True believers in fakery. Photo by Ben Brooks/Flickr |
মূলঃ ড্যানিয়েল ডে’নিকোলা
অনুবাদঃ শাহারিয়ার জিম
যা ইচ্ছা তাই বিশ্বাস করার অধিকার আমাদের আছে কি? এইরকম একটা সিউডো(ছদ্ম) অধিকার, ইচ্ছাকৃতভাবে অজ্ঞ থাকতে চাওয়া ব্যক্তিদের মোক্ষম অস্ত্র হিসাবে কাজ করে প্রায়শই, ধরেন কাউকে আপনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রমানসহ আর্গুমেন্ট দিয়ে কোনঠাসা করে ফেললেন, তখন সে বলে বসলোঃ “আমি বিশ্বাস করি জলবায়ু পরিবর্তন হইতেছেনা, এইটা একটা ভাওতা, এবং এইটা বিশ্বাস করার অধিকার আমার আছে!” কিন্তু, এমন কোনো অধিকার বলতে কি আসলেই কিছু আছে?
bindumag.com বিন্দু
বেশ কিছু ক্ষেত্রে “জানতে চাওয়ার অধিকার” আমাদের আছে, এই বিষয়ে আমরা নিশ্চিত এবং একমত। আমার কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত থাকার অধিকার আমার আছে, ডাক্তারের কাছ থেকে আমার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জেনে নেয়ার অধিকার আছে, পরীক্ষায় কত নাম্বার পেলাম, সেটা জানার অধিকার আছে, কেউ আমার নামে মামলা করলে মামলার চার্জ কী কী, কে মামলা করলো, এগুলা সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার অধিকারও আছে, ইত্যাদি আরও এমন বিষয় আছে। কিন্তু বিশ্বাস মানেই জ্ঞানলাভ না, বিশ্বাস করা মানেই কোনোকিছু সম্পর্কে “জানা” হয়না।
bindumag.com বিন্দু
কোনো কিছু বিশ্বাস করা মানে ঐটাকে সত্য হিসেবে গ্রহণ করা। ডাকসাইটে এনালিটিক ফিলোসফার, জি. ই. মুর যেমন একবার ব্যাখ্যা করছিলেনঃ “বাইরে তো বারিশ হইতেছে, কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা যে বারিশ হইতেছে” - এরকম কথাবার্তা অবশ্যই অর্থহীন, অযৌক্তিক এবং কিম্ভুতকিমাকার। বিশ্বাস “সত্য” হইয়া উঠতে চায় - কিন্তু বিশ্বাস মানেই “সত্য” না। বিশ্বাস মিথ্যা হইতে পারে, সঠিক প্রমান এবং যুক্তির সামনে বিশ্বাস কাবু হইয়া ভেঙে যাইতে পারে। কিছু বিশ্বাস নৈতিকতা বিরোধীও হইতে পারে। এর মধ্যে আছেঃ যেসব বিশ্বাস লিঙ্গবৈষম্যের সাপোর্ট করে, বর্ণবাদী হয়, সমকামিতা নিয়া ভয় জাগায়; বা ধরেন কেউ বিশ্বাস করে, বাচ্চাগো মানুষ করার জন্য মাঝেসাঝে ধুমায়া পিটাইলে তাতে ক্ষতি নাই, বুইড়া মানুষরে একটা নিদির্ষ্ট বয়সের পর স্বেচ্ছামৃত্যু দিয়া মাইরা ফেলানো উচিত, জাতিগত নিধন(ethnic cleansing) রাজনৈতিক সমাধান হইতে পারে, এবং আরও অনেক রকমের বিশ্বাস। এইসব বিশ্বাসগুলা যদি আমাদের কাছে অনৈতিক মনে হয়, তাইলে এসব বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে কাজগুলা করা হয়, যে সিদ্ধান্তগুলা নেয়া হয়, সেগুলাও অনৈতিক, এবং বিষয়টা এখানেই থামেনা আসলে, আরেকটু সামনে আগায় এইটা, সেটা হচ্ছে, শুধু কাজ বা সিদ্ধান্তই অনৈতিক নয়, বরং এইসব বিশ্বাসের যে “বিষয়বস্তু” (content) সেগুলাওএর মধ্যে থাকে, পাশাপাশি এসব বিষয় “বিশ্বাস করা” এবং বিশ্বাসী, পুরো কর্তা এবং কার্যই অনৈতিক হইয়া উঠতে পারে।
bindumag.com বিন্দু
উপরোক্ত সিদ্ধান্তগুলা মেনে নিলে, এরকমটা মনে হইতে পারে যে বিশ্বাস করাটা এক ধরনের ঐচ্ছিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বিশ্বাস আসলে বেশিরভাগ সময়েই এক ধরনের মানসিক অবস্থা, এক প্রকার মনোভাব। ব্যক্তিগত মূল্যবোধের বিষয়গুলার মত কিছু বিশ্বাস আমরা বেশিরভাগ সময়েই, আমাদের পরিবার, বাবা-মা এদের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাই, কিংবা আমাদের আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে পাই নিজেদের অজান্তেই, অথবা কোনো প্রতিষ্ঠান/অথোরিটি আমাদের উপরে সেগুলা আরোপ করে দেয়, অথবা পপুলার সেক্টরের আলাপ শুইনা আমরা বিশ্বাস করতে থাকি। একারনে আমার মনে হয়, কোনোকিছুতে বিশ্বাস করাটা আসলে সমস্যাজনক নয়, বিষয়টা সমস্যাজনক এবং অনৈতিক তখন হইয়া উঠে, যখন আমরা উক্ত বিশ্বাসের ক্ষতিকর প্রভাব জানার পরেও, সেটাকে ইচ্ছাকৃতভাবেই আকড়ে ধইরা পড়ে থাকতে চাই।
bindumag.com বিন্দু
যদি কোনো বিশ্বাস অনৈতিক বিচার করা হয়, তাহলে সেটারে মিথ্যাও ভাবা হয়। একটা জাতি অন্য জাতির থেকে নিচু স্তরের এইটা শুধুমাত্র একটা অনৈতিক বিশ্বাস বা বর্ণবাদী বিশ্বাসই নয়, এইটা একইসাথে একটা মিথ্যা ধারনা, যদিও বর্ণবাদে বিশ্বাসী ব্যক্তির কাছে এইটা মিথ্যা না। একটা বিশ্বাস মিথ্যা হওয়ার জন্য, বিশ্বাসটা অনৈতিক হওয়া এক ধরনের প্রয়োজনীয় শর্ত, কিন্তু যথেষ্ট শর্ত না; অন্যদিকে, কোনো বিশ্বাসের কদার্যতাও ওই বিশ্বাসটা অনৈতিক হওয়ার জন্য যথেষ্ট শর্ত হিসেবে কাজ করেনা। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, অনৈতিক সত্যের অস্তিত্ব অবশ্যই আছে, কিন্তু সেগুলায় বিশ্বাস করাটা অনৈতিক না; এই ধরনের বিশ্বাসের নৈতিক কদার্যতা আসলে এইটা বুঝায় যে, দুনিয়ার কিছু কিছু বিষয় এমন কদর্য, এবং দুনিয়াটা যে এমন কদর্য হইতে পারে, এইটা বিশ্বাস করা কোনো সমস্যাজনক বিষয় না।
bindumag.com বিন্দু
গোঁড়া বিশ্বাসী লোকজনের পক্ষ থেকে প্রায়ই একটা প্রশ্ন ছুড়ে মারা হয়, “আমি কী বিশ্বাস করবো না করবো, সেইটা আপনি আমারে বলার কে?” কিন্তু এই ধরনের প্রশ্নে আসলে গোড়াতেই গলদ আছে, এরকম প্রশ্ন করা মানে, সেই ব্যক্তি এইটা ধইরা নিয়া প্রশ্ন করতেছে যে, বিশ্বাস আসলে যেকোনো অথোরিটির ব্যাপার। বাস্তবতার বা রিয়ালিটির জায়গাটা এখানে একেবারে উপেক্ষ রাখা হয় তাহলে। বিশ্বাসের ব্যাপারটাকে দার্শনিকরা আসলে দেখে, দুনিয়ার সাথে নিজের মনস্তত্ত্বরে খাপ খাওয়ানোর একটা প্রক্রিয়া হিসেবে। আমাদের বিশ্বাসের মাধ্যমেই আমরা বাস্তব জগতটারে দেখি- এবং এইজায়গাতেই আসলে বিশ্বাসের বিষয়টা আরও বেশি গোলমাল পাকায়। বিশ্বাস বেপরোয়া হইতে পারে; আরও নিদির্ষ্ট করে বললে, এমন অনেক বিশ্বাস আছে যেগুলা আসলে আমরা কোনো দায়ীত্ববোধ ছাড়াই বিশ্বাস করি এবং লালন করি নিজেদের মাঝে। কেউ হয়তো কোনো প্রমান ছাড়াই পরচর্চায় লিপ্ত হইতে পারে, উড়োকথায় বিশ্বাস করতে পারে, অথবা কোনো উইড়া আসা সোর্স থেকে একটা কিছু বিশ্বাস করেই ওইটা নিয়া প্রশংসায় গদগদ হইতে পারে; অন্যের সাথে নিজের বিশ্বাসের সামঞ্জস্যতার জায়গাটা অবহেলা করতে পারে, আকাশকুসুম চিন্তায় ডুইবা থাকাটা বেছে নিতে পারে, অথবা কোনো কন্সপিরেসি তত্ত্বের পক্ষপাতি হইতে পারে।
bindumag.com বিন্দু
“যেকারও ক্ষেত্রেই, যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া কোনো কিছু বিশ্বাস করাটা সবসময় এবং সকল পরিস্থিতিতেই একটা ভুল কাজ” - ঊণবিংশ শতাব্দীরগণিতবিদ এবং দার্শনিক উইলিয়াম কে. ক্লিফোর্ডের এরকম কঠোর স্ট্যান্ডের জায়গায় আমি আবার ফিরে যাইতে চাচ্ছিনা। ক্লিফোর্ড যেটা প্রতিরোধ করতে চাইছিলো, সেটা হচ্ছে বেপরোয়া “অতিবিশ্বাস”, যেখানে আকাশকুসুম চিন্তা এবং অন্ধবিশ্বাস অথবা আবেগের(প্রমানের তুলনায়) প্রাধান্যই বেশি দেয়া হয় বিশ্বাসকে জাস্টিফাই করার ক্ষেত্রে। কিন্তু তার স্ট্যান্ডটা বেশিই কঠোর। যেকোনো জটিল সমাজেই, একজন ব্যক্তিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রের সাক্ষ্য, বিশেষজ্ঞের বাছবিচার এবং সর্বোৎকৃষ্ট প্রমানের উপর ভিত্তি করেই চলতে হয়। তাছাড়াও, ১৮৯৬ সালের দিকেই, উইলিয়াম জেমস এমনটা ব্যাখ্যা করে গেছে যে, জগত ও মানুষ সম্পর্কে আমাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাসই আসলে যথেষ্ট প্রমান ছাড়াই গড়ে ওঠে। এরকম পরিস্থিতিতে আসলে একজনের “বিশ্বাসের ইচ্ছা” ব্যাপারটার উপরেই ব্যক্তির বিশ্বাস নির্ভরশীল।
bindumag.com বিন্দু
উইলিয়াম জেমস তার “The Varieties of Religious Experience” কাজের মাধ্যমে এইটা দাবী করেছিলো যে, “বিশ্বাসের অধিকার” এর মাধ্যমে একধরনের ধর্মীয় সহনশীলতার জায়গা তৈরী করা যায়। যেসব প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে অবিশ্বাসীদেরকে নির্যাতন এবং দমন করার যুদ্ধরে সাপোর্ট করা হইছে, সেগুলা বন্ধ করা যাইতে পারে একধরনের মিউচুয়াল “বিশ্বাসের অধিকার” এর মাধ্যমে। অবশ্য তা সত্ত্বেও, চরম প্রকারের অসহিষ্ণু বিশ্বাসগুলারে সহিষ্ণুতার মাধ্যমে ট্যাকেল করা যায়না শেষ পর্যন্ত। অধিকারেরও সীমাবদ্ধতা আছে এবং অধিকারের সাথে দায়ীত্বও আসে।
bindumag.com বিন্দু
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, এই বিশ্বাসের অধিকার ব্যাপারটাকে অনেকেই নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করে দায়ীত্ব এড়ায়া যাবার জন্য। ইচ্ছাকৃতভাবে না জাইনা বইসা থাকা, ভুয়া জ্ঞান, মিছা কথায় বিশ্বাস করা, এই ব্যাপারগুলার রক্ষক হইয়া উঠতে পারে বিশ্বাসের অধিকার। “আমার যেকোনো কিছুই বিশ্বাস করার অধিকার আছে” এই ধরনের কথাবার্তা উইলিয়াম জেমসও সাপোর্ট করেনাই। একটু ওইসব লোকেদের কথা ভাবেন, যারা ভাবে চাঁদে অবতারনা আমেরিকার সাজানো নাটক, স্যান্ডি হুক স্কুলের গোলাগুলি সরকারের সাজানো নাটক, বারাক ওবামা মুসলমান, পৃথিবী সমতল, সাঈদীর মুখ চাঁদে দেখা যায়, অথবা জলবায়ু পরিবর্তন একটা ধাপ্পাবাজি। এই ধরনের ব্যাপারগুলাতে, বিশ্বাসের অধিকার একটা নেতিবাচক অধিকার হিসেবে আবির্ভূত হয়। যার ফলাফল দাড়ায়, আলোচনা বা “ডায়ালগ” এর সমাপ্তি, বিশ্বাসরে চ্যালেঞ্জের মধ্যে রাখার ব্যাপারটাকে এড়ায়া যাওয়া, নিজের বিশ্বাসকেই আকড়ায়া ধইরা বইসা থাকা। এমন অবস্থায় মনস্তত্ত্ব বদ্ধ হইয়া যাইতে বাধ্য, জানার জন্য জ্ঞান অর্জনের জন্য মনস্তত্ত্বকে মুক্ত অবস্থায় রাখা যায়না। তারা হইতে পারে খাঁটি বিশ্বাসী, কিন্তু সত্যে বিশ্বাসী না।
bindumag.com বিন্দু
ইচ্ছাশক্তির মতই, বিশ্বাসও ব্যক্তিস্বাধীনতার এক প্রকার মৌলিক এবং চরম ক্ষেত্র। কিন্তু ক্লিফোর্ড যেমনটা বলে গেছেনঃ “কোনো ব্যক্তির বিশ্বাসই আসলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকেনা, যা শুধু ওই ব্যক্তির উপরেই প্রভাব ফেলে”। মোটিভ, চয়েজ, অ্যাটিটিউড, অ্যাকশন, এগুলারে আকার-আকৃতি দেয় বিশ্বাস, এগুলার উপরে বিশ্বাসের উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিদ্যমান। বিশ্বাস করা এবং জ্ঞান অর্জন করা এই দুইটাই একপ্রকার জ্ঞানতাত্ত্বিক ক্ষেত্রের মধ্যে অবস্থান করে, যেটার কিছু নিদির্ষ্ট ফলাফলও আছে যা বাস্তবজীবনে প্রভাবশালী। বিশ্বাস করা, বিশ্বাস অর্জন করা, বিশ্বাস ধারন করা, এবং বিশ্বাস বর্জন করা, এই সবকিছুরই নিদির্ষ্ট নৈতিকতা আছে, যেটার কারনে বিশ্বাসের অধিকার বিষয়টা উৎপন্ন হয় আবার সেই অধিকারের সীমাবদ্ধতাও থাকে। যদি কোনো বিশ্বাস মিথ্যা হয়, অনৈতিক হয়, দায়ীত্বজ্ঞানহীন হয়, তাহলে সেগুলা বিপদজনকও হইয়া ওঠে। এবং সেগুলার ক্ষেত্রে বিশ্বাসের অধিকারও না থাকাই বাঞ্ছনীয়।
ড্যানিয়েল ডে’নিকোলা কে?
যুক্তরাষ্ট্রে পেনিসিলভেনিয়া’র গেটিসবার্গ কলেজে, দর্শন বিভাগে দায়ীত্বরত এমেরিটাস অধ্যাপক। ২০১৭ সালের অগাস্টে এমআইটি প্রেস থেকে তার প্রকাশিত বই “Understanding Ignorance: The Surprising Impact of What We Don't Know” এর ভিত্তিতে Aeon ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় তার লেখা উপরোক্ত প্রবন্ধটি।
কুড়িগ্রাম থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় কুড়িগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কোনো লেখা পেলাম না৷ অথচ ঢাকার আঞ্চলিক ভাষার লেখা জ্বলজ্বল করছে৷ কিম আশ্চর্যম!
উত্তরমুছুনকুড়িগ্রামের ভাষা? হা!
মুছুন