ক্রমাগত ধাক্কা খাই নিজেরই প্রতিবিম্বে
শতখণ্ড খণ্ড খণ্ড আত্মার দঙ্গলে
নিজের ছায়ার সাথে দ্বন্দ্বে সংগ্রামে
আয়নাঘর প্রিয় শহর বন্দর
দৌড়ানোর হাঁপানোর যাঁতা
ধুলা উড়ে ঘরে, বাগানে অফিসে আদালতে
হৃৎপিণ্ডের অলিন্দে নিলয়ে
বিন্দু bindumag.com
চেহারা চোখের রঙ ম্লান বিধ্বস্ত বিবর্ণ ঠোঁট
টর্নেডো প্রত্যহ ঘটে প্রতিটি ঘন্টায়
মাথার ভিতরে — মনে
সিনেমা দোকান বুকস্টল ফুটপাতে
তেলচিটা কাঁথার শীতে মুড়িভাজা চানাচুর
মদে চুর যারা, আমার মতন সব শত খণ্ড
প্রতিটি রাস্তায় — মোড়ে,
এমনকি শীতাতপ্ত বিছানার ঘোরে
বিন্দু bindumag.com
আমাদের যৌথ নেই
বাড়িঘর বিছানা বালিশ, মলমুত্র ত্যাগের আলয়
কল-জল, উনোনের তেল ঘটি বাটি শিশুমন
শান বাঁধা ঘাট — বটবৃক্ষছায়া
উঠোনের তুলসী তলা
মসজিদ মন্দির গির্জা
ঠাকুরের ঘর আজান ওঙ্কার
সকলই ধুলির ঝড়ে খণ্ড খণ্ড
আমি দৌড়ে যাই আমার পেছনে
আমি ফিরে আসি আমার ছায়ার কাছে
অর্থহীন
এমনই হবার কথা
এমনই ইঙ্গিত মেলে
ডায়োজিনিসের প্রলাপের ঘোরে
হকিং ডুরিং তত্ত্বপথ্যে
বিন্দু bindumag.com
মোরগের ডাকে একদিন
ভেঙেছিল কুয়াশার ঘুম
একরঙা স্বপ্নের ঘোর
রাঙা হাতখানা ধরবার ঠিক আগেই
দূর-কুকুরের মরা কান্না বেজেছিলো
পাহাড়ের বুকে
তারপর থেকে শুধু জেগে থাকা
দুঃস্বপ্নের জাগরণ
কিশোর বেলাটা বলো কেড়ে নিলো কে সে ?
বিন্দু bindumag.com
নাই ধান
দুর্বা নাই
চন্দনের ঘ্রাণ সব মায়া সভ্যতার ছাই
চন্দন চরণামৃত
লোবান বাতির ঘ্রাণ নিষ্প্রাণ নিষ্প্রভ
ভুলেছি সবুজ মানে রেইনট্রি মেহগনি
শাল সেগুনের বন
সবুজ কেবলই বুঝি পতাকার রঙ!
স্বপ্নের সবুজ ছিলো তোমার আঁচল
তোমার শাড়ির পাড়
আমার নদীর
উঠানের
আকাঙ্ক্ষার বুকের উল্লাস
বেঁকে যাওয়া পিঠ
রোদে পোড়া শ্রমের পৌরুষ পেশী
বিন্দু bindumag.com
চোখের ভেতরে একদিন
সেই স্বপ্ন
সোনালী বিভায় মেতেছিলো
হলুদ পাখির সেই উঠোন মাতানো রঙ
বিস্তীর্ণ মাঠের সোনা ঝরেছিলো অনন্ত দুপুরে
শায়েস্তা খাঁয়ের সাথে আমিও তো
ঘ্রাণ তার পেয়েছি অনেক
বতুতা-পুত্রের খসখসে হাত ধরে
হিয়েন সাঙের সাথে প্রতি লোকমা-য়
পুকুরের পোনা মাছ খেয়েছি সেদিন
তাড়িয়ে ফিরেছে শুধু স্মৃতি
সেদিনের গঙ্গাফডিং চড়ুই
টিয়া বাবুইয়ের ঝাঁক
হালদা নদীর পাড়ে গান ধরে
পোনামাছেদের দল
নুনদাগ ঘষে ঘষে
বিন্দু bindumag.com
চাষের লাঙল আর
জেলে পাড়া জেগে ওঠে স্মৃতির ভেতর
সেদিনের কন্ঠ আজ
ফ্যাসফ্যাসে ফাঁপাটে বেলুন
কেবল অর্থের নামে
জপে যায় অর্থহীন হাজারো সংলাপ
আমরা সে ইডিপাস
সততই ধ্বংস করি মায়ের সম্ভ্রম
জননীর অনন্ত সবুজ আর
সোনালী যৌবন
আমাদের ক্ষুধা পিপাসার জেদ
প্রকৃতির জানা নেই কিছু
মাথাপিছু সাড়ে তিন হাত
সন্তোষ জাগে না বলে জমি খাই
নদী পুকুরেরা প্রতিদিন উদোরে সাবাড়
কাল থেকে তারাদের ভাগ বাটোয়ারা শুরু
নতুন খাদ্য তালিকা
প্রতিদিন নতুন রুচির দেখা পাই
বিন্দু bindumag.com
সেদিনের যৌথস্বর
একসাথে বাইসন শিকার
নৌকাবাইচ
একসাথে ঝলসে নেওয়া পাঁজরের হাড়
নগরের পথে — ঘরে
হাজারটা মানুষের ভিড়ে
একান্ত একাকী ম্লান
ওভেনেই তপ্ত করি শীতল মুরগীর রান — বুক
খণ্ডখণ্ড ভাঙা আয়নার খোপে
কেবল নিজের চারপাশে ঘুরপাক
বোকাট্টা ঘুড়ির লেজ মাঞ্জাহীন কাটা সুতো
লাট খায়
লাট খায়
বিন্দু bindumag.com
সেদিনের সিকান্দর চেঙ্গিসের দিন দেখিনি যদিও
যদিও সে কালিদাস উজ্জ্বয়িনীপুরে
বিকেলে হেঁটেছি – কিংবা
শঙ্কাহীন ভোরে — ভূমধ্যদুপুরে
একরোখা দখিনা বাতাসে
রবীন্দ্রের মতো ঘোরে
পুকুরে গোলাতে ছিলো সম্পন্ন জীবনের স্বাদ
তবুও প্রমাদ প্রতি কৃষকের
গুনে যেতে হতো সকালে সন্ধ্যায়
তবুতো চার্বাক বুদ্ধ
তবু সক্রেটিস
চাঁদ সদাগর
আমাদের সাথী ছিলো
সেদিন ভোরের পাখি
বিহারীলালের মতো রাঙা তার গান
আমাদের সম্মোহন কাল
স্বপ্নদিন ভেঙে দিলো সে কোন্ মোরগের ডাক
বিন্দু bindumag.com
অপ্রস্তুত মুহূর্ত সকল
বন্দী পড়ে আছে
হাওড় জলের ঘের থেকে মুক্তি পাওয়া মাছ
ডাঙায় কাতর হয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে
শ্বাস নেয় — তবু
যাবো না যাবো না বিশুদ্ধ বাতাস তলে
প্রমিথিউসের আগুনে ঝলসে নেবো নিকোটিন শলা
হাঁপালে ইনহেলার - নাকে নল দাও
নেবুলাইজ করো
হায় থিয়োফাইলিন — সালবিউটামল
এখন ধুলায় মত্ত নগরের
মোড়ে মোড়ে তোমার বাজার
মানবাত্মা কাঁচের টুকরোর ফ্রেমে
শতখণ্ডে টুকরো টুকরো
নিজের প্রতিবিম্বের সাথে
ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ছিটকে পড়ি
ব্ল্যাক হোলে
অনন্ত ইথারে
মন্তব্য