মানুষ ও গাছ
যদি গাছেদের মতো হওয়া যেতো নিষ্পাপ ও নিশ্চুপ, রোদ খেয়ে খেয়ে বাঁচা যেতো- কি নিরব এইসব দাঁড়িয়ে থাকা! অহেতুক এইসব বাড়াবাড়ি ক্ষুধা, সঙ্গম, বৈরিতা ভুলে হাত মেলে গাছেদের সাথে আমি অভ্যাস করি গাছ হওয়ার। ক্রমাগত ভাবি- মাঝেমাঝে ডাক দিয়ে যায় পাকস্থলী- মনে পড়ে সকালের খাওয়া দুপুরে টেসে নিতে হবে, মনে পড়ে ছেলের শার্ট স্ত্রী করতে গিয়ে হাত পুড়েছেন গিন্নি- ডাক্তার লিখেছেন বার্নল। মনে পড়ে পাড়ার মোড়ে মেয়েটাকে বিরক্ত করা বখাটেগুলো- আর কতোদিন যাওয়া হয়নি মিলির ঘরে-চামার পাড়ায়।
আমার ভাবনার মধ্যে সিটি মেরে বিরক্ত করে চলে আসে অফিসের বাস- চড়ে বসি- এইজন্মে আর গাছ হওয়া হলো না।
আমি মৃত্যু এবং মৃত্যু আমার-ধর্মাবতার!
ঠান্ডা!
পৃথিবীর পথে আজ বড়সড় ঠান্ডা, আমারও লাগে, তবে আমি চিৎকার করি না, দাবী করি না কম্বল অথবা গরম কাপড়-
কেননা আমার কোনো দাবী নেই, থাকতে নেই। আদেশ করুন শাসক পড়ে থাকতে পারি মর্গের ফ্রিজে।
ঠান্ডা লাগে, বড়ো ঠান্ডা লাগে! তবু আমার কোনো দাবীদাওয়া নেই।
যখন
লাশের ময়নাতদন্তে দেরি হয় (রুমের এসি নষ্ট বলে), লাশগুলো ফুলে-ফেঁপে ওঠে, দেখে আনন্দ হয়, মনে হয় দেশ থেকে উবে গ্যাছে ক্ষুধা এবং দারিদ্র; ন্যাপথা'র মতো। লাশগুলো দিয়ে দুর্গন্ধ আসে; পচা-গলা বিকৃত মুখ, বাসি মাংস, ফরেনসিক দপ্তর ভোগে সাফোকেশনে- কখন দুর্গন্ধে ডুবে যায় গোটা শহর?
আমি ক্ষুধার্ত! প্রভু,
ক্ষাবার( ক্ষুধা ও খাবার পাশাপাশি বলে) দেখলে চিৎকার করে আমার হৃদপিন্ড, গদ-গদ শব্দে ঢেকুর তোলে পাকযন্ত্র, জিভে অনাবশ্যক শেষফোঁটায় চলে আসে জল- প্রতিবর্ত, চিন্তাপ্রণালী ঘোরাঘুরি করে, খাবারের গন্ধে পেট ফুলে আসে ।
তবু হে ধর্মাবতার!
আমি খাবার চাই না। আমি চাই না খাবার হিসেবে আসুক- লকলকে শাহী কাবাব সাথে কোনাক ব্র্যান্ডি,
আমি চাই না খাবার হয়ে পেটে চলে আসুক খাদ্যমন্ত্রীর গুদামঘরের চাবী। আমি চাইনা উঁচুউঁচু রেস্তোরা নিচু হয়ে আমার সামনে তুলে ধরুক ভোজনসম্ভার।
কেননা,আমার কোনো দাবী নেই, থাকতেও নেই!
বড্ড বৃষ্টি হয়েছে কাল, বানের জলে ভেসে গ্যাছে শেষ ঘরখানা মতান্তরে ঝুপরি,
হে ত্রাণকর্তা!
আমি তবুও বলছি আমার চাই না ঘর, আমি চাই না মাল্টিস্টোরেডের বাসিন্দা হয়ে মাল্টিপারপাস শপে শপিং করতে, চাইনা বেলক্যানি থেকে তাকিয়ে গোটা শহর দেখতে, হাতে কফিকাপ নিয়ে চুমুক দিয়ে আমি বলব না,
“ইস! আজ বড্ড কুয়াশা”।
আলুর গুদামে আগুন লাগে, বান আসে চালের আড়তে, ক্ষমতাসীনরা আলুপোড়া দিন, আমি ভাগ চাই না।
আমি দেখি লোকচক্ষুর আড়ালে তাদের দেয়া হয় বরমাল্য, আমি চিৎকার করি না, প্রতিবাদ করি না গলা ছেড়ে;
কেননা আমার দাবী নেই।
আমি শুধু চাই সরল ও সাবলীল মৃত্যু,
যেখানে কোনো আড়ম্বর নেই, সেনাপ্রধানের শ্রদ্ধাঞ্জলী নেই, প্রধানমন্ত্রী কিংবা রাষ্ট্রপতির বিশেষ শোকবার্তার আমার দরকার নেই। আমি চাই না শেষকৃত্যে ঢল নামুক মানুষের এবং কফিনের সাথেসাথে চলুক গাড়িবহর,
আমি চাই না ঘামেভেজা শ্রমিকের কষ্টার্জিত অর্থে ফুলেল হোক সমাধি,
-আমি মৃত্যু এবং মৃত্যু আমার হোক, ধর্মাবতার
মন্তব্য