.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

জিললুর রহমানের আত্মজীবনী (পর্ব ১)

জিললুর রহমান। কবি, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক। জন্ম, নিবাস, কর্ম বাঙলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়। পেশায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক। আশির দশকের শেষদিক থেকে লেখালিখি। লিটল ম্যাগাজিন ‘যদিও উত্তরমেঘ’ এর সম্পাদক, ‘লিরিক’ এর সম্পাদনা পরিষদ সদস্য। উত্তর আধুনিক কাব্যচর্চার অন্যতম পথিকৃৎ। লিরিক, নিসর্গ, একবিংশ, সুরমস, বিন্দু, চারবাক-সহ বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে লিখে আসছেন দীর্ঘদিন। বিন্দুর পক্ষ থেকে তাকে অনুরোধ করা হলে তিনি স্বানন্দে রাজি হয়েছেন আত্মজীবনী লিখতে, এতে আমরা অত্যন্ত খুশি হয়েছি। এই লেখাটি ধারাবাহিকভাবে বিন্দুতে প্রকাশিত হবে। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব। 

- সম্পাদক
জিললুর রহমানের আত্মজীবনী (পর্ব ১)

কোরাকাগজের খেরোখাতা

শৈশব দুরন্ত হয় বলে কবি-সাহিত্যিকদের জীবনগাথায় লেখা থাকে। যারা রাজনীতিবিদ হয় তাদের শৈশব তো দুরন্ত হতেই হবে। যেমন শেরে বাংলা এক ঘুষিতে নারকেল ছিলতে পারতেন। কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানোর প্রবাদ শুনেছি, কিলিয়ে নারকেল ছিলার এই একটিই উদাহরণ। তবে সেদিক বিবেচনায় রবিঠাকুরের শৈশব চারদেয়ালে বন্দী ছিল। বন্দী থাকলেও বাল্যকাল থেকেই প্রাণসখার সাথে বেড়ে ওঠার মতো সৌভাগ্য ক’জনার হয়। আবার রুটির দোকানে কাজ করে লেটোর দলে গান করে বেড়ো ওঠা কাজী নজরুলের বিচিত্র জীবনের কথা পড়লে বড় লোভ হয়।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
যাই হোক, ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া আমার কর্ম তো নয়ই, ধর্মও নয়। অথচ আমার শৈশব কেন পুরা জীবনটাই যেন সেই অনিন্দ্যসুন্দর গানটির মতো বারবার উচ্চারণ করে “মেরা জীবন কোরা কাগজ, কোরাই রহে গেয়া”। তাই সরাসরি বলেই ফেলি যে, নেহাৎ সাদামাটা ধরনের একটি শৈশবই আমার জন্যে অপেক্ষা করেছিল।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
যখন জন্মেছি, তখন বাংলা উত্তাল, ১৯৬৬ সাল। এই যে জন্মকথা, এসব তো আর স্মৃতি থেকে নয়, বলা চলে, শোনা কথা। শুনেছি মূলত মানুষের কাছেই। বাবা ছিলেন অত্যধিক গম্ভীর এবং অমিশুক। বড় হতেও দেখেছি এক কোণায় থম মেরে বসে থাকতেন— পত্রিকা পড়তেন।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
তাই জীবনযাত্রার প্রথম পর্বের বক্তব্যগুলো কিছু শোনাকথা আর কিছু ছবিকথা থেকে বিধৃত হচ্ছে বলে ধরে নেওয়া যাক। ১৯৬৬ সালের ১৬ নভেম্বর তারিখে আমার জন্ম, মোবাইলের কম্পিউটার অ্যাপস ঘেঁটে দেখা গেল সেদিন ছিলো বুধবার। ঠিক কোন্ লগ্নে জন্মেছিলাম এখন আর মনে নেই। মা অবশ্য বলেছিলেন। আবার জেনে নিতে হবে। তবে এটা জানতে পেরেছি, প্রসব-বেদনা ওঠার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁকে ভাত রান্না সহ যাবতীয় গেরস্থালী কর্ম সম্পাদন করতে হয়েছে। তারপর যখন সময় হলো, তাঁকে নেওয়া হয়েছিল আন্দরকিল্লার রেড ক্রস মেটারনিটিতে। জানতে পেরেছি ডা. আনজুমান আরার হাতেই ডেলিভারি হয়েছিল আমার জন্ম। পরবর্তীতে তাঁর স্বামী ডা. জমির উদ্দীনকে আমার শিক্ষক হিসেবে পাই।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
১৫ মাস বয়সে মা-বাবার সাথে প্রথম ছবি।
আমার গাত্রবর্ণ বেশ শ্যামলা, মা আমার যদিও খুব গর্ব করে বলেন, খুব সুন্দর ফর্সা বাচ্চা নাকি হয়েছিলাম, যেন আমার বড় মামার মতো গাত্রবর্ণ। আমার বাবা সত্যি সত্যিই কৃষ্ণকায়। মাতৃপক্ষের শ্বেত বা সফেদ রঙের গৌরব, আমার পিতৃপক্ষের কৃষ্ণগাত্রবর্ণ হেতু আমাকে আশৈশব টিটকারি মশকরা করে হেয় করা হয়েছে বলে আমার মনে পড়ে। যাই হোক, ক্লিনিক থেকে আমাকে এবং মা’কে নানাবাড়ি ফতেয়াবাদ ছড়ারকুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
মায়ের ভাষ্য মতে, আমার নানা ছিলেন সেকালে এতদঞ্চলের প্রথম অ্যাডভোকেট। কলিকাতা থেকে ডিগ্রী নিয়ে যখন ফিরেছেন তখন চট্টগ্রামের রেল স্টেশন লোকারণ্য হয়ে ওঠে তাঁকে সংবর্ধনা দেবার জন্যে। নানাবাড়ির লোকজনের কাছ থেকে পরে শুনেছি, তিনি খুব দয়ালু উকিল ছিলেন। কেউ মামলা করতে এলে নাকি অপরপক্ষকে ডেকে দুপক্ষে মিলমিশ করে দিতেন। তাতে যা হয়েছে, ঘরে বনেদীপনা থাকলেও বিত্তের জৌলুশ ছিলো না। অবশ্য প্রাচীন জমিদার বংশীয় ঠাট আমি ওই পরিবারে এখনও টের পাই। শুনেছি, আমার নানার দাদা, পাঁচলাইশের নিজ বাড়ি ছেড়ে ফতেয়াবাদে শশুরবাড়িতে উঠে আসেন স্ত্রীর জমিদারী দেখার প্রয়োজনে। অবশ্য বনেদী বংশে যা ঘটে, সাহিত্য সংস্কৃতিতে আগ্রহ — সেটা তৈরি হয়েছিল।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
বয়স তখন দুই।
নানা নিজেই নাকি নজরুল সঙ্গীত গাইতেন। কবি নজরুল যখন ফতেয়াবাদে সাহিত্যিক মাহবুবুল আলমের বাড়ি গিয়েছিলেন অকালপ্রয়াত কবি দিদারুল আলমের বন্ধুত্বের কারণে, আমার নানা তখন দিদারুলের কনিষ্ঠভ্রাতা কবি ওহিদুল আলমের বাল্যবন্ধু হিসেবে নজরুলের দর্শন পেয়েছিলেন। আর কে না জানে, নজরুলের সান্নিধ্যে গেলে মন্ত্রমুগ্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ নেই। অন্যদিকে বড় মামা সত্যসাহার নেতৃত্বে মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেছেন। সেকালে নায়িকা কবরীও নাকি সেখানে সত্যসাহার নির্দেশনায় নাটকে অভিনয় করতেন। মমতাজ উদ্দীনের নির্দেশনায়ও অভিনয় করেছেন বড় মামা চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময়। কিন্তু আমি যেদিন জন্মেছি, সেদিন বড় মামা সিলেট ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার নতুন চাকরিতে যোগদান করেছেন মাত্র। আর সেই বিকেলেই তিনি টেলিগ্রাম পেয়ে রাতারাতি চট্টগ্রাম ফিরে সরাসরি মেটারনিটিতে এসে আমাকে কোলে তুলে নেন। আর যে কথাটি আমাকে হাজার বার শুনতে হয়েছে তা হলো, কোলে নেওয়া মাত্রই আমি মূত্রত্যাগ করে তাঁর সাহেবি জামা কাপড় ভিজিয়ে দিই। এতে অবশ্য বড় মামা উল্লসিত হন বলেই দাবী করেছেন বহুবার পরে নানান আলাপে। 
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
আমার জন্মকালে মায়ের বয়স ছিল ১৮ বছর। আর আমার বাবার সাথে তাঁর বয়সের পার্থক্য ১৪ বছরের। এখন বার্ধক্যে যদিও তাঁদের ভরা প্রেম সকলের অনুভূত, সেদিন তাঁদের ভালবাসা তেমন গভীর ছিল কিনা গবেষণার বিষয়। কারণ, এই একটি ব্যাপারে মায়ের কোনো অভিযোগ শুনিনি। আমার বাবা তখন সদ্য প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কলেজে অধ্যাপনার চাকরি করেন, সাথে সিটি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আয়কর পরামর্শক বাদশা মিয়া চৌধুরির সহকারীর কাজও। শুনেছি বাদশা মিয়া চৌধুরীর সাথে বন্ধুত্ব ছিল আমার দাদার। তাই এম কম পাশ করেই ওনার সহকারী হিসেবে কাজের সুযোগ মিলে যায়। পরে সিটি কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং তাতে শিক্ষকের প্রয়োজন পড়লে উনিই বাবাকে কলেজে চাকরি দেন। শুনেছি এই বাদশা মিয়া চৌধুরী চট্টগ্রামের একজন প্রথিতজশা সমাজসেবক।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
তিনি অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা করেছেন, নৈশ কলেজ প্রতিষ্ঠা করে বয়স্কদের শিক্ষার প্রসারেও ভূমিকা রেখেছিলেন। চট্টগাম শহরের ওয়ার সেমেট্রির সামনের সড়কটি তাঁর নামে উৎসর্গিত।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
এসএসসি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র থেকে খুলে নেওয়া ছবি।
আমার দাদার সাথে এই বিখ্যাত ব্যক্তি জনাব বাদশা মিয়া চৌধুরীর বন্ধুত্বের সূত্র ছিল আন্দরকিল্লা জুমা মসজিদে একসাথে নামাজ পড়ার মাধ্যমে। আবার আমার দাদা ছিলেন ইনকামট্যাক্স অফিসের সুপারভাইজার। শুনেছি, যেমন সবাই শুনে থাকে, নামাজ জামাতে পড়ার জন্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে তাঁর বাদানুবাদও হয়েছে। অতএব, প্রতিপাদ্য হলো এই, দাদামশাইও তেমন অর্থকরী বাগানোর মানুষ ছিলেন না। অথচ সংসারে ৫ ছেলে এবং ৪ মেয়ে। আমার বাবা দ্বিতীয়। প্রথম ৩ ছেলের পরে তৃতীয় সন্তান জন্মদানের সময় আমার বাবা মাতৃহারা হন। তখন বাবার বয়স ৫, আর জ্যেঠার বয়স ১০। তিন ছেলেকে নিয়ে দাদা আসকরদীঘির পাড়ে কোনো এক ভাড়া বাসায় থাকতেন। দাদা অফিসে গেলে জ্যেঠা আসকরদীঘিতে কাপড় ধুতে যেতেন, আর আমার বাবা ছোটভাইকে কোলে নিয়ে পুকুরপাড়ে বসে অপেক্ষা করতেন। এমন যন্ত্রণাকর দিন কাটাতে গিয়ে অবশেষে দাদামশায় দ্বিতীয় দার পরিগ্রহ করেন। মজার ঘটনা হলো, আমরা দাদীর জীবদ্দশায় জানতেই পারিনি যে, তিনি আমার বাবার সৎমা। সম্পর্কের গভীর সৌন্দর্য দিয়ে কী চমৎকার আড়াল করে রেখেছিলেন জীবনের কদর্য বাস্তবতা।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
যাই হোক, অনেক কষ্টে দাদা আমার জ্যেঠাকে ডাক্তারি পড়ান, আর বাবাকে একাউন্টিং-এ এম.কম পাশ করান। এখানে বলে রাখা ভাল, সে যুগে মেট্রিক পাশ করার পরে সায়েন্স, আর্টস, কমার্স এসব নির্ধারণ হতো। আমার জ্যেঠা সায়েন্স নিয়ে পড়ছিলেন, ডাক্তারি পড়াও প্রায় শেষ, তখন আমার বাবা মেট্রিক পাশ করলেন। জ্যেঠাকে আমরা জেআব্বু ডাকতাম। তো, জেআব্বু আমার আব্বাকে ডেকে বললেন, আমি তো সায়েন্স পড়েছি, তুই তবে কমার্স পড়্। যেই কথা সেই কাজ। বড় ভাইয়ের প্রতি আব্বার এই ভক্তি জেআব্বুর শেষদিন পর্যন্ত অটুট দেখেছি। আমার মায়ের সাথে বিয়ের সময় অন্যচাচারা তখনও ছাত্র। যেমনটি আমার মা বলেন, তাদের পড়ার সুবিধার জন্যে বিয়ের কয়েক মাসের মধ্যেই দাদার নির্দেশে বাবা শহরে বাসা ভাড়া নেন। বাসাটি সিটি কলেজ থেকে খুব কাছেই—তামাকুমণ্ডি লেইন।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
বেশিদিন সম্ভবত নানাবাড়িতে নবজাতকের প্রারম্ভিক জীবন চালানো যায়নি। ফিরতে হয়েছে শহরে। বাবার চাকরি আছে, চাচাদের পড়ালেখার অসুবিধা ইত্যাকার নানান কারণে। এর মধ্যে আরেকটি তথ্য বেশ ভাল করে আমার মেমরিতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আমার জন্মের কারণে বাবা আমার চার্টার্ড একাউন্টেনসি পড়তে যেতে পারেননি—সিদ্ধান্ত পাল্টাত হয়েছিল। শহরে জন্ম, সিটি কলেজ আর নিউ মার্কেটের কাছেই বেড়ে উঠেছি, কিন্তু স্বাধীকার আন্দোলনের উত্তাপ বুঝে ওঠার মতো বয়সটা অর্জন করতে পারিনি। না হলে, এখানে সেই উত্তাল সময়ের একটা ফাটাফাটি বর্ণনা লিখে ফেলতে পারতাম। এরমধ্যে কোনো একসময় '৬৯ চলে আসে। গণ অভ্যুত্থানের দিন। ৬ দফা আন্দোলন চলছে। আমার বাবা খুব ভীতু মানুষ শুধু উদগ্রীব হয়ে রেডিওতে বিবিসি শোনেন। আর সন্ত্রস্ত হতে থাকেন, আবার এক ধরনের উচ্ছ্বাসও। সিটি কলেজের ছাত্ররাই তো চট্টগ্রামের সকল আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলো। বাবার অবশ্য কাজের ব্যস্ততাও ছিলো অনেক। সকালে পলিটেকনিক কলেজে ক্লাস, তারপর সিটি কলেজের দিবা বিভাগ ও নৈশ বিভাগের ক্লাস— মানে, দিবারাত্র ব্যস্ততা। এসময়ে বাবা কিংবা মা, কারও স্নেহ জাতীয় পদার্থের কোনো কথাই আমার স্মরণে নেই। তবু আমি তো ২ বছর অতিক্রম করে ফেলেছি। তার কিছুদিন আগেই বাবার হাত ধরে আমরা পা দিয়েছিলাম বাবার নিজের বাসায়, চন্দনপুরায়। এখনও কবি হেনরী স্বপন সহ অনেকেই সেই ঠিকানা মুখস্থ বলেন ‘১১৫ মনুমিয়াজি লেন, চন্দনপুরা, চট্টগ্রাম’।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
ছোট বোন লীনা’র সাথে।
এই ঘরে আসার ক’দিন পরেই জন্ম নেয় আমার একমাত্র ছোটবোনটি। আমার মনে নেই, তবে শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে স্মৃতি বলেই ভ্রম হয় যে, আমি লজেন্স নিয়ে গিয়েছিলাম নবজাতিকা ছোটবোনটিকে খাওয়াবো বলে। অতীত ছবিস্মৃতি থেকে মনে পড়ে, আমাদের একতলা বাড়ির সামনে বিশাল বারান্দায় মা আমাদের ছেড়ে দিতেন রোদ পোহাবার জন্যে। তখন চুরি ছিনতাইয়ের ভয় ছিল না। সামনের বা পেছনের কোনো দরজাই সন্ধ্যার আগে বন্ধ করা হতো না। সেই বারান্দা ছিল ভিক্ষুকদের বিশ্রামস্থল। সারা পাড়া ঘুরে এসে, এখানে বসে তারা আড্ডা জমাতো, খেয়েও নিতো কেউ কেউ। মা আমার তাদের জন্যে কিছু অতিরিক্ত তরকারী দিয়ে যেতেন। শীতের সকালে ছুটির দিনে আব্বার সাথে আড্ডা জমাতে আসতেন পাশের বাসা থেকে কামালের আব্বা এবং মনিরের আব্বা। ওদিকে বাবায় বাবায় বন্ধুত্ব, এদিকে আমরা সন্তানদেরও বন্ধুত্ব। বাল্যজীবনের সেই সম্পর্ক এখনও অটুট।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগের তেমন কোনো স্মৃতিই আসলে নেই। ১৯৭০ সালে আমার দাদা ফুসফুসের ক্যান্সারে মারা যান। আর ১৯৭১ সালের শুরুতে মারা যান আমার নানা। জেনেছি, আমার নানার চেহলাম উপলক্ষে আমাদের ভাইবোন দুজনকেই নিয়ে বাবা-মা এক কাপড়ে ফতেয়াবাদ নানাবাড়ি গিয়েছিলেন ২৫ মার্চ। আর সেখানে রাত্রিযাপনের সময়ই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যুদ্ধ যখন শুরু হয়ে গেল, ইয়াহিয়া খান ভাষণে নাকি বলেছিল “আমার মানুষ দরকার নেই, আমার দরকার জমি।” এমন কথা শোনার পরে আমার বাবার ঘরেবাইরে লোটকম্বল অবস্থা সূচিত হয়েছিল। এতোটাই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যে, যখন একটু শোর উঠতো, ওপাড়ায় মিলিটারি এসেছে — সাথে সাথে নাকি আব্বা আমাকে কোলে নিয়ে আর টাকার ছোট্ট ব্যাগটি নিয়ে ছুটে পালাতেন খাল বিল জংলার দিকে।
লিটলম্যাগ বিন্দু bindu.bangmoy.com
পূর্বাহ্ণ ২:৫১

মন্তব্য

BLOGGER: 1
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,32,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,303,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,14,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,14,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,152,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: জিললুর রহমানের আত্মজীবনী (পর্ব ১)
জিললুর রহমানের আত্মজীবনী (পর্ব ১)
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgQBt15rIsKV2OrajECMqNW4dSvmQnNUB0eILGkAeZ1u4Q9S0E9rImSdxm7yioSRY5iptOxQBobqTJIz0Rp9CuKOc5bjwHHq6pF7Aa1pvUxGHRc5BTtJfhusBanXkSfq1bWJWLuXnjvy3Y/w400-h200/%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%2580.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgQBt15rIsKV2OrajECMqNW4dSvmQnNUB0eILGkAeZ1u4Q9S0E9rImSdxm7yioSRY5iptOxQBobqTJIz0Rp9CuKOc5bjwHHq6pF7Aa1pvUxGHRc5BTtJfhusBanXkSfq1bWJWLuXnjvy3Y/s72-w400-c-h200/%25E0%25A6%259C%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B2%25E0%25A6%25B2%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25B0-%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%25BE%25E0%25A6%25A8-%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25A4%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%259C%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%2580.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2020/05/blog-post_12.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2020/05/blog-post_12.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy