জাগছে নতুন পাড়া
বিপন্ন এই সময় গাছের চারা
বীজের ভেতর জাগছে নতুন পাড়া
সমস্ত দিন অন্ধকারের গায়ে
সমস্ত দিন বন্দি নিজের পায়ে
ডুবছে মানুষ পুড়ছে কতো সোনা
বীজ ফোটেছে যাচ্ছে না তো বোনা
সময় এখন খোলস ছেড়ে ওড়ার
সামনে গিয়ে মরার আগে মরার
মানুষ এবার জাগুক নিজে নিজে
জমির ফসল উপচে উঠুক বীজে ।
আজান
পেরিয়ে দৃশ্যের ফাঁদ চলে যাবো নাকি?
পথ নাই বসে নিজ মৃতদেহ আঁকি
আঙুলের ফাঁক গলে রোজ গলে যাই
যেখানে ছিলাম আমি এসে দেখি নাই
কপালের ভাঁজে ঘাম মনে কাম জাগে
দেহের ভিতরে দেহ কার ছোঁয়া লাগে
মনের মোকামে খাড়া আলিফের টান
সিনার বাহিরে এসে দিতেছে আজান ।
বেআব্রু
বাদামের বালু ক্ষেতে
সবুজ পাতায় রক্তবমির দাগ
তোমার পায়ের পেছনে সাপের ঘর
সারা মাঠ জুড়ে ফনা তোলে কালনাগ
ধূ ধূ বালুচরে বেআব্রু তুমি, নারী
পাতার আড়ালে ঢেকে রাখ আধা দেহ
সূর্যের তাপে পুড়ে যায় মস্তক
দিকে দিকে বাড়ে হারানোর সন্দেহ
মনের আড়ালে হলুদ ত্বকের বন
জেগে আছে একা তোমার চোখের পাশে
সাপের কবল বিষের বাথান ছেড়ে
সর্তক হও রোদ্রের সহবাসে
এখানেই ফের নিজেকে করেছো চাষ
নিজের শরীরে দিয়েছ বাদাম বুনে
প্রসবের আগে রক্তের লাল ফোটা
মাটির ভিতরে সন্তানের ডাক শুনে ।
আপ্তবাক্য
ঘটনাঘূর্ণির ভিড়ে হারালো সমস্ত মুত্যুশোক
শবের খাটিয়া থেকে নেমে গেলো লাশের বিপদ
নিদারূণ আর্তনাদে অতর্কিত দোলে চারপাশ
অথচ ঘুমিয়ে আছে এই স্থানে লুপ্ত জনপদ
কোথায় লোহার ঘরে গুপ্তধন, ঘামের নির্যাস?
ছড়ানো-ছিটানো যতো ইতিবৃত্ত, সাংকেতিক ছাই
হানাদার হয়ে আসে দাবী করে আজ রক্তপণ
আমার আত্মার পাশে আমাকেই করিবে জবাই।
কতোদিকে ছুটে যায় সমবেত প্রাণের তামাশা
নিহত নক্ষত্ররাশি জন্মলগ্ন ভুলে গিয়ে দূরে
বিস্ফোরনে কেঁপে ওঠে যেন শব্দহীন দুনিয়াতে
জ্বালিয়ে আগুন কিছু কথা বলে যাবে সবিস্তারে
অথচ হয় না বলা আপ্তবাক্য মনে রয়ে যায়
মনের ভেতরে ঘর সেই ঘর পুড়ে হয় ছাই।
মে’রাজ
নীরবতা গাঢ় হলে সুবে-সাদিকের গান শুনি
বেহুদা বাতাস এসে চারিদিকে করে কোলাহল
পাখিরা উল্লাসে জাগে জ্বলে ওঠে বুকের ভূ-তল
ফজর আযানে ভেসে কই যেন যায় ধূমযোনী
দৃশ্যের বাহিরে বসে দৃশ্যতা’র ছায়ারুপ গুনি
অজস্র আলোর ঘোড়া নতমুখে করে ঝলমল
ভেসে আসে হ্রেষাধ্বনি টুটে যায় নীল আস্তাবল
খুরের আঘাত লেগে মাটি ফুঁড়ে বয়ে যায় পানি।
পর্দার রহস্য-চাবি নিয়ে এসে সম্মুখে দাঁড়াও
আমাকে একত্র করে চেপে ধরো বুকের ভিতর
ত্বকের পোষাক খুলে দেহ হতে সিনা টেনে নাও
তুমি হবে কাবা আর আমি হবো কাবার পাথর
গোলাকার পথে হেঁটে মৃত এই রুহুকে জাগাও
তোমাতে বিলীন হবে অন্ধকার আমার শহর।
পুষ্পিত প্রমেহ
মুখস্ত জীবন ছেড়ে যেখানেই যাই
রাষ্ট্রের সীমান্তগুলো কাঁটাতারে ভরে যায়
পুরনো সাকিন ছেড়ে শকুনের উড়াউড়ি দেখি
কোথাও কঙ্কালসার বাড়ি-ঘর জেগে আছে নাকি!
উল্লাসের ঘন্টাধ্বনি ক্রমশ কমেছে যেন, দূরে
ধোঁয়া আর খেই হারানো ঘুড়ির মুখ যায় সরে
পৃথিবীর পোড়ামুখে দাগ এঁকে লুকিয়ে জীবন
বিশদ অর্থের মানে ভাবি আর ভুলেছি মরন
পালিয়ে পালিয়ে যদি ধরা যেত ঘুমন্ত পাহাড়
হঠাৎ জেগে ওঠা স্বর্নোজ্জ্বল লাভার খামার!
নকল ভঙ্গিমা দেখে ক্লান্ত এই দেহ
খুঁজে পেতো রক্তস্রাব: পুষ্পিত প্রমেহ ।
নদী ও নিহত মানুষ
নিহত নদীর বুকে মুখ ঘষেছিলে
প্রতিদানে পেলে কিছু মানুষের হাড়
কোথাও ছিলো না তবে গোর ও আগুন
কোথাও হয়তো নাই লাশের সৎকার!
নরম পানির দেহে ভাসে রক্তজাল
স্রোতে ভেসে চলে যায় গুপ্ত কোন স্থানে
গুলির গর্জন শুনে কার কথা ভাবো
কারা রেখে গেছে ওই গোপন চিৎকার?
বালুর ভেতরে লাশ তপ্তরোদে পোড়া
জমাট শহরে উড়ে বারুদের পাখি
চারদিক ঘিরে আছে ভয়ের বন্দুক
খুঁজে ফেরে ছায়াশত্রু যারা আছে বাকি ।
পায়ের পিপাসা
ধানের আকাল আজ হে ঘোরসওয়ার
আস্তাবলে খড় নাই, পানির ফোয়ারা হলো শূন্য
সবুজ শস্যের গান কোথাও শুনো নি
সামনে দেয়াল আর চারিদিকে খুলির পাহাড়
ভাঙা ভাস্কর্যের পাশে ছায়া হয়ে আছো
তোমার পৃথিবী আজ জনশূন্য, স্থির
রক্তরাঙা মেঘ ভাসে আকাশে আকাশে
চৌচির মাটির বুকে তবু নামেনা বৃষ্টির ফোঁটা
তোমার গন্তব্য নাই আজ
পায়ের পিপাসা মিটে গেছে
তাই বসে থাকো ঘোড়ার মুখের কাছে, মুখোমুখি ।
ইন্তিফাদা
বেবাক ফিলিস্তিন জুড়ে, দেখো, জেগে উঠছে রক্তের চারাগাছ
বিভক্তির প্রাচীর পেরিয়ে আমাকে যেতে হবে বিধ্বস্ত ভিটায়
প্রিয়তম সন্তান এবং বন্ধুদের লাশ দাফন শেষে
উদ্যত ট্যাঙ্কের সামনে পাথর হাতে প্রতিরোধ গড়ে তোলা
শিশুটির পাশে আবার দাঁড়াবো।
আমার রক্তে গোসল করবে যে পবিত্র পাখি
তার কণ্ঠেও ঝংকৃত হোক
ই
ন্তি
ফা
দা
পড়ো, প্রভুর নামে
ঘুমের সমুদ্র থেকে উঠে আসো
দেখো, কীভাবে জাগ্রত হয় অন্ধ চোখ
আর বুলি ফোটে বোবাদের মুখে
একটি শোকের সন্ধ্যা দ্রুত শেষ হতে দাও
জন্মান্ধ বাগানে তার ঢুকে পড়ো
এবং যাবতীয় অস্পষ্টতা টেনে ধরো
তা
র
প
র
পুনরায় খুলে দাও রাত্রির সংযুক্ত দেহ
যাবতীয় কাজ শেষ হলে
ফিরে যাও দুর্গম গুহায়
অপেক্ষায় থাকো
কেউ একজন আসবে পুরনো পুঁথি নিয়ে
এবং বুকে চেপে ধরে বলবে
পড়ো, পবিত্র প্রভুর নামে!
মন্তব্য