[ প্রথম অনলাইন সংখ্যা ]
বিন্দুস্বরঃ
এই সংকলনটি নুসরাত জাহান রাফিকে উৎসর্গ করা হলো।
ডাকঘর
আ হ মে দ ম ও দু দ
বোশেখের সব ফুল সব কলি তোমাদের ডাকঘরে পাঠিয়েছি আজ
কাজকাম ফেলে রেখে আমরাও গায়ে মাখি তোমাদের বোশেখী বাতাস
সাতাশ বছর ধরে এভাবেই গড়তেছি নয়াপুরাণের খোলা খাম
আমের মুকুল দিয়ে সাজাতেছি ভূমিকা ও প্রাপকের ঠিকানা সকল
নকল বায়ুর কাছে তবু নেই কোন প্রার্থনা চিঠি প্রেরণের
ঢের বেশি প্রার্থনা গ্রীষ্ম, গোধূলী ও ভোরের হাওয়ার কাছে
গাছে গাছে কথা হোক প্রাপক ও প্রেরক বিষয়ে মর্মর স্বরে
পরেও পাঠাবো ঠিক বোশেখের খোলা চিঠি তোমাদের উঁচু ডাকঘরে।
বৈশাখ ফিরতিপথের সখা
আ র ণ্য ক টি টো
ফিরতিপথের সখা,
পয়লা বৈশাখ, নয়নাভিরামে দিবি নাকি দরশন?
জলভাসা চোখ ভুলে গেছে আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকাল।
নড়ে ওঠে খুঁটি, কৃষ্ণপ্রতিম বিশ্বাস।
বলেছিস দেখা হবে, যড়তিপড়তি আয়।
শ্যামল বধুয়া
নিরলে গুটিয়ে সাদা শাড়ি, কুচি করে যতনে পরিবে ধানিশাড়ি।
তুই এসে অনামিকায় পরিয়ে দিস অঙ্গুরীয়।
পাতা আছে মাটি, তার উপরে আসনপিঁড়ি> ঘাসপালঙ্ক,
তাতে
বসিস চুপটি করে।
খেতে দেব দুধ কলা চিড়া মুড়ি মিঠাই বাতাসা।
পাঠাব কি হাতি ঘোড়া শেরোয়ানি?
কতদিন খাইনি রে, কপালে লিখে আনিস,
এক সানকি পান্তা, এক চিমটি লবণ, একটি কাঁচালঙ্কা,
সরিষাবাটায় ভাজা একটুকরো ইলিশ সমাচার।
জিবচাটা লালায়িত জলে তোকেই বাসনা করি, আসিস কিন্তু।...
উদলা বৈশাখ
জ্যো তি পো দ্দা র
লেখার ভেতর কাটাকুটি করিয়া
অস্পষ্ট মুখশ্রী আঁকিতে চাই না।
বানর কিংবা শিব যাহাই হোক
শিল্প গড়িতে চাই না।
আমরা উদলা বৈশাখের অগ্নি স্নানে শুচি কর্পোরেট
ওয়েব হাওয়ার পন্থী
এতো শিল্প টিল্প দিয়া কী করিব?
এখন কাটাকুটির বাজার মন্দ
কোন ব্র্যাণ্ড ভেল্যু নেই।
কাটাকুটি করিয়া গোল বাঁধিবার চেয়ে
কী বোর্ডের ব্যাক স্পেস ভালো
ব্ল্যাক হোল ভালো
ব্ল্যাক আউট ভালো
ছেলেমানুষি
কু শ ল ই শ তি য়া ক
ব্যক্তিগত বৈশাখ
ব নী ই স রা ই ল
নেমে এলো বৈশাখের আগুন
পুড়ে চলেছে এই শহর অলি গলি
তবু তোমার চোখের শান্ত দৃষ্টি
আমাকে এখনো ঘুমিয়ে রাখে।
হয়তো ঘুমিয়ে আছি হাজার বছর শিশিরের শব্দ গুনে।
বৈশাখের রঙ মাখতে বলেছিলে কতবার।
ছিলাম পাহারের চেয়ে বেশি নির্লিপ্ত,
কারন তখনো চেয়ে ছিলে অনন্তকাল।
এইবার পুড়বো দারুণ বৈশাখী রোদে।
অন্তর্গত কষ্টেরা ছায়া নেবে নতুন দুপুরে কিংবা কৃষ্ণচূড়া শহরে।
আর ঘুম ঘুম চোখে হাত মেলে আমাকে চুরি করবে রোদেলা ভোর।
জানি, এখন তোমার চোখে খেলা করে দুর্দান্ত কিছু বিত্তবান রোদ।
কাঠগোলাপ
দে বা শী ষ ধ র
ফাগুন কেটে চৈত্র বেরোতেই দেবী শীতলা আমায় চিহ্নিত করিলেন
আমি দেবীর পায়ে নিজেকে সঁপে দিলাম, মাথায় রাখিলেন হাত
কঠিন অসুখে আক্রান্ত হলাম, শেষ চৈত্রে বিজুফুল হয়ে ভাসাল তারা কর্ণফুলীতে,
সমস্ত জরা-ব্যকুলতা-অসুখের গন্ধে নদীর জলকে পুজো করিল।
এই মিষ্টজল ছিটিয়ে একদিন তোমায় বরন করেছিলাম স্বর্গাদেবী!
নব পত্রে নব কালের সাজে, গিরিপথের সুড়ঙ্গে রেখেছিলাম আসন।
পাচন রেঁধে জনে জনে সবাই শুদ্ধি করিল গত বর্ষটারে!
আরেকটি বোশেখে ইলিশ পান্থার লোককাহিনী বুনছে না আর।
পাহাড়ের মাটিতে লোককাহিনী পুড়ে পুড়ে ফুটেছে নতুন বৎসরের কাঠগোলাপ,
কাঠগোলাপের সাদা দেহে আমি হয়ে গেলাম সাদা কলি।
কত না বুদবুদ হলো
সা জ্জা দ সা ঈ ফ
তোমাকে দেখি আর তিতিরের গলা নামে খুদের ওপর!
তোমাকে টোল পড়া দেখি, ফটো হয়ে চুপ করে আছো,
কতোদিন সাঁকোর ওপর, আর, ঢেকে আছে ধুলার বাগান
মেঘের মাথালে, ঢেকে আছে অটোরিক্সার গ্লাস!
তোমাকে একবার দেখি, উড়ে যায় তুলার ফড়িং-
আমার যেদিকে ঘর, বিশ্বাসে ঢেঁকির আওয়াজ
মাকে ডেকে যায় পুরনো কেতাবে লেখা
কুরসী আয়াত, এদিকে পাথরপ্রতিভা নিয়ে, রাষ্ট্রকে সইছে পাঁজর!
যেন গানের বাঁধন হতে স্রোত এসে আজ চিরচেনা নৌকার কাঠে
কত না বুদবুদ হলো, ধাক্কা লেগে; তোমাকে হাওয়ার হিজাবে দেখি, মানুষের
হা-হুতাশ পড়ো, মৃত্যুকে ভাঁজ করে রাখো, নিউজপেপারে!
আড়ি পাতে সরিষার ডাটা, আড়ি পাতে পুরনো কৌটা হতে
পানি হয়ে গেছে যে লবন, মানুষের খোশগল্পে হুটহাট কুপি জ্বলে ওঠে, আর
আসে বৈশাখ, তার বুকে অনন্ত উদ্যম; নির্বাক গাছে গিয়ে বসে গাঙ হতে
মিথুন বাতাস, এদিকে একর জমিতে গাড়ি থেমে কোদাল নামছে ডেকে, এদিকে আসুন জনাব;
হাত তুলে দাঁড়ায় কপিলা, কুবেরের দিবাস্বপ্নে
বাজ তোলে হাঁপর আকাশ, খুলে যায় কারখানা গেট!
চৌদ্দশো বাইশ
ই ব নে শা ম স
পঞ্জিকা
শু ভ্র জি ৎ ব ড়ু য়া
বৈশাখী এপিটাফ
আ দি ত্য আ না ম
এসো বৈশাখ আমার তলপেটে এসে বসো পেটের ভিতরে বাজছে ক্ষুধার সঙ্গীত মন পেতে শোনো।
প্রকট বসন্তে হারিয়ে ফেলেছি প্রবল বৈশাখ
সো য়ে ব মা হ মু দ
গতরাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটানা বারো বছর; পেরিয়ে গেলাম হঠাৎ।
আকাশের বুকে চেপে নিয়ে কথা; একটা উদোম স্নান আর টান টান কলমীলতা।
কতকিছুই না বললাম দু'জন,
কতকিছুই না শুনলাম দু'জন,
প্রকট বসন্তে নেমে আসা বর্ষায় ভুলে গিয়ে
একটা বাবুই উড়ে যায় ক্যাকটাসের ছায়ায় ছায়ায়;
মায়ায় লেপ্টে জড়িয়ে থাকা দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকায়।
কতকিছুই না বলার ছিলো, অথচ বলতে পারিনি।
আকাশের পেটে বোমা মারলেও ছাঁই,
তেত্রিশ কোটি দেবতাকে স্বাক্ষী রাখলেও লাপাত্তা বৈশাখ,
শুধু ক্যালেণ্ডার থেকে সরে গেলে হারিয়ে যায় আহত আগুন,
যে আগুন
একদিন প্রেমিক আমায় নিয়ে গিয়েছিলো মিছিলে,
যে আগুন
আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো সোয়েবের লাশ নিয়ে
কাতারে কাতার
যে শুন্যস্থান, যা কানায় কানায় পূর্ন হিলিয়ামে,
ঠিক সেই বারো বছর
আগে নববর্ষের আগের রাতটায়,
ঠিক যখন সরকারী আর্দালীরা বলে উঠেন শহরে জ্বর,
কাজেই চুপ থাকতে হবে ভোর বেলায়।
মনে আছে তোমার,
একটা ক্যাকটাস - একটা বাবুই- একটা আকাশ।
মনে আছে তোমার
বলা হয়েছিলো এ আমার জন্মোৎসব,
এ আমার ইতিহাস হাজার বছরের,
ধর্ম নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে যে ধর্মব্যবসায়ীরা
আঙ্গুল চালাচ্ছেন কবিতায়,
খামোশ।
মনে আছে তোমার
গতরাতে উঠে এসেছিলো সব কথা,
মনে আছে তোমার
গতরাতে শুয়ে পড়েছিলো সকল নিদ্রাহীনতা,
মনে আছে তোমার
বিভ্রান্তিহীন বিভ্রাটের সময় পেরিয়ে গেলে জেগে উঠে
একটা চীতকার,
স্নানঘরে ঢুকে পড়ে শ্রেনীহীনা
শোষিত মানুষের সাথে মানুষের দেখা হবার দৃশ্য।
বুকের ভিটায় তপ্ত দুপুরে
যে শহরে গোলাপের দাম বেড়ে যায়,
অবহেলায় পড়ে থাকে জুঁই,
প্রেমিকেরা প্রেমিকাদের নির্যাতিত শিশুদের পাশে
ঘুম পাড়িয়ে সিগারেট ধরায়,
সেখানে বিপ্লব নেই, সেখানে প্রতিরোধ হতে পারেনা।
মনে আছে তোমার
চেনা দৃশ্যের প্রতারণায়, চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে
আমি জীবিত একমাত্র প্রেমিক
সার্কাস একা দেখাতে দেখাতে ক্লান্ত হয়ে গ্যাছি,
মিছিলের শ্লোগান বুকে
বুলেটে তাজা রক্তে একে দিয়ে পহেলা বৈশাখ,
আমি কথা বলার স্বাধীনতা দিয়ে গেছি।
মনে আছে কি তোমার, বাবুই -
বলেছিলাম সেই বারো বছর আগেই-
ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণের পর আর কোন বিপ্লব বাকি থাকে কি?
প্রেমিকের চেয়ে বড় কোন বিপ্লবী থাকে কি?
বলেছিলাম শাষকের চোখে চোখ রেখে-
প্রধানমন্ত্রী একটা কবিতা পড়ে নিন,
প্রেসিডেন্ট একটা ফুল থেকে ফুলকি আলাদা করে নিয়েছি।
সেনাপ্রধান রসো, শুনে নিন ভালোবাসা-বাসি সময়ের গান।
মনে কি আছে তোমার?
মনে কি পড়ে?
নাকি তুমিও বারো বছর পর শিখে গেছো ন্যাকামোর ঢংটুকু,
গিলে ফেলে নিজের ভেতর নিজের চীতকার,
কানে বেজে ওঠা রাইফেলের শব্দে হাসতে হাসতে
তুমিও কি ঘুমিয়ে পড়েছো পাঠিয়ে মুঠোবার্তা ''শুভ নববর্ষ!"
মুখোশে বৈশাখ
মো স্ত ফা ম হ সী ন
রোদ ভেজা শরীরের একটি বিকেলে
ওই অতটুকু পথ ভোগায় তোমাকে।
‘অল্পতে বুড়িয়ে যাচ্ছো’
ভাবো এই র্সবজন ভাবনা
হামলে পড়বে; —বছরের ভাঁজে?
কপালের টিপ সূর্য হলে ঠোঁট নাচে
রঙরে কল্লোল; চেয়ে দেখ রমনার বটমূলে
মর্মে মর্মে প্রাণের উত্তাপ—
নাগোরদোলাতে চড়ে উত্তরসূরী
যেমন আগলে রাখে সুদিনের সুবাতাস!
সেই পথে হেলেদুলে তুমিও জেনেছ—
এই বাঙলার কৃষ্টি-অভিসার!
রাজস্ব রহস্য ছুঁয়ে এসো খুঁজে ফিরি মাটির বন্ধন
তোমার নশ্বর দেহে আলিঙ্গন দেবে মহামতি আকবর!
জানি তুমি ভালোবাসো: র্পূবজ রীতি-রেওয়াজ।
ঝড়ো বাতাসের বুকে তুষারকণার হুটোপুটি
ফসলের মাঠে ডানা ঝাপটানো আওয়াজ
সমতলে ইতিউতি মুখোশে বৈশাখ।
বৈশাখ ১৪২৬
রে জ ও য়া নু ল হা সা ন
ব্যস্ত পুরান জঞ্জাল পরিষ্কার করতে ঝাড়ুর ব্যবহার
একদিকে লাঠির ডাটা অন্যদিকে ফুলের পেলবতা
শক্ত নরমের মেলবন্ধ ময়লা আবর্জনা ছাপছুতারা
দেহ নামক খোলসের ভেতরে বাহার কলকব্জার,
আশার দিন কাটে বছর শেষ নতুন স্বপ্নের ভোর
বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন রাষ্ট্রে দেখে নতুন সূর্যদয়
বাঙ্গালীর হাজার বছরের কৃষ্টি জেগে উঠতে চায়
পান্তা ইলিশ সাজানো থাকে পেয়াজ কাঁচা লঙ্কার,
হালখাতায় নিয়ে ছাত্তার ভাই খোলে কি দোকান
ছোট দোকানকে কেন্দ্র করে জেগে উঠে গ্রামবাসী
স্কুল ঘরের এককোণে লাল কাপড় দিয়ে রাখে ঘিরী
চিড়া দই সরবরাহ হত ব্রেঞ্জে বসে খেত লোকজন,
লাল কাপড়ে মোড়া খাতা দেখে নতুন খাতায় জের
কিছু টাকা করে পরিশোধ কিছু টাকা থাকে বাকী
সম্পূর্ণ পরিশোধ করে নামমূল্যে খায় যার নাই বাকী
পান্তা কাঁচা মরিচ গ্রামবাসী খায় অহরহ নতুন বছর,
নগর পল্লীর নববর্ষ শুরু কত তফাত দেখা যায়
বাণিজ্য বণিক দু’জায়গায় দুই রকম তাদের ভাষা
নেই তাদের হিসাব নিকাশ সাধারণ মানুষ যারা
জীবনের হিসাব ভুলে ছুটে চলে পণ্যের মেলায়,
একি সত্য আছে সর্বখানে যান্ত্রিকতা নেই এখানে
লোকের আনাগনা ছোট ছোট পসরা তারা খুলেছে
বাঁশী ঢোল আর টমটমের শব্দে মুখরিত চারদিকে
ক্রেতা বিক্রেতা ব্যস্ত খেলনার খাবারের দোকানে,
এ্যাডওয়ার্ড খোকন পার্কে জমে বৈশাখী মেলা
বছর শেষে মানুষগুলি জড় হয় দুই পার্ক ঘিরে
কিছু সময় তারা কাটায় তারা এদিক সেদিকে
রাজধানীর বর্ষবরণ শুরু যেমন রমনার বটতলা,
সোহরাওয়ারদী উদ্যানে পরস্পর নাগরিকের মিলন
শিশু কিশোর যুবক যুবতী আবাল বৃদ্ধ বণিতা ধায়
নতুন পোষাক নতুন কাপড় বিভিন্ন সাজ তাদের গায়
সারা বছর হাসি খুশী থাকে যেন বাঙ্গালী সবাই এমন॥
বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের প্রাণের উৎসব ‘পহেলা বৈশাখ বাংলা বর্ষবরণ’ রাষ্ট্রীয় অত্যাচারে সংকুচিত-আড়ষ্ট। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিকাল ৫টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করার বাধ্যবাধকতা আরোপের মাধ্যমে সরকার প্রাণের উচ্ছ্বাসকে দমন এবং অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি চর্চার পথ সঙ্কুচিত করছে।
ঠিক এই সময়ে আমরা প্রথমবারের মতো প্রকাশ করলাম বৈশাখের কবিতা সংকলন ‘মঙ্গল পদাবলীঃ বৈশাখী হাওয়া’। ফেসবুকে বিন্দুর পেজে প্রকাশের ঘোষণা দেয়ার পর অনেক কবিতা জমা পড়েছে। আমরা খুশি হয়েছি। আমরা আরও উচ্ছ্বসিত হতাম যদি সবগুলো কবিতা প্রকাশ করতে পারতাম। কেন এই বিপুল পরিমাণ লেখা সংকলন থেকে বাদ পড়লো তার কারণ আমরা একে একে ফেসবুক পেজে উল্লেখ করবো। বিন্দুর পাঠকমাত্রই জানেন, তবু নতুন পাঠকের জন্য আবার বলি, এখানে প্রকাশিত কোনও কবিতা প্রথাগত কোনও নিয়ম বা সূত্র বা বড় বা ছোট লেখক, কাঁচা বা পাকা লেখা এইসব অশ্লীল বিবেচনায় বিন্যস্ত নয়।
শুভ নববর্ষ!এই সংকলনটি নুসরাত জাহান রাফিকে উৎসর্গ করা হলো।
প্রচ্ছদঃ রাজীব দত্ত |
ডাকঘর
আ হ মে দ ম ও দু দ
বোশেখের সব ফুল সব কলি তোমাদের ডাকঘরে পাঠিয়েছি আজ
কাজকাম ফেলে রেখে আমরাও গায়ে মাখি তোমাদের বোশেখী বাতাস
সাতাশ বছর ধরে এভাবেই গড়তেছি নয়াপুরাণের খোলা খাম
আমের মুকুল দিয়ে সাজাতেছি ভূমিকা ও প্রাপকের ঠিকানা সকল
নকল বায়ুর কাছে তবু নেই কোন প্রার্থনা চিঠি প্রেরণের
ঢের বেশি প্রার্থনা গ্রীষ্ম, গোধূলী ও ভোরের হাওয়ার কাছে
গাছে গাছে কথা হোক প্রাপক ও প্রেরক বিষয়ে মর্মর স্বরে
পরেও পাঠাবো ঠিক বোশেখের খোলা চিঠি তোমাদের উঁচু ডাকঘরে।
বৈশাখ ফিরতিপথের সখা
আ র ণ্য ক টি টো
ফিরতিপথের সখা,
পয়লা বৈশাখ, নয়নাভিরামে দিবি নাকি দরশন?
জলভাসা চোখ ভুলে গেছে আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকাল।
নড়ে ওঠে খুঁটি, কৃষ্ণপ্রতিম বিশ্বাস।
বলেছিস দেখা হবে, যড়তিপড়তি আয়।
শ্যামল বধুয়া
নিরলে গুটিয়ে সাদা শাড়ি, কুচি করে যতনে পরিবে ধানিশাড়ি।
তুই এসে অনামিকায় পরিয়ে দিস অঙ্গুরীয়।
পাতা আছে মাটি, তার উপরে আসনপিঁড়ি> ঘাসপালঙ্ক,
তাতে
বসিস চুপটি করে।
খেতে দেব দুধ কলা চিড়া মুড়ি মিঠাই বাতাসা।
পাঠাব কি হাতি ঘোড়া শেরোয়ানি?
কতদিন খাইনি রে, কপালে লিখে আনিস,
এক সানকি পান্তা, এক চিমটি লবণ, একটি কাঁচালঙ্কা,
সরিষাবাটায় ভাজা একটুকরো ইলিশ সমাচার।
জিবচাটা লালায়িত জলে তোকেই বাসনা করি, আসিস কিন্তু।...
উদলা বৈশাখ
জ্যো তি পো দ্দা র
লেখার ভেতর কাটাকুটি করিয়া
অস্পষ্ট মুখশ্রী আঁকিতে চাই না।
বানর কিংবা শিব যাহাই হোক
শিল্প গড়িতে চাই না।
আমরা উদলা বৈশাখের অগ্নি স্নানে শুচি কর্পোরেট
ওয়েব হাওয়ার পন্থী
এতো শিল্প টিল্প দিয়া কী করিব?
এখন কাটাকুটির বাজার মন্দ
কোন ব্র্যাণ্ড ভেল্যু নেই।
কাটাকুটি করিয়া গোল বাঁধিবার চেয়ে
কী বোর্ডের ব্যাক স্পেস ভালো
ব্ল্যাক হোল ভালো
ব্ল্যাক আউট ভালো
ছেলেমানুষি
কু শ ল ই শ তি য়া ক
আমার মন জলে নাইমা পড়ে। হামাগুড়ি দেয়। আমার মন সাঁতার কাটে, খাড়ির দিকে যায়। মাঝে মধ্যে নৌকা আসে, বৈশাখের প্রথম দুপুরে। মাঝি পান খেয়ে দাঁড় বায়। নতুন বউ ডাগর চক্ষে তাকায়। পহেলা বৈশাখে মেঘ নাই আকাশে। মনটা আমার একটু পরপর মেলার দিকে ছোটে। কেন যে মন— এখন তখন এতো আনচান করে! আমার মন এক ছোট পুত্র, ডুগডুগি হাতে বাপের সাথে হাঁটে। আমার মন এক ছোট কন্যা, বেণী দুলায় দুলায় বাপের সাথে হাঁটে।
ব্যক্তিগত বৈশাখ
ব নী ই স রা ই ল
নেমে এলো বৈশাখের আগুন
পুড়ে চলেছে এই শহর অলি গলি
তবু তোমার চোখের শান্ত দৃষ্টি
আমাকে এখনো ঘুমিয়ে রাখে।
হয়তো ঘুমিয়ে আছি হাজার বছর শিশিরের শব্দ গুনে।
বৈশাখের রঙ মাখতে বলেছিলে কতবার।
ছিলাম পাহারের চেয়ে বেশি নির্লিপ্ত,
কারন তখনো চেয়ে ছিলে অনন্তকাল।
এইবার পুড়বো দারুণ বৈশাখী রোদে।
অন্তর্গত কষ্টেরা ছায়া নেবে নতুন দুপুরে কিংবা কৃষ্ণচূড়া শহরে।
আর ঘুম ঘুম চোখে হাত মেলে আমাকে চুরি করবে রোদেলা ভোর।
জানি, এখন তোমার চোখে খেলা করে দুর্দান্ত কিছু বিত্তবান রোদ।
কাঠগোলাপ
দে বা শী ষ ধ র
ফাগুন কেটে চৈত্র বেরোতেই দেবী শীতলা আমায় চিহ্নিত করিলেন
আমি দেবীর পায়ে নিজেকে সঁপে দিলাম, মাথায় রাখিলেন হাত
কঠিন অসুখে আক্রান্ত হলাম, শেষ চৈত্রে বিজুফুল হয়ে ভাসাল তারা কর্ণফুলীতে,
সমস্ত জরা-ব্যকুলতা-অসুখের গন্ধে নদীর জলকে পুজো করিল।
এই মিষ্টজল ছিটিয়ে একদিন তোমায় বরন করেছিলাম স্বর্গাদেবী!
নব পত্রে নব কালের সাজে, গিরিপথের সুড়ঙ্গে রেখেছিলাম আসন।
পাচন রেঁধে জনে জনে সবাই শুদ্ধি করিল গত বর্ষটারে!
আরেকটি বোশেখে ইলিশ পান্থার লোককাহিনী বুনছে না আর।
পাহাড়ের মাটিতে লোককাহিনী পুড়ে পুড়ে ফুটেছে নতুন বৎসরের কাঠগোলাপ,
কাঠগোলাপের সাদা দেহে আমি হয়ে গেলাম সাদা কলি।
কত না বুদবুদ হলো
সা জ্জা দ সা ঈ ফ
তোমাকে দেখি আর তিতিরের গলা নামে খুদের ওপর!
তোমাকে টোল পড়া দেখি, ফটো হয়ে চুপ করে আছো,
কতোদিন সাঁকোর ওপর, আর, ঢেকে আছে ধুলার বাগান
মেঘের মাথালে, ঢেকে আছে অটোরিক্সার গ্লাস!
তোমাকে একবার দেখি, উড়ে যায় তুলার ফড়িং-
আমার যেদিকে ঘর, বিশ্বাসে ঢেঁকির আওয়াজ
মাকে ডেকে যায় পুরনো কেতাবে লেখা
কুরসী আয়াত, এদিকে পাথরপ্রতিভা নিয়ে, রাষ্ট্রকে সইছে পাঁজর!
যেন গানের বাঁধন হতে স্রোত এসে আজ চিরচেনা নৌকার কাঠে
কত না বুদবুদ হলো, ধাক্কা লেগে; তোমাকে হাওয়ার হিজাবে দেখি, মানুষের
হা-হুতাশ পড়ো, মৃত্যুকে ভাঁজ করে রাখো, নিউজপেপারে!
আড়ি পাতে সরিষার ডাটা, আড়ি পাতে পুরনো কৌটা হতে
পানি হয়ে গেছে যে লবন, মানুষের খোশগল্পে হুটহাট কুপি জ্বলে ওঠে, আর
আসে বৈশাখ, তার বুকে অনন্ত উদ্যম; নির্বাক গাছে গিয়ে বসে গাঙ হতে
মিথুন বাতাস, এদিকে একর জমিতে গাড়ি থেমে কোদাল নামছে ডেকে, এদিকে আসুন জনাব;
হাত তুলে দাঁড়ায় কপিলা, কুবেরের দিবাস্বপ্নে
বাজ তোলে হাঁপর আকাশ, খুলে যায় কারখানা গেট!
চৌদ্দশো বাইশ
ই ব নে শা ম স
নববর্ষের নেমন্তন্নে এসেছে বন্ধু।
পান্তা-ইলিশ না-পেয়ে ঝালমুড়ি চিবুতে হলো বলে বেশ নারাজ তিনি। ঘুরাঘুরি করতে করতে
আমার ময়লার ঝুড়ি সামনে এসে ঝুঁকে পড়েন উনি। সযত্নে কিছুদিন
আগে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে রাখা ক্যালেণ্ডার খুঁজে বের করে পড়ার টেবিলে রাখেন।
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে।
প্রশ্ন করে, “একটা তারিখও চোখে পড়ছেনা;
সব লাল কালিতে ঢাকা! ব্যাপার কী বন্ধু?
যখন আকাশী তোর কাছে ছিলো তখন দেখতাম
প্রতিটি তারিখকে নানারঙে সাজিয়ে রাখতিস আর এখন এ হাল ক্যান?”
মৃদু পায়ে হাঁটতে হাঁটতে জানালায় হাত রেখি; আকাশে চোখ ছুড়ে দিই।
সেদিনের আকাশে মেঘের কারণে সূর্য দেখা যাচ্ছিলো না, দেহের ভেতরে রক্ত চলাচল বোঝা যাচ্ছিলো না, সংবেদনশীল সব অঙ্গ বিকল আর অকেজো হয়ে পড়ছিলো; চিৎকার করে কাঁদতে চাচ্ছিলাম কিন্তু পারছিলাম না, যেদিন সে হাত ছেড়ে দিয়েছিলো। নির্দ্বিধায় মানুষের রগ টেনে নিতে পারবো এমনতর পশুতে রূপান্তরিত হচ্ছিলাম মুহূর্তের ব্যাবচ্ছেদে অথচ তার চোখে নয়নের আগুন ঢেলে গালিগালাজ করতে পারছিলাম না
(ভালো যারে বাসি তারে বলি ক্যামনে কটু কথা; সে যে আমার পরানের পিয়ারি)
সেদিন থেকে পৃথিবীসহ সব সৃষ্টির উপর নগ্নতা ভর করেছে। প্রতিদিন ভোর হতে রাত পর্যন্ত কাটা পড়ে হাজারো মানুষের রগ আর গলা (তাদেরই রক্তে দাগিয়েছি ক্যালেণ্ডারের তারিখ)
আমার গর্ভধারিণীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গালাগালি করি নির্দ্বিধায় (সেইসব কলঙ্কের দাগ এইসব শোণিত)
মায়ের মুখে অন্ন তুলে দেয়ার বদলে কেড়ে নিই মা'র মুখের খাবার হারামখোরের মতো (সেইসব দিনরাত্রির নিদর্শন লোহিতস্নাত এইসব তারিখ)
মানুষ হওয়ার পরিবর্তে প্রতি ন্যানোসেকেণ্ডে একটু একটু করে অমানুষে পরিণত হচ্ছি (তারই দীর্ঘশ্বাসের কালোরক্তের দাগ পড়েছে কালের গর্ভের চৌদ্দশো বাইশ নামক স্তনে)
ভুলে গেছি, যার জন্যে এসব সে আমায় গর্ভে ধরেনি; তার জরায়ুতে নগ্ননৃত্যে মশগুল বীর্যে আমার জন্ম না; আমার জন্ম হয়েছিলো পবিত্র জননীর গর্ভে শ্রেষ্ঠতম পিতার বিশুদ্ধ স্পার্মের মনোহর নাচে। আমি তাদেরই; কেউ আমার হবে না বিশ্বাস আর ভালবাসার পারদ ঘামতে ঘামতে আমার মরণ হলেও।
এই পৃথিবী আমার করতলে নাঁচতে থাকা বাইজীর মতো লোলুপ ও খুনী। ফুলের যৌনতাকে সুবাস বলে চালান করে খোঁপাতে রাখে ছুরিবিদ্যা; আমি দীর্ঘদিন মানসিক ক্ষুধার যাতনাকে লালন করে হয়েছি বেয়াদব, উশৃংখল আর মগ্নতাবিনাশী হুল্লোড়। এখানে কোন উৎসবের স্থান নেই; তোমারদের যতো মুখোশাবৃত হাসিমুখ আর বেয়াড়া উৎসবের গলায় পা রেখে আমি আকাশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকা এক মুখোশহীন পাপি, শয়তান।
পঞ্জিকা
শু ভ্র জি ৎ ব ড়ু য়া
ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে বদলে যায় দিনপঞ্জি; আমরা কেউ কেউ চাই-
কিছু সময় আঁকড়ে ধরি।
পারি না, হেরে যাই। বেড়ে যায় বয়স। বয়সের সাথে সাথে বদলে নিই নিজেকে কেউ হয়ে উঠে আরো পরিপাটি, কেউ হতাশ। নদীর চরের মতো জেগে উঠে ইতিহাস; কোন ইতিহাস কতটা সত্য, তা নিয়ে জাগে সংশয়। তবু চর ভাঙা মানুষের মতো তাকিয়ে দেখি- কোথায় জাগবে আমাদের একটু আশ্রয়। দূর থেকে দূরে তাকিয়ে থাকি- ভবিষ্যৎ দেখবো বলে,
অথচ ভবিষ্যৎ কখন এসে আমাদের ছুঁড়ে ফেলে- নতুন দিনে, অন্য দিনপঞ্জিতে তা-ই টের পাই না। কেমন বোকা, তাই না?
ভেসে যাওয়া মেঘের মতো উড়ো সুখ ক্ষণিকের বৃষ্টি হয়ে ভেজায় আমাদের। আমরা ভিজি, চাই চিরকাল ভিজে থাকি; তা কি হয়!
আমাদের যেন ঠাণ্ডা না লাগে, সুখ যেন অসুখ না হয় তাই ছুটে আসে সত্যিকারের বন্ধু, দুঃখ। মুছে দেয় আমাদের সুখ। স্মৃতিতো নশ্বর কিছু নয়, জমিয়ে রাখে আমাদের অনুভব, জীবনের চিত্র দাগ কাটে দিনপঞ্জির দিবসে দিবসে।
পুরানো ফেলে ঘরে ঘরে রাখা হবে নতুন পঞ্জিকা নতুনকে নিয়ে করা হবে অড়াম্বর মুঘল সম্রাট বাবর হাসবেন আড়ালে সারা বাঙলায় পার্বণ।
সকলে চাইবে সুখ,
ফাঁকি দিয়ে আসবে সুখের অসুখ।
আ দি ত্য আ না ম
এসো বৈশাখ আমার তলপেটে এসে বসো পেটের ভিতরে বাজছে ক্ষুধার সঙ্গীত মন পেতে শোনো।
এসো বৈশাখ দ্যাখো বুকের ভিতরে অসংখ্য হৃদয় সেখানে কোকিল নয় ফর্সা কাক ডেকে ডেকে গলা ভেঙে এখন ঘুমিয়ে আছে রক্তিম বিছানায়। পাতিলের পান্তাভাতে সাঁতার কাটছে উজ্জ্বল মাছি আমরা লবণাত্বক চোখ নিয়ে পড়ছি ইলিশের রঙিন বিজ্ঞাপন। সৌভাগ্যের সমস্ত চাকা বিক্রি করে কিনে এনেছি গার্হস্থ্য বোতলভর্তি সুনীল কেরোসিন! এসো বৈশাখ দ্যাখো কী চমৎকার পুড়ে খয়েরি হয়ে যাচ্ছে অনন্ত চাষার ভাষা!
প্রকট বসন্তে হারিয়ে ফেলেছি প্রবল বৈশাখ
সো য়ে ব মা হ মু দ
গতরাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটানা বারো বছর; পেরিয়ে গেলাম হঠাৎ।
আকাশের বুকে চেপে নিয়ে কথা; একটা উদোম স্নান আর টান টান কলমীলতা।
কতকিছুই না বললাম দু'জন,
কতকিছুই না শুনলাম দু'জন,
প্রকট বসন্তে নেমে আসা বর্ষায় ভুলে গিয়ে
একটা বাবুই উড়ে যায় ক্যাকটাসের ছায়ায় ছায়ায়;
মায়ায় লেপ্টে জড়িয়ে থাকা দুর্ভিক্ষ পীড়িত এলাকায়।
কতকিছুই না বলার ছিলো, অথচ বলতে পারিনি।
আকাশের পেটে বোমা মারলেও ছাঁই,
তেত্রিশ কোটি দেবতাকে স্বাক্ষী রাখলেও লাপাত্তা বৈশাখ,
শুধু ক্যালেণ্ডার থেকে সরে গেলে হারিয়ে যায় আহত আগুন,
যে আগুন
একদিন প্রেমিক আমায় নিয়ে গিয়েছিলো মিছিলে,
যে আগুন
আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো সোয়েবের লাশ নিয়ে
কাতারে কাতার
যে শুন্যস্থান, যা কানায় কানায় পূর্ন হিলিয়ামে,
ঠিক সেই বারো বছর
আগে নববর্ষের আগের রাতটায়,
ঠিক যখন সরকারী আর্দালীরা বলে উঠেন শহরে জ্বর,
কাজেই চুপ থাকতে হবে ভোর বেলায়।
মনে আছে তোমার,
একটা ক্যাকটাস - একটা বাবুই- একটা আকাশ।
মনে আছে তোমার
বলা হয়েছিলো এ আমার জন্মোৎসব,
এ আমার ইতিহাস হাজার বছরের,
ধর্ম নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়ে যে ধর্মব্যবসায়ীরা
আঙ্গুল চালাচ্ছেন কবিতায়,
খামোশ।
মনে আছে তোমার
গতরাতে উঠে এসেছিলো সব কথা,
মনে আছে তোমার
গতরাতে শুয়ে পড়েছিলো সকল নিদ্রাহীনতা,
মনে আছে তোমার
বিভ্রান্তিহীন বিভ্রাটের সময় পেরিয়ে গেলে জেগে উঠে
একটা চীতকার,
স্নানঘরে ঢুকে পড়ে শ্রেনীহীনা
শোষিত মানুষের সাথে মানুষের দেখা হবার দৃশ্য।
বুকের ভিটায় তপ্ত দুপুরে
যে শহরে গোলাপের দাম বেড়ে যায়,
অবহেলায় পড়ে থাকে জুঁই,
প্রেমিকেরা প্রেমিকাদের নির্যাতিত শিশুদের পাশে
ঘুম পাড়িয়ে সিগারেট ধরায়,
সেখানে বিপ্লব নেই, সেখানে প্রতিরোধ হতে পারেনা।
মনে আছে তোমার
চেনা দৃশ্যের প্রতারণায়, চার রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে
আমি জীবিত একমাত্র প্রেমিক
সার্কাস একা দেখাতে দেখাতে ক্লান্ত হয়ে গ্যাছি,
মিছিলের শ্লোগান বুকে
বুলেটে তাজা রক্তে একে দিয়ে পহেলা বৈশাখ,
আমি কথা বলার স্বাধীনতা দিয়ে গেছি।
মনে আছে কি তোমার, বাবুই -
বলেছিলাম সেই বারো বছর আগেই-
ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারণের পর আর কোন বিপ্লব বাকি থাকে কি?
প্রেমিকের চেয়ে বড় কোন বিপ্লবী থাকে কি?
বলেছিলাম শাষকের চোখে চোখ রেখে-
প্রধানমন্ত্রী একটা কবিতা পড়ে নিন,
প্রেসিডেন্ট একটা ফুল থেকে ফুলকি আলাদা করে নিয়েছি।
সেনাপ্রধান রসো, শুনে নিন ভালোবাসা-বাসি সময়ের গান।
মনে কি আছে তোমার?
মনে কি পড়ে?
নাকি তুমিও বারো বছর পর শিখে গেছো ন্যাকামোর ঢংটুকু,
গিলে ফেলে নিজের ভেতর নিজের চীতকার,
কানে বেজে ওঠা রাইফেলের শব্দে হাসতে হাসতে
তুমিও কি ঘুমিয়ে পড়েছো পাঠিয়ে মুঠোবার্তা ''শুভ নববর্ষ!"
মুখোশে বৈশাখ
মো স্ত ফা ম হ সী ন
রোদ ভেজা শরীরের একটি বিকেলে
ওই অতটুকু পথ ভোগায় তোমাকে।
‘অল্পতে বুড়িয়ে যাচ্ছো’
ভাবো এই র্সবজন ভাবনা
হামলে পড়বে; —বছরের ভাঁজে?
কপালের টিপ সূর্য হলে ঠোঁট নাচে
রঙরে কল্লোল; চেয়ে দেখ রমনার বটমূলে
মর্মে মর্মে প্রাণের উত্তাপ—
নাগোরদোলাতে চড়ে উত্তরসূরী
যেমন আগলে রাখে সুদিনের সুবাতাস!
সেই পথে হেলেদুলে তুমিও জেনেছ—
এই বাঙলার কৃষ্টি-অভিসার!
রাজস্ব রহস্য ছুঁয়ে এসো খুঁজে ফিরি মাটির বন্ধন
তোমার নশ্বর দেহে আলিঙ্গন দেবে মহামতি আকবর!
জানি তুমি ভালোবাসো: র্পূবজ রীতি-রেওয়াজ।
ঝড়ো বাতাসের বুকে তুষারকণার হুটোপুটি
ফসলের মাঠে ডানা ঝাপটানো আওয়াজ
সমতলে ইতিউতি মুখোশে বৈশাখ।
বৈশাখ ১৪২৬
রে জ ও য়া নু ল হা সা ন
ব্যস্ত পুরান জঞ্জাল পরিষ্কার করতে ঝাড়ুর ব্যবহার
একদিকে লাঠির ডাটা অন্যদিকে ফুলের পেলবতা
শক্ত নরমের মেলবন্ধ ময়লা আবর্জনা ছাপছুতারা
দেহ নামক খোলসের ভেতরে বাহার কলকব্জার,
আশার দিন কাটে বছর শেষ নতুন স্বপ্নের ভোর
বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন রাষ্ট্রে দেখে নতুন সূর্যদয়
বাঙ্গালীর হাজার বছরের কৃষ্টি জেগে উঠতে চায়
পান্তা ইলিশ সাজানো থাকে পেয়াজ কাঁচা লঙ্কার,
হালখাতায় নিয়ে ছাত্তার ভাই খোলে কি দোকান
ছোট দোকানকে কেন্দ্র করে জেগে উঠে গ্রামবাসী
স্কুল ঘরের এককোণে লাল কাপড় দিয়ে রাখে ঘিরী
চিড়া দই সরবরাহ হত ব্রেঞ্জে বসে খেত লোকজন,
লাল কাপড়ে মোড়া খাতা দেখে নতুন খাতায় জের
কিছু টাকা করে পরিশোধ কিছু টাকা থাকে বাকী
সম্পূর্ণ পরিশোধ করে নামমূল্যে খায় যার নাই বাকী
পান্তা কাঁচা মরিচ গ্রামবাসী খায় অহরহ নতুন বছর,
নগর পল্লীর নববর্ষ শুরু কত তফাত দেখা যায়
বাণিজ্য বণিক দু’জায়গায় দুই রকম তাদের ভাষা
নেই তাদের হিসাব নিকাশ সাধারণ মানুষ যারা
জীবনের হিসাব ভুলে ছুটে চলে পণ্যের মেলায়,
একি সত্য আছে সর্বখানে যান্ত্রিকতা নেই এখানে
লোকের আনাগনা ছোট ছোট পসরা তারা খুলেছে
বাঁশী ঢোল আর টমটমের শব্দে মুখরিত চারদিকে
ক্রেতা বিক্রেতা ব্যস্ত খেলনার খাবারের দোকানে,
এ্যাডওয়ার্ড খোকন পার্কে জমে বৈশাখী মেলা
বছর শেষে মানুষগুলি জড় হয় দুই পার্ক ঘিরে
কিছু সময় তারা কাটায় তারা এদিক সেদিকে
রাজধানীর বর্ষবরণ শুরু যেমন রমনার বটতলা,
সোহরাওয়ারদী উদ্যানে পরস্পর নাগরিকের মিলন
শিশু কিশোর যুবক যুবতী আবাল বৃদ্ধ বণিতা ধায়
নতুন পোষাক নতুন কাপড় বিভিন্ন সাজ তাদের গায়
সারা বছর হাসি খুশী থাকে যেন বাঙ্গালী সবাই এমন॥
সুন্দর পরিপাটি আয়োজন
উত্তরমুছুনমঙ্গল পদাবলী; ভালোবাসা বিন্দু।
উত্তরমুছুনএকটি লেখা বাদে বাকি সব দারুন নান্দনিক
উত্তরমুছুনএক অনাবিল আনন্দে আপ্লুত হলাম৷ হে রুচিমান সম্পাদক ভালোবাসা নিন৷
উত্তরমুছুনতুমুল হয়েছে৷ সম্পাদক হিসেবে উৎরে গেছো৷
উত্তরমুছুন
উত্তরমুছুনএকনজরে দেখলাম, সময় করে পড়বো৷
উত্তরমুছুনসময় করে পড়বো ।
উত্তরমুছুনসবগুলোই ভালো লেগেছে৷
সুন্দর সব কবিতা৷
উত্তরমুছুন
উত্তরমুছুনচমৎকার!
ভালো আয়োজন৷
উত্তরমুছুনDarun ayojon sammo vai. Best of luck. I love you
উত্তরমুছুনভালো লাগার কবিতাগুলো।
উত্তরমুছুনপ্রশান্তি পেলাম
উত্তরমুছুন