জল ও তেলের রসায়ন
অভাবের সহবাসে ছিলাম রোদে পোড়া দিনগুলোয়। মুখোমুখি আয়োজনে নিমগ্ন হাহাকার। দীর্ঘশ্বাসে পাতা ঝরে নিজের মতোন আর ঝরাপাতা উড়ে বাতাসের সহপথে। আরো যারা যাত্রী ছিল, পথে পরিচয়, হতো কথা বিনিময়, যোগসূত্র খুঁজে পরস্পরে কতো কাছে আর কতো দূরে। অপেক্ষার পথ শেষ হলে কক্ষচ্যুত নক্ষত্রের মতো ঝরে যায়, পড়ে থাকে তাও নিজের মতোন... বেলা ধরে পথে নামি, বেলা বাড়ে... বাড়ে পথ... যতো খুশি এলোমেলো হেঁটে গেছি অচেনা অজানা শহরে। কে খবর রাখে কোন জলাশয়ে কচুরিপানার জীবন কীভাবে কাটে?... নিজে ভাসি নিজে হাসি নিজে কাঁদি আর নিজে স্বপ্ন বাঁধি। চলন্ত পথে অজানা ঘুর্ণিতে পথ হারালে কেউ নেই আশেপাশে আগে পিছে। সবই মিছে আশা, চেতনায় হাতরাই, এখানে থাকার কথা, এসব রাখার কথা, যতসব সূচিপত্র হিসেব নিকাশের খাতায় শুধু লিখা আছে। সংখ্যাতত্ত্বের স্রোত বাড়ে জীবনের টানে হিসাবের বানে। সবাই চোখের পাতা না ফেলে চেয়ে থাকে ঠিক এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছটার মতো শুধু জমায় দশক-শতাব্দীর ইতিহাস আর রহস্যময় সিন্দুকের কৌটো। মুখোশের মুখোমুখি হলেই কথা বাড়ে, রক্তচাপ বাড়ে, কমে হৃদয়ের সুর তোলা। মুখে মুখে মন্ত্রপাঠের মতো সম্পর্ক মৌখিক, লৌকিকতার তোড়জোড়, জোড়া লাগানো নেই শরীরে বোধনে। দূরের দৃষ্টিতেও ঝাপসা কুয়াশা, দেখা যায় কিন্তু চেনা যায় না ভিতরের উপাদান- জল ও তেলের রসায়ন...
জীবিত নাকি স্থির, যা কিছু আগে সিজোফ্রেনিক বোধের ধাক্কায় শিশুদের প্রথম পদক্ষেপের মতো কাঁপা কাঁপা ছিল, তা শঙ্কিত শামুকের গুটানো মন নিয়ে লোকালয়ে বেমানান... বুকে নেয় না কেউ, ফিরিয়ে দেয় অথবা মুখ ফিরায় লোহিত চোখের তাড়ায়।
আমরা পান করি, গান করি, বেসুরো সুর তুলি দূরপাল্লার যাত্রায়, ভানের গভীর খাদে পৌঁছে যাই, অন্তরের আওয়াজে প্রতিধ্বনি নেই, যন্ত্রের কলকব্জা সাইরেন বাজায় বিপদ সংকেত জানাতে।
একাও ফেরা যায় সাঁঝের বেলায় যেভাবে এসেছি একা শিউলি সকালে...
অভিমানী পাখি
পাখিদের আর্তনাদে শ্বাসকষ্ট শুরু
তারপর নিঃশ্বাস জমে নৈঃশব্দ্য জোয়ারে
মগ্নতায় নত হতে তৃষ্ণায় কাতর
হাই তোলে নিদ্রা যায়..!
পাখিসব ধীরে ধীরে উড়ে যায় দূরে
ফিরে ফিরে চেয়ে দেখে পথের হিসাব
নতুন হদিস খুঁজে সূর্যাস্তের টানে
আবার মিলন হবে কবিতা সন্ধ্যায়...
পাখি দেখি আঁখি জুড়ে মেঘেদের ভীড়ে
উড়ে গেলে দাগ লাগে বেলোয়ারি নীড়ে
যাপিত সময়
হাতে হাতে চাবি, কে কখন ঘরে ফিরে জানা নাই কারো, যার কাজ আগে শুরু বা যার ফেরা যতো দেরি, তারা আগে-পিছে করে আসে নিজের চাবি নিয়ে, খুলতে চায় দরোজায় আটকানো সামষ্টিক তালা। এভাবে আসা যাওয়ার পথে লেগে থাকে পায়ে ও গায়ে ধূলোবালি, খড়কুটো, বয়সের আলপনা ও কল্পিত স্বপন। সাগরের বালুচরে আঁকড়ে থাকা কাঁকড়ার মতো দৌড়াদৌড়ি করি কিছুক্ষণ আবার আগন্তুক শব্দে কুঁকড়ে যাই বা আপন কুঁড়েঘরে লুকোতে গেলে দরোজায় তালা...
প্রত্যেকের হাতে হাতে চাবি অথচ প্রত্যেকের আটকুঠুরি নয় দরোজা দশ তালা
মাঝে মাঝে তালা খোলে যায়, আমরা পৌঁছে যাই জরায়ুর কোটরে বা যাগযজ্ঞের সীমানায় যেখানে জন্ম নিবো কিংবা উর্ধ্বলোকে ভাসতে থাকবো, খোলা আঙিনায় কারো বিচরণ নেই, গোলাঘর এককোণে তা-ও তালাবদ্ধ অথচ বিগত আমনকালে চারিদিকে কলরব ঘরভরা ভাইবোন গোয়ালে মোষগরু রসমাখা পিঠাসব হৈ হৈ রৈ রৈ- তালা সব গেলো কই? নাইয়রির লাগিয়া তবে রাত সব জেগে থাকে চুলোর পাশে...
আবারও কালের সন্ধ্যায় সবাই যে যার মতো ঘরে ফিরে আর প্রত্যেকের হাতে থাকে এক-একটা তৃষ্ণার্ত চাবি আর প্রত্যেকের মনে থাকে মরচে ধরা এক-একটা তালা।
সুন্দর পংক্তিমালা
উত্তরমুছুনস্নিগ্ধ
বাহ চমৎকার কবিতা
উত্তরমুছুনভাগ্যধন বড়ুয়ারের আগে পড়া হয় নাই কখন। প্রথমযাত্রায় ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনচমৎকার
উত্তরমুছুনভাল লাগলো কবিতা৷ আগে পড়িনি এই কবিকে৷ প্রথম পড়লাম৷ আরো কবিতা পড়ার আগ্রহ তৈরি হলো৷
উত্তরমুছুনঅনন্য কবিতা
উত্তরমুছুন