অনেক, অনেকক্ষণ ধরে তোমার চুলের গন্ধ
টেনে নিতে দাও আমার নিশ্বাসের সঙ্গে;
আমার সমস্ত মুখ ডুবিয়ে রাখতে দাও তার গভীরতায়
ঝর্ণার জলে তৃষ্ণার্তের মতো;
সুগন্ধি রুমালের মতো তা নাড়তে দাও হাত দিয়ে
যাতে স্মৃতিগুলো ঝরে পড়ে হাওয়ায়।
তুমি যদি জানতে যা-কিছু আমি দেখি! যা-কিছু আমি শুনি!
যা-কিছু আমি অনুভব করি তোমার চুলের মধ্যে!
আমার আত্মা উড়ে চলে তার সৌগন্ধ্যে
যেমন অন্যদের, সংগীতের পাখায়।
তোমার চুলে সম্পূর্ণ একটি স্বপ্ন বিজরিত,
সেখানে পালের আর মাস্তুলের ভিড়;
তার মধ্যে অনেক বিশাল সমুদ্র, যাদের উপর দিয়ে
মৌসুমী আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় মোহময় দেশে
আকাশ যেখানে আরো নীল,
আরো গভীর
যেখানে বায়ুমন্ডল ফলে-ফলে সুরভি,
আর পাতায়, আর মনুষ্যচর্মে।
তোমার চুলের মহাসমুদ্রে আমি দেখছি
বিষণ্ণ গানে-গানে গুঞ্জিত এক বন্দর,
সেখানে সমস্ত জাতির বলশালী মানুষ,
আর সমস্ত রকম আকারের জাহাজ
তাদের সুক্ষ্ম, জটিল স্থাপত্য খোদাই করছে বিশাল আকাশে-
চিরন্তন উত্তাপের সেই ধাত্রী।
তোমার চুলের আদরের রাশিতে আমি ফিরে পেয়েছি
ভালো একটা জাহাজের কেবিনে
অনেক ফুলদানি আর ঠাণ্ডা জলের কুঁজোর মাঝখানে
ডিভানে শুয়ে কাটানো দীর্ঘ ঘন্টার আলস্য,
বন্দরের অলক্ষ্য চঞ্চলতায় দোল খেতে-খেতে।
তোমার চুলের উজ্জ্বল চুল্লিতে
আমি আফিম আর চিনি মেশানো তামাকের ঘ্রাণ নিচ্ছি;
তোমার চুলের রাত্রিতে আমি দেখছি,
ঝলমল করছে গ্রীষ্মমণ্ডলের অসীম নীলিমা;
তোমার চুলের পালক-নরম প্রান্ত বেয়ে বেয়ে
আমি মাতাল হয়ে যাই
আলকাৎরা আর মৃগনাভির আর নারকোল তেলের মিশোনা গন্ধে।
আমাকে কামড়াতে দাও, অনেকক্ষণ ধরে, তোমার ঘন কালো গুচ্ছ-গুচ্ছ চুল।
স্প্রিং-এর মতো বেশামাল, বিদ্রোহী তোমার চুল
আমি যখন দাঁত দিয়ে কুটকুট করে কাটি
আমার মনে হয়, আমি একটু-একটু করে স্মৃতিগুলোকে খাচ্ছি।
[ প্রথম লিখন: ১৯৩০ ■ বুদ্ধদেব বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা ■ প্রকাশক: দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা ■ চতুর্দশ সংস্করণ : মাঘ ১৪১৬, জানুয়ারি ২০১০ ]
টেনে নিতে দাও আমার নিশ্বাসের সঙ্গে;
আমার সমস্ত মুখ ডুবিয়ে রাখতে দাও তার গভীরতায়
ঝর্ণার জলে তৃষ্ণার্তের মতো;
সুগন্ধি রুমালের মতো তা নাড়তে দাও হাত দিয়ে
যাতে স্মৃতিগুলো ঝরে পড়ে হাওয়ায়।
তুমি যদি জানতে যা-কিছু আমি দেখি! যা-কিছু আমি শুনি!
যা-কিছু আমি অনুভব করি তোমার চুলের মধ্যে!
আমার আত্মা উড়ে চলে তার সৌগন্ধ্যে
যেমন অন্যদের, সংগীতের পাখায়।
তোমার চুলে সম্পূর্ণ একটি স্বপ্ন বিজরিত,
সেখানে পালের আর মাস্তুলের ভিড়;
তার মধ্যে অনেক বিশাল সমুদ্র, যাদের উপর দিয়ে
মৌসুমী আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যায় মোহময় দেশে
আকাশ যেখানে আরো নীল,
আরো গভীর
যেখানে বায়ুমন্ডল ফলে-ফলে সুরভি,
আর পাতায়, আর মনুষ্যচর্মে।
তোমার চুলের মহাসমুদ্রে আমি দেখছি
বিষণ্ণ গানে-গানে গুঞ্জিত এক বন্দর,
সেখানে সমস্ত জাতির বলশালী মানুষ,
আর সমস্ত রকম আকারের জাহাজ
তাদের সুক্ষ্ম, জটিল স্থাপত্য খোদাই করছে বিশাল আকাশে-
চিরন্তন উত্তাপের সেই ধাত্রী।
তোমার চুলের আদরের রাশিতে আমি ফিরে পেয়েছি
ভালো একটা জাহাজের কেবিনে
অনেক ফুলদানি আর ঠাণ্ডা জলের কুঁজোর মাঝখানে
ডিভানে শুয়ে কাটানো দীর্ঘ ঘন্টার আলস্য,
বন্দরের অলক্ষ্য চঞ্চলতায় দোল খেতে-খেতে।
তোমার চুলের উজ্জ্বল চুল্লিতে
আমি আফিম আর চিনি মেশানো তামাকের ঘ্রাণ নিচ্ছি;
তোমার চুলের রাত্রিতে আমি দেখছি,
ঝলমল করছে গ্রীষ্মমণ্ডলের অসীম নীলিমা;
তোমার চুলের পালক-নরম প্রান্ত বেয়ে বেয়ে
আমি মাতাল হয়ে যাই
আলকাৎরা আর মৃগনাভির আর নারকোল তেলের মিশোনা গন্ধে।
আমাকে কামড়াতে দাও, অনেকক্ষণ ধরে, তোমার ঘন কালো গুচ্ছ-গুচ্ছ চুল।
স্প্রিং-এর মতো বেশামাল, বিদ্রোহী তোমার চুল
আমি যখন দাঁত দিয়ে কুটকুট করে কাটি
আমার মনে হয়, আমি একটু-একটু করে স্মৃতিগুলোকে খাচ্ছি।
[ প্রথম লিখন: ১৯৩০ ■ বুদ্ধদেব বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা ■ প্রকাশক: দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা ■ চতুর্দশ সংস্করণ : মাঘ ১৪১৬, জানুয়ারি ২০১০ ]
চুল
মূল কবিতা: শার্ল বোদলেয়ার
অনুবাদ: বুদ্ধদেব বসু
মূল কবিতা: শার্ল বোদলেয়ার
অনুবাদ: বুদ্ধদেব বসু
মন্তব্য