মহল্লার লোকেরা ঘরবন্দি থাকবার ফরমান মানে না, ফলে তারা গলিতে ঘুল্লি খায় আর আড্ডা মারে; ফলে একদিন পুলিশ সাদা পোশাকে বাইক নিয়ে এসে মোটা বেত দিয়ে পিটিয়ে সবার পাছা কালো করে দিয়ে যায়...ফলে পোলাপাইনেরা পাছা ডলতে ডলতে ঘোঁট পাকায় আর কয়...
- প্যান্ট খোল দেহি!
- ইহ্! প্যান্ট খুলবো ক্যা?
- দেখবো কেমন কালা হইসে!
- নিজেরটা দেহেন!
- দেখছি! তোরটা দেহি!
- আমি হাত দিয়া দেখছি ফুইলা উঠছে!
- আহা! দেহি না!
- নাহ! বাড়ি গিয়া আয়নায় নিজেরটা দেইখেন!
- বাড়ি যাওয়া লাগবে না, কায়দা কইরা দেখছি!
- কেম্নে ভাই?
- চিপায় গিয়া মোবাইলের ফ্লাস মাইরা ছবি তুইলা দেখছি!
- মেসেঞ্জারে পাঠান দিহি দেহি কেমুন কালা হইসে!
- চুপ হারামি!
- হে হে! তয় আপনে প্যান্ট খুইলা আমারে দেহাইলে আমিও দেখাইতে রাজি!
- ইচ্ছা করতেছিল পুলিশ গুলানরে ইট দিয়া ভোঁতা কইরা দি!
- হ দেখছি! পুলিশের সামনে তো মিউমিউ করলেন!
- চুপ!
- খালি পারেন আমাগোর লগে!
- চুপ হারামি!
- আপনের আব্বারে তো পুলিশ গাইল দিসে! হ্যায় নাকি পুলিশরে কইসে দেইখা নিবো!
- ঠিকই কইসে!
- কেম্নে দেখবেন ভাই?
- তুই চুপ যা হোলপাকা!
- চলেন ভাই মোড়ের দিক যাই!
- ক্যান?
- আর্মি আসছে নিকি! সবাইরে ঘরে যাইতে মাইকিং করতেছে!
- অ!
- চলেন যাই!
- ক্যান?
- আর্মি দেইখা আসি! কি মেশিন কান্ধে কইরা আনছে সেইগুলান দেইখা আসি!
- নাহ!
- ক্যান ভয় খাইছেন?
- লাত্থি খাবি হারামি!
- হি হি!
- রিলিফের চাইল ডাইল আসলে তোর গুষ্টির নাম কাইটা দিবো আব্বারে বইলা! আমার সাথে গোস্তাখি?
- সরি ভাই! মাফ কইরা দেন! ইয়ার্কিতে বুঝতে পারি নাই!
- ইয়ার্কি কার সাথে করস? ফকিন্নির বাচ্চা!
- বেশি বইলেন না, আল্লা খোদার নাম নেন! পুলিশের ঐ লাঠিতে করোনা ভাইরাস থাকলে ফকিন্নির পুত আর বড়লোকের পুত দুইজনেই শ্যাস!
- কি কস?
- হ ভাই! কিন্তু একটা জিনিস জানা দরকার করোনা ভাইরাস পাছা দিয়া প্রবেশ করতে পারে কিনা!
- তুই কি ইয়ার্কি মারতাছস নাকি সিরিয়াস?
- সিরিয়াস!
- তাইলে খোঁজ নেই ফোন দিয়া?
- নাহ থাক! সন্ধ্যায় নিয়েন!
- হু! বিড়ি ধরা! চল যাই মোড়ে আর্মি দেইখা আসি!
তারা দুইজন বিড়ি ভাগ করে খেতে খেতে মোড়ে গিয়ে আর্মির হাতে ধরা খায়, আর্মি তাদেরকে মুর্গি বানায়ে রাখে, ফলে মুর্গি অবস্থায় তাদের আলাপ...
- ভাই কেমুন লাগতেছে?
- চুপ হারামি! তোর জন্য ঘের খাইলাম!
- হি হি! আমার কিন্তু ভালোই লাগতেছে!
- চুপ!
- স্কুলের জীবনের কথা মনে হইতছে! স্যারেরা এমুন শাস্তি দিতো!
- তর কপালে বাটা আছে, মহল্লায় ফিরা নিই!
- আমারে বাটলে কিন্তু সবাইরে বইলা দিবো আপনারে আর্মি মুর্গি বানায় রাখছিল!
- আচ্ছা বাটা বাদ! তয় কথা কিন্তু সত্যি, আমারও স্কুল জীবনের কথা ইয়াদ আসতেছে! লাইন দিয়া মুর্গি বানায় থুইত স্যারেরা! আর জাউরা গুলান চান্স পাইলে হোলে খোঁচা দিতো! আহারে কি সুন্দর দিন ছিল!!!
০৭ এপ্রিল ২০২০
লীলাময়ী
দুধ বেঁচে সংসার চালানো নৃপেন আর লীলাময়ী ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে আছে মহামারীর এই দিনগুলোতে! লকডাউনে দুধ নিচ্ছে না কেউ! পৌঁছানো যাচ্ছে না কোথাও! মিষ্টির দোকান গুলোও বন্ধ! হাতের টাকাপয়সা শেষ হয়ে যাবার দুদিন পর যেদিন চাল বাড়ন্ত হয় সেদিনও না, তার পরদিন উপোষ থাকবার পর নৃপেন জামাটা গায়ে দেয়! গোয়াল ঘরের দিকে একবার তাকায় তারপর লীলাময়ীর ক্ষুধায় কাতর ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে বলে...
- গাভীন এট্টা বেইচে দিয়াসি লীলে? কসাইরা কেন্তেছে!
লীলাময়ী চুপ করে থাকে! শুধু চোখ বেয়ে একটা জলের ধারা নেমে আসে। নৃপেন আবার বলে...
- জানি গাভীন গুলো তোর মাইয়ের মতন! আমার কি কম? কিন্তু করবি কি? খাবি কি? সরকারের চাইল তো আমাগের হাত পর্যন্ত আসতিছে না! টাকা থাকলি তাউ বাজারেরথে কিনতি পারবানি কয়ডা চাইল! ন্যে গেলাম লাল গাইডা?
লীলাময়ী চুপ করে থাকে! শুধু যখন নৃপেন গাভীটার দড়ি ধরে বেরিয়ে যেতে যায় তখন ঘরের খুঁটিতে কপাল ঠুকে কেঁদে উঠে বলে...
- ভগবান তুমি নাই... তুমি নাই...!
১৩ এপ্রিল ২০২০
শংসাপত্র
এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাইতেছে যে, জনাব/জনাবা .............................., পিতা/মাতা....................., ঠিকানা..............., একজন সফল চালচোর। তিনি ২০২০ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া করোনা ভাইরাস তথা কোভিড-১৯ মহামারীকালে বাংলাদেশের অতি দরিদ্র মানুষদের ত্রাণের চাল দক্ষতার সহিত চুরি করতে সমর্থ হয়েছিলেন! মিডিয়ার চোখ ফাঁকি দিয়ে এবং অতিদরিদ্র জনগণকে ভয় দেখিয়ে তিনি তার রাক্ষুসে রাজনৈতিক আদর্শের নিপুণ পরিচয় দিয়েছিলেন!
আমরা তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করি!(?)
বাংলাদেশের জনগণ
১১ এপ্রিল ২০২০মৃত্যুদ্যূতের ভি আই পি জটিলতা!
একজন ভি আই পির জীবনাবসান করতে এসে মৃত্যুদ্যূত যখন চোখে চোখ রাখলেন ভি আই পির, সঙ্গে সঙ্গে তার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভি আই পি বলে উঠলেন...
- আমারে চিনোস্?
- আপনারে চিনা কাম কি আমার! আপনের টাইম শ্যাষ!
- ঘেটি ধইরা গুষ্টি সুদ্ধা রাস্তায় নামায় নিয়াসবো!
- আমার তো ভাই গুষ্টি নাই!
- চুপ! ক্রস ফায়ারে দেবো তোরে হারামজাদা!
- কি ফায়ারে?
- গুলি কইরা খুন করায় দিবো গান্ডুরবাচ্চা!
- ও আচ্ছা! কিন্তু সেই সময় তো নাই!
- আমি কোন বংশের মাল সেইটা জানোস?
- জি! স্লিপে বিস্তারিত আছে! হেভি মাল আপ্নে!
- তাইলে এইখানে আসলি কোন সাহসে?
- কোম্পানির হুকুমে!
- কোম্পানি? বাইঞ্চোদ এই দেশের সকল কোম্পানি আমার মামা চাচা! কোনটার ফোন লাগবে ক?
- আপনেরা ভাই বেশি হ্যাজান! শুনছি শিঙ মাথায় গজায়, আপ্নেগোর দেহি পোঙ্গায় শিঙ!
- মানে? পশু মন্ত্রীরে ফোন দিতে হবে?
- আরে বাল না! কথা বোঝার আগে ফোনাফুনি বুঝেন ক্যান?
- সিস্টেম! এইটাই সিস্টেম!
- আপ্নেরা ভাই মানুষ না মাল! বাঁচার জন্য এতো কাউতালি মানুষ করে না!
- তাইলে বোঝ, কোম্পানিও আমগোরে ভয় খায়! আরে চ্যাটের কোম্পানি তো আমরা পয়দা করি! সিল মাইরা জিতায় আনি!
- কোম্পানি কারো না ভাই! কোম্পানি নিজে একটা খেলা! একটা ষড়যন্ত্র! আপ্নেরা তার বাল!
- মানে?
- টাইম নাই! আমার হাতের লিস্ট লম্বা! তার কাইটা দিয়া বিদায় নিবো আমি!
- কতো টাকা দিলে ম্যানেজ হবি?
- আপনের হাতে সময় আছে আর বিশ সেকেন্ড!
- ভাই রে পায়ে ধরি আমারে ছাড়!
- আমি হুকুরের গোলাম! সামান্য তারকাটা কর্মচারী!
- একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস করি?
- বলেন!
- মরার পর আমরা ভি আই পি সুবিধা পাবো তো?
মৃত্যুদ্যূত হেসে ফেলে!
২৩ এপ্রিল ২০২০
দুঃস্বপ্ন
বস্তিতে এক ট্রাক ত্রাণের চাল হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে! ক্ষুধার্ত বস্তিবাসী ক্ষেপে গিয়ে ঘিরে ধরে ট্রাকটা, আরেকটু হলেই তাদের ঘরের বেড়া ভেঙে চাপা দিতো! ড্রাইভারকে বস্তিবাসীরা জিজ্ঞাস করে...
- আচোদা লোক নাকি? আরেকটু হইলে তো গেছিলাম আমরা!
- মরেন তো নাই! আমি সামছু ড্রাইভার! হেল্পারেরা কয় কোপা সামছু ওস্তাদ! আমি ট্রাক চালাই না উড়াই!
- রাখেন মিয়া! সামছু চোদার টাইম নাই! পেটে খিদা!
- এই তো লাইনে আইছেন! নেন! বস্তা গুলান নামায় নেন!
- বস্তায় কি?
- খুইলা দেহেন!
- নাহ! বস্তা খুলবো আর চোর বইলা ফাঁসায় দিবেন! এইগুলান নির্ঘাত চুরির চাইল, আমাগোর কান্ধে সাঁটায় দিতে আনছেন!
- নারে ভাই! খুইলাই দেখেন ভিত্রে মানুষ আছে! চাইল নাই!
- মানুষ দিয়া করবো কি আমরা? মানুষ কি খাওয়া যায়?
- হে হে! দামি কথা! কিন্তু না খুললে তো বুঝবেন না! দেখেন না কি মাল নিয়াসছি! পাইলে খুশি হবেন! আমি আপ্নাগোরই লোক!
বস্তিবাসীরা দ্বিধায় পরে যায়! তাদের মধ্যে একজন অতি সাহসী ট্রাকে উঠে যায়! একটা বস্তার সেলাই করা মুখ খুলেই চিৎকার দিয়ে বস্তাটা নিচে ফেলে দেয়! বস্তায় বন্দি একজন চাল চোর! সবাই দেখে হাতপা গুড়ো করে থ্যাঁতলানো একজন চাল চোর কাৎরাচ্ছে! ড্রাইভার সামছু তার পান খাওয়া লাল মুখ খুলে বলে...
- নেন বস্তা গুলান নামায় নেন! সব গুলাতে চাইল চোর আছে! রান্না কইরা খায়া ফেলান!
বস্তিবাসী খিঁচ মেরে যায়! তারা ভাবে ড্রাইভার লোকটা রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতিয়ার এবং এটা নির্ঘাত কোন খেলা! তারা জলদি দুঃস্বপ্ন ভেঙে জেগে ওঠে এবং টের পায় ঘরে চাল নেই, কোথাও কোন চালচোর ভর্তি ট্রাক আসে নাই!
১২ এপ্রিল ২০২০
ঘিঞ্জি
জেনেভা ক্যাম্পের ঘিঞ্জি জীবনে লগডাউন আসে। পুলিশ প্রতি বিকালে মাইকিং করে যায়! জহুরা বিবি তার একমাত্র লন্ডা জুম্মানকে বলে...
- কাঁহাঁ যা রাহাহে তুঁ? ছুনা নেহি? বাহার আর্মি খাড়ি হ্যাঁয়! বিমারকি দিনমে তুঁ ঘারছে বাহার নেহি নিক্লেগি খোদা কছম!
জুম্মান ভীষণ দ্বিধা নিয়ে তাকায় মায়ের মুখের দিকে! বারান্দার চকিতে শুয়ে অসুস্থ বাপ, দরজার বাইরে টুলে ঝিমোয় খুনখুনে দাদা! পানের দোকানটা কিছুক্ষণের জন্য না খুললে খাবে কি? খুব শান্ত সুরে সে মাকে বলে...
- কারোনা হুঁয়া তো গায়া, অর নেহি হুয়া তো ভি হাম গায়া; খাওগী কিয়া আম্মা?
জহুরা বিবি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে বুক চাপড়ে!
জুয়া
মেসেঞ্জারে জুয়ারিদের একটা গ্রুপের নাম মৃত্যুজুয়া! এরা সবাই ক্রিকেট নিয়ে বাজি ধরত! এখন প্রতিদিন দেশে মারা যাওয়া লোকের সংখ্যার উপর বাজি ধরে! লেনদেন হয় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে! তাদের একদিনের চ্যাটলগ...
- আগামীকাল কজন মারা যাবে করোনায়? বাজি লাগান! ৫০০০/- এর নিচে কেউ ধরবেন না!
- ৭ জন, ১০০০০/-
- ৬ জন, ৬০০০/-
- ৯ জন, ১০০০০/-
- ৩ জন, ২০০০০/-
- ১২ জন, ১০০০০/-
- ১০ জন, ৫০০০/-
- ১৫ জন, ৫০০০/-
- ১৩ জন, ২০০০০/-
- ১১ জন, ৫০০০০/-
- ১১ জন, ১০০০০/-
- ৪ জন, ৫০০০০/-
এদের মধ্যে একজন অন্য একজনকে ইনবক্স করে...
- দোস্ত কিছু টাকা ধার দিতে পারবি?
- ক্যা?
- পুরা বোট জিতে যাবো! ৬০/৪০% রাজি?
- কাহিনী কি?
- আমার কাছে পাক্কা খবর আছে আগামীকাল কতজনের মৃত্যু ঘোষণা আসবে!
১৩ এপ্রিল ২০২০
মন্তব্য