কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।
রাত গভীর হলে আমাদের এই প্রচলিত ভূপৃষ্ঠ থেকে
ঘুমন্ত কুড়িগ্রাম ধীরে ধীরে আলগা হয়ে যায়।
অগ্রাহ্য করে সকল মাধ্যাকর্ষণ।
তারপর তার ছোট রাজ্যপাট নিয়ে উড়ে উড়ে
চলে যায় দূর শূন্যলোকে।
আমরা তখন দেখি বসে বসে আকাশ কত-না নীল
ছোট গ্রাম আরো ছোট হয়ে যায় আকাশের মুখে তিল।
অনেকক্ষণ একা-একা ভাসে নিখিল নভোভারতের রাজ্যে রাজ্যে।
দক্ষিণ আকাশে ওই যে একনিষ্ঠ তারাটি,
একসময় কুড়িগ্রাম তার পাশে গিয়ে চিহ্নিত করে তার অবস্থান।
তখন নতুন এই জ্যোতিষ্কের দেহ থেকে মৃদু-মৃদু লালবাষ্প-ঘ্রাণ ভেসে আসে।
সেই দেশে, কুড়িগ্রামে, ওরা মাছরাঙা আর পানকৌড়ি দুই বৈমাত্রেয় ভাই
কুড়িগ্রামের সব নদী শান্ত হয়ে এলে
দুই ভাই নদীবুকে বাসা বাঁধে
স্ত্রীপুত্রকন্যাসহ তারা কলহ করে।
নদী শান্ত হয়ে এলে
শাস্ত্রবাক্যে বাঁধা যত গৃহনারী
প্রাচীর ডিঙিয়ে এসে নদীকূলে করে ভিড়
প্রকাণ্ড স্ফটিকের মতো তারা সপ্রতিভ হয়।
হঠাৎ বয়নসূত্র ভুলে যাওয়া এক নিঃসঙ্গ বাবুই
ঝড়াহত এক প্রাচীন মাস্তুলে ব’সে
দুলতে দুলতে আসে ওই স্বচ্ছ ইস্পাত-পাতের নদীজলে।
কুড়িগ্রাম, আহা কুড়িগ্রাম!
পৃথিবীর যে জায়গাটিতে কুড়িগ্রাম থাকে
এখন সেখানে নিঃস্ব কালো গহ্বর।
কোনোদিন আমি যাইনি কুড়িগ্রাম।
আহা, এ-মরজীবন!
কোনোদিন যাওয়া হবে কি কুড়িগ্রাম?
[কবিতাটি কবি মাসুদ খানের ‘পাখিতীর্থদিনে’ কাব্য থেকে প্রকাশ করা হলো।]
মন্তব্য