অনুবাদঃ অসীম নন্দন
বছরখানেক আগে আমি এবং আরও কয়েকজন লেখক ভারতে সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের সাথে যুক্ত ছিলাম, আর সবকিছুর মাঝে সমসাময়িক এবং নিকট সমসাময়িক ইংরেজ লেখকদের বেশ ভালো সংখ্যক কবিতা সম্প্রচার করেছিলাম – উদাহরণস্বরূপ এলিয়ট, হারবার্ট রিড, অডেন, স্পেনডার, ডিলান থমাস, হেনরি ট্রেচ, অ্যালেক্স কমফোরট, রবার্ট ব্রিজেস, এডমণ্ড ব্লানদেন, ডি এইচ লরেন্স। এটা সম্ভব হয়েছিল কেননা যারা কবিতাগুলা লিখেছিল তারাই তা সম্প্রচার করেছিল। এজন্যই এই অনুষ্ঠানটা (ক্ষুদ্র ভাবে এবং পরোক্ষভাবে রেডিও সংগ্রামে একরকম বিপ্লব) হয়েছিল যা এইখানে বর্ণনার কোনো প্রয়োজন নাই, কিন্তু যে কথাটা বলতেই হবে তা হল আমরা যে ভারতীয় শ্রোতাদের জন্য ব্রডকাস্ট করতেছিলাম তা আমাদের কলাকৌশলকে ব্যাপ্ত করে প্রেরণা দিয়েছিল। দরকারি পয়েন্ট হল আমাদের সাহিত্য বিষয়ক সম্প্রচারের মুল টার্গেট ছিল ইন্ডিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী, বিরোধীপক্ষীয় শ্রোতা, নাগাল বহির্ভূত সেই সব মানুষ যারা যেকোনো কিছুকে ব্রিটিশ প্রোপাগান্ডা বলে ব্যাখ্যা করতো।এটা আগে থেকেই জানা ছিল খুব জোর হাজারখানেক শ্রোতা আমরা আশা করতে পারি, আর স্বাভাবিক ভাবেই বেতারে যতটা সম্ভব তার থেকেও “অতি বিদ্বান” হিসেবে আমাদের পরিচিতি হয়ে গিয়েছিল।
bindumag.com বিন্দু
আপনি যদি এমন লোকদের কাছে কবিতা ব্রডকাস্ট করেন যারা আপনার ভাষা বোঝে কিন্তু আপনার কালচারাল ব্যাকগ্রাউণ্ডকে শেয়ার করে না, নির্দিষ্ট সংখ্যক মন্তব্য আর জবাবদিহি তখন অপরিহার্য, আর আমরা যে ফর্মুলায় ব্রডকাস্টটা চালিয়েছিলাম তা অনেকটা মাসিক সাহিত্য ম্যাগাজিনের মতনই। সম্পাদক কর্মীরা তাদের অফিসে বসে থাকতো, আলোচনা করতো পরের নাম্বারে কী চালানো যায়। কেউ হয়তো একটা কবিতা সাজেস্ট করতো, অন্য কেউ অন্য একটা, সংক্ষিপ্ত আলোচনা হতো আর তারপরই কবিতা একাই এসে যেত, ভিন্ন স্বরে তা পাঠ করা হতো, বিশেষ করে লেখক নিজেই পাঠ করতো। এই কবিতাই স্বাভাবিক ভাবে আরেকটা কবিতা নিয়ে আসতো, আর এভাবেই অনুষ্ঠানটা চলতো, সাধারণত যেকোনো দুইটা বিষয়ের মধ্যে আধা মিনিটের আলোচনা হতো। আধা ঘণ্টার অনুষ্ঠানের জন্য ছয় জনের কণ্ঠস্বরই উপযুক্ত বলে বোধ হয়েছিল। এই রকমের অনুষ্ঠানকে অবশ্যম্ভাবী ভাবেই কিছুটা গঠনবিহীন করতে হয়েছিল, কিন্তু সবকিছু মিলিয়ে অনুষ্ঠানটা একটা নির্দিষ্ট থিমেই আবর্তিত ছিল। যেমন ধরুন, কাল্পনিক ম্যাগাজিনের কয়েকটা সংখ্যা যুদ্ধকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। এডমণ্ড ব্লাণ্ডেনের দুইটা কবিতা, অডেন এর “September 1941”, জি এস ফ্রেজার এর দীর্ঘ কবিতা (“A Letter to Anna Ridler”) এর বাছাই করা কিছু অংশ, বায়রন এর “Isles of Greece” আর টি ই লরেন্স এর “Revolt in the desert” এর বাছাই করা অংশ অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এই হাফ ডজন আইটেম, তর্ক বিতর্কের সাথে তাদের অগ্রসর আর অনুসরণ করতেছিল, যা কারণবশত যুদ্ধ সম্বন্ধীয় দিকেই আচ্ছন্ন ছিল। কবিতাগুলা আর গদ্যের বাছাই করা অংশগুলা ব্রডকাস্ট এর প্রায় ২০ মিনিট নিতো, আলোচনা গুলা নিতো ৮ মিনিট। এই ফর্মুলাটাকে অনেকটা হাস্যকর লাগতে পারে আর অধিকতর পিঠ চাপড়ানো লাগতে পারে, কিন্তু এইটার সুবিধা হলো নিছক নির্দেশের উপাদান, টেক্সট বইয়ের মোটিফ, অপরিহার্য ভাবেই যদি কেউ সিরিয়াস কবিতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে কঠিন কবিতা ব্রডকাস্ট করতে যায়, তখন অনুষ্ঠানকে কম ভীতিজনক করতে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার মতন তা প্রদর্শিত করা লাগে।
bindumag.com বিন্দু
বিভিন্ন বক্তারা আপাতদৃষ্টিতে একে অপরকে যা বলে থাকেন তা তারা তখন বাস্তবে শ্রোতাদেরও বলতে পারেন। এই রকম ভাবে আপনি অন্তত একটা কবিতার একটা প্রসঙ্গ তুলে দিতে পারেন, যা হয়তো সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে ধরা যেতো না। কিন্তু অবশ্যই আরও পদ্ধতি আছে। মিউজিকের মাঝে কবিতা সেট করার পদ্ধতিটা আমরা খুব বেশি ব্যবহার করতাম। ঘোষণা করা হতো কয়েক মিনিটের মাঝেই “অমুক সময়ে অমুক কবিতা” ব্রডকাস্ট করা হবে; তারপর হয়তো মিউজিক বাজতো এক মিনিট, তারপর তা কবিতায় মিলিয়ে যেত, কোনো রকম টাইটেল বা ঘোষণা ছাড়াই, তারপর হয়তো মিউজিক আবার ফিরে আসতো এবং এক দুই মিনিট বাজতো – সমস্ত ব্যাপারটা হয়তো ৫ মিনিট সময় নিতো। সঠিক মিউজিক চয়েজ করাটা জরুরী, কিন্তু অনাবশ্যক হলেও বলা লাগে, মিউজিকের আসল উদ্দেশ্য হল বাকী অনুষ্ঠান থেকে কবিতাকে নিঙড়ে বের করে আনা। এই পদ্ধতিতে আপনি, একটা নিউজ বুলেটিন ছাড়াও ৩ মিনিটে একটা শেক্সপিয়র সনেট বলতে পারবেন, আমার কানে, তা যেকোনো অরুচিকর অসংলগ্নতাতেই।
bindumag.com বিন্দু
যে প্রোগ্রামগুলার কথা বলতেছিলাম তাদের হয়তো গ্রেট ভেল্যু বলতে কিছু নাই; কিন্তু আমি সেই গুলাকে মেনশন করছি এই কারণে, আইডিয়াগুলা আমার এবং অন্যদের মাঝে আশা জাগিয়েছে যে, কবিতাকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য রেডিও একটা ভালো সম্ভাবনা। যে ব্যাপারখানায় আমি প্রথম তাড়িত হই তা-হলো, কবিতার লেখককে দিয়ে কবিতা ব্রডকাস্টিঙয়ে কেবলমাত্র শ্রোতাদের উপরই তার ইফেক্ট পড়ে না, কবির নিজের উপরেও কিছু পড়ে। আপনাদের হয়তো মনে আছে প্রায় এরকম ভাবেই ইংল্যান্ডে কবিতা সম্প্রচার হয়েছে আর সেখানে যারা পদ্য লেখেন তাদের অনেকেই উচ্চকণ্ঠে কবিতা পাঠের বিরোধীতা করেছেন। একটা মাইক্রোফোনের সামনে বসা, বিশেষত যদি তা রেগুলার ঘটে,কবি তার কাজের সাথে একটা নতুন সম্পর্কের পরিচয় পেয়ে থাকেন, অন্য ভাবে যা আমাদের সময়ে এবং দেশে মোটেও সহজলভ্য নয়। অকল্পনীয় ব্যাপার হল আধুনিক যুগে – বিগত ২০০ বছরে, বলা যায় মিউজিক কিংবা উচ্চারিত শব্দের থেকে কবিতা ন্যুনতম সংযোগ হয়ে গেছে। এর অস্তিত্বের জন্য একে মুদ্রিত হতে হয়, আর একজন কবির কাছে এটা আশা করা যায় না, যেমন, কীভাবে গান গাইতে কিংবা আবৃত্তি করতে হয় তা কবি জানবে অথচ কীভাবে সিলিং প্লাস্টার করতে হয় তা একজন আর্কিটেক্ট জানে। লিরিক্যাল এবং অলঙ্কারপূর্ণ কবিতা লেখা প্রায় স্থগিত আর যেকোনো দেশের সাধারণ মানুষগুলা, যারা পড়তে পারে , কবিতার প্রতি তারা প্রতিকূল হবে তা যেন এক্সপেক্টেড হয়ে গেছে। আর যেখানে একটা প্রতিবন্ধকতা থাকে তা সব সময়ই বৃদ্ধি পেতে থাকে, কারণ কবিতার কনসেপ্টই এরকম , প্রথমত তা মুদ্রিত হয়ে থাকে, কিছুটা বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাপার যা কেবল একটা মাইনর গোষ্ঠীর জন্য,দুর্বোধ্যতা এবং চতুরতাকে অনুপ্রাণিত করে। কয়জন লেখক আপাত প্রবৃত্তিগত ভাবে অনুভব করতে পারেন যে আমার কবিতায় নিশ্চয়ই কোনো গণ্ডগোল আছে যে-কারণে এক নজরেই তার মর্মার্থ বোঝা যায় না? এরকম প্রবণতাগুলাকে সংযত করা অসম্ভব হবে যদি-না সশব্দে কবিতা পাঠ ব্যাপারটা নরম্যাল করা যায়, আর রেডিওকে মিডিয়াম হিসাবে ব্যবহার করে এই ব্যাপারটা গ্রহণযোগ্য করে তোলা বেশ কঠিনই। কিন্তু রেডিওতে বিশেষ সুবিধা হল, সঠিক শ্রোতা বাছাই করার ক্ষমতা এবং স্টেজ ভীতি ও অস্বস্তিকে দূর করা, যা এইখানে অবশ্যই লক্ষ্যনীয়।
bindumag.com বিন্দু
ব্রডকাস্টিংয়ে আপনার শ্রোতা আনুমানিক কিন্তু অনির্দিষ্ট একজন। মিলিয়ন মানুষ হয়তো শুনতেছে, কিন্তু প্রত্যেকে একা শুনতেছে, কিংবা কয়েকজন সদস্য মিলে একটা ছোট দল আর আপনি তাকে পৃথকভাবে বলতেছেন এরকম অনুভূতি প্রত্যেকের থাকে(কিংবা থাকা উচিত)। তাছাড়া, কারণবশত অনুমান করা যায় আপনার শ্রোতারা সহানুভূতিশীল কিংবা অন্তত আগ্রহী, যদি কেউ বিরক্ত হয় তবে চটপট ভাবে একটা নব ঘুরিয়েই সে আপনাকে বন্ধ করে দিতে পারে। কিন্তু যদিও সম্ভবত সহানুভূতিশীল, আপনার উপর শ্রোতার কোনো ক্ষমতা নাই। এই ব্যাপারটা –তেই ভাষণ কিংবা লেকচার থেকে একটা ব্রডকাস্ট সিস্টেম পৃথক হয়ে থাকে। প্ল্যাটফর্মে, যারা পাবলিক স্পিকিং করে তারা জানে, শ্রোতাদের থেকে আপনার কণ্ঠস্বর ছিনিয়ে না লওয়া প্রায় অসম্ভব। সব সময় তারা অবশ্যই কয়েক মিনিটের মধ্যেই কিছু রেসপন্স করবে আর কিছু করবে না, আর হিসাবের সুবিধার্থে আপনি যা বলতে চাইবেন তাতে ফালতু লোকের মতো প্রায়ই বাঁধা পাবেন, এছাড়াও রিকোয়েস্ট আপনাকে যন্ত্রবৎ ব্যক্তির মতন হইচইপূর্ণ প্রচারের “পারসোনালিটি” বলে পরিচিতি দিবে। যদি তা না করে তাহলে, ফলাফল যা হয় তা হিমশীতল বিমুরতার মতন একটা আবহ। ভয়াবহ ব্যাপার হল, “কবিতা পাঠ” অনুষ্ঠান এরকম একটা ব্যাপার যেখানে শ্রোতাদের কেউ কেউ সব সময়ই বিরক্ত হয় কিংবা অকপটে বিরোধিতা করে আর তারা নব ঘোরানোর মতন সিম্পল কাজ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে না। আর প্রারম্ভে সমান কঠিন ব্যাপারটা হল থিয়েটার ভোক্তারা নির্বাচিত নির্দিষ্ট কেউ না – ইংল্যান্ডে এই ব্যাপারটা শেক্সপিয়রের উপযুক্ত পারফর্মেন্স লাভ করতে পারা অসম্ভব করে তুলেছে। বেতারে এই কন্ডিশনগুলা নাই। কবি ভাবেন যাদের কাছে কবিতা কিছুটা হলেও অর্থবহ তাদেরকেই তিনি পরিচয় করাইতেছেন কবিতার সাথে, আর একটা ব্যাপার হল যেসব কবিরা ব্রডকাস্টিঙয়ে চারুশিল্পের সাথে মাইক্রোফোনে কবিতা পাঠ করেন যদি তাদের সামনে উপস্থিত দর্শক থাকতো তবে তারা সমান ভাবে তা পারতেন না। যা বললাম তা বিশ্বাস করানোর যে ব্যাপারখানা এইখানে আসে তা আসলে তেমন বড় কিছু না।
পয়েন্টটা হলো এখন একটামাত্র রাস্তাতেই ব্যাপারটা সম্ভব যদি কবি এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করতে পারেন যাতে উচ্চস্বরে কবিতা পাঠ ব্যাপারটাকে একটা ন্যাচারাল স্বস্তিকর ব্যাপার লাগে, মানুষ আর মানুষের মাঝে একটা সাধারণ পরিবর্তন আসেঃ এছাড়া তিনি তার কাজকে কাগজের প্যাটার্নের বাইরে সাউণ্ড হিসেবেও ভাবেন। তাহলেই কবিতা আর সাধারণ মানুষের মাঝে সমন্বয়সাধন অনেকখানি নিকটতর হয়। ইতিমধ্যেই ইথার ওয়েভে কবিরা মৃত হয়ে আছেন, অবশিষ্ট সমাপ্তিতে যা কিছুই ঘটে থাকুক। যা-হোক অবশিষ্ট সমাপ্তিতে যা কিছুই ঘটতেছে তা উপেক্ষা করা যাবে না। দেখা যায় যে কবিতার সকল বিষয়কে আমি যদিও বলতেছি অস্বস্তিকর, প্রায় অপাঠ্য, তবুও কবিতাকে জনপ্রিয় করে তোলা একটা কৌশলপূর্ণ রণকৌশল, শিশুর গলায় এক ডোজ ওষুধ প্রাপ্তির মতন অথবা একটা নিগৃহীত সম্প্রদায়ের জন্য টলারেন্স প্রতিষ্ঠার মতন। কিন্তু অবস্থাটা দুর্ভাগ্যজনক কিংবা এরকমই কিছু। কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের সমাজে কবিতা হয়ত সবচেয়ে বেশি নিন্দিত শিল্প, একমাত্র শিল্প, বাস্তবিকপক্ষে, আমজনতা এই শিল্পের কোনো মূল্য নির্ধারণে অস্বীকার করে। অ্যারনল্ড বেন্নেট কমই অতিরঞ্জিত করেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন যে, ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলাতে একটা অগ্নিকাণ্ডের থেকেও “কবিতা” শব্দটা জনতার ভিড়কে তাড়াতাড়ি বিক্ষিপ্ত করে। আর আমি পয়েন্ট আউট করেছি, এই রকমের একটা ফাটল সহজেই বিস্তার-প্রবণ হয় এর অবস্থানের কারণে, আমজনতা অধিকতর এন্টি-পোয়েট্রি হয়ে যাইতেছে,কবিরা অধিকতর অহংকারী আর দুর্বোধ্য হয়ে যাইতেছে, যে পর্যন্ত না কবিতা ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাঝের দূরত্ব প্রাকৃতিক নিয়ম হিসাবে গৃহীত হয়, আদতে যদিও এইটা শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের সময়ে আর দুনিয়ায় তুলনামূলক ছোট্ট এলাকাতে বিলং করে।
আমরা এমন যুগে বেঁচে আছি যেখানে অধম অসভ্য মানুষ থেকে অত্যন্ত সুসভ্য দেশের গড়পড়তা মানুষ পর্যন্ত সকলেই নান্দনিক ভাবে নিচু মনের। ব্যাপারগুলার হালচাল স্বাভাবিক ভাবেই যেকোনো সচেতন কার্যকলাপে দুরারোগ্যময় দেখায়, আর অপর পক্ষে আশা করা হয় সমাজ যেন নিজেই নিজের ঐকতানে একটা সুশ্রী গঠন গ্রহণ করে। মার্কসিস্ট, এনারকিস্ট আর ধর্মবিশ্বাসীরা সকলেই আপনাকে এই কথাটাই একটু বৈচিত্র্যের সাথে বলবে, আর বিস্তৃত ভাবে এটা সন্দেহাতীত সত্য। আত্মিক আর অর্থনৈতিক কারণে আমরা যে কদর্যতার মাঝখানে বেঁচে আছি এই ব্যাপারটাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেবল বিপথগামী ট্র্যাডিশন নাম করে ব্যাখ্যা করা হয় না।কিন্তু এটা অনুসরণ না করে আমাদের বর্তমান কাঠামোর কোনো উন্নতি সম্ভব নয়, সমাজের সাধারণ মুক্তিতে সৌন্দর্যবোধ সংক্রান্ত উন্নয়ন তেমন কোনো দরকারি বিষয়ও নয়। কদর বেঁধে দেওয়াটা আশ্চর্যের বিষয়, যে কারণে শিল্পের সব চেয়ে অপছন্দের বিশেষ অবস্থান থেকে কবিতার মুক্তি এখন সম্ভব নয় আর মিউজিকের সমান টলারেন্স অর্জন করাও প্রায় অসম্ভব। কিন্তু একজনকে তো প্রশ্ন করা শুরু করতেই হবে, কোন পন্থায় আর ঠিক কোন ব্যপ্তিতে কবিতা অজনপ্রিয়? একদিকে, কবিতার এই যে অজনপ্রিয়তা যতটা হতে পারতো তা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু অপরপক্ষে বলা যায়, নিশ্চয়ই এটা অদ্ভুত পদ্ধতিতে কোয়ালিফাই হয়েছে। এখনও বহু সংখ্যক ফোক পোয়েট্রি(শিশুতোষ ছড়া ইত্যাদি) আছে যা বিশ্বব্যাপী জ্ঞাত এবং কোট করা হয় আর সেগুলা দিয়ে শুরু হয় প্রত্যেকের মনন গঠনের আংশিক পটভূমি। তাছাড়া কিছু সংখ্যক প্রাচীন গান আর লোকগাথা আছে যা কখনোই জনপ্রিয়তার বাইরে যায় নাই।
পয়েন্টটা হলো এখন একটামাত্র রাস্তাতেই ব্যাপারটা সম্ভব যদি কবি এমন একটা সিচুয়েশন তৈরি করতে পারেন যাতে উচ্চস্বরে কবিতা পাঠ ব্যাপারটাকে একটা ন্যাচারাল স্বস্তিকর ব্যাপার লাগে, মানুষ আর মানুষের মাঝে একটা সাধারণ পরিবর্তন আসেঃ এছাড়া তিনি তার কাজকে কাগজের প্যাটার্নের বাইরে সাউণ্ড হিসেবেও ভাবেন। তাহলেই কবিতা আর সাধারণ মানুষের মাঝে সমন্বয়সাধন অনেকখানি নিকটতর হয়। ইতিমধ্যেই ইথার ওয়েভে কবিরা মৃত হয়ে আছেন, অবশিষ্ট সমাপ্তিতে যা কিছুই ঘটে থাকুক। যা-হোক অবশিষ্ট সমাপ্তিতে যা কিছুই ঘটতেছে তা উপেক্ষা করা যাবে না। দেখা যায় যে কবিতার সকল বিষয়কে আমি যদিও বলতেছি অস্বস্তিকর, প্রায় অপাঠ্য, তবুও কবিতাকে জনপ্রিয় করে তোলা একটা কৌশলপূর্ণ রণকৌশল, শিশুর গলায় এক ডোজ ওষুধ প্রাপ্তির মতন অথবা একটা নিগৃহীত সম্প্রদায়ের জন্য টলারেন্স প্রতিষ্ঠার মতন। কিন্তু অবস্থাটা দুর্ভাগ্যজনক কিংবা এরকমই কিছু। কোনো সন্দেহ নেই যে আমাদের সমাজে কবিতা হয়ত সবচেয়ে বেশি নিন্দিত শিল্প, একমাত্র শিল্প, বাস্তবিকপক্ষে, আমজনতা এই শিল্পের কোনো মূল্য নির্ধারণে অস্বীকার করে। অ্যারনল্ড বেন্নেট কমই অতিরঞ্জিত করেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন যে, ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলাতে একটা অগ্নিকাণ্ডের থেকেও “কবিতা” শব্দটা জনতার ভিড়কে তাড়াতাড়ি বিক্ষিপ্ত করে। আর আমি পয়েন্ট আউট করেছি, এই রকমের একটা ফাটল সহজেই বিস্তার-প্রবণ হয় এর অবস্থানের কারণে, আমজনতা অধিকতর এন্টি-পোয়েট্রি হয়ে যাইতেছে,কবিরা অধিকতর অহংকারী আর দুর্বোধ্য হয়ে যাইতেছে, যে পর্যন্ত না কবিতা ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির মাঝের দূরত্ব প্রাকৃতিক নিয়ম হিসাবে গৃহীত হয়, আদতে যদিও এইটা শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের সময়ে আর দুনিয়ায় তুলনামূলক ছোট্ট এলাকাতে বিলং করে।
আমরা এমন যুগে বেঁচে আছি যেখানে অধম অসভ্য মানুষ থেকে অত্যন্ত সুসভ্য দেশের গড়পড়তা মানুষ পর্যন্ত সকলেই নান্দনিক ভাবে নিচু মনের। ব্যাপারগুলার হালচাল স্বাভাবিক ভাবেই যেকোনো সচেতন কার্যকলাপে দুরারোগ্যময় দেখায়, আর অপর পক্ষে আশা করা হয় সমাজ যেন নিজেই নিজের ঐকতানে একটা সুশ্রী গঠন গ্রহণ করে। মার্কসিস্ট, এনারকিস্ট আর ধর্মবিশ্বাসীরা সকলেই আপনাকে এই কথাটাই একটু বৈচিত্র্যের সাথে বলবে, আর বিস্তৃত ভাবে এটা সন্দেহাতীত সত্য। আত্মিক আর অর্থনৈতিক কারণে আমরা যে কদর্যতার মাঝখানে বেঁচে আছি এই ব্যাপারটাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেবল বিপথগামী ট্র্যাডিশন নাম করে ব্যাখ্যা করা হয় না।কিন্তু এটা অনুসরণ না করে আমাদের বর্তমান কাঠামোর কোনো উন্নতি সম্ভব নয়, সমাজের সাধারণ মুক্তিতে সৌন্দর্যবোধ সংক্রান্ত উন্নয়ন তেমন কোনো দরকারি বিষয়ও নয়। কদর বেঁধে দেওয়াটা আশ্চর্যের বিষয়, যে কারণে শিল্পের সব চেয়ে অপছন্দের বিশেষ অবস্থান থেকে কবিতার মুক্তি এখন সম্ভব নয় আর মিউজিকের সমান টলারেন্স অর্জন করাও প্রায় অসম্ভব। কিন্তু একজনকে তো প্রশ্ন করা শুরু করতেই হবে, কোন পন্থায় আর ঠিক কোন ব্যপ্তিতে কবিতা অজনপ্রিয়? একদিকে, কবিতার এই যে অজনপ্রিয়তা যতটা হতে পারতো তা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। কিন্তু অপরপক্ষে বলা যায়, নিশ্চয়ই এটা অদ্ভুত পদ্ধতিতে কোয়ালিফাই হয়েছে। এখনও বহু সংখ্যক ফোক পোয়েট্রি(শিশুতোষ ছড়া ইত্যাদি) আছে যা বিশ্বব্যাপী জ্ঞাত এবং কোট করা হয় আর সেগুলা দিয়ে শুরু হয় প্রত্যেকের মনন গঠনের আংশিক পটভূমি। তাছাড়া কিছু সংখ্যক প্রাচীন গান আর লোকগাথা আছে যা কখনোই জনপ্রিয়তার বাইরে যায় নাই।
bindumag.com বিন্দু
সাধারণত দেশপ্রেম কিংবা আবেগপ্রবণ ধরনের “ভাল-মন্দ” কবিতার জনপ্রিয়তা আছে কিংবা অন্তত টলারেন্স আছে। পাশাপাশি যে পয়েন্টটা মনে হয়, “ভাল-মন্দ” কবিতার এই ধরনের বৈশিষ্ট্যেই, আপাত দৃষ্টিতে, আমজনতাকে সত্যিকারের কবিতা অপছন্দ করতে শিখিয়েছে। পদ্যে, মিত্রাক্ষর কবিতায়, আড়ম্বরপূর্ণ আবেগ আর অস্বাভাবিক ভাষায় কারবার চলে এই ব্যাপার গুলা খুবই চিহ্নিত ডিগ্রি, যে-জন্য ব্যাপারটা সর্বজন স্বীকৃত হয়ে গেছে যে, খারাপ কবিতা ভাল কবিতার থেকেও অধিকতর “পোয়েটিক্যাল”। সরাসরি পছন্দ না হলেও অন্তত টলারেট করা হয়। যেমন ধরুন, এই লেখাটা লেখার আগে বিবিসিতে ৯ টার খবরের পূর্বে কমেডিয়ানদের যে স্বাভাবিক অনুষ্ঠান হয় তাই আমি শুনতেছিলাম। শেষদিকের ৩ মিনিটে ২জন কমেডিয়ানের মধ্যে একজন হঠাৎ ঘোষণা করলো, সে “এক মুহূর্তের জন্য সিরিয়াস হতে চায়” আর সে তার রাজার মহিমা প্রশংসায় “এ ফাইন ওল্ড ইংলিশ জেন্টলম্যান” শিরোনামে আবোলতাবোল দেশপ্রেমের কবিতা আবৃত্তি শুরু করলো। হঠাৎ স্বধর্মভ্রষ্ট হয়ে এইরকম জঘন্য বীরত্বপূর্ণ কবিতা আবৃত্তিতে এখন শ্রোতাদের রিএকশনটা কী? এরকম ব্যাপারে হয়তো মারাত্মক নেগেটিভ কিছু হবে না, কিংবা বিবিসি হয়তো প্রোগ্রামটা বন্ধ করার জন্য যথেষ্ট রুষ্ট চিঠি পাবে। যদিও বহু মানুষ কবিতার বিরুদ্ধে তবুও উপসংহারে বলা যায়, পদ্যের প্রতি মানুষের সেরকম প্রবল বিরুদ্ধাচরণ নাই। সবশেষে বলা যায়, মিত্রাক্ষর কবিতা আর ছন্দ যদি নিজেদের দোষে এতই অপছন্দ-সই হতো তবে গান কিংবা নোংরা লিমেরিক জনপ্রিয় হতে পারতো না। কবিতার অ-জনপ্রিয়তার কারণ এর দুর্বোধ্যতা, বুদ্ধিদীপ্ত ধৃষ্টতা আর রবিবারে-রবিবার ছাড়া যেকোনো একটা দিনের মতন অনুভূতির সাথে যুক্ত। “ঈশ্বর” শব্দটা যেমন কিংবা এক মানুষের কুকুর মণ্ডলী যেমন ঠিক তেমনই এর নাম আগাম খারাপ ইম্প্রেশন সৃষ্টি করে। নির্দিষ্ট ব্যাপ্তিতে, কবিতাকে জনপ্রিয় করে তোলা এক ধরনের অর্জিত নিষেধাজ্ঞাকে ভেঙে ফেলার মতন। মানুষকে শোনানোর পরিবর্তে ব্যাপারটা একটা উচ্চারিত মেকানিক্যাল ফলবিশেষের মতো। যদি আমজনতাকে সত্যিকারের কবিতার সাথে এমন ভাবে পরিচয় করানো যায় যেন সেটাই নরম্যাল, যেমন এইমাত্র আমি নরম্যাল ভাবে কয়েকটা আবর্জনা শুনতেছিলাম, তাহলে এর বিরুদ্ধের বাঁধাকে জয় করা যেতে পারে। পাবলিক টেস্টের শিক্ষা ক্ষেত্রে সুচিন্তিত প্রচেষ্টা, ঘটিত কৌশল আর এড়ানোর কৌশলে কবিতা যে আবার জনপ্রিয় হতে পারে তা বিশ্বাস করা কঠিন। টি এস এলিয়ট এক সময় সাজেস্ট করেছিলেন কবিতাকে, বিশেষত নাট্যকাব্যকে সাধারণ মানুষের চেতনায় “মিউজিক হল” ধারণার মাধ্যমে আবার ফিরিয়ে আনা যেতে পারে; তিনি পুতুল-নাচ শিল্পকে উল্লেখ্য করেছিলেন, যার বিশাল সম্ভাবনাকে সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ কখনোই করা হয়নি । “Sweeney Agnoistes” হয়তো এরকম ধরনের আইডিয়া থেকেই লেখা হয়েছিল, আর এটা হয়তো “মিউজিক হল” ধারণার মতনই ছিল, কিংবা হয়তো রিভিউ টাইপের কিছু ছিল। আমি রেডিওকে অধিকতর আশাবাদী মাধ্যম হিসেবে সাজেস্ট করেছি, আর আমি এর টেকনিক্যাল সুবিধাকেও পয়েন্ট আউট করেছি, বিশেষত কবির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। প্রথমবার শুনলে এই সাজেশনকে নৈরাজ্যজনক লাগতে পারে কারণ কিছু কিছু মানুষ রেডিওকে নাড়িভুঁড়ি ছাড়া প্রচারণা হিসেবে কল্পনা করে। মানুষ যা শোনে সেগুলা আসলে দুনিয়ার লাউড-স্পিকার থেকে লালা ঝরানোর মতন ব্যাপার, আর এজন্যে এভাবেই সিদ্ধান্তটা আসে আর যেন কোনোভাবেই ওয়ারলেস এক্সিস্ট না করে। প্রকৃতপক্ষে “ওয়ারলেস” শব্দটায় যে ইমেজ ফুটে উঠে তা হল গর্জনশীল একনায়কের কিংবা সুশীল কণ্ঠের ঘোষণার ইমেজ যেখানে বলা হয় আমাদের ৩ টা এয়ারক্র্যাফট ফিরে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। বেতারে কবিতাপাঠকে অনেকটা ডোরাকাটা ট্রাউজার এর আবেশের মতন শোনায়। তা যাই হোক একটা যন্ত্রের ব্যবহৃত ক্ষমতার উপর ব্যাপারটা আসলে যত ব্যাপৃত হয় তা যেন কেউ গুলাইয়া না ফেলে। ব্রডকাস্টিং ব্যাপারটা বর্তমানে যেরকম, মাইক্রোফোন আর ট্রান্সমিটার সকল যন্ত্রপাতিকে মজ্জাগত ভাবেই ভালগার, অর্থহীন ও অসৎ লাগে তা আসলে এজন্য নয়, বরং এজন্যে যে বর্তমানে সারা বিশ্বে যেসব ব্রডকাস্টিং হয়ে থাকে তার সবগুলাই সরকারের কন্ট্রোলে হয় কিংবা সেরা একাধিপত্য কোম্পানিগুলা যারা কঠোর ভাবে স্থিতাবস্থা মেইনটেইন করতে চায় তাদের কন্ট্রোলে হয় আর কন্ট্রোলে রাখার জন্যই আমজনতাকে এরকম ইন্টেলেকচুয়াল হওয়া থেকে বিরত রাখা হচ্ছে। সিনেমার ব্যাপারটাও একই, রেডিওর মতনই, সিনেমার আদল গড়া হয়েছে ক্যাপিটালিজম এর একাধিপত্য স্টেজের মতন আর এটা অপারেট করাও দারুণ ব্যয়সাধ্য। সকল শিল্পকর্মেই একই রকম প্রবণতা আছে। বেশির ভাগ প্রডাকশন চ্যানেল গুলাই আমলাতন্ত্রের কন্ট্রোলে যার উদ্দেশ্য হলো, আর্টিস্টকে ধ্বংস করা কিংবা খোজা করে দেয়া। নিরানন্দ দৃষ্টিভঙ্গি হলেও, যে সর্বগ্রাসীত্ব বর্তমানে সব গ্রাস করে ফেলছে তা যদি না হতো, নিঃসন্দেহে যা চলতেছে,পৃথিবীর সকল দেশে, অন্য পন্থায় যা নির্বাপিত হয়েছে তা আসলে পাঁচ বছরের মতো এতো অল্প সময়ে দূরদর্শন করা সহজ না। এই বিশাল আমলাতান্ত্রিক যন্ত্র গুলার মাধ্যমেই আমরা সর্বাত্মক অংশে ক্যাচক্যাচ শব্দের কাজ শুরু করতেছি তার কারণ তাদের সাইজ আর অবিচল উন্নতি।
bindumag.com বিন্দু
আধুনিক দেশে চিন্তার স্বাধীনতাকে মুছে ফেলার ঝোঁক থাকে আর একই সময়ে প্রতিটি দেশে, বিশেষত যুদ্ধের চাপে, রেডিও মাধ্যমে যুদ্ধের প্রচারণা চালানোর জন্য বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের প্রয়োজন হয়। আধুনিক দেশের প্রয়োজন যেমন, পুস্তিকা লেখকদের, পোস্টার আর্টিস্টদের, ইলাস্ট্রেটরদের, ব্রডকাস্টার, লেকচারার, ফিল্ম প্রডিউসার, অভিনেতা, গান কম্পোজার, এমনকি পেইন্টার আর ভাস্কর্যদের, সাইকোলজিস্ট, স্যোসিওলজিস্ট, বায়োকেমিস্ট, ম্যাথমেটিশিয়ান আর কাকে প্রয়োজন হয় না তা বলা অসম্ভব। সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে ব্রিটিশ সরকার এই ব্যাপারখানা থেকে বাইরে রেখে বর্তমান-যুদ্ধটা শুরু করেছিল; অথচ যুদ্ধের ৩ বছর পর প্রায় সকল লেখককে, তার রাজনৈতিক ইতিহাস অথবা পছন্দ যত আপত্তিকরই হোক না কেন, বিভিন্ন মন্ত্রনালয় অথবা বিবিসি চুষে খেয়েছে আর তাদের মাঝে যারা আর্মড ফোর্সে ঢুকেছিল তারাও একটা সময় নিজেদের পাবলিক রিলেশন কিংবা অন্য কোনো জরুরী সাহিত্য বিষয়ক কাজে মনোযোগ দিয়েছে। এই মানুষ গুলাকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরকার যথেষ্ট শোষণ করেছে, কেননা তাদের ছাড়া যুদ্ধ চালানো অসম্ভব। A P Herbert কিংবা Iran Hay এর মতো মানুষদের নিরাপত্তার কথা প্রাতিষ্ঠানিক আদর্শ থেকে প্রচারণা করা হতোঃ কিন্তু এগুলা সহজলভ্য ছিল না, বিদ্যমান বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে ব্যবহার করতেই হতো, আর সেজন্যই স্বর এবং আরও কিছু ব্যাপ্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক প্রোপ্যাগান্ডাকে সেই অনুসারে পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারি পুস্তিকা, ABCA (The Army Bureau of Current Affair) লেকচার, ডকুমেন্টারি ফিল্ম আর সম্প্রচারগুলার সাথে শাসিত দেশগুলার কেউই সেরকম পরিচিত নয় যেজন্য গত দুই বছরে তারা ভেবেছে যুদ্ধকে মদদ দিলে হয়তো সরকার তাদের স্পন্সর করবে। বৃহদাকারে সরকারি যন্ত্র শুধু অধিকতর আলগা নিকাশে পরিণত হয়েছে আর এর মাঝের বাঁকের কথা ভুলে গেছে। এটা হয়ত একটা ক্ষুদ্র সান্ত্বনা হতে পারে কিন্তু ব্যাপারটা নিন্দিত কিছু নয়। যার মানে যেসব দেশগুলাতে ইতিমধ্যেই শক্ত লিবারাল ট্র্যাডিশন আছে, সেখানে আমলাতান্ত্রিক পোঁদ কোনোভাবেই কাজ হাসিল করতে পারবে না। ডোরাকাটা ট্রাউজাররা হয়তো শাসন করবে ঠিকই, কিন্তু যতই তারা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে জোরালো ভাবে মেইনটেইন করার কথা ভাবুক, বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের বিশেষ রকম ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকেই যাবে। সরকারের প্রয়োজন হলে, যেমন, ডকুমেন্টারি ফিল্ম আর ফিল্মের টেকনিকে বিশেষত যারা আগ্রহী তাদেরকেই এখানে নিয়োগ করতে হবে, আর এই প্রয়োজনীয়তা-ই তাদেরকে ন্যুনতম স্বাধীনতা দেবে; কাজেই আমলাতান্ত্রিক ভাবধারার যে ফিল্মগুলাকে নিয়ম বিরুদ্ধ বলা হয় তাদেরও সব সময়ই প্রদর্শিত হবার একটা প্রবণতা থাকবেই। ঠিক এরকম ভাবেই পেইন্টিং, ফটোগ্রাফি, স্ক্রিপ্টরাইটিং, তথ্যকাহিনী, লেকচারিং আর অন্যান্য আর্ট এবং হাফ-আর্টকে একটা জটিল আধুনিক রাষ্ট্রের প্রয়োজন হয়। রেডিওর প্রয়োগও এখানে সুস্পষ্ট। লাউডস্পিকার বর্তমানে সৃষ্টিশীল লেখকের জন্য দুশমনের মতন; কিন্তু যখন ব্রডকাস্টিং এর আয়তন এবং প্রসার বৃদ্ধি পাবে তখন হয়তো আর এরকমটা থাকবে না। বিষয়টা হলো, যদিও বিবিসি সাম্প্রতিক সাহিত্যের দিকে ক্ষীণ আগ্রহ দেখিয়েছে, যেখানে ১২ ঘণ্টা ধরে মিথ্যা প্রোপ্যাগান্ডা, টিনে ভরা মিউজিক প্রচারিত হয়, সেখানে আমি যেই পদ্ধতির কথা বলছি তাতে পাঁচ মিনিটে কবিতা সম্প্রচারকে ধারণ করা সত্যই কঠিন, আর যখন কবিতা সম্প্রচারে সিরিয়াস এক্সপেরিমেন্ট এর সময় আসে, বিভিন্ন বিরুদ্ধ প্রভাবের জন্য সেই গুলা পূর্ণ অনাদরে তখন বর্তমানের অনুষ্ঠানকে প্রতিরোধ করে, এটাই স্বাভাবিক। আমি বলবো না যে এরকম একটা এক্সপেরিমেন্টে নিশ্চিত খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। ব্রডকাস্টিং আর সাহিত্যের মাঝের সম্পর্ক নিয়ে ভাবার অনেক আগেই রেডিও আমলাতান্ত্রিক হয়ে গেছে। এটা আসলে পরম সত্য কিছু নয় যে, মাইক্রোফোন এমন কোনো যন্ত্র যার মাধ্যমে কবিতাকে আবার সাধারণ মানুষের কাছে ফিরিয়ে আনা যাবে, তাছাড়া কবিতা যে অধিক উচ্চারিত আর কম লিখিত ব্যাপার হতে পারে তা-ও কিন্তু পরম সত্য কিছু না। কিন্তু আমি যুক্তিসঙ্গত কারণেই বলছি রেডিওর সম্ভাবনা আছে, আর যারা সাহিত্য ভালোবাসে তারা হয়তো এই তুচ্ছ মাধ্যমটার দিকে নজর দিতে পারে; যার ভালো কিছু করার ক্ষমতা- প্রফেসর Joad আর ডাক্তার Goebbels এর কণ্ঠস্বরে রাহুগ্রস্থ হয়ে আছে।
মন্তব্য