[১ থেকে ১০ অব্দি পড়তে ক্লিক করুন]
১১.
পারমিতা, এক চৈত্রসংক্রান্তির রাতে আমার হাঁটুতে মাথা রেখে-
তুমি জানতে চেয়েছিলে সুন্দরের সংজ্ঞা,
তারপর আমি তোমার গ্রীবা, স্তন আর অনুভূতির সমস্ত রোমকূপে,
সুন্দরকে ভাগ করে দিয়ে, এই ঠোঁটে ছুঁয়েছি সুন্দর!
তুমি জানতে চেয়েছিলে, তোমাকে কি নামে ডাকবো?
আমি মেঘ-পাহাড়-সমুদ্রের নামে তোমাকে অজস্র উপমায় ডেকেছি,
তুমি সেদিন আরো বেশি মিশে গিয়েছিলে আমার মাঝে।
সেদিন রাত পৌনে তিনটায়, তোমার কপালের টিপ হারিয়ে যাওয়ার পর-
আমি চাঁদকে আহ্বান করেছিলাম, তোমার কপালে স্থায়ী আবাস গড়তে,
চালাক চাঁদ প্রত্যাখ্যান করেছিলো, কারণ বলেনি। তবু আমি জানি-
তোমার সাথে সৌন্দর্য্যের লড়াইয়ে হেরে যেতে চায়নি চাঁদ।
আমি আমার নাকে-মুখে মেখেছি তোমার চঞ্চল চুল।
এরপর ক্যালেন্ডারের পাতায় পাতায় অজস্র চৈত্রসংক্রান্তি এসে ফিরে গেলো,
তোমাকে ছোঁয়া হয়নি আর, তোমার সাথে দেখাই হয়নি!
পারমিতা, তোমাকে নিয়ে ভাবা উপমাগুলো আজকাল-
আমার ভাবনার কাঁটাতারে বিষণ্ণতার আবাস গড়ে।
১২.
পারমিতা, ছেড়ে যেওনা এভাবে, পুড়িওনা বিরহ নামক ঐ নিষিদ্ধ আগুনে,
রূপকথার ফিনিক্স পাখির গল্পটা আমার কৈশোরের পাঠ্যসূচিতে ছিলোনা কখনো,
সব প্রেমিকের পূনর্জন্ম হয়না পারমিতা,
একজন্মেই ছাই হয়ে যাওয়া প্রেমিকের মিছিলে-
আমাকে এভাবে নির্বাসনদন্ড দিতে নেই,
আমি ভালোবাসি ছাড়া আর কোন স্লোগান শিখিনি কখনো!
পারমিতা, এভাবে হারিয়ে যেওনা, পায়ে মাড়িয়ে দিওনা সুখের কাঁটাতার,
আমি আজন্ম প্রেমিক ছিলাম, আমৃত্যু তোমার থাকবো বলে,
বিশ্বাস করো, একা একা একটি সেকেন্ডও আমি বাঁচতে পারিনা আর,
তোমাকে বলার মতো অনেক কথাই জমে যায় প্রতি নিঃশ্বাসের আড়ালে,
তুমি হারিয়ে গেলে, ওসব কথা আমাকে গলা টিপে হত্যা করবে।
পারমিতা, একজনমে কাউকে একা করে দিতে নেই-
সব প্রেমিকের ভাগ্যে পূনর্জন্ম নেই!
১১.
পারমিতা, বিশ্বাস করো এখনো বদলায়নি কিছুই,
এখনো এখানে আমরা প্রাচীন জীবন যাপন করি।
খাদ্য-বাসস্থানের নিশ্চয়তায় নারী পুরুষের দখলে যায়,
সন্তানের বিনিময়ে পুরুষ নারীর আঁচলে বাঁধা পড়ে।
মাঝখানে ভালোবাসা নামক শব্দের মিথ্যে অজুহাত!
আমার ওসবে পোষায়নি কোনদিন, পোষাবেওনা,
তাই আমি তাল-লয়-সুর ভুলে এলোমেলো পথ হাঁটি,
যখন অজস্র বজ্রপাতে মাঝরাস্তায় থেমে যায় রাত,
তখন আমি ডুবে থাকি, অন্ধকার এক যোনীর গল্পে।
আমাকে স্পর্শ করেনি বজ্র আলো,
এই মিথ্যে সভ্যতার দলিলে, আমার কোন সাক্ষর নেই!
১২.
পারমিতা, তোমাকে বলেছিলাম কোন সন্তান উৎপাদন নয়,
আমাদের সন্তান এই বিশ্বে আর কিছুতেই নিরাপদ নয়!
তুমি বলেছিলে, আমরা বৈশ্বিক নাগরিক নই,
আমরা লাল-সবুজের একটা শীতল পতাকায় ঘর বাঁধি,
আফগানিস্তান-ইরাক নয় আমার দেশ,
এই সবুজ দেশে মানুষের মন সবুজ, এখানে মানুষ-
ফুলের সাথে, পাখির সাথে কথা বলে।
তুমি মিথ্যে বলেছিলে পারমিতা,
এখানে মানুষের মন রক্তের মতো লাল।
একটা শিশুকে দানবিক উল্লাসে পিটিয়ে মারা হয়,
যাকাতের নামে পায়ের নিচে চেপে ধরে কেড়ে নেওয়া হয়-
হতদরিদ্র কিছু মানুষের প্রান।
বাড়ি ফেরার নাম করে, বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়না,
লঞ্চে ডুবিয়ে, সড়কপথে পিষে ফেলে খুন করা হয়।
ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষের রক্ত গিলে মানুষ।
নিজের ঘরে রক্তাক্ত লাশ হয়ে পড়ে থাকে মানুষ।
পারমিতা, আমাকে ক্ষমা করো, আমি আবারো বলছি,
অশান্ত এই পতাকায় কোন সন্তান উৎপাদন নয়!
১৩.
পারমিতা, তোমাকে নতুন করে আর কি বলার থাকতে পারে।
শুধু বয়সটা বেড়েছে এই কথাটুকুই জানাবার ছিলো,
স্মৃতির কোষগুলো বাতাসে মৃত গোলাপের পাঁপড়ির মতো ঝরে পরে,
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায় শহরের কতশত ধুলোমাখা রাস্তায়।
সেদিন সন্ধ্যায় কফির কাপে শেষ চুমুকটাই মনে আছে আমার,
বাকি সব ধোঁয়াটে বিবশ এক বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়েছে।
তোমার আঙ্গুলে ঝলমল করে উঠেছিলো যে অঙ্গুরী,
তার ভাঁজে লেখা ছিলো আমার মৃত্যু পরোয়ানা।
পারমিতা, সেদিন সন্ধ্যায় আমার অস্বাভাবিকভাবে খুব স্বাভাবিক থাকা,
প্রতিদিনের অভ্যাসে তোমাকে রিকশার দরদামে জিতিয়ে দেওয়া,
তোমার চলে যাওয়ার রাস্তায় নিস্পলক তাকিয়ে থাকা পর্যন্ত, তুমি জানো।
বাকিটুকু জানতে পারোনি অথবা কেউ তোমাকে জানায়নি,
সেদিন সন্ধ্যার ফুটপাত হাতড়ে এখনো তুমি কিছু জলকণা খুঁজে পাবে,
এতগুলো দিনের পরেও, সেই সমুদ্র শুকায়নি কোথাও।
পারমিতা, তুমি দাবী করছো এই আমি বেঁচে আছি এখনো,
আমাকে মাঝরাতে শহরের রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখেছে নৈশপ্রহরী,
খদ্দের ভেবে এগিয়ে এসেছে কতশত নিশিবালিকা,
জানি, আমার সব খবরই তুমি রাখতে,
ইথারে লুকানো ছিলো, তোমার গুপ্তচর!
সবই ঠিক আছে, ওরা মিথ্যে বলেনি একবিন্দু,
শুধু যে সত্যটুকু তোমাকে জানায়নি ওরা,
তা হলো, ঐ সন্ধ্যার পর আমি আর কোনদিন বাড়ি ফিরিনি।
১৪.
পারমিতা, যদি ভেবে নাও সবকিছু বেমালুম ভুলে আছি-
তবে জেনে রাখো, তোমার চলে যাওয়ার মতো এটাও মিথ্যে।
পারমিতা, ভালোবাসার কোনো অবৈতনিক ছুটি নেই, ছিলোনা কখনো!
এখনো প্রতিনিয়ত পাশ কেটে যাওয়া প্রতিটি অলস রিকশায়-
অচেনা প্রেমিকের পাশে আড়ষ্ঠ ভঙ্গিতে বসা থাকা তোমাকেই যেনো দেখি!
হয়তো তোমার নখের রঙ বদলে গেছে,
চুলের ভাঁজে গুপ্তচর হয়েছে শাদারঙ!
হয়তো প্রাত্যহিক চুম্বনের জায়গা দখল করেছে চা এর কাপ,
হয়তো নিরবতার কাঁটাতার পেরিয়ে ভালোবাসি বলাটা হয়না আর,
তবু একান্ত এক দাবীর মতো তোমার আঁচলে লুকানো চিরকুটে-
জলছাপে লিখে আসি, ভালবাসি!
পারমিতা, তবু আমার ভুলে যাবার অজুহাতে তুমি দূরত্ব বাড়াও,
চলে যাও তার কাছে,
আমার দেয়া গোলাপের মতো আমাকেও প্রত্যাখ্যান করো।
অথচ দ্যাখো, এইসব ভুলে গিয়ে এখনো তোমাকে ভালোবাসি,
তবু যতবার তোমাকে আলো ভেবে সামনে এগিয়ে আসি,
দেখি, তুমি রাত্রির চেয়ে গাঢ় অন্ধকার!
মন্তব্য