চিৎমরম
(জয়া-কে)
বিবিধ সম্ভাবনার পাশে শুয়ে থাকে হেমন্ত
নভেম্বরে আমরা আরেকবার যাব চিৎমরম
লোকাল বাসের কাঁচে মুখ ঘষে-ঘষে এই বন্ধ্যা
শহর ছেড়ে তুমি হইও শকুন্তলা আমি দুষ্মন্ত।
বিন্দু bindumag.com
ঐখানকার পাহাড়গুলো আমার পূর্ব পরিচিত
সেগুনবাগিচা ঘুরে ঘুরে আমার অনেক সময়
কেটেছে একদা আর কাপ্তাই লেকে ভেসেছি
সবুজ ঘাসে শুয়ে ভেবেছি তোমারে দয়াময়।
বিন্দু bindumag.com
আমরা পাহাড়ের উপরে বানাব একচালা ঘর
বন ফেরৎ তুমি আমারে দিও জুমের ভাত
দিও প্রেম-পরশ-সন্তান আর প্রিয় দোচুয়ানি
আমাদের আলো করে যাবে পিদিমের রাত।
বিন্দু bindumag.com
এইবার তবে যাওয়া যাক দূর ঐ ফসলের গানে
মিথ মুলা মদ আর সবুজ শস্যক্ষেতের পানে।
রাবার বাগানের রাত্রি
মাংস ও মশলা হাতে আমরা চলেছি রাবার বাগান
মদ ও মন্দিরা বাজাতে আমরা চলেছি রাবার বাগান
তাঁবু ফেলা হবে আজ; ঝলসানো হবে পাখির হৃদয়
পাকা পেয়ারার মতো সুবাস ছড়াবে চাঁদ যাত্রাপথে
উইডের তালে তালে আমরা গাইবো বেসুরো গান।
বিন্দু bindumag.com
বনমাতাল করা জ্যোৎস্নায় ভাসছে সমস্ত হেমন্ত
যেন এই রাতে জেগেছে হঠাৎ পৃথিবীর সপ্ত সন্ত
প’ড়ো দালানের ভেতর এঁকে যাচ্ছে বাদুড়ের ভয়
আগুনের পাশে আজ আমাদের আদিমতার হল্লা
মদ ও মন্দিরায় ভাঙছে রাবার বাগানের নৈঃশব্দ্য।
বিন্দু bindumag.com
অথচ পৃথিবী এখানে নিশ্চল; কেবল দলছুট হরিণীর
ভয়ার্ত স্বর ফিরে ফিরে আসে নিঃসঙ্গ ম্যাজিকেল রাতে
অনর্গল সেসব মাতাল ডাক; ‘কাহারে সে ডাকে?’
সুস্বাদু এক একাকী হরিণ সে মহুয়াতলের ঝাঁকে
ছিল একদা নিশ্চয়; ছিল কি তার সন্তানভর্তি সংসার?
বিন্দু bindumag.com
এমন নিরর্থ ভাবনার পাশে ঝরে যায় রাবারের ফল
ঝরে শিশির; যাবতীয় পোশাক; বিগত দিনের হাসি
খুনে লাল আগুনে রাঙাই চোখ; ফাটাই বীজের ধ্বনি
মাংস ও মশলা হাতে আমাদের রাবার বাগানের রাত্রি
কতো যে মিস্ট্রি হয়ে আছে তার ছায়া—তাঁবুর পাশে।
বিন্দু bindumag.com
তবু জ্যোৎস্নায় প্লাবিত ধানখেতে নামছে হাতির দল
তাদের শুঁড়ে গেঁথেছে গুচ্ছ গুচ্ছ ধান, হেমন্তের ধান
এমনই উৎকণ্ঠা ঘিরে ঝরছে হিম, মৃদু মৃদু বাতাস…
চুনতি অভয়ারণ্যে
এমন বহুদিকেই তো যাওয়া হয় নাই আমার
যাওয়া হয় নাই তোমার দিকে চুনতি বাজার
কেবলই দেখেছি দূর থেকে সবুজ বৃক্ষের সারি
দূরপাল্লার বাসের ঘষা কাঁচ খুলে দেখেছি বাহারি
লতা ও গুল্ম জড়ায়া বেড়ে উঠা গাছেদের বন্য
মাতব্বরি; ডাক দেয় আমারে চুনতি অভয়ারণ্য।
বিন্দু bindumag.com
ঢের জীবন চলে গেলো শহরের পথে ঘুরেটুরে
যদিও চোখে ভাসে অন্যরকম স্বপ্ন। এক ভোরে
ফ্লাক্সে চা, চোখে বাইনোকুলার, ক্যামরা হাতে
আমি চলেছি চুনতি অরণ্যে কুয়াশামাখা শীতে
শিকারী নই, ভালও বাসি না ভালুকের শিকার
আমি দেখবো মায়া হরিণের দৌড়; ঠোঁটে সিগার
জ্বালিয়ে বসবো গর্জনের আড়ালে যেন আমাকে
দেখে উড়ে না যায় ময়নার ঝাঁক আকাশের দিকে।
বিন্দু bindumag.com
দূরে শোনা যাবে কৃষকের কান্না; পাহাড়ের কোলে
তাদের ফসল গতরাতে মাড়িয়ে গেছে গজ পালে
এমন তো নিত্য ঘটে, হামেশা এখানে ঘটে কত কাণ্ড
শুয়োর ও শিয়ালের যুদ্ধ নিয়েই এই সবুজ ব্রহ্মাণ্ড।
বিন্দু bindumag.com
তারচেয়ে ভাল ঝিরিঝিরি বয়ে যাওয়া ছড়ার জলে
যদি আঁজলা ভরে মেটাই তিয়াসা নিতান্ত কৌতুহলে
অথবা হঠাৎ যদি পাতায় মর্মর তুলে তেড়ে আসে বাঘ
আমি একটুও কাঁপবো না ভয়ে হবো না সত্যি অবাক
এমনই তো হওয়ার কথা এই নির্জন চুনতির অরণ্যে
গা ছমছমে হাওয়া জাগাবে ভয়, তবুও নামবো রণে
এরূপ দৃশ্য শেষে সন্ধ্যা নামবে আকাশ কালো করে
ফিরতি পথে পথ হারিয়ে আমি ফিরবো না আর ঘরে!
রাজারকুল
ঐখানে নদীদের স্কুল; চর্চা হয় জলের স্বরলিপি
কান পেতে শুনে ন্যাড়া চাঁদ, মাতাল তরণী
আমি বহুবার এখানে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভরেছি উল্লাস
বিন্দু bindumag.com
আরেকটু এগিয়ে গেলে পেয়ে যাবেন সান্ধ্যভ্রমণ
মাঝিকে জানালে নিয়ে যাবে ওপার রাজারকুল
রাজা নেই তবে বালিকারা যেহেতু দুরন্ত প্রেমিকা
আপনিও কুড়াতে পারেন স্মরণীয় মুহূর্ত
বিন্দু bindumag.com
এই যে পলাতক সময় সে কেবল শিখেছে ছলনা
আমি তার দণ্ডিত পুরুষ সারা অঙ্গে মেখেছি পাপ ও মায়া
বিন্দু bindumag.com
প্রতিদিনের ক্লান্ত মন শান্তি খোঁজে চোখের ভূগোল
তার কাছে যাই; বসে থাকি চুপচাপ; সঙ্গ দেয় রাজারকুল…
সিঙুড়বুনিয়া
একবারই গিয়েছিলাম সিঙুড়বুনিয়া
ভ্যাপসা পৃথিবী থেকে দূরের সেই গ্রাম
দুই চোখ ভর্তি পানি তারা পানিতে বাঁচে
মানুষ তার ছায়াকেও সেখানে মানুষের
মতো গুণে যেন ছায়াসহ তারা চারজন
নিজেদের নিয়োজিত রাখে বাতাসের
ফিসফাসে আর সেবারই প্রথম আমি
শুনেছিলাম চাঁদ তাদের নিজস্ব বেলুন!
প্রতি দুইজন করে একটি চাঁদ ও গান।
পরিচিত দুনিয়া থেকে কেউ কোনদিন আগে
শুনে নাই সেই পবিত্র উজ্জ্বল গ্রামের নাম
ভ্যাপসা পৃথিবী থেকে দূরের এক গ্রাম।
বিন্দু bindumag.com
আকাশের ফাটলে ফাটলে মেঘ গুঁজে দিয়ে
সিঙুড়বুনিয়ার মেয়েরা সাজায় পরমের পূজা
সারাদিন তাদের পুরুষ মাঠে ও খামারে ঘামে
তবু ক্লান্তি দেখিনি এই ক'দিন কেওড়ার গ্রামে
তাদের দেখেছি আমি খুঁটে খুঁটে খায় আর দেখে
খুটিয়ে খুটিয়ে—ধীবর যতো জাল গুটিয়ে আনে
পাখিদের গ্রামে পাখিদের শাসন তাদের তালগাছে নিবাস
যতদূর দৃশ্য পাবে কেবলই সবুজ শস্যের ঘ্রাণ।
বিন্দু bindumag.com
ভূ-গোল এতোই ছোট যে তুমি কখনো তার পেটে
পাবে না সিঙুড়বুনিয়ার নাম; এতো হীন জাতক
তাদের ভালোবাসার কাছে নিজেকে ভেবেছি মহৎ।
সিঙুড়বুনিয়ার ঘরের দরজা সদা হাট খোলা থাকে
রাত্রিদিন এবং সেই দরজা দিয়ে বাঘ ঢুকে পড়ে
জানালা দিয় লাফায়। বিড়াল ও কুকুর পরস্পরে
বাছে শরীরের উকুন। এমন সে গেওয়াবরণ গ্রাম
গাঢ় রাত্রির বুকে মাঝি চিৎকার দিয়ে শুনায় তার নাম।
বিন্দু bindumag.com
কোথাও পালিয়ে যাবো ভাবতে ভাবতে একবারই
গিয়েছিলাম আমি সোজা পৃথিবী থেকে পালিয়ে
বন্ধুদের থেকে দূরে; দূরের সেই গ্রামের আরেক
বন্ধুর নিকটে। জলে ভাসা টঙে বসে বাতাসে থির
রোদেরা ছটপট আমাদের কাছাকাছি বাড়াচ্ছিল ভীড়।
যে কথা আমাদের জমে ছিল সব ঝুলে পড়ে জিহ্বায়
দিন ও রাত সেখানে কেবল গল্পেতে হয় আহার
যতোদূর দৃশ্য কুড়াবে ততোদূর চিরহরিৎ সুন্দরীকাঠ
পৃথিবীর বাইরে আরেকটা পৃথিবী সে বুঝি এমন হয়!
পরীদের মতো রাতের বেলা তারা পাহারা দেয় রাত
গ্রীবা উঁচু হাঁসেদের মতো তারা নিয়ে আসে প্রভাত।
বিন্দু bindumag.com
অদ্ভূত রাত্রির বুকে চাঁদের পিঠে ভাসে সেই গ্রাম
ভ্যাপসা পৃথিবী থেকে দূরে দূরের সেই গ্রাম।
চমৎকার ভ্রমন হলো সারা।
উত্তরমুছুন