.header-button .inner > span { font-size: 18px !important; } .header-button .inner i.fa { font-size: 40px !important; } .comment-form-message { background-color: #f4f4f4 !important; font-size: 14px !important; }

প্রবন্ধ: জনের প্রিয় যে জন│আহমেদ মওদুদ

টিভি চ্যানেল বা দৈনিক পত্রিকাগুলোকে জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য প্রতিযোগিতায় নামতে হয়।কারণ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারলে বিজ্ঞাপন পেতে সুবিধা হয়। আর যত বিজ্ঞাপন ততো লাভ, ততোই সফল মিডিয়া ব্যবসায়ী। তো সফলতার মূলে যে জনপ্রিয়তা, তা কীভাবে অর্জন করে মিডিয়া? মূলত জন+প্রিয় বা জনগণের প্রিয় বা জনগণের চাওয়া+পাওয়া বা চাহিদার মানদণ্ড (মানহীন দণ্ডই মূলত) বুঝে মিডিয়াকে অনুষ্ঠান বা সংবাদ নির্মাণের কৌশল নির্ধারণ করতে হয়। এখন দেখতে হবে জনগণের চাওয়া - পাওয়ার মানদণ্ড কী ধরণের অর্থাৎ জনগণের চেতনার জায়গাটা সমৃদ্ধ না কি অনুর্বর। অবশ্য এক্ষেত্রে জনগণের বৃহদাংশের চেতনাকেই আমলে নিতে হবে, যেহেতু অধিকাংশের চাহিদার প্রতিফলনের ভিত্তিতেই জনপ্রিয়তার মাপকাঠি নির্ধারণ হয়। জনসংস্কৃতি যদি নিম্নমানের হয় তাহলে মিডিয়াকে নিম্নমানের অনুষ্ঠান সম্প্রচারের দিকে মনোযোগী হতে হয়। অন্যথায় জনপ্রিয়তা হারানোর সম্ভাবনা থেকে যায়। জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে গিয়ে নিম্নমানের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে করে মিডিয়া তার বাণিজ্যের স্বার্থে নিম্নগামী জনসংস্কৃতির ধারক জনগোষ্ঠীর রুচিকে আরো নিম্নগামী করে তোলে। অথচ মিডিয়ার দায়িত্ব হওয়া উচিৎ ছিল নিম্নগামী জনসংস্কৃতির  জনগণের চেতনা তৈরিতে কাজ করা। সংস্কৃতি বলতে একটা জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন আচারকেই কেবল বুঝায় না, বুঝায় অনাচারকেও।

নজরুল গীতি, লালন গীতির সাথে জনপ্রিয় কোন গীতের তুলনামূলক বিচারের মধ্য দিয়ে জাতীয় চেতনা নির্মাণের একটা উদাহরণ আমরা টানতে পারি। যেকোন জনপ্রিয় গানের তুলনায় নজরুল গীতি বা লালন গীতি নিতান্তই অজনপ্রিয়। বলা যায় গীতিকার নজরুল বা লালন জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে গানগুলো লেখেননি। তাঁরা মূলত গানের মধ্য দিয়ে তাঁদের উর্বর চিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। শ্রোতার চিন্তার জগতকে প্রসারিত করার চেষ্টা করেছেন, আলো ফেলেছেন। অন্যদিকে জনপ্রিয়তা প্রত্যাশিত একজন গীতিকারকে কেবলমাত্র অর্থের জন্য চটকদার সব গান রচনা করতে হয়, যা শ্রোতাকে সাময়িক বিনোদন দিলেও শ্রোতার হৃদয়ে দীর্ঘ মেয়াদী কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেনা। এখানে লক্ষনীয় যে, নজরুল বা লালনের গান জাতীর রুচি নির্মাণে কাজ করে আর জনপ্রিয়তা প্রত্যাশী গীতিকারের গানে প্রতিফলিত হয় চেতনাহীন জনগোষ্ঠীর অনুর্বর রুচি। স্মরণযোগ্য যে, একটা সময় পর্যন্ত লালন বা নজরুলের গানও গ্রহণ করার সক্ষমতা ছিল বাঙালির। কিন্ত পরবর্তীতে মানুষের ভাষা বা বোধের অগ্রগতি হয়নি বা সচেতনভাবেই হতে দেওয়া হয়নি। বলা যায়, যুগে যুগে জনপ্রিয়তার ধারা ধরে রাখতে গিয়ে বা ব্যবসায়িক স্বার্থে বাঙালি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীরা নিজেদেরকে বিকিয়ে দিয়েছেন অবলীলায় যা এখনো চলমান। অথচ শিল্পীরা নিজেদের উর্বর চিন্তার দ্বারা সমকালকে আলোড়িত করতে পারতেন। অবশ্য জনপ্রিয়তাকে সচেতনভাবেই প্রত্যাখ্যান করেছেন অনেকেই। এদের মধ্যে আহমদ শরীফ, কমলকুমার মজুমদার, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, উৎপলকুমার বসু, সুবিমল মিশ্র প্রমুখের কথা বলা যায়। জনপ্রিয়তার সহজ ধারায় না গিয়ে অর্থাৎ জনপ্রিয়তার হাতছানিকে প্রত্যাখান করে নিজেদের উর্বর চিন্তার ও দর্শনের দ্বারা সাহিত্য রচনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন উল্লেখিত কবি-সাহিত্যিকগণ, যা মূলত  একটা রুচিসম্মত সমাজ নির্মাণে ভূমিকা রেখে চলেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান বিরোধী কবি-সাহিত্যিকরা প্রায় সকলেই প্রতিষ্ঠানের লেজুড়বৃত্তিকে পরিহার করার পাশাপাশি পরিহার করেন জনপ্রিয়তার সহজ শর্তকে। ফলে অনেকটাই সাহিত্যকেন্দ্রিক লোভ লালসার ঘেরাটোপ থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রেখে নির্লিপ্তভাবে সাহিত্য সাধনায় ব্রতী হন।প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞাপন বিরোধী বা আত্মমর্যাদা সচেতন কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্য কর্মগুলো অনেকটা আড়ালেই থেকে যায়। ছাইচাপা আগুনের মতো নীরবে জ্বলতে থাকে এইসব সাহিতকর্ম। ফলে পাঠক একটু দেরিতে হলেও খোঁজ পেয়ে যান এসবের। অনেক ক্ষেত্রে অগ্রসর পাঠক নিজেই খুঁজে নেন তাঁর প্রত্যাশিত পাঠ্য।

জনপ্রিয়তা প্রত্যাশী কবি অর্থাৎ যিনি জনপ্রিয় হতে চান তাকে কবিতা লেখার সময় পাঠকের কথা অর্থাৎ জনগনের কথা অর্থাৎ ম্যাস পিপলের কথা ভাবতে হয়। মানে, টিভি চ্যানেল বা দৈনিক পত্রিকার মতো তাকেও একটি কর্মকৌশল (কবিতাকৌশল) নির্ধারণ করতে হয়। এরা তাদের মেধার পঞ্চাশ ভাগ কাজে লাগানোর সুযোগ পায় কবতা রচনায়।বাকী পঞ্চাশ ভাগে প্রতিফলিত করে পাঠকের চাহিদা। নিজের চিন্তাকে বিসর্জন দিতে বাধ্য হয় এরা। এদের পক্ষে বড় ক্যানভাসে কবিতাকে মূর্তায়ন করা বা কবিতায় সত্যকে হাজির করা বা সত্যের শিল্পায়ন সম্ভব হয়না বললেই চলে।এমনকি ব্যক্তি জীবন কী শিল্পী জীবন, কোথাও এদের পক্ষে অন্যায় বা অসত্যের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া সম্ভব হয়না। বাংলাদেশের কথা বললে বলতে হয়, এদেশের পঁচানব্বই ভাগ মানুষই দূর্নীতিবাজ। তো বাংলাদেশের জনপ্রিয়তা প্রত্যাশী কবিকে কমপক্ষে দেশের ষাট ভাগ মানুষের সমর্থন পেতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ষাট ভাগের মধ্যে সবাই যে জনপ্রিয় কবিটির কবিতার পাঠক তা কিন্তু মোটেও নয়। ষাট ভাগের মধ্যে বিশ ভাগ হয়তো ঐ কবির কবিতার পাঠক, বাকী চল্লিশ ভাগ পূর্বোক্ত বিশ ভাগের কাছ থেকে কবির সম্পর্কে জেনে ভক্ত হয়ে থাকেন অথবা কবির মতাদর্শের সাথে নিজের মতের মিল পেয়ে ঐক্য পোষণ করেন অর্থাৎ উল্লেখিত কবিকে সমর্থন দিয়ে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ শামসুর রাহমান এবং আল মাহমুদের কথা বলা যায়। কবিদ্বয় যতটা না পঠিত তার চেয়ে বেশি সমর্থিত এবং জনপ্রিয়। জনপ্রিয়তার কারণে এই কবিদের পক্ষে জাতীয় চেতনা নির্মানে অংশ নেওয়া সম্ভব হয়নি বা অন্যায়ের বিপক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন একটা প্রশ্ন হাজির হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে, কবিতার সাথে বা জনপ্রিয়তার সাথে ন্যায়-অন্যায়ের কী সম্পর্ক! সম্পর্ক তো খানিকটা আছেই। সত্য বলার অপরাধে ব্রুনোকে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছিল তখন রাজ্যের জনপ্রিয় রাজকবিটি সম্ভবত রাজার সাথে রাজ ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করেছিলো। জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়ে তার পক্ষে নিশ্চয় ম্যাস পিপলের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি অর্থাৎ সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি।

মন্তব্য

BLOGGER: 2
মন্তব্য করার পূর্বে মন্তব্যর নীতিমালা পাঠ করুন।

নাম

অনুবাদ,32,আত্মজীবনী,26,আর্ট-গ্যালারী,1,আলোকচিত্র,1,ই-বুক,7,উৎপলকুমার বসু,23,কবিতা,305,কবিতায় কুড়িগ্রাম,7,কর্মকাণ্ড,14,কার্ল মার্ক্স,1,গল্প,54,ছড়া,1,ছোটগল্প,12,জার্নাল,4,জীবনী,6,দশকথা,24,পাণ্ডুলিপি,10,পুনঃপ্রকাশ,14,পোয়েটিক ফিকশন,1,প্রতিবাদ,1,প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা,4,প্রবন্ধ,152,প্রিন্ট সংখ্যা,4,বর্ষা সংখ্যা,1,বসন্ত,15,বিক্রয়বিভাগ,21,বিবিধ,2,বিবৃতি,1,বিশেষ,23,বুলেটিন,4,বৈশাখ,1,ভাষা-সিরিজ,5,ভিডিও,1,মাসুমুল আলম,35,মুক্তগদ্য,36,মে দিবস,1,যুগপূর্তি,6,রিভিউ,5,লকডাউন,2,শাহেদ শাফায়েত,25,শিশুতোষ,1,সন্দীপ দত্ত,8,সম্পাদকীয়,16,সাক্ষাৎকার,21,সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ,18,সৈয়দ রিয়াজুর রশীদ,55,সৈয়দ সাখাওয়াৎ,33,স্মৃতিকথা,14,হেমন্ত,1,
ltr
item
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন: প্রবন্ধ: জনের প্রিয় যে জন│আহমেদ মওদুদ
প্রবন্ধ: জনের প্রিয় যে জন│আহমেদ মওদুদ
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxrOMYM-aheALhzGDlr84XOcqZ-Na-fyolTlHgFOIQe-bVlfzb9piilSLY7Rmbth682QJY_KPw0ZtBq69PZ2xNur3PRwY3CliWbDJCR8QT0c4jsOkEBRFrmh4fdV6TIRI-GrGvPXut8bY/s400/%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25A6-%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%2593%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25A6.png
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgxrOMYM-aheALhzGDlr84XOcqZ-Na-fyolTlHgFOIQe-bVlfzb9piilSLY7Rmbth682QJY_KPw0ZtBq69PZ2xNur3PRwY3CliWbDJCR8QT0c4jsOkEBRFrmh4fdV6TIRI-GrGvPXut8bY/s72-c/%25E0%25A6%2586%25E0%25A6%25B9%25E0%25A6%25AE%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25A6-%25E0%25A6%25AE%25E0%25A6%2593%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2581%25E0%25A6%25A6.png
বিন্দু | লিটল ম্যাগাজিন
https://www.bindumag.com/2020/04/blog-post_71.html
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/
https://www.bindumag.com/2020/04/blog-post_71.html
true
121332834233322352
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts আরো Readmore উত্তর Cancel reply মুছুন By নী PAGES POSTS আরো এই লেখাগুলিও পড়ুন... বিষয় ARCHIVE SEARCH সব লেখা কোন রচনায় খুঁজে পাওয়া গেল না নীড় Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share to a social network STEP 2: Click the link on your social network Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy