১.
“নাহ! কচি বউডারে আর মারুম না” -ভাবে বাদশা। “বাদশা নামটা কেডা রাখছিলো, দাদা সন্দ করি- বাপের বাপ, দুইন্না বড়োই আজব- নাম আর বাস্তব ম্যালা ফারাক নাজিল হইয়া আছে।”
কিছুদিন আগে মাত্র, বউটারে বেদম পিডাইয়া বাপের বাড়ি পাঠাইছে, ট্যাকার লাইগা। যে ক’ডা ট্যাকা বিয়ার সময় দিলো- কাঁচামালের ব্যবসায় খোয়া গ্যাছে বেবাক- বাদবাকি গ্যালো জুয়ায় আর মদের ঠেকে। একখান রিসকা হইলে বেলার তা বেলায় ইনকাম কইরা নিজের প্যাটটা তউ চলবে। বউরে নিয়া বেশি ভাবে না বাদশা, শ্বশুর জিন্দা আছে- পেরেশানি হইলে বাপের বাড়িত গিয়া থাউক। যাওনের কডা দিন পার হইতে শ্বশুরবাড়িত্বন খবর আইলো- বউ পোয়াতি। খুশি হইতে অয়, তার জন্মের কালে তার বাপও হয়েছিলো যেমন- তার বাপও- এই নিয়ম; তয় বাদশা ভাইবা তল ঠাওর পায় না। আদতে হে নিজে বাদশা না, বস্তিতে থাকনেওয়ালা, গলির লোমওডা খোসাছাড়া নেড়ী কুত্তার নাহান- তারে দরকার নাই সমাজের বরং চলমান অগ্রগতির বার্ডেন-অশিক্ষিত, কুলাঙ্গার-আমপাব্লিক; কইছিলো এক জানাওয়ালা লোক।
বাদশার দুশ্চিন্তা সঙ্গতই- বস্তি; পৃথিবীর সম্ভ্রান্ত এমনকি মধ্যমবিত্ত থেকে মার্জিনে আলাদা করা- দুনিয়ার নিয়মে এইখানেও হাসি-কান্না, দুঃখ-হতাশা, জন্ম-মৃত্যু নিয়তই বর্তায় তবে বাদবাকি বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপট রূঢ, যেন খোদা সবসময় এদের উপরে কোনো না কোনো দিকে রুষ্ট হয়ে থাকেন। এক জাহানের রুল জারি করে জন্ম এইখানেও আসে, নিয়ত বরং বেশিই তবু বস্তির জন্ম বড়লোকবাড়ির ঝলোমল সারসার আলো আর স্যাম্পেনের বোতলের উপচানো ফ্যানাফ্যানা আনন্দ নিয়ে আসে না- খেউখেউ জোছনা যেখানে অকৃপণ চালের ফুঁটাফাটা আর দেয়ালের দুর্বলতার সুযোগ দিয়ে উঁকি দিতে চায় সেইখানেই আবার জীবনের হাল টেনে ধরে হরতালে-হ্যাঞ্জামে হরদম অভুক্ত পেট ও দারিদ্রের ইনফেকশন। এইখানে, মানে এইসব ঘিনঘিন ভঙ্গুর ঢাকার জ্যামের মতোন বিস্তর অসহায় ঠাসাঠাসি, গায়েগায়ে লেগে থাকা বস্তির ঘরগুলায় বরং নতুন জন্ম মানেই নতুন পেট, মানে নতুন যুদ্ধ- ঢাল ছাড়া নিশ্চিত ক্ষিপ্র ঘোড়সওয়ার প্রতিদ্বন্দী পেটের সাথে জুঝতে যাওয়া অসম জঙের সংকেত-আভাসে চঙ আর দামামার সুর বাজা। এ এক অদৃশ্য জুজুর সাথে জুঝতে যাওয়া- তাও ক্ষিপ্ত বালিঝড়ের শংকা নিশ্চিত জেনে। বস্তুত নতুন অঙ্গার এসে পড়া উসকানো খড়বৎ ক্লেশের ভিতর- পীড়ায় পীড়ায় মহামারী বাঁধানোর মতোন উৎপাত য্যানো। তবু জন্মের পুনঃপুনঃ ঘনঘটা এইসব বস্তিতেই যেন রোজ সোমবারের মতো বিনা দাওয়াতে দুয়ারে কড়া নাড়ে- কনডম ফুসলিয়ে বের হয়ে আসা ফাঁকিঝুঁকি এইখানেই হরদিন ঘটে- ঘটে বেশ্যার কনট্রাসেপটিভ চুর করে ডিপস্টিক পজিটিভ হয়ে আসা রঙবদল। এইসবে বেলাশেষ আখেরে খোদাকে বড়ো অবিবেচক লাগে বাদশার।
তাই ইচ্ছে হয় না যাবার, তবু যেতে হয়- কেননা এখন বউকে আনতে না গেলে সেইটা বেইনসানি তামিজ হয়- শেষমেশ অবশ্য লোকসান হয় না। রিকশা কেনার টাকা পোয়াতি বউর সাথে নিয়ে ফেরে বাদশা।
মেধাহীন বোকা মুরগীগুলোর উলঙ্গ চামড়াহীন শরীর পেটো চুল্লীর ঝলসময় লালচে আগুনে ঝলসে, রম্বস কাচের ঘরটায় শিকে করে ঝুলিয়ে দিচ্ছে এক শাদা শার্ট গায়ে কালো পেটমোটা লোক- ফুটপাতে বয়স্ক মহিলা বুকে নাদান শিশু জড়িয়ে, পা ছড়িয়ে, হাতপেতে বসে আছে। কোলের বাচ্চাটা; বছর দুই কি তিন বয়স, বেশি-কম হতে পারে কিছু, নাবুঝ নেশাভরা বোবা চাউনিতে মুরগীর নগ্ন-নরম শিকে গাঁথা শরীরগুলো দেখে দেখে মুখে বৃদ্ধাঙুলী ঢুকিয়ে শুকনো ক্ষরণহীন মাইয়ের মতো চোষে। তিন বাই এক ফুট কাঁচের ঘরটার বাইরের খোলা হাওয়ায় ক্রমাগত মাছিরা ঘোরাঘুরি, ওড়াউড়ি করে- তাদের স্বচ্ছ পাখনার আশ্চর্য কৌশলী ওঠানামা সুর করে বেহালার সবচেয়ে ঢালু স্বরের মতোন, ভোঁওওওঅন- কানের পেতে দিলে শোনা যায় নিশ্চয়- ওদের একটা অসাবধানী বেপরোয়া পাশ গলিয়ে ঢুকে গ্যাছে কাঁচের ঘরটায়, ভেতরের ঝলসানো মাংসের গরমে বাইরে বেরোতে কাচের ফোঁকর খুঁজে বিবস হয়ে পড়েছে ক্রমশ।
এইসব যখন চলে তখন পাশে একটা কারিকর বিড়ির পাছা ঠোঁটে গুঁজে সুখটান দিতে দিতে- নিজস্ব ম্যাদামারা ফিলোসফি আর পুরনো কথা ভেবে- শ্বশুরের টাকায় খরিদ করা রিকশায় বসে, আরামে পা হ্যান্ডেলের ওপর তুলে দেয় বাদশা। লুঙ্গীর নিচ থেকে কাচের ঘরের ঈষদুষ্ণ গরম লুঙ্গীর ভেতরে আসে, গরম গরম বেশ লাগে- আরামে গলে যেতে চায় টেস্টিস।
দোকান থেকে টিস্যুতে মুখ মুছতে মুছতে বের হয় লোকটা- গোলগাল মাংসল মুখ, বড়োবাজারের রাশ করে রাখা এক একটা বেরেলের মতো ভুঁড়ি- ইস্পাতকালো রঙ- ভারিক্কি ভাব চলনে; য্যানো দুনিয়ারে থোরাই কেয়ার করি টাইপ- দেখেই সমীহ হয় বাদশার। লোকটা হাতের তিন আঙুলে দলা পাকিয়ে মাংসের কড়া ঝাল মশলা লাগা গোলাপী-হলুদ টিস্যুটা ছুঁড়ে দেয় ফুটপাতে, নাদান-নোংরা বাচ্চাটা তুলে নেয়- যেন শুঁকে দ্যাখে- মুখে পুড়ে দিতে চায়।
- এই খালি, রিকশা ঘুরা।
- জ্বে, স্যার। গোলামের ভঙিতে সোজা হয়ে দাঁড়ায় বাদশা।
“মন্ত্রী আজ তার গাড়িবহর ও লেজলেজুরসমেত বাহির হইয়াছেন, সাধারনের জন্যে সদর রাস্তা সুলব্ধ নহে।”
এ কোনো নতুন বা বিশেষ অঘটন নয়- শহরবাসী নিয়তপরিচিত চিত্র। শহর জটমুক্ত করতে আম-যানবাহনের জন্য শহরের পেটের মধ্যেকার অলিগলি, ছোটোখাটো নাদান রাস্তাগুলো নির্দেশ করছেন দ্বায়িত্ববান ট্রাফিক পুলিশ- সেগুলোতে তাই রীতির বাইরে গিয়ে জটলা লেগে আছে- যেন এই জ্যাম ছাড়বে না কোনোদিন- শ্রেণীসংগ্রামের, সংঘাতের ও পরিবর্তনের ধীরচল গতির মতোন তারাও মৃদুচলিষ্ণু। দুনিয়ার বড় রাস্তাগুলোতেও বড় মানুষগুলোর একচেটিয়া দখলদারিত্ব। অপেক্ষার রোদে ঘেমে উঠছেন প্যাসেঞ্জার- বাদশা বারবার ঘুরে পিঠ বরাবর প্যাসেঞ্জারকে দেখছে- সমীহ করার মতো লোক, তোয়াজ করতে চায়।
- বোঝলেন ভাই, সবগুলান মাগীর দালাল। ভোট আইলেই দেখবেন এসি’ত্বন বাইরায়।
উত্তর করে না লোকটা। তবে বাদশার মনে হয় একটু যেন সম্মতিসূচিক হু করেছে। বাদশা বলে যায়- “তহন বস্তিতে আহে, নতুন ধবধবা পাঞ্জাবী পিন্দে। ভোটের পর আবার কাতার তলে হান্দে- আর পুলিশগুলানসব সরকারি দালাল, জুতা চাডে হালার পুতেরা। এই তো হেইবার”... বলে চলে বাদশা।
২.
গিলাতলা; পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ঘামে ভেজা শার্টের কলার দিয়ে কান চুলকাচ্ছে বাদশা। তার বেরেল ভুঁড়িওয়ালা প্যাসেঞ্জার ভেতরে গ্যাছে অনেকক্ষন, ভাড়া দিয়ে যায়নি- হয়তো ফিরবে, কখন বেরোবে জিজ্ঞেস করতেও সাহস করেনি। পার্টি অফিস দেখেই কথা বন্ধ হয়ে গেছিলো- যেন মূহুর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজতে শুরু করেছিলো বুকের খাঁচার দেয়লে, কুয়াশার ভোরের মতোন চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসে, নিউক্লিয়ার উইন্টারের শীতল স্রোত বয়ে যায় দাঁড়ার ক্রমশ নেমে যাওয়া পথে। আবারো, কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো মনে করে একটা ঢোক গেলে সে।
অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে একটা বোতাম খুলে বুকে থুক দেয়- দুয়া এ ইউনুস পড়ে- শেষকালে পার্টি অফিসের ভেতরে ঢুকে পড়ে।
লোকটা বড় টেবিলের ওপারের সবচে বিলাসীন খানদানী হাতলওয়ালা চেয়ারটায় বসে আছে, আনোয়ার হোসেনের সিরাজীয় ভঙ্গিতে- চাপে গোলাকার ভুঁড়িটার বেড় কয়েক ইঞ্চি বেড়েছে বলে ঠাহর হয়। সামনে কতগুলো আনকোড়া অল্পবয়সী ছেলে-ছোঁকড়া, উজবুক-উশকো-খুশকো, পাড়ার মোড়ের গ্যারেজের সামনে আড্ডাবাজী হুল্লোড় করা ছেলেগুলোর কথা মনে পড়ে বাদশার- ওরা প্রায়ই টিটকিরি মারে ময়নাকে- কিছু বলতে পারে না- মাথা নিচু করে চলে যাওয়া কেঁচোর মতোন, মাটির সাথে মিশে যাওয়া লজ্জা, পৌরুষহীন ভীরু মনে হয় তখন- রাস্তার কালো পিচের সাথে মিশে যেতে চায়, একজন যেন কল্পনায় চুলার ভুষাকালি মুখে মেখে দেয়- শালা! এর চেয়ে ভালো ছিলো নেড়ী কুত্তার জন্ম- অন্তত লাথি খেয়ে ভক করে ওঠার মতোন সাহসটুক বুকে থাকে- গতরে গোশতের যৌলস থাকুক বা না ই।
সম্বিত ফেরে- পাড়ার গলি থেকে চিন্তার উজবুক পায়রা আবার পার্টি অফিসের ছাদের নিচে চলে আসে; বাদশা- এদিকে টিভি চলছে, হিন্দিগান- ডবকার চিকন কোমরের মেদহীন ঝমকার তালে তালে আড্ডা- ক্যারেমের টুকটাক টাকাটাকির শব্দ- হুল্লোড়- গালাগাল চৌদ্দগুষ্ঠীর কেউই বাদ যাচ্ছে না কারো।
নজরে আসতে একজন বলে ওঠে, “কিরে, কি চাই?”। ভিতরে ভিতরে ইউনুস নবীর আশ্চর্য উদ্ধারের দোয়া কপচায়, ঢোক গেলে বাদশা।
-ভাই ভাড়াডা, দ্যান নাই।
একটা বেশ ঢ্যাঙা, হাতে বালা পড়া, কমলা রঙ করা চুলওয়ালা ছেলে, বয়সেও তার কম- উঠে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় বাদশার বা’গালে, ক্যারামের টুকটাক থেমে যায়। সবাই ওইখেলা ছেড়ে এই খেলায় মজা পায়।
-বানচোত, সাহস কতো! ভাইয়ের কাছে ভাড়া চাইস! আবার, সেন্টারের নেতার দুর্নাম করোছ, হুনলাম। ফইন্নির পুত! ভাইয়ের দরাজ দিল বইল্লা কিছু কয় নাই। জান থাকতে ভাগ! আর যদি পার্টি অফিসের ধারে কাছে দেহি ঠ্যাং লইয়া যাইতে পারবি না। অহন কান ধইর্যা্ বাইরাবি। ধর কান, হালার পুত!
ধমকে কেঁপে ওঠে পা, বুকখানা একবার বিদ্রোহী হয়তে চায়- ওদিকে চাইতেই আবার কুকুরের জন্ম চায় সে-সেই পাড়ার মোড়, সেই হীনমন্যতায় মাটির সাথে মিশে যাওয়া- কান ধরে বেরিয়ে আসে, পেছন থেকে টিটকিরি শুনতে পায় বাদশা।
‘এর চাইতে ভালো ছিলো নেড়ী কুত্তার জন্ম- খোদা! তুই ক্যান কুত্তা করলিনা আমারে।’
“সবগুলান মাগীর পুত! ভাড়া দিবো না, ক্যান রিক্সা কি তর মায়ের দালালির ট্যাকায় কেনা?” রিকশা নিয়ে বাড়ির দিকে ফেরে আর বিড়বিড় করে বাদশা। মেটাল ওয়ার্কশপের ঠুং-ঠাং, রিকশার বেল, গাড়ির হর্ন আধেকটা কানে যায়, আধেকটা মগজের কুঠরীতে বাষ্প হয়ে উবে যায়। মনে মনে কতক অশ্লীল, কতক অরাজক ভাবনা– গজব করে সরকার, পুলিস, নেতা সবাইকে- খোদাও পার পায় না, বরং সবকিছুর দায়ভার তার ঘাড়েই চাপে। সমগ্র জাহানের বাদশার হয়ত ইনসান বাদশার কটুক্তি ও আস্পর্ধায় ধৈর্য্যের অচ্ছুৎ বাঁধভেঙে যায়। মুহুর্তের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে, চার্জার অটোর সাথে সংঘর্ষ-দুমড়ে ঝোলোশে স্পোক ছেতড়ে যায়। থুতনীটা গিয়ে লাল তরল সরীসৃপের মতো নামে। কিছুটা বা’হাতের তালুতে আর শার্টের হাতায় মুছে নেয়। অটোর সামনের গ্লাসটা ঝরঝর ঝরে যায়- ক্রিস্টালের দানার মতো রাস্তার সোডিয়াম আলোয় চিকচিক-চিকচিক করে। রিকশার সামনের চাকা ত্যাড়াব্যাঁকা- ভচকে গ্যাছে- অটোর চালক গায়ের সব জোর তালুতে এক করে একটা চড় কষায়- যেন চোয়ালটা সরে যায় বাদশার - মাথার ভেতর যেন কেউ হাতুড়ী দিয়ে টাকায়- কানের ভেতরকার পর্দায় চিঁইই-চিঁই করে একটা অসহ্য যন্ত্রনাকর শব্দ আসে। আর সয় না তার-বাদশা হাত মুঠো করে- সিনার জোর এক করে শক্ত একটা ঘুষি চালায় অটোয়ালার নাক বরাবর- গলগল করে বের হয় রক্ত, তাও লাল-গাঢ় লাল, কালচে না।
চিৎকার চেঁচামেচি লেগে যায়-হাল্লাক, পাশের অটোস্ট্যান্ড থেকে ছেলেপান দৌঁড়ে আসে- যেন ঝান্ডাতুলে- সময় লাগে না- লাথি-চড়-ঘুষি সববিশেষ ইনসানি বাদশার ওপর নাজিল হয়। হয়তো এক্ষনে বেয়াড়া ইনসানের শাস্তি কার্যকর করে জাহানের বাদশা স্বস্তিবোধ করেন।
৩.
রাত আড়াইটা - স্যাঁদলা পড়া হলুদ চাঁদ, বস্তা-বস্তা মেঘের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকে- ততোধিক স্যাঁদলা পড়া বস্তির গলিটায়। গলির শেষ মাথায় এসে দাঁড়ায় বাদশা। ঝুপড়ির ভেতরে ষাট ওয়াটের উজলা বালবখানা রাশি রাশি ফোটন উজলে দেয়, ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে সে আলো বাইরে এসে পড়ে।
দরজা খুলে ময়না চেঁচায়, “কি হইছে?” তখনো থুঁতনীতে শুকনো লালচে রক্তের মতো কিছু লেগে আছে- আসলে রক্ত না ভায়োডিনের ছোপছোপ দাগ, মাথায়-নাকে সাদা ব্যান্ডেজ।
- কি হইছে?, পুনশ্চ ময়না। জুয়া খেইলা মাইরপিট করছো?
কবাট ফাঁক করে বাইরে তাকায় ময়না, রিকশাটা দেখতে পায় না।
- রিসকা কই? কি হইছে? বেইচ্চা আইছো? না জুয়ার দিছো?
- চুপ যা কইলাম, ময়না । ফ্যাঁচফ্যাঁচ মারাইস না।
মাথার ভেতর তীক্ষ্ণ ব্যাথা টনটন করে আর রাগের গরম প্রচণ্ড আক্রোশে ছোটে প্রতিটা কোষ-কলা-গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে, পুরা পৃথিবীকে মোনাফেক আবালের আস্তানা মনে হয়- এই পুলিশ, নেতা, জনগন সর্বোপরি তাদের চালানেওয়ালা সব। পেটের ভেতর গরম গরম বোধ হয়- বমি উঠে আসে গলার দিকে- গিলে নেয়- গোত শব্দ করে। মন ভরে আসে একরাশ ঘেন্না- জীবনের প্রতি, দুনিয়ার প্রতি, মোনাফেক খোদার বিচারে; দাদার প্রতি, বাপের প্রতি, হাতের কাছের কচি ডগডগে ডগাছেঁড়া লাউয়ের মতো পেট ফুলিয়ে দাঁড়ানো ময়নার প্রতি- তার আলগা ব্লাউজ, অন্যভ্যস্ত শাড়ির ভেতর দিয়ে দেখা যায় লাল সায়া- বালবের নিলজ্জ আলো ফাঁক বুঝে ঢুকে পড়ে ক্লিভেজে; এখনো কিশোরী।
ময়না পরিস্থিতির আপেক্ষিক গুরুত্ব বুঝতে পারে না, পুনর্বার গলায় দ্বিগুন জোর নিয়ে চেঁচায়, “চুপ যামু! আমার বাপের কষ্টের ট্যাকায় কিনা রিসকা, তুই জুয়ায় উড়াইছস...”
এটুকু বলতে, চটাস শব্দে তুলতুলে কচি আনারের মতো গালে একখানা বসিয়ে দেয় বাদশা, পৃথিবীতে একমাত্র এই এক জায়গা, যেখানে বাদশা আদতে নিজের বাদশাহীপনা খুঁজে পায়- ফিরে পায় পুরুষত্ব, মানুষ হয়ে জন্মাবার স্বাধিকার ও যথেচ্ছাচারের সুযোগ- এইখানে, এইরাজ্যে সেই একমাত্র স্বৈরাচার শাসক।
ময়না চিৎকার থামায় না। “তুই আমারে আবার মারলি! হারামীর বাচ্চা! আমি কাইলই বাপের বাড়ি যামু, আমার বাপের রিসকা- ট্যাকা সব ফেরত দিবি, শুয়ারের বাচ্চা।”
কিছু বলে না বাদশা- মাথা টনটন করে– দরজার খিলটা আটকে দেয়- তারপর দ্বিগুন জোরে ময়নার চিৎকার আর কান্নার শব্দ শোনা যায়।
“পোয়াতি হবার পর য্যান মাগীর শইলে গোশত কইম্মা শক্ত হইয়া গ্যাছে- পিডাইয়াও হাতে ব্যাতা লাগে, নটী মাগী!”
গল্পটা ভাল্লাগসে
উত্তরমুছুন