পার্বতী বাউল ও সাকিনসন্ধানী
হেমন্তের স্বাদু রাদে জটবাঁধা চুলে পার্বতী বাউল যখন গুজরা গ্রামে একতারায় টোকা দিলেন, তখন অতিথি পাখিরা কিচিরমিচির শুরু করে দিলো; সাধনার ঘোর ভাঙায় কোন সুর!
ঘরের ভেতর ঘর খুঁজে খুঁজে পিতৃপুরুষের ভিটেয় জনমের উপাখ্যান জেনে নিই। উত্তরে কাছারি, পশ্চিমে পারিয়াল পুকুর আর শহিদরজার সামনে সেগুন কাঠের গেইট; সবই মায়ের মুখে শোনা রূপকথার সিরিজ। দেখা-অদেখার মাঝে সময়ের বয়স মেলাই; লালিত তাড়না নিয়ে প্রান্ত থেকে সীমান্ত; মায়াগল্পের ভিড় ঠেলে পুকুরের পাড়ে বসে উদাসী গলায় গুনগুন গান তোলে নিজের অজান্তে; শেকড় গভীরে ব্যাপ্ত নাড়ীর দৈর্ঘ্য মাপে ব্যস্ত চোখ ও মন যেন দূর্বাঘাসের ডগায় পুলকিত শিশির।
নাম ছেড়েছি, পালতোলা নৌকার মতো বাতাসের তাড়ায় দিক পরিবর্তন করেছি, গুরুর পরশে রূপান্তরিত বাউল; গেরুয়া বসনে ঘুরে ঘুরে গান করি দেশে দেশে; সন্ধান করি অদেখা মিস্ত্রির মন্তর। এতদিন গানে আনন্দে ভেসেছি, কখনো চোখের জলে ভিজিনি; তবে কেন আজ অশ্রুজলে ভিজে যায় পিতৃপুরুষের ভিটে? স্মৃতির তরঙ্গ ঢেউ শীতল পুকুরে... চারদিকে উলুধ্বনি, শাঁখের শব্দে গভীর জঠরে খুঁজি প্রিয় মুখ, স্মৃতির আকর আর বাহিত নিঃশ্বাস। নাড়ার আগুনে তাপ দিই নাড়ীর; আঁজলার কোনায় বাঁধা মোয়ার ঘ্রাণে বাপ-দাদার ধানগোলার অতিপ্রাকৃত গল্প গ্রামের পথে পথে জমা এবং তা শীতলপাটির পরশে জীবন্ত জবানি!
ভাগের ফাঁকে ফাঁকে তলানি হয়েছে জন্মদাগ, মিলনে বাঁধা দেয় ছাড়পত্র, পথে যেতে যেতে বাঁক, দেখা হবে কিনা তাও জানে না কেউ; পূর্বাভাস নিতে নিতে চারদিকে যান্ত্রিক ও সান্ত্রিক গোলযোগ।
পার্বতী বাউল কাঁদে, একতারা বোল তোলে, ডুগিতে ডাক পড়ে, কুড়ায় দু’হাতে জন্মমাটি এবং আজন্মের গল্প-গাথা...
মন্তব্য