Henry Ford Hospital, 1932 by Frida Kahlo. source: fridakahlo.org |
১
কী বিস্ময়ে বালিকা চশমা তুলে তাকিয়ে থাকে মৃত্যুর দিকে
যে ঘুম অকাল সমাপ্তির দিকে ধেয়ে চলে তাকে আয়ত্তে আনতে হবে।
বালিকার বিস্ময় জাগে
মৃত্যুতে নয়,
তাকে প্রত্যাখ্যানের শক্তিতে!
২
বিষণ্ণতার আবাস এইখানে, তবু আনন্দিত হও ভালোবেসে;
তোমার হৃদয়ে কারফিউ জারি আছে
তুমি ভালবাসো; এবং প্রেমময় গানের সঙ্গে সূর্যালোক আনো
যেহেতু শরীরগুচ্ছ আর আলাদা নয়!
৩
কতবার দেখাতে চেয়েছি ব্যথার আদ্যোপান্ত
ভিতরে লুকান দাঙ্গার পরিবর্তন; ঠাণ্ডা, ঘাস
ছড়ানো পথেও তুমুল পিপাসা জাগে! এখন কষ্ট নেই
সকাল হতেই পেয়ে যাব রুটি, যা তারা শিল্প ছাড়াই দেবেন।
৪
তীব্র-শ্বাসযুদ্ধ! সুন্দর বছর মরে যায়!
বিশ্বাস, লোভ, মদ এবং বিনম্র নেত্রবিশিষ্ট নারীরা - এইসব এলোমেলো শব্দ
ভরা ভাদ্র মাসেও ধর্মবিশ্বাসকে পিটিয়ে দূরদর্শিতার ফসল বোনে
ফেরাউনের সৌন্দর্য কানে কানে বলে, প্রাণঘাতী বিজয় দ্বারা শত্রুতা শেষ!
৫
স্বয়ং তিনি বলেছেন-
‘যে ঘরে অসুস্থ মানুষ আছে, সে ঘরে আমার রহমত বর্ষিত হয়!’
যখন সকাল, মনে হয় এ দীর্ঘ রাতে স্বর্গের ওয়াইন হালকা করে
অষ্টাদশী নারী শাদাবস্ত্রে আবৃত হয়ে ঢেলে দিয়েছিল গলার ভিতরে!
৬
ভয় কি নিরাকার?
দু’জনের বয়স ভেসে গ্যাছে আশির দিকে, এখানে শুধুই হৃদয় সত্য!
একজোড়া পা অসাড় হলেও অপর কাঁধটি সবল হয়ে থাকে
দু’টি দেহ গোধূলির দিকে বয়ে যায়।
৭
কিছুই নিরাপদ নয়, শুধু বিশ্বাস ছাড়া!
অবিরত ত্যাগ, কর্তব্যবিমূঢ় সময়, সামান্য চাওয়া;
সত্য অনুভূত হতে হতে
অনেক সাহসী বয়স্য দিন জীবাণুর আক্রমণে পরাভূত!
৮
এই পর্যন্ত খুব সামান্য করেন জ্বালাতন।
সকালে লেসিক্স ইনজেকশন, খানিক পরেই ইনসুলিন
কাছে গিয়ে শুনি ওরা আলোচনা করেন,
মৃত্যুর পর কবরটা যেন জানালার পাশে হয়!
৯
সব দিন কাজ করে, রাতে অর্ধ মাতাল।
জাগরণের রাতগুলো অন্ধকার নিস্তব্ধ, তাকিয়ে থাকি
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পর্দা-প্রান্ত আলো হয়ে যাবে।
সে পর্যন্ত দেখতে চাই সেখানে সত্য আছে,
যা অসত্য এবং নির্দয় না!
১০
এখন একটি মৃত্যুর নিকটবর্তী অস্থির পুরো দিন,
সমস্ত চিন্তার নির্মাণ অসম্ভব কিন্তু কীভাবে
আর কোথায়, এবং নিজেকে যখন মৃত ভাবা যাবে
জীবনের চেয়ে তখনই ভালো হবে এই সময়।
১১
ক্যাপসুল সঙ্গে গ্যাসের মতো বোতলে ভর্তি প্রতিটি ক্ষণ,
মিষ্টি ফার্মাসিউটিক্যাল বোতল থেকে গড়িয়ে পড়ছে বেঁচে থাকা
একটি শ্বাস-মাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা করতে
তারামাছের উষ্ণ স্তনে মুখগুঁজে পড়ে থাকা, রাসায়নিক জীবনের মিশ্রণ!
১২
মৃত্যু নিশ্চিত থেকেই ডায়েটিং চলছে, তবুও
উরু, পুরু দেখেই তরুণ শূকর খামচে ধরে পশ্চাতদেশ
একটি ঘূর্ণায়মান পিন ধীর গতিতে নিন্মাঙ্গ খুঁজে ফেরে
সদ্যজাত জন্ম, পুরোনো জন্মের কাছে অবনত।
১৩
একটি মুহূর্ত বিরাম দিলে শরীর গুলিয়ে আসে
মহাকাশের আবর্জনা খেয়ে শুয়ে আছেন কবি
সার্জন সাবধান চিহ্ন ধরে এগিয়ে যান
সমুদ্র থেকে একটি শহর গড়ে ওঠে, উত্তেজিত
কমলার কোয়া ঘ্রাণ ছড়ায়।
১৪
রাজহাঁসবেশী আট কিশোরী
সাম্যের ফ্রেমে বন্দি করে জীবন
নৌকার মাস্তুল খুলে বের করে কাঁচি-ছুরি
ভীতিজনক প্রতিসাম্য ফ্রেমে বেঁধে রাখে
সময়, শুধু গোঙানির শব্দ শুনি!
১৫
সূর্যাস্তের বেগুন-কালো মেঘ আগস্টের আকাশ ছেয়ে রাখে
হালকা ঠাণ্ডা চেহারার বৃষ্টিতে শরীরে ঘ্রাণ জাগে,
এক কাপ আশ্চর্য আঁকড়ে
আহ্লাদি জীবন শান্ত হয়েছে প্রবীণ ঔষধের খোঁজে।
১৬
যখন একবার শতবছর উদ্যাপন করলো একটি আত্মা,
হৃদয়ের অকপটতা, অসীম উদ্দাম এবং অতৃপ্ত কৌতূহল নিয়ে।
কীভাবে বলি- সকল বিভ্রান্তি, অভিজ্ঞতার সত্য সমাপ্তে
যাবতীয় সন্তুষ্টি ও দরিদ্রতা মিশে যায় মাটির সোঁদা গন্ধে!
১৭
কোন ম্যাজিক নেই, ইচ্ছে পূরণ অন্যান্য ব্যক্তিদের মতোই
অলৌকিকতার কাজ এখানে নেই, আছে জীবন বিক্রির ঝুঁকি।
নীল একটি খাড়া বাঁধ উপরে সাদা তরঙ্গ,
শিশু মুখভঙ্গি আর হাতে হাতে ফেরি করা সরেস জীবন!
১৮
অস্ত্র রাখা চোখ যে তোমায় ভালোবাসি
এই যুদ্ধের কথা কেউ জানবে না, না।
ভীরু সাদা বন্য বরই তর-তর ক’রে
মিশে যাবে বসন্তের আকাশে
সাম্য’র হামিংবার্ড সেখানে বাজাবে খেয়ালখুশির শিস...
১৯
মধ্যরাতে, লুকিয়ে রাখা পরমানন্দের একটি শ্বাস হাতছানি দেয়,
‘তুই বাবা হোলে আমি ছেলে হতাম’।
যৌবনে আগুন চোখের বাবা এখন নদী নিয়ে চোখে
তাকিয়ে থাকেন; মেঘবর্ণ রাতে
ছেলেটি বিষণ্ণ বোধ করে।
২০
সবুজ, আমাদের চিন্তাধারাকে মিত্রাক্ষর ছন্দে গড়তে হবে
দিনের আলো গভীর হলে মানুষ ও ঈশ্বরের পরিকল্পনার মধ্যে বিস্তর ফারাক
জীবন আর মরণে যেমন পার্থক্য অনেকটা মদের মধ্যে ঠোঁটের মতো
কবির প্রথম ও শেষ নোট- ‘আমাকে কবিতার জীবন দাও!’
২১
ক্ষুধা! নাভিশ্বাসের মাধ্যমে পরম বিষয়বস্তু করে তোলে
জীবনের বর্তমান কখনও দূরে চলে গেলে ঈশ্বরের মহানতা ক্ষুণ্ণ হবে
কিন্তু ভাবাবেশী প্রয়োজনে রক্ত তোলপাড় আঙুরের দানা
ঈশ্বরের চেয়েও বড় মহাকাশ গড়েছে চোখের সামনে!
মাহফুজুর রহমান লিংকনের সিরিজ কবিতা
মাহফুজুর রহমান লিংকন
কবি ও প্রাবন্ধিক
হাসপাতাল সিরিজ
মাহফুজুর রহমান লিংকন
মাহফুজুর রহমান লিংকন
খুব সুন্দর কবিতাগুলো
উত্তরমুছুন