আহারে কবি!
তখনো আমরা এতোটাই কাছে যতোটা এলে খোঁপা থেকে ফুল খুলে রাখে বিষণ্নতা। তখনো আমরা ফুটিনি এমন। মানুষের ক্ষুধা নিবৃত হলে যে ঢেঁকুর তার মতো ব্যবহৃত হয়ে যাইনি অতো। তবু এলায়িত ভঙ্গিতে আমাদের পঞ্জিকা বয়ে বেরিয়েছে কারও না কারও শব।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
আমরা আমাদের খুঁড়ে খুঁড়ে তুলে এনেছি ব্যথা। এসব ব্যথাদের নাম যখন কবিতা হলো, আমাদের তখন ঘর উজাড়। আমরা রচনা করেছি নিজের সাথে নিজের বিরোধ। আমরা দু' হাতে তুলে নিয়েছি কুঠার, যার আঘাত পড়েছে আমাদেরই গোড়ায়! কারও হাসি, কারও চোখরাঙানি আমাদের রোজকার অভ্যাস।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
অথচ আমরাই দেখেছি ক্লান্ত পায়ে পথের কান্না, পাতাদের ঝরে যাওয়ার শোকে গাছের মুহ্যমান দাঁড়িয়ে থাকা। রাষ্ট্রের দিকে করুণ চোখে যে যুবক, যে যুবতি তাকিয়ে থেকেছে আমরা শুনেছি তাদের বুকের কার্ণিশে ডাকা ডাহুকের আছাড়িবিছাড়ি। আমরা দেখেছি খাদ্যের রং গাঢ় হলেও ক্ষুধা মেটেনি অনেক জীবনের।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
আমরাই দেখেছি প্রেমিকার মাথার কাছে প্রেমিক কেমন ধরে আছে উজ্জ্বল অবহেলা। পিতার কাছে পুত্রের অথবা কন্যার কাছে পিতার কত ফুলে ঝরে যাওয়া! মাকড়শার জালে আমরা দেখেছি বিস্তার অথবা আগ্রাসন।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
কোনও দৃশ্যই শেষতক আমাদের অথবা আমরাই হয়তো দৃশ্যকে করিনি ক্ষমা।
প্রেম
তবু ভুল করি। তোমার মতো কাউকে দেখে এগিয়ে গিয়ে। ভোর হয়। বাসডিপো থেকে ছেড়ে যায় বাস। পোস্ট অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে ডাকবাক্স। বহুবছর ধরে এই নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা। ভ্রুক্ষেপহীন। তবুও তো থাকা।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
মাঝে মাঝে মানুষও কি ডাকবাক্স? ছাতার মতো নিজেকে হারিয়ে ফেলি।
"ওয়াইজ ম্যান সেইস অনলি ফুলস রাশ ইন
বাট আই কান্ট হেল্প...."
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
বৃষ্টি হয়। কোথাও থামে না। আমার মতো ছাতাও হারিয়ে যায়। রাস্তায় দাঁড়ালে আজকাল আর মুখ দেখি না। মুখগুলো এবার সত্যিকারের মাস্কে ঢেকে গেছে। নিরাপদ দূরত্বের ভাড়া গুনে গায়ে গায়ে লেগে বাড়ি ফিরতে কেমন লাগে মানুষের? মুখ দেখা যায় না বলেই বোঝা যায় না। শুধু বুঝি, মানুষ মৃত্যুর চেয়েও এই বেঁচে থাকাকে ভয় পায়। বেঁচে থাকতেই মানুষের এতো লড়াই। বেঁচে থাকতেই মানুষ বারবার মরে যায়। প্রতিদিন কতো মানুষ ভোর দেখার অপেক্ষা করে জানালায়। তারা কি কোনোদিন ভোর দেখতে পায়? তাদের হাত ধরে কেউ কি কখনো বলে এতো ভয় পেয়ো না, এসো হাঁটি? বলে না জানি। শেষ অব্দি মানুষ অপেক্ষা করতে পারে বলেই টিকে যায়। একটা ভোরের অপেক্ষা। একটা জীবন থেকে আরেকটা জীবনের খুব বেশি দূরত্ব নেই। আমরা তো শুধুই পুনরাবৃত্তি। একই রকম সুখ-দুঃখ, ক্ষুধা, প্রেম যাপন করা এই যে জীবন এই জীবনের পর মানুষে মানুষে কি কোথাও দেখা হয়? যদি দেখা হয়ও সেখানে নিশ্চয়ই কয়েকশ' হাজার বছরের মানুষের ভিড়। সেখানে নিশ্চয়ই পৃথিবীর চেয়েও ঠাসবুনট হয়ে থাকতে হয়। সেখানে নিশ্চয়ই আমার কয়েক প্রজন্ম আত্মীয়ের ভিড়। এসব ভাবলেই মৃত্যু ভাবনা আমার কর্পূরের মতো উবে যায়। নিজ মনেই হাসি।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
মাঝে মাঝে মনে হয় দুটো গাছ কথা বলতে পারে না বলেই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। কথা বলতে পারলে বোধহয় মানুষের মতো হেঁটে দূরে চলে যেতো। আমার মায়ের এক মামাতো ভাই ছিলেন। তিনি নাকি গাছের সাথে কথা বলতেন। সারাদিন গাছের নীচে নীচে হেঁটে বেড়াতেন। পাতাদের ছুঁয়ে আদর করতেন। আমি তাকে দেখিনি কখনো। মাঝে মাঝে আমার তাকে দেখতে ইচ্ছে করে। আমি বহুদিন গাছের গায়ে হাত রেখেছি, শুনতে পাইনি কিছু। আমাদের শহরে রাখাল নামে এক পাগল ছিলেন। সবাই তাকে রাখালদা ডাকতেন। আকাশের দিকে লাঠি উচু করে গুলি করার ভঙ্গি করে একটা মানুষ, দুইটা মানুষ, তিনটা মানুষ এমন গুনতেন। রাখালদার কি মনে হতো মানুষ পাখির মতো! উড়তে পারে! রাখালদার দশটাকা খুব প্রিয় ছিলো। তিনি সবার কাছে দশটাকা চাইতেন। একবার তিনি আমাকে দশটাকা দিয়েছিলেন। কেনো দিয়েছিলেন? তাকে মাঝে মাঝে মনে পড়ে।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
একবার তোমাকেও মনে পড়ে। প্রেমে পড়ে গেলে নিজেকে ভয় পাই আমি। তখন একটা পাতাহীন গাছের মতো সামান্য দৃশ্যও ভাঙতে পারে আমাকে। তখন ছেড়ে যায় কবিতা। তখন সারাদিন তোমার পাশে ঘুরে তোমার পাশেই ঘুমিয়ে পড়ি। তোমার ভোর হয়। পাশ কাটিয়ে উঠে যাও। এমন হয় আমার।
ভালো লাগলো
উত্তরমুছুনদারুণ লাগলো, চমৎকার গাঁথুনি
উত্তরমুছুন