লিখেছেন: ভাগ্যধন বড়ুয়া
লিটলম্যাগ ‘বিন্দু’ আমার কাছে সিন্ধুদর্শনের মতো করেই একদিন হাজির হয়েছিলো। তার পর থেকেই বিন্দুর সাথে আমার ক্রমশ নিবিড় ঘনিষ্ঠতা। আমার কাছ মনে হয়েছে, বিন্দু কলেবরে অনেক বড় নয়, কিন্তু লিটলম্যাগের জন্য যা দরকার তাইই এখানে দৃষ্টিগোচর হয়। এইখানে দ্রোহের কথা আছে। শব্দ-বাক্য সর্বোপরি ভাষা নিয়ে পরীক্ষা-গবেষণা আছে। একজন লেখক যেভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতে চায়, তার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা আছে।
বিন্দু bindumag.com
জগতে সকল কিছু শুরু হয় বিন্দু দিয়ে। জীবনের গতিপথের শুরুতে প্রথম বিন্দু যদি ঠিক থাকে তাহলে সব ঠিক থাকে। বিন্দুর লেখকদের প্রগতিশীল চিন্তা, ডেডিকেশন সবকিছু নিয়ে সাহিত্যের প্রতি একধরনের সমর্পণ আছে। এক যুগের যাত্রায় এই কথাটি আমাকে বলতেই হচ্ছে, একটি লিটলম্যাগ ১২ বছর ধরে নিয়মিত প্রকাশ করার জন্য যে পাগলামী দরকার তা সম্পাদক প্রিয়ভাই সাম্য রাইয়ানের মধ্যে আমি পুরোমাত্রায় দেখেছি, দেখি। কখনো কখনো আমি নিজেও তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হই, সাহস পাই। আমার প্রেমের কবিতার পাণ্ডুলিপিও (যা পরবর্তীতে লাভ লেইন নামে প্রকাশিত) বিন্দুতে (বিকল্প কবিতাবই সংখ্যা) প্রকাশিত।
বিন্দু bindumag.com
বিন্দুর এই ক্ষুদ্রের ভেতরে বিরাট অবয়ব আছে, যেখানে লিটলের চরিত্রে বিরাট আকাশ ধরার সাহস দেখা যায়। একদল লিটলম্যাগ কর্মীর সাহিত্যের প্রতি মমতা এবং জীবনকে উল্টে পাল্টে দেখার যে প্রয়াস, তা দেখা যায় এর প্রতিটি সংখ্যায়। প্রকাশিত কবিতা-গদ্যগুলো পড়লে বোঝা যায়, গতানুগতিকের বাইরে। সবগুলোতে একধরনের প্রাজ্ঞতা, দূরদৃষ্টি, নতুন কিছু আবিষ্কারের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশের অপরাপর তুলনায় সাহিত্যে জীবনকে দেখার দৃষ্টিকোণ একদম আলাদা। সাহিত্যের প্রতি তাদের রয়েছে ভরপুর ডেডিকেশন। বোঝাই যায় পণ্যমুখী শিল্পের বিপরীতে এই যে উদ্যোগ, এই যে সত্য বলার সাহস, এটা কঠিন বটে। এটা আমাদের মতো এদেশে রীতিমতো ভয়ংকর দুঃসাহসিক কাজ। এরকম যাত্রায় হাজার বাধা-বিঘ্ন সামলাতে হয়। যেমন গতবছর বাংলা একাডেমির বইমেলায় বিন্দুর স্টল ভেঙে দেয়া।
বিন্দু bindumag.com
তারা যে মানুষের মঙ্গলের পক্ষে সুন্দরের কথা বলতে চায়। সাহিত্য কি আসলে পারে এসব করতে? আমরা আপোষ দেখতে দেখতে ভুলেই গেছি সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের কথা বলতে লিখতে। কাউকে না কাউকে তো পথ দেখাতেই হয়। ১২ বছর ধরে যে বিন্দু বিন্দু/ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা, তা নিশ্চয় একদিন স্বপ্নময় আলোকিত জায়গায় পৌঁছবে, তাদের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে এটা আমি মনে করি। প্রকৃতপক্ষে আমি তা কামনাও করি।
বিন্দু bindumag.com
যদি লক্ষ্য ঠিক থাকে, নিষ্ঠাবান প্রচেষ্টা থাকে, তাহলে সাহিত্যের ত্যাগ, নিবেদন, অনুরাগ, আত্মনিবেদনও এক ধরনের দিকনির্দেশনা দেয়; আর এরকম ত্যাগ বিফলে যায় না কখনো।
বিন্দু bindumag.com
সরলরৈখিক পথে তো আর জীবনের কৌণিক অংশগুলো দেখা যায় না। অনেকভাবে যদি জীবনকে দেখা যায়, তখন প্রকৃতই জীবনের দর্শন পাওয়া যায়, জীবনকে চেনা যায়। বিন্দু তার স্বকীয় দার্শনিকতা ও চেতনা নিয়ে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা নিয়মিত পাঠকমাত্রই বোঝার কথা। এরকম প্রচেষ্টা, বিন্দুর মতো লিটলম্যাগ দরকার। সাহিত্যের উৎকর্ষতার জন্য। সাহিত্যের গতিপথ, দিকনির্দেশনা এবং সমসাময়িক সাহিত্যের মূল্যায়নের জন্য এরকম লিটলম্যাগ দরকার।
মন্তব্য