লিখেছেন: সৈয়দ সাখাওয়াৎ
“বিন্দু” এক যুগ পার করছে। নিঃসন্দেহে একটি ছোট কাগজের জন্য দীর্ঘ পথ। “বিন্দু” টিমকে ধন্যবাদ নয় বরং কৃতজ্ঞতা জানাই। এই চরম বিলয়ের কালে একটি ছোট কাগজ লক্ষ্য স্থির রেখে বারো বছর কাটাতে পারা একটি বড় ঘটনা। এস্টাব্লিশমেন্টের বিপরীতে কবিতার নিজস্ব জগৎ তৈরী করা আর এর চাষবাস সত্যিকার অর্থে ওতো সহজ নয়। কেন্দ্র থেকে দূরে, কোনো সুযোগ-সুবিধার আওতায় না থেকে; সুদূর মফস্বল শহর কুড়িগ্রাম থেকে গত বারো বছরে ২১ টি সংখ্যা প্রকাশ করা এক দুঃসাহসই বটে। সত্যি এটাই যে, ছোট কাগজ তার বড় দায়িত্বটুকু ঠিকভাবেই পালন করে যাচ্ছে। বেশ উঁচু মাপের সঙবেদনশীলতা আর একাগ্রতা না থাকলে এটা সম্ভব হয় না।
আমার সাথে বিন্দু’র সম্পর্ক হওয়াটা অদ্ভুতই বলা চলে। এই দলের কারো সাথেই আমার বিশেষ আলাপ-পরিচয় কোনোকালেই ছিলো না। সম্ভবত ২০১৪ কী ১৫ সালের কোনো এক সময়ে বিন্দুর সম্পাদক কবি সাম্য রাইয়ান মুখবইতে আমার ফোন নম্বর চাইলেন (তাঁর সাথে আমার আজ পর্যন্ত মুখোমুখি দেখা হয়নি, কেবল ফোনালাপ এবং বার্তালাপ)। তাঁকে আমি মুখবই মারফত ওইটুকুই জানতাম। সাথে সাথেই ফোন এলো। আমি বুঝে নিলাম এটা সাম্যই হবেন। রিসিভ করতেই একটা হাসি হাসি কণ্ঠস্বর যেভাবে ডেকে উঠলো “ভাই, কেমন আছেন?” (এটা আমার স্মৃতিকে নাড়া দেয় এখনো)। সেই সরল কণ্ঠস্বর একই আছে, শুধু আমার দিক থেকে আপনি থেকে তুমি-তে সম্পর্ক পাল্টেছে। প্রাথমিক আলাপ শেষেই সাম্য বললেন, আমরা আপনার লেখা ছাপাতে চাই আমাদের ছোট কাগজে। ওই সময়টাতে আমার লেখা কোথাও ছাপা হয় না। আমি অনুল্লেখ্য। কিছুটা অবাক হয়েই জিজ্ঞেস কললাম, “আমার লেখা নিয়ে আপনার আগ্রহের কারণ”। ওপাশ থেকে বললেন, “লেখা আবিষ্কার করছি”।
ততদিনে সম্ভবত বেশ কয়েকমাস মুখবই-তে আমাদের সম্পৃক্ততা। নানা কথার মাঝে আমি লেখা দেবো বলে জানালাম। এভাবেই বিন্দু’র সাথে আমার যোগাযোগ। লেখকসারিতে নিয়মিত হলাম। এরমাঝে আমার একটি দীর্ঘ সিরিজ কবিতা সাম্য উদ্যোগ নিয়ে ছাপালেন “চারবাক” ব্লগজিন-এ। তাঁর আগ্রহ এটা একটি পকেট বুক করবেন। এরপর আরো বড় উদ্যোগ নিয়েছে বিন্দু টিম। বিন্দু’র সহযোগী প্রকাশনা “বাঙ্ময়” থেকে আমার দ্বিতীয় কবিতার বই “পাতাচূর্ণ উড়ে যাবার সাথে সাথে” প্রকাশিত হয়। এর শতভাগ উদ্যোগ ও উদ্যমের কারিগর হলেন সাম্য। নিজ দায়িত্বে সবকিছু করে ২০১৭-এর বইমেলায় বইটি প্রকাশ করেছে। রয়্যালটিও দিয়েছে (আশ্চর্যজনক হলেও সত্য)। পরবর্তী সংস্করণ করবেন এমন ইচ্ছাও তিনি দেখিয়েছেন। আমি রাশ টেনেছি।
টিম বিন্দু’র সাহসও বিরাট। গত বইমেলায় তারা প্রথম স্টল বরাদ্দ পেয়েছিলো। বাক স্বাধীনতা বিরোধী একাডেমি’র বক্তব্যের বিরুদ্ধে স্টলে ব্যানার টাঙিয়ে সেটাও খোয়ালো-কিন্তু মাথা নত করেনি। সাবাস! সাবাস! বড় কঠিন এ’লড়াই। প্রাতিষ্ঠানিক বলয়ের বাইরে বিকল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার লড়াই যেমন কঠিন তেমনি কষ্টকর, বন্ধুহীন। এ লড়াইয়ে বিন্দু’র সদস্যরা বুক টান টান করে দাঁড়িয়ে-এক যুগ পূর্তি করতে যাচ্ছে, তাদের সেলাম। ভাবতে ভালো লাগে তাঁদের যাত্রাপথে যুক্ত থাকতে পেরেছি, ভবিষ্যতেও থাকতে চাই।
বিপরীত বয়ন থাকা সমাজের অগ্রগতির জন্য খুবই জরুরি। কবিতা এবং কবি আবিষ্কারের মিশন-এ নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে সাহিত্যের ভিন্ন ভিন্ন চিন্তাগুলো সংগ্রহ ও সমন্বয় করার তাগিদ দিতে চাই। মলাটের বাইরের লড়াইটাও বিরাট। বেঁচে থাকতে হবে হাজার বছর। আপাতত পঁচিশের পথ চেয়ে আছি...শুভ হোক।
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
মন্তব্য