জীবন তৃষ্ণা
বুকের মধ্যখানে ভোতা একটা যন্ত্রণার বসবাস
একগুঁয়ে, চাপা ক্লান্তিকর অনুভূতি
দমবন্ধ হয়ে আসে
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে
চক্রবৃদ্ধি হারে ধীরে ধীরে বেড়েই চলে
নিঃশব্দ চিৎকারে উত্তাল হয়ে ওঠে
আমার সমগ্র সত্তা
একটা ভয় আমাকে জাপটে ধরে
যার জন্ম কোন অন্য ভুবনে
আমি অসহায়ভাবে খুন হতে থাকি বারংবার
একফোঁটা বাতাসের জন্য
আমি ব্যাকুলভাবে প্রার্থনা করি
দিকভ্রান্ত আহাজারিগুলো
প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এসে
আমাকে ব্যাঙ্গ করে
চার-পাশে ঘুরপাক খায়
অচেনা-অগোছালো সাদা-কালো জীবনটাকে
তখন মনে হয় বড্ড রঙিন
বাঁচার সুতীব্র ইচ্ছা আছড়ে পড়ে
চেতনাজুড়ে
অবসন্ন-বিধ্বস্ত শরীরকে আঁকড়ে ধরে
আমি পৌঁছে যাই
আপাত স্বেচ্ছা-মৃত্যুর দেশে
স্বপ্নের মাঝেও
খুন হয়ে চলি নিরন্তর
স্বপ্নের মাঝেই
প্রশ্ন ছুঁড়ে দেই -
কত সহস্রবার মৃত্যুর পর
জীবনের সন্ধান পাওয়া যায়?
প্রশ্নের উত্তর কখনোই মেলে না
আমাকে করায়ত্ত করে
নিঃসীম শূন্যতা
৩১ মার্চ ২০১৩, রাত ১টা ২০ মিনিট
ছায়া
তোমাকে এখন নিজের ছায়া মনে হয়
ষে সারাক্ষন আমাকে অনুসরণ করে
আমার সঙ্গে ঘুমোয় - জেগে ওঠে
বাইরে যায় - পথ চলে - ফিরে আসে
কিন্তু
আমার সঙ্গে কথা বলে না
সুর মিলিয়ে গান গায় না।
স্বপ্ন দেখে না
স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণায় চিৎকার করে না
আমার সুখ-দু:খ-সাফল্য-ব্যর্থতা
কখনই যাকে স্পর্শ করতে পারে না
আমাকে বিন্দুমাত্র বোঝার চেষ্টা করে না
আমি তাকে যতই ধরার চেষ্টা করি
সে ততই অধরা থেকে যায়
শুধুমাত্র থাকতে হয় বলেই
আমার সঙ্গ বাধ্য হয়ে বয়ে বেড়ায়
সত্যি করে বলতো-
তুমি কি রক্ত-মাংসের সত্যিকারের মানুষ
নাকি আদতেই আমার ছায়া?
মাঝে মাঝে মনে হয়
তুমি আসলে রূপকথার রাজকন্যার মতই
এক বিভ্রম
এক মায়া
১১ মার্চ ২০১৩, ভোর ৪টা ২২ মিনিট
অবিরাম অবিরত
শুধু ছুটতে হয় বলেই ছুটছি
চলার আনন্দে নয়
কোন লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে নয়
কোথাও কেউ অপেক্ষা করছে বলে নয়
শুধু ছুটতে হয় বলেই ছুটছি
জীবন নামের এক জটিল-জঞ্জাল ভরা শহরে
মানুষের নোংরামির অলি-গলি কখনোবা রাজপথ ধরে
মানবতার পা মাড়িয়ে
নিজের স্বার্থের পিঠে সওয়ারি হয়ে
তাড়া খাওয়া নেড়ি কুকুরের মত
শুধু ছুটতে হয় বলেই ছুটছি
পিছনে ফেলে যাচ্ছি
একরাশ দুর্গন্ধময় সময়
যাতে মিশে আছে
কিছু প্রিয় মুখ
কিছু স্বপ্ন
কিছু সুখ-স্মৃতি
কিছু ভালোলাগা-ভালোবাসা
আর বাকিটুকু আজন্ম জাপটে ধরা হতাশা
সবাই ছুটছে
তাই ছুটছি
ছুটে চলাটাই পৃথিবীর নিয়ম
তাই ছুটছি
শুধু ছুটতে হয় বলেই ছুটছি
৭ই মার্চ ২০১৩, রাত ৩টা ৪৪ মিনিট
সাভারে রানা প্লাজা ধ্বসের পর নওশাদ হাসান হিমু (২৭) উদ্ধার তৎপরতার জন্য সবার কাছে পরিচিত মুখ ছিলেন। বরিশালের উজিরপুর থানার বাবর গ্রামের মৃত সরদার আবুল হোসেন এবং আফরোজা বেগম এর ২ সন্তানের একজন হিমু। বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের কাছে ‘হিমালয় হিমু’ নামেই বিশেষ ভাবে পরিচিত ছিলেন। রানা প্লাজা ধসের ৬ষ্ঠ বছরে এসে এই ২৪ এপ্রিল, রানা প্লাজা দিবসেই তিনি নিজের শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এই কবিতাগুলো ফেসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করি, যারা হিমুর বন্ধু এবং তাকে ভাল ভাবে চেনেন, তারা হিমু সম্পর্কে লিখবেন। প্রতিভাবান ও সম্ভাবনাময় তরুণদের আত্মহননকে দয়া করে স্রেফ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিশাবে নেবেন না। হিমু গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থক ছিলেন। বিপ্লবী বাসনা ছিল, বাম রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন কিছুকাল।
- সম্পাদক
............................................
হিমালয় হিমু সম্পর্কে আরও পড়ুন:হিমুর সাথে জ্বলছে এ রাষ্ট্রের চিতা
'অবিরাম অবিরত' কবিতায় যে কথার তাগিদ যে নৈরাশ্য তা স্পষ্ট করে তুলছেন কবি। জীবনের এই যে কন্ট্রাডিকশন এই যে অর্থহীনতা তাই প্রকাশিত। আর কবিতার থেকে জীবনের দিকে যে প্রতিবাদ তা তিনি তার নিজস্ব অভিমানের রাস্তায় জানায়া গেছেন।
উত্তরমুছুন