোনো মায়ের গর্ভকে বেছে নিতেই হয়েছিলো
যে মায়ের কোলের থেকে দূরে
শুন্যতার কবরের কোলের ভেতর শুয়ে আছি
যে কবর সামান্য এক টুকরো জমি এই পৃথিবীর
সেই পৃথিবীর যেখানে এক বোহেমিয়ানের মৃত্যুতে
পৃথিবীর কি আর যায় আসে !
যদিও তোমরা না জানলেও হয়তো পোষ্টমর্টেম এর জন্য কাটা
এক বোহেমিয়ানের খোলা বাম বুক হয়ে যেতে পারে
তোমাদের নরকের দিকে যাওয়ার খোলা দরজা ;
যে বাম বুকে প্রাগৈতিহাসিক বিরাট হৃদয়েরা
এতদিন আত্মগোপন করে ছিলো
আর মৃতদের কি আর ক্ষতি হয় কারো মৃত্যুতে !
মৃতদের হৃদয় থাকা আর না থাকা নিয়ে কি আর এমন যায় আসে !
গোরখোদকের কোঁদালে কবর হবার জন্য
তাদের এক টুকরো জমি থাকলেই হবে
যেখানে কোনো মানুষ নয় কবর দেয়া হবে
আমার পিঠে গেঁথে থাকা ছুরিটাকে।
ডুবোশব
সমুদ্র তলের শৈবালগৃহ থেকে দঁড়িতে বেঁধে
আমাকে কেনো ক্রেনে উড়িয়ে আনলে সমকাল শহরে!
কেন আসতে হবে তোমাদের সমকালে
দেহ সমকালের তাই বন্দী কালের কংকালে
মন অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যতের তাই কালহীন;
সমুদ্রতলে নির্জনে সে বেঁধেছে ঘর
যখন একা জলজ চুরুট খায় সমুদ্রের নিচে
জলের উপরে বুদবুদ দেখে ভাবো;
সত্য উদগিরিত হচ্ছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিতে!
মৃত্যুভয়কে জয় করার পর যা উপহার পাও তাই সত্য
অথচ মৃত্যুর ভয়ে ইঁদুরের শবের মত পড়ে থাকা তোমরা
সত্যের পুরোহিত হয়ে পৃথিবীর পথকে দাও ইশারা
নরকের ধোঁয়া ঢাকা গুমোট অন্ধকারে!
কাম বাধা দেহের
প্রেম বাধা মনের
এই দুটোকে অস্বীকার করতে নেমে গিয়েছি সমুদ্রের অতলান্তে !
এবং আমি জানি ধর্ম জড়িত পাপাচারের যজ্ঞের শেষে
শুধুমাত্র পাপবোধে জারিতে মানুষদের প্রয়োজন হয় ঈশ্বরের
এই জন্য আমার ঈশ্বর, শয়তান কিছুই নেই;
যে নিজেকে পাপবোধ থেকে মুক্ত করে
সূর্যের কাছ থেকে পেয়েছে আলোর স্ফটিক ডানা
তার এসবের প্রয়োজন হয় না ।
জানি না অতীতের মহামানবেরা কি বলে গিয়েছে
এসব নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই
শুধু জানি সমুদের নীলাভ নির্জনতা ভেঙ্গে
বিষাক্ত জলাশয়ে পরিণত করার জন্য সবাই ছিলো পর্যাপ্ত !
এই বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে যারা এত উল্লসিত
ভাবছো এসো গেছো সত্যের খুব নিকটে তারা শোনো
“মানুষ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে;
ঈশ্বরের অস্ত্বিত্বের নিয়তিতে বিসর্জিত হতে হয়েছে,
আর বিসর্জিত কোনো কিছুর 'আছে' বা 'নেই' বোধে কিছুই যায় আসে না,
বিজ্ঞান ব'লে তোমরা এখন যা জানো তা ধনবিজ্ঞান ,
অতএব এর শ্বাশত রুপ নিয়ে মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে,
আর কেটে ফেলার মাথার কাছে ঈশ্বর আছে বা নেই তার কোনো মূল্য নেই,
তাই মাস্তিক্যে ভূপাতিত হয়ে এসো দ্রুত পৃথিবীকে ধ্বংস করে
মহাবিশ্বের আগাম কাজ কিছুটা এগিয়ে নিই,
ভয়ানক সব জীবাণু হয়ে মানুষ নামক অথর্ব অস্তিত্বকে কিছুটা অর্থময় করে তুলি,
নিশ্চয় ঈশ্বর সেই অর্থের ধোঁয়া থেকে ইঙ্গিতময় কোনো ঘ্রাণ পেয়ে থাকলে,
হয়ে উঠবে তার না থাকা অস্ত্বিত্ব
আর যদি সত্যি সে থাকে নিশ্চয় হয়ে উঠবে কোনো গবেষণাগার
আর অমৃতের মহাঔষধির মত ফলদায়ক বাণিজ্যিক অস্ত্বিত্ব হয়ে উঠবে,
আমরা ঈশ্বরকে বের করে নিতো পারবো কোনো এটিএম বুথ থেকে !
তোমাদের সমকালের সেই শহর যার হৃদয় এক এটিএম বুথ
যার পাকস্থলীর ও নাড়ীভূড়ির শেকলে বন্দী হয়ে তোমরা করছো হাঁসফাঁস !
অতীতের আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বের হচ্ছে
আর বর্তমানকে ভস্মে পরিণত করে ছুটেছে ভবিষ্যতের শুন্যতায়,
যেখানে ঘাষের ডগায় জ্বলছে আগুন
এবং অদৃশ্য হরিণীরা তাতে নামিয়েছে মুখ;
এরপর যখন পুড়ে গেলো জিহবা তারা দোষারোপ করলো ঈশ্বরকে
অথচ হরিণীরা তাদের জিহবা বানিয়েছিলো নিজেরাই
আর ঘাষ নিজ থেকেই জন্মেছিলো নিজ জরায়ু প্রসূত মাটিতে
এবং আগুনও উদ্ভাবিত হয়েছিলো তার পোড়ানোর স্বভাবে;
মাঝে কেনো সবাই টেনে আনছে ঈশ্বরকে!
তারা নিজেরাও জানে না এসবের কিছু !
তাই গণ্ডমূর্খদের ভীড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে ঘর বেঁধেছিলাম সমুদ্রের অতলে;
যেহেতু জেনেছি আমার জন্ম হয়নি বলে মৃত্যু নেই
তাই নিঃস্বাস নেবার প্রয়োজন হয়নি সমুদ্রতলে;
যে নিঃশ্বাস নিতে পারে না বলে হাসফাস করে সমকাল শহরের সবাই;
লাস্যময়ী অগ্নিযোনীর নার্সদের তারা বেতন দেয়
তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের মত হৃদয়ের কারণে;
মৃত জেব্রাকে ছেড়ে দেয় তাদের শরীরে
যতক্ষণ না তাদের স্নায়ুতন্ত্র কামনায় ডোরাকাটা হয়ে ওঠে
আর সেই ডোরাকাঁটায় পেচিয়ে তাদের মৃত্যু হয় !
অনেক ভেবেছি একজন আদিম মানুষের মহাকাশের মত অনন্ত স্বাধীনতায়
শহরের মানুষগুলো কেন জ্বলে পুড়ে যায়;
কারণ তারা রক্তজাত দাসস্বভাবের মানুষ
কে কখন দেখেছে বৃন্তে ঝুলে থাকা গোলাপ
কোনো পাখিকে দেখে তার সাথে উড়ে যেতে বৃন্তচ্যুত হয়েছে !
ঘর গেরস্থালীর কাজেই তো এরা জীবনকে বিসর্জন দিয়েছে
তাই কোনো বোহেমিয়ান ভবঘুরে দেখলে তাকে সেদ্ধ করে
তাদের রাতের ডিনার টেবিলে মশলার ঝাজালো ঝোলে
পাকস্থলীর সব ঈর্ষা মেটাবেই ।
আমি মানুষের কেউ না
আমি পৃথিবীর কেউ না
না আমি ভালোবাসার; না আমি তোমাদের মগজের কৃমির মত ঘৃণার
আর তোমাদের মহাপুরুষদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই;
এটাও নিশ্চিত নই আমার রক্তের রঙ তোমাদের মত বা আদৌ রক্ত আছে ।
তোমরা সব এক একটা শ্যাওলা জমা স্যাঁতসেঁতে পাথর
যাদের শরীরে কখনো সূর্যের আলো পড়েনি;
নিজেকে হত্যা করার অপরাধে তোমাদের এই গণ-নির্বাসন !
রাজনীতি নামের এমন কিছুকে বেঁধেছো তোমাদের নিয়তিতে
যা সূর্যহীন নির্বাসনকে প্রগাড় নিশ্চয়তা দেয়।
তোমাদের রাজনীতিবিদরা সেই সব রক্তভূক জোঁক
যার তাদের মায়ের পেটে থাকতেই মাকে খেয়ে ফেলছিলো
আর এমন পুরষ্কারের লোভে তারা তা করেছিলো
যে পুরস্কার কবরের হিম অন্ধকারে তোমাদের শব হে হতচ্ছাড়া দাসের দল !
তোমরা কোথাও নেই; না অতীতে না বর্তমানে না ভবিষ্যতে
আর তোমাদের এই না থাকা আরও হিংস্র করেছে তোমাদের;
এতই হিংস্র তোমাদের মুখ দিয়ে তোমাদের পা খাওয়া শুরু করেছো
আর একসময় মুখকেই গিলে ফেলে অদৃশ্য প্রেতের মত জাবর কাটবে !
যা ইচ্ছা তোমরা করো
কিন্তু বলো কেনো ক্রেনে বেঁধে আমাকে তুলে আনলে সমুদ্রগৃহ থেকে?
কি ভেবেছো তোমাদের সমুদ্রব্যপ্ত জাল থেকে মাছেদের উদ্ধার করতে
তোমাদের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করবো ?
তোমাদের অনর্থক যুদ্ধে ডুবে যাওয়া জাহাজের নাবিকদের কংকালে
আবার প্রাণ দিয়ে তোমাদের সমকালের শহরে পাঠিয়ে দেবো
তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের প্রাণ ফিরিয়ে নিতে ?
ভাবছো আগলে রেখেছি সমুদ্রতলের সব অমুল্য মনিরত্ন
যা তোমাদের গাধার পায়ুর মত স্ত্রীদের গলায় ঝুলে থাকে তীব্র এক ফাঁসের মত !
না আমি এসব কিছুই করবো না,
যেহেতু আমার ঈশ্বর নেই,অতীত নেই, বর্তমান নেই বলে সময় বলে কিছু নেই
তাই কোনকিছুর সাথেই সম্পর্ক নেই আমার।
তোমরা যা ইচ্ছা তাই করো ,
পৃথিবীকে ধ্বংস করে নিজের পোড়া শবের নিভুনিভু আগুন থেকে
ধরিয়ে নাও তোমাদের হৃদয়হীন চুরুট,
এসবে আমার কিচ্ছু যায় আসে না, যা করতেই তোমাদের জন্ম হয়েছে
তা ঠেকানোর আমি কে ? তোমাদের কেউ হলে না হয় এসব ভাবতাম!
নিজেদের পায়ুপথে মিসাইলের মত ঢুকে যাও,
সমস্ত রক্তযোনীকে বানাও মরুভূমি;
সব মহামানবদের ফসিল পূজা করে করে
তাদের হাড়ে কোনো মাংস না থাকলে নিজের মাংস খাও,
সন্তানের রক্তের স্যুপে সারো প্রাতঃরাশ,
কুমারীদের তুলে দাও হিস্র জন্তুদের মুখে আর হর্ষধ্বনি করো,
স্তুতি করো ঈশ্বরের কেননা সে কুমারী এবং হিংস্র শ্বাপদদের একই সময়ে জন্ম দিয়েছিল,
এসবে আমার কিচ্ছু যায় আসে না,
তোমরা যা তা তো তোমরা করবেই ,
আমি তো আর হায়েনার কাছ থেকে তার দাঁত চেয়ে নিতে পারিনা
কোনো সূর্যমুখীর চোয়ালে লাগিয়ে দিতে!
তোমাদের সব ভাষ্কর্য শিল্পীদের চিনি
রক্তের তোড়ে সে কি বিশাল বিশাল ম্যুরাল,
যেন কবরের গায়ে কেউ এক দিয়েছে জীবিতের নিঃশ্বাস !
আমি কোনো মানুষ না
আমি কোনো প্রাণ না
আমি কোনো কালের না
আমি ঈশ্বরের কেউ না
এমনকি আলো ও অন্ধকারেরও না;
নই কোনো অস্ত্বিত্ব
তাই অধিকার নেই আমাকে এভাবে ক্রেনে বেঁধে ফেলার
তোমাদের আইন তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যে তোমাদের কেউ;
যেহেতু আমি কেউ নই তোমাদের তাই আমার অভিশাপও লাগবে না তোমাদের আত্মায়;
তবু বলছি তোমরা এমন কাউকে বেঁধেছো তোমাদের ক্রেনে
যার জন্য ধ্বংস হতে বাধ্য তোমরা এবং ক্রেনও ;
এমনই আগন্তুক আমি সমুদ্রও আমাকে চেনে না ,
এমন নয় সে মহাপ্লাবন পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেবে
এবং আমি বুঝলাম আমিও তোমাদের মতই বোকা
যারা ধ্বংস হয়েছে তাদের সৃষ্টির আগেই
তাদেরকেও কেনো ভয় দেখাছি ধ্বংসের !
আমি ডুবোশব; যেভাবে আমাকে বেঁধে আনলে সমকাল শহরে
কান পাতো তোমাদের হৃদয়ে যদি তা থেকে থাকে;
শহরটার শেষ নিঃশ্বাস নিশ্চয় শুনতে পাচ্ছো
আর আকাশে সমুদ্রের গর্জন
এভাবে তোমরা আমার মত ডুবোশব হয়ে যাবে যা আমি ঘুণাক্ষরেও চাইনি
আমার মত আর কেউ হোক ,
তোমাদেরকে আমি আমার কেউ ভাবিনা
কিভাবে শব হিসেবে মেনে নেবো পাশে !
আমাকে বেঁধে আনাতে জিতলে তোমরাই
যোগ্য হলে আমারই মত ডুবোশব হওয়ার !
ডুবোশবের এপিটাফ
মাথায় যা ছিলো নিজেকে বমি করলো আগুনের কেবিনে
নার্সের অগ্নিযোনী ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে মরুভূমি
আমি তার প্রাগৈতিহাসিক মরিচীকা;
কিছুই ভয় পাই না
জানি লোকদের মাথার নর্দমা;
অগ্নিযোনী মেলে বসে আছে শ্মশান
ভস্ম রুপে যেখান থেকে এসেছো ফিরিয়ে নিতে সেখানে;
স্বপ্নের ভেতর ঊষাযান আর গোধূলীযান করছে সঙ্গম
ইঞ্জিনে টগবগ করে ফুটছে হিম রাতের ভ্রুণ
তোমাকে নিয়ে যাবে সেই আগুনের কেবিনে
যেখানে নেকড়ের হৃদয়ে শ্বাস নিচ্ছে নেকড়ীর লাশ;
সেই লাশ যাকে ঘিরে গ্যাসবেলুনের মত বসে আছে সবাই;
আকাশ পায়ের নিচের পাতালে
ভয়ংকর সব জীবাণুর মত ভেসে যাচ্ছে মেঘ;
ছুরির মত মর্গ বিঁধে আছে বাম বুকে
সমুদ্র ধুয়ে যাওয়ার আগে ধুয়ে দিতে দাও তার দগদগে ক্ষতের গহ্বর
বোহেমিয়ান মরে গেলে পৃথিবীর কি ক্ষতি
বোহেমিয়ান খুন হলে মানুষের কি এসে যায় !
তোমাদের জমির মালিকানার পথে বাঁধা দূর হলো
যে এসব চায়নি তার জায়গা জমির নিচেই হওয়া উচিৎ ।
মৃত মানুষ এক মিথ সাথে তাদের ভালোত্বও
তাদের দ্রুত কবরে চাপা দিতে হবে
যেন মৃত্যুর পরেও তারা খারাপ না হয়ে যেতে পারে;
তার শীতল গ্রীবা যেন তোমাদের ষড়যন্ত্র টের না পায়
মৃতের কাছে ভালো সাজতে তার দেহে ছেটাও পবিত্র তীর্থের জল ।
হৃদয়কে বিলুপ্ত ঘোষণা করো
বিরাট বিরাট ডাইনোসরের মত
পৃথিবীতে একসময় বিরাট বিরাট হৃদয় ছিলো
বজ্রপাত চিত্রিত আকাশে মৃদু বৃষ্টিতে
যারা দেবতাদের আগুনে আত্মার মত নাচতো;
নির্জন পাহাড়ী হ্রদে তাদের প্রতিবিম্ব দেখে উল্লসিত হতো
মধ্য বসন্তে যেমন এখনও ফুলেরা
পাখির সাথে তাদের হৃদয় বদল করে !
এত তীব্র ভাবে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরতো
দূর বনের মানুষখেকো শ্বাপদেরা চোখে নেভাতো রক্তিম বজ্র !
সেই সময় আলো অন্ধকারের সহোদরা ছিলো
যারা কখনো পাহাড় ভাগাভাগি নিয়ে ঝগড়া করতো না ,
কখনো তারা নিজেদের রক্তও দেখেনি
যেমনটা দেখে এখন তোমরা ড্রাকুলা হয়ে উঠেছো !
যেসব হৃদয়ের ডাকে সবুজ হতো অরন্য
এখন বোহেমিয়ান বলে যাদের চেনো
এরা সেইসব প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়
যারা হেঁটে বেড়ায় ফসিলের মত
তোমাদের ড্রাকুলা গিজগিজে ভীড়ে ।
মানুষের ভেতর আর মহাজগতের কিছুই নেই
নক্ষত্রের আলো এসে পড়ে না এমন অন্ধকার বস্তু মানুষ;
এক টুকরো জমির মত কবরের অন্ধকারে এমন নির্বাসিত তারা
যেখানে তারা একে অপরের মাংস খেয়ে বাঁচে;
প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ের দোষে এতটুকুই ভালোবাসে অবশিষ্ট আছে যে
তারা জীবিত নয় বরং জীবিতকে মেরে মৃতের মাংস খায় ;
স্মৃতি ভুলিয়ে দেবার জন্য তো আগুন আছে !
এই সব মানুষ নিয়ে যত গালভরা বড় বড় কথা আছে
তার কোনোকিছুই আমি বিশ্বাস করিনা
এই অবিশ্বাসের জন্যই টের পাই সেই প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়কে
মানুষ বর্বর ছিলো না যেমনটা বলে সভ্যতার ধান্দাভরা লাইব্রেরী
মানুষ ধীরে ধীরে বর্বর হচ্ছে যার শেষ হবে নিজের মাংস খাওয়াতে ;
যে মাংসের বাজারে কসাইয়ের অবশিষ্ট চোখের মনির ভেতর
কান্নার জল খুঁজে বেড়ায় বোহেমিয়ান ।
তাকে দ্রুত খুন করো মানুষের সব লজ্জা, কান্না লুকিয়ে ফেলতে
যদিও মৃতদেহ দেখার মত কোনো মানুষ আর বেঁচে থাকবে না
মানুষ তার ক্ষুধার সামর্থ্যের চেয়েও ক্ষুধার্ত এখন
এবং তারা জানে না কেন তারা এত ক্ষুধার্ত !
যা তাদের পাকস্থলীর সামর্থ্যের চেয়েও অনেক অনেক বেশী ;
সেই ক্ষুধা নিজেকে খাওয়ার ক্ষুধা
যা মেটানোর জন্য তাদের চোখ পড়েছে
তাদের সহোদর বোহেমিয়ানের দিকে
এই জন্য তারা কঠোর পরিশ্রমী হয়ে উঠেছে
এতটা ব্যস্ত যেন সে যে নিজের
মাংসের দিকে;রক্তের দিকে ধাবিত ড্রাকুলা
তা বুঝে ওঠার সময় না পায়।
বলো মা , আমাকে চিনতে পারছো ?
আমি কি তোমার ক্ষুধার গ্রাস কোনো শিশু
যা তোমার ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয় অনন্তবেলা !
বলো বোন, তুমি কি আমার কবরের জমি
আর শেষমেশ নীল নঁকশা করছো
যেন সেখানেও আমার জায়গা না হয় ?
বলো ভাই , তুমি কি আমার পিঠের ছুরি
যা তোমাকে আমিই বানিয়ে দিয়েছিলাম শ্বাপদের অজুহাতে !
বলো আমার সন্তান, আমি কি শুধু তোমার জমির দলিল ?
সেই সব প্রাগোইতিহাসিক হৃদয়কে
এখনও স্মৃতিতে আনতে পারি বলে
আমি সেই বোহেমিয়ান যাকে তোমরা সবাই মিলে
মাটির নিচে ধামাচাপা দিতে চাও ?
আমি জানি আমাকে মারার পর তোমরা
এরপর নিজেরাই নিজেদের দিকে পরবর্তী শিকারের ভেবে তাকাবে
এভাবেই নিঃশেষ হবে সেই সব হৃদয়ের শেষ স্মৃতি ;
বলো মানুষ, তোমাদের কতটা চাওয়া
তা না জানায় তোমাদের রাক্ষুসে ক্ষুধার কারণ ?
এই যে বিরাট বিরাট শহর আর শৌধ
সেই সব প্রাগৈতিহাসিক হৃদয়ের ফসিল
এই সব ফসিলের নিচেই চাপা পড়ে তোমরা মরবে
যাকে বলে সভ্যতার ধ্বংসস্তূপ
এ কোনো খুন হওয়া বোহেমিয়ানের লাশের অভিশাপ নয়
তোমাদেরই অভিশাপ যা আমাকে দিতে গিয়ে
ভুলে নিজেদের দিয়ে ফেলেছো !
তোমাদের এসব স্থাবর সম্পত্তির লোভের দামী পাথর আমি চাইনি
যা ঘষে ঘষে তোমরা পোড়াও তোমাদের
কিন্তু জন্ম নেবার জন্য তো আমাকে
কোনো মায়ের গর্ভকে বেছে নিতেই হয়েছিলো
যে মায়ের কোলের থেকে দূরে
শুন্যতার কবরের কোলের ভেতর শুয়ে আছি
যে কবর সামান্য এক টুকরো জমি এই পৃথিবীর
সেই পৃথিবীর যেখানে এক বোহেমিয়ানের মৃত্যুতে
পৃথিবীর কি আর যায় আসে !
যদিও তোমরা না জানলেও হয়তো পোষ্টমর্টেম এর জন্য কাটা
এক বোহেমিয়ানের খোলা বাম বুক হয়ে যেতে পারে
তোমাদের নরকের দিকে যাওয়ার খোলা দরজা ;
যে বাম বুকে প্রাগৈতিহাসিক বিরাট হৃদয়েরা
এতদিন আত্মগোপন করে ছিলো
আর মৃতদের কি আর ক্ষতি হয় কারো মৃত্যুতে !
মৃতদের হৃদয় থাকা আর না থাকা নিয়ে কি আর এমন যায় আসে !
গোরখোদকের কোঁদালে কবর হবার জন্য
তাদের এক টুকরো জমি থাকলেই হবে
যেখানে কোনো মানুষ নয় কবর দেয়া হবে
আমার পিঠে গেঁথে থাকা ছুরিটাকে।
ডুবোশব
সমুদ্র তলের শৈবালগৃহ থেকে দঁড়িতে বেঁধে
আমাকে কেনো ক্রেনে উড়িয়ে আনলে সমকাল শহরে!
কেন আসতে হবে তোমাদের সমকালে
দেহ সমকালের তাই বন্দী কালের কংকালে
মন অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যতের তাই কালহীন;
সমুদ্রতলে নির্জনে সে বেঁধেছে ঘর
যখন একা জলজ চুরুট খায় সমুদ্রের নিচে
জলের উপরে বুদবুদ দেখে ভাবো;
সত্য উদগিরিত হচ্ছে সুপ্ত আগ্নেয়গিরিতে!
মৃত্যুভয়কে জয় করার পর যা উপহার পাও তাই সত্য
অথচ মৃত্যুর ভয়ে ইঁদুরের শবের মত পড়ে থাকা তোমরা
সত্যের পুরোহিত হয়ে পৃথিবীর পথকে দাও ইশারা
নরকের ধোঁয়া ঢাকা গুমোট অন্ধকারে!
কাম বাধা দেহের
প্রেম বাধা মনের
এই দুটোকে অস্বীকার করতে নেমে গিয়েছি সমুদ্রের অতলান্তে !
এবং আমি জানি ধর্ম জড়িত পাপাচারের যজ্ঞের শেষে
শুধুমাত্র পাপবোধে জারিতে মানুষদের প্রয়োজন হয় ঈশ্বরের
এই জন্য আমার ঈশ্বর, শয়তান কিছুই নেই;
যে নিজেকে পাপবোধ থেকে মুক্ত করে
সূর্যের কাছ থেকে পেয়েছে আলোর স্ফটিক ডানা
তার এসবের প্রয়োজন হয় না ।
জানি না অতীতের মহামানবেরা কি বলে গিয়েছে
এসব নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই
শুধু জানি সমুদের নীলাভ নির্জনতা ভেঙ্গে
বিষাক্ত জলাশয়ে পরিণত করার জন্য সবাই ছিলো পর্যাপ্ত !
এই বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে যারা এত উল্লসিত
ভাবছো এসো গেছো সত্যের খুব নিকটে তারা শোনো
“মানুষ মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বলে;
ঈশ্বরের অস্ত্বিত্বের নিয়তিতে বিসর্জিত হতে হয়েছে,
আর বিসর্জিত কোনো কিছুর 'আছে' বা 'নেই' বোধে কিছুই যায় আসে না,
বিজ্ঞান ব'লে তোমরা এখন যা জানো তা ধনবিজ্ঞান ,
অতএব এর শ্বাশত রুপ নিয়ে মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলতে হবে,
আর কেটে ফেলার মাথার কাছে ঈশ্বর আছে বা নেই তার কোনো মূল্য নেই,
তাই মাস্তিক্যে ভূপাতিত হয়ে এসো দ্রুত পৃথিবীকে ধ্বংস করে
মহাবিশ্বের আগাম কাজ কিছুটা এগিয়ে নিই,
ভয়ানক সব জীবাণু হয়ে মানুষ নামক অথর্ব অস্তিত্বকে কিছুটা অর্থময় করে তুলি,
নিশ্চয় ঈশ্বর সেই অর্থের ধোঁয়া থেকে ইঙ্গিতময় কোনো ঘ্রাণ পেয়ে থাকলে,
হয়ে উঠবে তার না থাকা অস্ত্বিত্ব
আর যদি সত্যি সে থাকে নিশ্চয় হয়ে উঠবে কোনো গবেষণাগার
আর অমৃতের মহাঔষধির মত ফলদায়ক বাণিজ্যিক অস্ত্বিত্ব হয়ে উঠবে,
আমরা ঈশ্বরকে বের করে নিতো পারবো কোনো এটিএম বুথ থেকে !
তোমাদের সমকালের সেই শহর যার হৃদয় এক এটিএম বুথ
যার পাকস্থলীর ও নাড়ীভূড়ির শেকলে বন্দী হয়ে তোমরা করছো হাঁসফাঁস !
অতীতের আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা বের হচ্ছে
আর বর্তমানকে ভস্মে পরিণত করে ছুটেছে ভবিষ্যতের শুন্যতায়,
যেখানে ঘাষের ডগায় জ্বলছে আগুন
এবং অদৃশ্য হরিণীরা তাতে নামিয়েছে মুখ;
এরপর যখন পুড়ে গেলো জিহবা তারা দোষারোপ করলো ঈশ্বরকে
অথচ হরিণীরা তাদের জিহবা বানিয়েছিলো নিজেরাই
আর ঘাষ নিজ থেকেই জন্মেছিলো নিজ জরায়ু প্রসূত মাটিতে
এবং আগুনও উদ্ভাবিত হয়েছিলো তার পোড়ানোর স্বভাবে;
মাঝে কেনো সবাই টেনে আনছে ঈশ্বরকে!
তারা নিজেরাও জানে না এসবের কিছু !
তাই গণ্ডমূর্খদের ভীড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে ঘর বেঁধেছিলাম সমুদ্রের অতলে;
যেহেতু জেনেছি আমার জন্ম হয়নি বলে মৃত্যু নেই
তাই নিঃস্বাস নেবার প্রয়োজন হয়নি সমুদ্রতলে;
যে নিঃশ্বাস নিতে পারে না বলে হাসফাস করে সমকাল শহরের সবাই;
লাস্যময়ী অগ্নিযোনীর নার্সদের তারা বেতন দেয়
তাদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের মত হৃদয়ের কারণে;
মৃত জেব্রাকে ছেড়ে দেয় তাদের শরীরে
যতক্ষণ না তাদের স্নায়ুতন্ত্র কামনায় ডোরাকাটা হয়ে ওঠে
আর সেই ডোরাকাঁটায় পেচিয়ে তাদের মৃত্যু হয় !
অনেক ভেবেছি একজন আদিম মানুষের মহাকাশের মত অনন্ত স্বাধীনতায়
শহরের মানুষগুলো কেন জ্বলে পুড়ে যায়;
কারণ তারা রক্তজাত দাসস্বভাবের মানুষ
কে কখন দেখেছে বৃন্তে ঝুলে থাকা গোলাপ
কোনো পাখিকে দেখে তার সাথে উড়ে যেতে বৃন্তচ্যুত হয়েছে !
ঘর গেরস্থালীর কাজেই তো এরা জীবনকে বিসর্জন দিয়েছে
তাই কোনো বোহেমিয়ান ভবঘুরে দেখলে তাকে সেদ্ধ করে
তাদের রাতের ডিনার টেবিলে মশলার ঝাজালো ঝোলে
পাকস্থলীর সব ঈর্ষা মেটাবেই ।
আমি মানুষের কেউ না
আমি পৃথিবীর কেউ না
না আমি ভালোবাসার; না আমি তোমাদের মগজের কৃমির মত ঘৃণার
আর তোমাদের মহাপুরুষদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক নেই;
এটাও নিশ্চিত নই আমার রক্তের রঙ তোমাদের মত বা আদৌ রক্ত আছে ।
তোমরা সব এক একটা শ্যাওলা জমা স্যাঁতসেঁতে পাথর
যাদের শরীরে কখনো সূর্যের আলো পড়েনি;
নিজেকে হত্যা করার অপরাধে তোমাদের এই গণ-নির্বাসন !
রাজনীতি নামের এমন কিছুকে বেঁধেছো তোমাদের নিয়তিতে
যা সূর্যহীন নির্বাসনকে প্রগাড় নিশ্চয়তা দেয়।
তোমাদের রাজনীতিবিদরা সেই সব রক্তভূক জোঁক
যার তাদের মায়ের পেটে থাকতেই মাকে খেয়ে ফেলছিলো
আর এমন পুরষ্কারের লোভে তারা তা করেছিলো
যে পুরস্কার কবরের হিম অন্ধকারে তোমাদের শব হে হতচ্ছাড়া দাসের দল !
তোমরা কোথাও নেই; না অতীতে না বর্তমানে না ভবিষ্যতে
আর তোমাদের এই না থাকা আরও হিংস্র করেছে তোমাদের;
এতই হিংস্র তোমাদের মুখ দিয়ে তোমাদের পা খাওয়া শুরু করেছো
আর একসময় মুখকেই গিলে ফেলে অদৃশ্য প্রেতের মত জাবর কাটবে !
যা ইচ্ছা তোমরা করো
কিন্তু বলো কেনো ক্রেনে বেঁধে আমাকে তুলে আনলে সমুদ্রগৃহ থেকে?
কি ভেবেছো তোমাদের সমুদ্রব্যপ্ত জাল থেকে মাছেদের উদ্ধার করতে
তোমাদের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করবো ?
তোমাদের অনর্থক যুদ্ধে ডুবে যাওয়া জাহাজের নাবিকদের কংকালে
আবার প্রাণ দিয়ে তোমাদের সমকালের শহরে পাঠিয়ে দেবো
তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে তাদের প্রাণ ফিরিয়ে নিতে ?
ভাবছো আগলে রেখেছি সমুদ্রতলের সব অমুল্য মনিরত্ন
যা তোমাদের গাধার পায়ুর মত স্ত্রীদের গলায় ঝুলে থাকে তীব্র এক ফাঁসের মত !
না আমি এসব কিছুই করবো না,
যেহেতু আমার ঈশ্বর নেই,অতীত নেই, বর্তমান নেই বলে সময় বলে কিছু নেই
তাই কোনকিছুর সাথেই সম্পর্ক নেই আমার।
তোমরা যা ইচ্ছা তাই করো ,
পৃথিবীকে ধ্বংস করে নিজের পোড়া শবের নিভুনিভু আগুন থেকে
ধরিয়ে নাও তোমাদের হৃদয়হীন চুরুট,
এসবে আমার কিচ্ছু যায় আসে না, যা করতেই তোমাদের জন্ম হয়েছে
তা ঠেকানোর আমি কে ? তোমাদের কেউ হলে না হয় এসব ভাবতাম!
নিজেদের পায়ুপথে মিসাইলের মত ঢুকে যাও,
সমস্ত রক্তযোনীকে বানাও মরুভূমি;
সব মহামানবদের ফসিল পূজা করে করে
তাদের হাড়ে কোনো মাংস না থাকলে নিজের মাংস খাও,
সন্তানের রক্তের স্যুপে সারো প্রাতঃরাশ,
কুমারীদের তুলে দাও হিস্র জন্তুদের মুখে আর হর্ষধ্বনি করো,
স্তুতি করো ঈশ্বরের কেননা সে কুমারী এবং হিংস্র শ্বাপদদের একই সময়ে জন্ম দিয়েছিল,
এসবে আমার কিচ্ছু যায় আসে না,
তোমরা যা তা তো তোমরা করবেই ,
আমি তো আর হায়েনার কাছ থেকে তার দাঁত চেয়ে নিতে পারিনা
কোনো সূর্যমুখীর চোয়ালে লাগিয়ে দিতে!
তোমাদের সব ভাষ্কর্য শিল্পীদের চিনি
রক্তের তোড়ে সে কি বিশাল বিশাল ম্যুরাল,
যেন কবরের গায়ে কেউ এক দিয়েছে জীবিতের নিঃশ্বাস !
আমি কোনো মানুষ না
আমি কোনো প্রাণ না
আমি কোনো কালের না
আমি ঈশ্বরের কেউ না
এমনকি আলো ও অন্ধকারেরও না;
নই কোনো অস্ত্বিত্ব
তাই অধিকার নেই আমাকে এভাবে ক্রেনে বেঁধে ফেলার
তোমাদের আইন তার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যে তোমাদের কেউ;
যেহেতু আমি কেউ নই তোমাদের তাই আমার অভিশাপও লাগবে না তোমাদের আত্মায়;
তবু বলছি তোমরা এমন কাউকে বেঁধেছো তোমাদের ক্রেনে
যার জন্য ধ্বংস হতে বাধ্য তোমরা এবং ক্রেনও ;
এমনই আগন্তুক আমি সমুদ্রও আমাকে চেনে না ,
এমন নয় সে মহাপ্লাবন পাঠিয়ে প্রতিশোধ নেবে
এবং আমি বুঝলাম আমিও তোমাদের মতই বোকা
যারা ধ্বংস হয়েছে তাদের সৃষ্টির আগেই
তাদেরকেও কেনো ভয় দেখাছি ধ্বংসের !
আমি ডুবোশব; যেভাবে আমাকে বেঁধে আনলে সমকাল শহরে
কান পাতো তোমাদের হৃদয়ে যদি তা থেকে থাকে;
শহরটার শেষ নিঃশ্বাস নিশ্চয় শুনতে পাচ্ছো
আর আকাশে সমুদ্রের গর্জন
এভাবে তোমরা আমার মত ডুবোশব হয়ে যাবে যা আমি ঘুণাক্ষরেও চাইনি
আমার মত আর কেউ হোক ,
তোমাদেরকে আমি আমার কেউ ভাবিনা
কিভাবে শব হিসেবে মেনে নেবো পাশে !
আমাকে বেঁধে আনাতে জিতলে তোমরাই
যোগ্য হলে আমারই মত ডুবোশব হওয়ার !
ডুবোশবের এপিটাফ
মাথায় যা ছিলো নিজেকে বমি করলো আগুনের কেবিনে
নার্সের অগ্নিযোনী ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে মরুভূমি
আমি তার প্রাগৈতিহাসিক মরিচীকা;
কিছুই ভয় পাই না
জানি লোকদের মাথার নর্দমা;
অগ্নিযোনী মেলে বসে আছে শ্মশান
ভস্ম রুপে যেখান থেকে এসেছো ফিরিয়ে নিতে সেখানে;
স্বপ্নের ভেতর ঊষাযান আর গোধূলীযান করছে সঙ্গম
ইঞ্জিনে টগবগ করে ফুটছে হিম রাতের ভ্রুণ
তোমাকে নিয়ে যাবে সেই আগুনের কেবিনে
যেখানে নেকড়ের হৃদয়ে শ্বাস নিচ্ছে নেকড়ীর লাশ;
সেই লাশ যাকে ঘিরে গ্যাসবেলুনের মত বসে আছে সবাই;
আকাশ পায়ের নিচের পাতালে
ভয়ংকর সব জীবাণুর মত ভেসে যাচ্ছে মেঘ;
ছুরির মত মর্গ বিঁধে আছে বাম বুকে
সমুদ্র ধুয়ে যাওয়ার আগে ধুয়ে দিতে দাও তার দগদগে ক্ষতের গহ্বর
ডুবোশব ও বোহেমিয়ানের মৃত্যু
প্রবর রিপন
প্রবর রিপন
সুন্দর
উত্তরমুছুনতুমুল লাগল কবিতাগুলো। কবিকে ভালবাসা ও শুভেচ্ছা।
উত্তরমুছুনআবেগ প্রকাশ করতে ব্যর্থ আমি 🥺
উত্তরমুছুনভালোবাসা নিবেন ভাই ❤️
সুন্দর!
উত্তরমুছুনextra Ordinary
উত্তরমুছুনঅনেক ভেবেছি একজন আদিম মানুষের মহাকাশের মত অনন্ত স্বাধীনতায়
উত্তরমুছুনশহরের মানুষগুলো কেন জ্বলে পুড়ে যায়;
কারণ তারা রক্তজাত দাসস্বভাবের মানুষ
কে কখন দেখেছে বৃন্তে ঝুলে থাকা গোলাপ
কোনো পাখিকে দেখে তার সাথে উড়ে যেতে বৃন্তচ্যুত হয়েছে !
ঘর গেরস্থালীর কাজেই তো এরা জীবনকে বিসর্জন দিয়েছে
তাই কোনো বোহেমিয়ান ভবঘুরে দেখলে তাকে সেদ্ধ করে
তাদের রাতের ডিনার টেবিলে মশলার ঝাজালো ঝোলে
পাকস্থলীর সব ঈর্ষা মেটাবেই ।
অসাধারণ
উত্তরমুছুনকিছু সময় কবিতার সমুদ্র সৈকতে ছিলাম
উত্তরমুছুনচমৎকার
উত্তরমুছুন🖤🫂🤍
উত্তরমুছুন