নিয়মিত প্রকাশের একাদশ বর্ষে , এই প্রথম বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার লিটলম্যাগাজিন চত্ত্বরে ‘বিন্দু’ জায়গা পেয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য অত্যন্ত খুশির খবর। কেননা এতদিন ‘চালচিত্র’ বা এরকম দুই-একটি লিটলম্যাগের স্টলে আমাদের প্রকাশনাগুলো থাকতো। আর এতদিন আমাদের প্রকাশনা ‘বাঙ্ময়’ এর বই ছিলো মাত্র কয়েকটি, ফলে তা অন্য কোথাও রাখতে সমস্যা ছিলো না। কিন্তু এইবার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩। ফলে আমরা আন্তরিকভাবেই চাইছিলাম আমাদের একটি স্টল হোক। যেখানে আমাদের সবগুলো প্রকাশনা একসাথে সকল পাঠকের চোখের সামনে থাকবে। সেই মতো সব হয়েছেও। কিন্তু আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি ২০১৮) ডিএমপি সদর দফতরে বইমেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আয়োজিত এক সমন্বয় সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “মেলায় আসা যে কোনও নতুন বই বাংলা একাডেমি যাচাই-বাছাই করে দেখে স্টলে বিক্রির অনুমতি দেবে।”
নিরাপত্তা প্রশ্নে পুলিশ কমিশনার যা কিছু বলেছেন তার জন্য আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই, মেলায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। কেননা বইমেলা ও তার আশপাশে যে ধরনের বেদনাকর ঘটনার অভিজ্ঞতা আমরা ইতোমধ্যে অর্জন করেছি, তাতে কঠোর নিরাপত্তার কোনও বিকল্প নেই।
কবি ও গদ্যশিল্পী মুজিব মেহদী বলেন, “তাঁর বক্তব্যের যে অংশে বইয়ের 'ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় মূল্যবোধে আঘাত' করা বিষয়ে বলা হয়েছে, আপত্তিটা সে অংশ নিয়ে। যে বই প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধে আঘাত করে না সে বইও বই, যা আঘাত করে সেটিও বই। আমরা মনে করি, সে বইই ভালো বই, যে বই প্রচলিত-প্রতিষ্ঠিত চিন্তাকে আঘাত করে নতুন দিনের চিন্তার পথকে সুগম করতে পারে। দেশ-দুনিয়াকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধগুলো একে একে ভেঙে ফেলানো দরকার। কিন্তু এরা সে সুযোগ রাখছে না বস্তুত।
ডারউইনের ‘অন দা অরিজিন অব স্পিসিস’ বইটি ১৮৫৯ সালে ল-ন থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এই বই বিজ্ঞান, দর্শন ও জীবকুলের উৎপত্তির ইতিহাস বিষয়ে পূর্বতন সমস্ত চিন্তাধারাকে বাতিল করে নতুন যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিক ধারণার গোড়াপত্তন করেছিলেন। একবার ভাবুন তো, তৎকালীন ল-নবাসীরা যদি বাংলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ রক্ষায় সাহিত্যপুলিশ নিয়োগ করে রাখত, তাহলে এই বইটি প্রকাশিত হতে পারত?”
আমরা মনে করি, ‘ধর্মীয়, সামাজিক ও জাতীয় মূল্যবোধে আঘাত’ করা বিষয়ে তার এই বক্তব্য অগণতান্ত্রিক। লেখকের স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তাই আমরা এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানচ্ছি। এবং সকল প্রকার অগণতান্ত্রিক পুলিশী হস্তক্ষেপ বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
আমরা জানি এতে করে আমাদের লেখক, যাঁদের বই ‘বাঙ্ময়’ থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁরা সাময়িক সমস্যায় পড়বেন; আমাদের পাঠক-শুভাকাঙ্ক্ষী, যাঁরা মুখিয়ে আছেন আমাদের নতুন বইয়ের ঘ্রাণ নেবার আশায়- তাঁরা সাময়িক সমস্যায় পড়বেন, কিন্তু তার পরেও আমরা মনে করি এই প্রতিবাদ হওয়া দরকার। শুরু ‘বিন্দু’ না, বাংলাদেশের সকল লেখক-প্রকাশক সর্বোপরি মুক্তচিন্তার পক্ষের মানুষের এই অগণতান্ত্রিক উদ্যোগের প্রতিবাদ জানানো দরকার। আমরা ৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্টলে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে স্টলে দেখা হবে সকলের সাথে। ধন্যবাদ।
সাম্য রাইয়ান
সম্পাদক, বিন্দু
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
পরবর্তী ঘটনাবলী জানতে পড়ুনঃ ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের চরিত্রঃ বাংলা একাডেমি’র মুখোমুখি লিটলম্যাগ ‘বিন্দু’
মন্তব্য