ন্যূনতম বিবরণ
ক-দিন আগে একজন সমবয়সী ট্যাক্সি-ড্রাইভার এক অবাক-কাণ্ড করে। তখন বর্ষণশেষ ও রাত স্তব্ধ, ভিজে জামের মতন চিক্কন বি. টি. রোড হু-হু পেরিয়ে যেতে যেতে কোনরূপ ভনিতাবিনাই সে শুরু করে দেয়, ‘দেখুন এই যে কৃষ্ণের ছবি’, তার সামনে উইন্ডলিণ্ডে যা দুলছে, ‘এ তো নতুন কিছু না’, এর তো আধুনিকীকরণের দরকার হয়নি, ‘আজ আমি গাড়ি চালাচ্ছি, কাল আমার নাতি চালাবে’, পূর্বপুরুষদের আমলেও ছিল এই ছবি, ‘এই একই কৃষ্ণরূপ দুলবে’, অবিকল একই ইমেজ-এর রিপ্রিন্ট সে দেখবে, ‘শতসহস্র বছরেও কি ভাবছেন রূপ পাল্টাবে?’
‘অ্যাকসিডেন্ট হতে পারত! এক্ষুনি!’ হুমড়ি খেয়ে সে হঠাৎ স্ট্রিয়ারিঙ-এ ডানদিকে মোচড় দেয়। তারপর গিয়ার পাল্টায় ও একইসঙ্গে চাপ দেয় অ্যাকসিলেটরে। ‘তবু দেখুন’, বহুদূর পর্যন্ত হেডলাইটে বৃষ্টি ছড়িয়ে সে শুনিয়ে হাসে, ‘একটা না-একটা ছবি কোথাও থেকেই যাবে যা থেকে আবারো রিপ্রিন্ট হতে পারবে হাজার-হাজার..’
আমি ক-দিন ধরেই আমাকে বোঝাচ্ছি যে, কথাটা আমার মনে ধরেছে। আমি প্রাণপণে বিশ্বাস করতে চাইছি যে সে ট্যাক্সি-ড্রাইভার, অধিক রাতেও ও-রকম সহসা সেদিন আমাকে যা বলে তা একপ্রকার দার্শনিকতা। বিশেষত, পিছন পানে তাকিয়ে সে একবারো দেখার প্রয়োজন বোধ করেনি যে, আমি কে।
(কৃষ্ণগোপাল মল্লিক সম্পাদিক ‘গল্পকবিতা’ পূজাসংখ্যা চতুর্থ বর্ষ/১২ সংখ্যা/সেপ্টেম্বর ১৯৭১)
মন্তব্য