পাখিদের বর্ণমালা
সংক্ষেপে বলি, যদিও আজকাল বলার জোর
কমে গেছে। গলার জোর তো কখনোই ছিলো না। শুধু মনে হয় আমি বোধয় অলস খড়গোসের ন্যায় পরিণতিহীন
জীবনের শেষ দিনগুলি বয়ে বেড়াচ্ছি খামোখা । সত্য যে, বহুদিন বাদে লিখতে বসে আবিষ্কার
করলাম আঙুলের অন্ধত্ব। পুরোটা শীতকাল শুকনো কাঠ আর ঝরে পড়া পাতার বদলে লিখতে না পারার
যন্ত্রণাগুলো জ্বালিয়ে জ্বালিয়ে দূর করেছি একাকীত্ব আর ভূতের ভয়।
*
অপচয় জেনেও সারা গা'য়ে বিষন্নতার বিষ
মেখে, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি যে কবি অপেক্ষা করতো নিজের জন্য আর জরিপ করতো নানারকম
জখমের, স্বপ্নে আজ তাঁর দেখা পেয়েছি পানশালায়। কে যে কাকে জ্বালায় উপেক্ষার আগুনে!
আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষের মধ্যে কারা কারা আকাশের তারা গুনে গুনে, কোথায়-কীভাবে হারাবে
এই বসন্তে? একা একটা টেবিলে বসে তিনি লিখে চলেছে প্রত্যেকের নাম।
*
চতুর ছদ্মবেশে আমি তার কাছে ঘেষে দেখতে
লাগলাম, আমার নামটি লিখা আছে কীনা। কিন্তু হায় আমি তো পাখিদের বর্ণমালা জানিনা। তাই,
পুরোনো ঠিকানায় ফেরার জন্য ধুলোমাখা, ব্যর্থ ও ক্লান্ত পা জোড়া বাড়ালাম। আর অমনি একেকটা
দীর্ঘশ্বাস চতুর্দিক থেকে চমৎকার ভঙ্গিমায় সাপের মতো ফণা তুলে ধীরে ধীরে ঘিরে ফেলেছে
আমাকে।
আমার চোখের জল, তুমি তো জানো আমি কোন
পাপ করিনি। মৃত্যু ভয়ে না, ছোবলের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাবার আশায় না, স্বপ্নে দেখা
সেই কবি ও লিপিকারের কাছে পাখিদের বর্ণমালা আত্মস্থ করার লোভে আমি আমার শেষ অশ্রুবিন্দুটুকু
রাখলাম সাপেদের সামনে। 'বোকা ছেলে, জোরে জোরে ঈশ্বরের নাম নে', কোত্থেকে যেনো মা এসে
এইকথা বলে গেলো। সময় ফুরিয়ে এলো প্রায়। উৎকন্ঠায় বারবার থুতু গিলতে গিলতে নিজের জিহ্বাটাও
চিবিয়ে খেয়েছি আজ।
*
বাঁচাও! বাঁচাও! ...
কিন্তু কেউ এলো না। ঈশ্বরের অসুখ,
সেও এলো না। বেশ তো, সকলেই যে যার আগুন নেভাতে ব্যস্ত। অবশেষে আমাকে যে বাঁচাতে এসেছে,
প্রতিধ্বনিত হয়ে যে আমাকে বাঁচাতে এলো সে তো আমার-ই কন্ঠ থেকে নির্গত চিৎকার, এ তো
আমার ই আর্তনাদ যা আমি ছুড়ে দিয়েছি শূন্যে এইমাত্র:
"বাঁচাও! কে কোথায় আছো? আমাকে
বাঁচাও!"
মিথ্যে
এ কথা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ নেই যে,
ছাপ্পান্নজন নারীর স্তনে হাত রেখে
জিজ্ঞেস করেছিলাম -
"শেখ মুজিব কী চাইতেন। গণতন্ত্র
না সমাজতন্ত্র?"
ওরা প্রতিউত্তর করেছিলো-
"ধ্যাৎ! তুমি মোটেও রোমান্টিক
নও।"
সত্য
অন্তর্বাসহীন দেবদারু গাছের নিচে রোজ
রবিবার
জুম্মা বাড়ির ইমাম সাহেব বাবাকে দেখতে
পেলেই বলেন ,
"মফিজ মিয়া তোমার ছেলেকে তো মসজিদে
দেখিনা একদিনো
কিন্তু টানবাজারে প্রতিদিনই দেখি
"।
বাবা বলেন " আপনার মতো মিথ্যেবাদীর
পেছনে সেজদা দেয়ার চেয়ে টানবাবাজার ই ভালো ।
কই আমি তো কোনদিন আমার ছেলেকে দেখিনি
"।
সত্য মিথ্যে
কাগজে খবর বেরুলো "থানচির তিন্দু
ও রেমাক্রি ইউনিয়নে খাদ্যাভাব "
বিএনপি বলছে এর জন্য "আওয়ামীলীগ
সরকার" দায়ী , সরকার বলছে "জামাত শিবির" ।
কমিউনিস্টরা বলছে , " পুজিতন্ত্রের
ভয়াল থাবায় আহত হচ্ছে থানচির জনগন "
সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বলছেন
"এর জন্য এমেরিকা দায়ী" ।
এনজিও ,সুশীল সমাজ ত্রাণ সংগ্রহে ব্যাস্ত
। মিডিয়া কাভারেজ চলছে দেদারসে ।
ত্রাণ কমিটি ৮০০ পরিবারের তালিকা লিপিবদ্ধ
করেছে ।
যাক লুটপাট এবার খারাপ হবে না ।
আমি সমুদ্র গুপ্তের কবিতা পড়ছি -
"তোমার দুধের বাটিতে আমি বেড়ালের
সাদা লোম মিশিয়ে দেবো
চোখে ফুঁক দেবো ,ঢুকিয়ে দেবো ভুরু,
পায়ের তালুতে গুল লাগিয়ে পিঁপড়া
লেলিয়ে দেবো...।। "
মিথ্যে সত্য
মাথা গুল গুল করছে , ভো ভো করছে
ভন ভন করছে চারপাশ
হাতের আঙ্গুল থেকে বেরিয়ে আসছে রাক্ষসগুলো-
এরা কারা ? থানচির ক্ষুধার্ত লোকজন ?
আমাকে গ্রাস করছে , হাড় মাংশ ছিবলে
খাচ্ছে
আবার ,
আমার ই ভেতর ঘুমিয়ে পড়ছে ।
আর ......
আ প না রা,
হ্যাঁ আপনারা
দ্বিধান্বিত গন্ডমূর্খ মাতাল- পোয়েট্রিও
বুঝেন না পোভার্টিও বুঝেন না ।
গন্ডমূর্খ মাতাল
একটি কুকুরের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম।
ফিরতি পথে কুকুরটি বললো- "যেদিক দিয়ে এসেছিস ওইদিক দিয়েই ঢুকিয়ে দেবো, শালা মাদারচোদ
ভদ্রতা শিখিস নি? "
জুম্মাবার! দুপুরে খেতে বসেছি। মা,
ভাতের থালায় প্রথমে করলা ভাজি পরে একে একে লালশাক, ছোটমাছ আর শিং মাছ তুলে দিলো। বাবা,
খাবার মধ্যেই বলে উঠলেন - "হিমেল! ইউ আর মাই লস প্রজেক্ট।" মাখানো লঙ্কা
থেকে হলুদ মরিচ পেঁয়াজ সব আলাদা হয়ে যাচ্ছে। শিং মাছটিকে মনে হচ্ছিলো মায়ের প্রথম প্রেমিক।
বাবার সাবেক প্রেমিকাকে দেখে সন্তানেরা রোমাঞ্চিত বোধ করে কিন্তু বোন আর মায়ের প্রেমিককে
কখনোই মেনে নিতে পারেনা। মিডিলক্লাস সেন্টিমেন্ট এমন ই।
গোটা ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার
কথা আপনারা সকলেই জানেন । অথচ, ফ্যামিলি মেনে না নিলেও সুবিমল-মুনিয়ার প্রেম আজ আট
বছরে দাঁড়ালো। এই খবরটি একমাত্র আমিই জানি।
এদেশের লিটল ম্যাগওয়ালারা মাদারফাকার।
এরা আমার কবিতা ছাপায়। সুচিপত্রে লিখে "সাধারণ শিক্ষার্থী "। ইচ্ছে করে শার্টের
কলার চেপে ধরে বলি "কবিতা কি গরুর পোঁদ দিয়ে বেরোয়? ইউ হ্যাভ টু নো দ্যাট সাধারণ
শিক্ষার্থী'রা কবিতা লিখতে জানেনা।"
লেইট অটামে প্রেমিকারা
মাতৃভাষায় কাঁদে আর বলে, " আমাদের সময়গুলো দুর্দান্ত ছিলো, আমি কখনোই তোমাকে ভুলতে
পারবনা। কিন্তু আমাদের পরিবার এই সম্পর্ক মেনে নেবে না"। আমিও প্রেয়সীর মুঠোবার্তা
পেলাম। সে লিখেছে- "এভ্রিথিং ইজ ওভার, ডোন্ট টেল মি বাবুনি"। আজকাল বাংলা
ভাষায় আমাদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। বিচ্ছেদের সময় আমরা ইংরেজী বাক্য ব্যবহার করি। বিদায়কে
আধুনিকায়ন করতেই বোধহয় এমনটা ঘটছে।
হিমেল দা লাভ ইউ
উত্তরমুছুন