এতো যে জোনাকি-আলো, পথ দেখায় না, আশা জাগায় না; ব্যথা ভোগায় না; কিছুই...
আমি শুধু জন্মকে মৃত্যুর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে ভালোবাসি। প্রতিবার জন্মের ত্রুটি নিয়ে এতো যে প্রবণ-মাঝি!.. তোমার জন্য লাগে আমার কব্জি-জোরের থেকে বেশি, পুরোনো ক্রোধের সুরে গর্জন। কেন প্রায়শ গোলাপের নামে প্রতারণা মুদ্রণ করো! শীতার্ত ভয়ে কেঁপে ওঠা, দুলদুল এই পাতাগুলো অসহায়, কপর্দক ছুঁতে পারছে না। সোডিয়াম বাতি থেকে মিনতিমিনার অব্দি, ভাসে অনঙ্গ বাতাশ শুধু বাদামের পাতা থেকে যথার্থ মনীষা জাগাতে। আমার ঈশ্বর তুমি, ভেতরে সবুজাভ পাট; অথচ আশ্চর্য, তোমারই হৃদয়ে ঘটে বানানবিভ্রাট!
জোকার
এক ধরনের বোকা বোকা দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাচ্ছি। তীব্র শব্দে দীর্ঘ বিরতি নিয়ে আওয়াজ আসছে।
আমার বুক কেঁপে ওঠে। শরীরে নাড়া দেয়।
গতজন্মে কারা যেন আতঙ্কবীজ পুঁতে দিলো; আমার কিচ্ছু মনে নাই। সেই থেকে বেড়ে উঠলো, তার লকলকে ডগা গজালো। আমার কোনও স্মৃতি জাগলো না; না প্রেমের, না কামের।
আমি সেই জন্মবধির, পুরোনো ভঙ্গিতে পোষা দুঃখগুলো খাঁচা থেকে বের করে ময়দানে খেলা দেখাই।
হলুদ পাহাড়
ভাবছি, কাউকে বলবো একটা পাহাড়ের ছবি বানাতে। হলুদ পাহাড়, তার উপরে মেঘ, শাদা শাদা মেঘ। দূর থেকে দেখে গাদাফুল ভেবে ভ্রম হবে মানুষের।
ওরা খুশি হবে। মানুষ ভ্রমে প্রকৃতই আনন্দ পায়। পাহাড়ে উঠবে সকলে। কেউ কেউ পকেটে কিংবা পাটের ব্যাগে ভ্রমের আনন্দ ভরবে।
কিন্তু হলুদ পাহাড়ে হৈ-হুল্লোর নিষেধ।
শৈশবভর্তি গ্রাম
কোলাহলে ঘুমাও তুমি। নৈঃশব্দ্য আতঙ্কের। ভয় পেয়ে ভেঙে যেতে পারে ঘুম।
এইসব বৃষ্টিদিনে ভোরের আকাশে দ্বিধাহীন পাখি ভেসে থাকে। নদী ভেঙে যায়, আঁচল ভিজে যায়। হাতের আঙুলে লুকিয়ে থাকে শৈশবভর্তি গ্রামাঞ্চল। লালগ্রাম নীলগ্রাম ছুঁয়ে ছুঁয়ে একদা বিশেষ ভঙ্গিতে ঠোঁটের কারুকাজ দেখিয়েছো।
ঘুম ভাঙাবো না, তোমাকে জাগাবো না। কোলাহল হোক। সঙ্গীপ্রিয় হামিংবার্ডের মতো প্রেম জাগিয়ে ঘুমাও। চারিদিক উচ্ছন্নে যাক।
কনফিউজড গোলাপ
অনেক ভেবেছি আমি, ‘তোমাকে’ গভীর থেকে লক্ষ করেছি; চাঁদ বা জোৎস্না— কোনোকিছুতেই আসলে মিল নাই।
মাতালের ঢুলুঢুলু চোখ এই মুহূর্তে আমাকে টানছে না। আমিই জীবন; তার সামান্য আনন্দ। গ্রামের জড়তা আমি অনন্ত সময়ের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। এই অপরাধপুষ্ট বাতাশের রাজ্য প্রগতি পাবে ফের। ভালোবাসা আর প্রচ- আবেগের অন্ধকার যেন পথভ্রষ্ট বাঙালি সৈন্য এক, বহুকাল আগে যে পথ ভুল করেছিলো, ফিরে আসবে।
— গোলাপ, তুমি কনফিউজড হয়ো না; দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সবার জন্য নয়।
— আমার জন্য উত্তম হলো অকর্মণ্য এই শরীরে ক্রোধের বসতি টেনেহিঁচড়ে দূরে নিক্ষেপ করা।
জবাগাছ
মধ্যরাতের ঝি-ঝি আসলে রাত্রির নিজস্ব আসবাব।
আমি জলের উপরে নাম লিখে রাখলাম। আমি স্রোতের ভাগাড়ে নাম লিখে রাখলাম। মনে-হৃদয়ে-মগজে মাথায় এতো যন্ত্রণা হয় কেন? শিশিরের শব্দে জগৎ বিদীর্ণ হবার দৃশ্য দেখবো বলে এখনও জেগে আছি। প্রচণ্ড শব্দটা যদি ভেঙে ভেঙে দেখাতে পারতাম, কী ভয়ানক প্রতিবিম্ব তৈরি হয়েছে আমার! কিছু প্রজাপতি বিশ্বাস করবে পৃথিবীকে, তোমার মতো যারা সটান জবাগাছ; অথবা শরীরের বুনোপথে নিবিড় পর্যটক। এই সাজানো পথ ছেড়ে আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না আজকাল।
[সাম্য রাইয়ানের ২২টি পোয়েটিক ফিকশন নিয়ে আগস্ট ২০১৯-এ প্রকাশিত হচ্ছে ‘হলুদ পাহাড়’। প্রচ্ছদ: কাজী যুবায়ের মাহমুদ। প্রকাশক: বাঙ্ময়।]
কতগুলো লাইন দারুণ স্পর্শী....
উত্তরমুছুন” আমি সেই জন্মবধির, পুরোনো ভঙ্গিতে পোষা দুঃখগুলো খাঁচা থেকে বের করে ময়দানে খেলা দেখাই।”
কিংবা
”মানুষ ভ্রমে প্রকৃতই আনন্দ পায়।”
দারুণ লাগলো সাম্য......
অনেক ভেবেছি আমি, ‘তোমাকে’ গভীর থেকে লক্ষ করেছি; চাঁদ বা জোৎস্না— কোনোকিছুতেই আসলে মিল নাই।
উত্তরমুছুনবানানবিভ্রাট
উত্তরমুছুনএতো যে জোনাকি-আলো, পথ দেখায় না, আশা জাগায় না; ব্যথা ভোগায় না; কিছুই...
আমি শুধু জন্মকে মৃত্যুর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতে ভালোবাসি। প্রতিবার জন্মের ত্রুটি নিয়ে এতো যে প্রবণ-মাঝি!.. তোমার জন্য লাগে আমার কব্জি-জোরের থেকে বেশি, পুরোনো ক্রোধের সুরে গর্জন। কেন প্রায়শ গোলাপের নামে প্রতারণা মুদ্রণ করো! শীতার্ত ভয়ে কেঁপে ওঠা, দুলদুল এই পাতাগুলো অসহায়, কপর্দক ছুঁতে পারছে না। সোডিয়াম বাতি থেকে মিনতিমিনার অব্দি, ভাসে অনঙ্গ বাতাশ শুধু বাদামের পাতা থেকে যথার্থ মনীষা জাগাতে। আমার ঈশ্বর তুমি, ভেতরে সবুজাভ পাট; অথচ আশ্চর্য, তোমারই হৃদয়ে ঘটে বানানবিভ্রাট!
পুরোনো ভঙ্গিতে পোষা দুঃখগুলো খাঁচা থেকে বের করে ময়দানে খেলা দেখাই।
উত্তরমুছুনচমৎকার
উত্তরমুছুন