ঈশ্বরের মতো অগ্নিশিখা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে
আমাতে প্রবাহিত হয় তোমার বক্ষ থেকে উঠে,
দূর সুউচ্চে উঠে শিখারা পাখা ছড়ায়।
আমি তা লালন করি আমার বুকের ছায়ায়।
বাতাস-দেবতা ঈউলুসের মতো তোমায় তখন লাগে
ভালোবাসার পাখা দিয়ে আগুনকে রাখো ধরে।
আমি দেখি সেই রক্তিমাভা, শুনি শব্দ,
ওপরে স্বর্গ, আরো ওপরে নির্মল পরিব্যাপ্ত,
কখনও উঁচুতে উঠে যায় আবার নেমে আসে
নামে আবার ওপরে ছড়াতে।
অবশেষে এই বিক্ষোভের অবসান, প্রশমিত হয় ঝড়,
বিষণ্ণতা ও আনন্দে বাজে সঙ্গীত, আমার মুগ্ধস্বর।
এইভাবে উষ্ণ ঘনিষ্ঠতার, নরম আবেশে
থাকে জীবন, থাকে আত্মা যাদুমন্ত্রের বন্ধনে,
আমার মনে থেকে ভেসে যায় ছায়া
তোমার ভালোবাসার অগ্নিস্পর্শে।
ভালোবাসার মূর্তি তখন আরো দীপ্ত হয়,
আমার মাধুর্যে স্রষ্টার হৃদয়।
অনুবাদ: রথীন চক্রবর্ত্তী
সত্যের সূর্যকে
বাতিদান আলো দেয় জ্যোতি ছড়ায় নক্ষত্র,
হৃদয়ের গভীরে আছে দ্যুতি, ঝিকমিক করে সৌন্দর্য,
আত্মার প্রভা, উজ্জ্বল দীপ্তি—
কখনোই যায় না দেখানো
সত্যের সূর্যকে যেমন পারো।
প্রত্যেক কনেরই যেমন আছে স্বামী
সত্যের সূর্য তুমি নিজেকেই বলতে পারো
তবুও এও ঠিক, সূর্যকেও তো হয় ছায়া দিতে।
অনুবাদ: রথীন চক্রবর্ত্তী
এক যোদ্ধা নায়ককে মনে রেখে
এখানে খোঁজো, সেখানে খোঁজো, খুঁজে বেড়াও যেখানেই
অবাক হয়ে দেখবে তুমি, যোদ্ধা এবং নায়ক, উঠে আসে দুজনেই।
তার নাচ, তার কথা সবকিছুই ঠিকঠাক আধুনিক,
তবু প্রতিরাতে তাকে দংশন করে সেই কীট পৌরাণিক।
অনুবাদ: রথীন চক্রবর্ত্তী
অন্বেষণ
আমি জাগি, নিজকে সকল শিকল মুক্ত ক’রে;
‘কোথা যাবে?’ ‘খুঁজব নতুন বিশ্ব আমার তরে।’
‘বুঝি দুর্লভ এখানে সজীব মুক্ত তৃণাঞ্চল,
নিুে সাগর, উর্ধ্বে খেলায় মত্ত তারার দল।’
‘জানি, বোকা, আমি আবার চাইছি নাকি যেতে
ঠুকতে শিলা-পাথর দূরে ঈথার তরঙ্গিতে?’
‘ওরা সবাই বন্দী তীব্র বধির যন্ত্রণাতে,
ভালোবাসার শব্দ দিয়ে ওরা শিকল গাঁথে।’
ভেতর থেকে জানি জগত জাগবে আমার মতে,
বাধ্য হবে ভালবেসে বক্ষে নত হ’তে।
আমার বক্ষ শেণিত থেকেই এসেছে এ নির্ঝর,
আমার আত্মার শ্বাসে উর্ধ্বাকাশে ঈথার নিথর।
আমার সাধ্যমতো আমি বেরিয়েছি ঘুরে,
ফিরে, উর্ধ্বে-নিম্নে মেলেছি পৃথিবীটিরে।
তারই মাঝে লাফিয়েছে সূর্য, তারা নিয়ে,
জ্বলছে বজ্রশিখা, ফের গিয়েছে তলিয়ে।
অনুবাদ: নির্মলেন্দু গুণ
জেনীর জন্য শেষ চতুর্দশপদী
এক.
যাও নিয়ে যাও, নিয়ে যাও সেই গানগুলি মোর রাণী
যারা কোমল ভালোবাসায় লুটায় তোমার পায়ে,
যেথায় সুরে বক্ষ ভ’রে গানের বীণাখানি
মুক্ত করে আত্মা নিত্য দীপ্তরশ্মিছায়ে।
গানের প্রতিধ্বনি যদি হ’তো প্রভাবশালী
নাড়াতো সে ইচ্ছা তোমার মধু-সমর্পণে,
যেন তোমার শিরা প্রেমে স্পন্দিত হয় খালি
দোলে তোমার গর্বিনী প্রাণ আবেগী কম্পনে।
আমি তখন দূরের থেকে যেতাম তোমায় দেখে
জয় তোমাকে কোন্ অরূপে উদ্ভাসিত করে,
মত্ত হতাম কঠিন রণে তখন আগের থেকে,
আমার সুর সে উড়তো আরো উর্ধ্বে ডানা রেখে
বিবর্তিত, স্বাধীনতার সুরে মাতাল ক’রে
কাঁদত আমার গানের বীণা মধুর ব্যথা মেখে।
দুই.
শব্দ হলো মিথ্যা, শূন্য ছায়া, এর বেশি নয়
জীবন সচল, তাকে পূর্ণ দেখায় সবদিকে
ক্লান্ত মৃত, তোমার ভিতর ঢালব আমি জেনো
আমার মাঝের লুকায়ত সঞ্জীবনীটিকে।
ঈর্ষাকাতর ঈশ্বরেরা সত্যি অবাক বনে
পলকবিহীন চোখে যখন মানবগ্নি দেখে;
চিরদিন এই খেটে খাওয়া গরিব মানুষেরাই
জানি বুকের রক্তকে দেয় শব্দের গায়ে মেখে।
সাহসীস্পন্দনে যদি মনস্কাম সে জাগে,
আত্মার অমৃত প্রভা যদি প্রজ্বলিত হয়,
দুঃসাহসে তোমার জগত জড়াবে সংরাগে,
সিংহাসনের আসন ছেড়ে আসবে তুমি নেমে
সৈকতচ্যুত হবে তোমার নৃত্যমগ্ন হাওয়া,
সুপক্ক এক বিশ্ব মাথা তুলবে তোমার প্রেমে।
অনুবাদ: নির্মলেন্দু গুণ
কবিতাগুলো পুনঃপ্রকাশ করা হলো।
-সম্পাদক
দারুন হয়েছে৷
উত্তরমুছুন